তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ

তেওতা জমিদার বাড়ি

তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জের (manikganj) শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের তেওতা গ্রামে  অবস্থিত। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও উনার প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমিলাদেবীর স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ধারণা করা হয়, তেওতা জমিদার বাড়িটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর।

১৭০০ শতকে এক তামাক ব্যবসায়ী পঞ্চানন সেন প্রায় সাড়ে সাত একর জায়গার উপর ৫৫ কক্ষ বিশিষ্ট নিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির গোড়াপত্তন করেছিলেন। তেওতা জমিদার বাড়িটির সামনের অংশে ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মন্দিরটি এখনো অক্ষত রয়েছে। যা প্রায় ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিলো প্রমিলা দেবীর পিতার বাড়ি। প্রমিলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষপুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের সখ্যতার কারণে কবি তাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত করতে পারতেন। কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর প্রেমের স্মৃতির সাক্ষী এই তেওতা জমিদার বাড়িটি।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন তেওতা জমিদার বাড়ি সম্পর্কে। কোথায় অবস্থিত, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন বিস্তারিত সব তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরও পড়ুনঃ কুসুম্বা মসজিদ , নওগাঁ

তেওতা জমিদার বাড়ি সম্পর্কে তথ্য 

মানিকগঞ্জের (manikganj) অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে তেওতা জমিদার বাড়িটি ঐতিহ্য ও দৃষ্টান্ত নান্দনিকতার দিক থেকে অনন্য। এই জমিদার বাড়িটির পূর্ব দিকে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ লালদীঘি অন্দরমহল। আবার প্রাসাদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে টালির তৈরি বিশাল আকৃতির কাচারিঘর।

তার পাশেই রয়েছে ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মঠ। জমিদারদের উপাসনালয় হিসেবে রয়েছে লালদীঘি ময়দান এর মাঝে একটি নাট মন্দির। পঞ্চানন সেন প্রাসাদটি নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে হেমশংকর ও জয়শংকর নামে দুই ব্যক্তি জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন এখানে। 

কিন্তু ভারত বিভক্তি কর হওয়ার পর তারা দেশ ত্যাগ করলে প্রাসাদটি পরিত্যক্ত  হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পরে প্রাসাদটির দেখাশোনা ও দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ প্রত্নতন্ত্র বিভাগের অধীনে চলে যায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমিলা দেবীর পৈতৃক ভিটা এই প্রাসাদ সংলগ্ন হওয়ায় এই তেওতা জমিদার বাড়ি ঘিরে কবি ও কবি পত্নীর বহু স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের  সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার, দর্শনার্থী এই তেওতা জমিদার বাড়ি ভ্রমন করতে আসেন।

তেওতা জমিদার বাড়ির দর্শনীয় স্থান 

তেওতা জমিদার বাড়ি ছাড়াও মানিকগঞ্জ (manikganj) জেলার মধ্যে অন্যান্য বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন, বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, শিব  সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম, ভাষাশহীদ রফিক গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, গৌরাঙ্গ মঠ ও মত্তের মঠ উল্লেখযোগ্য। 

বেশ কয়েক বছর থেকে এখানে কবি কাজী নজরুল ইসলাম উনার প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানে তাদের জন্ম ও মৃত্যুর তিথিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এখানে রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন যেমন, নজরুল প্রমীলা ইনস্টিটিউট, নজরুল প্রমিলা পরিষদ, প্রমিলা নজরুল সংস্কৃতি গোষ্ঠী, নজরুল প্রমীলা সাহিত্য সংসদ সহ ইত্যাদি নামে বিভিন্ন সংগঠন। তেওতা জমিদার বাড়ি ভ্রমণে এসে বেশ কিছু পর্যটকরা জানান, বাড়িটি নতুন করে সুন্দরভাবে সংস্কার করা হলে অনেক বেশি ভালো লাগতো। তেওতা জমিদারবাড়িটি সংস্কার করা বেশি প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুনঃ সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান

কিভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের আরিচার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। সেখানে বাস জার্নি করলে সময় লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো। ভাড় পড়বে প্রায় ৯০ টাকার মতো। গাবতলী থেকে বিআরটিসি, নাহার পরিবহন, পদ্মা লাইন সহ ইত্যাদি বাসে আরিচাঘাটে পৌঁছে যেতে পারবেন।

পদ্মা লাইনে যদি আসেন তাহলে আপনাকে নামতে হবে উথলীতে। সেখান থেকে আরিচা পৌঁছাতে বাসভাড়া ৫ টাকা লাগবে। আরিচা ঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে রিক্সায় পৌঁছে যেতে পারবেন তেওতা জমিদার বাড়ি। আরিচা থেকে জমিদার বাড়ি পৌঁছাতে রিক্সা ভাড়া পড়বে ২৫-৩৫ টাকার মতো। এবং অটোতে করে পৌঁছালে অটোভাড়া আসবে ১৫ টাকার মতো।

১৯৫৭ সাল থেকে এই বিস্তৃত এই জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অযত্ন, পরিত্যক্ত এবং অপরিষ্কার হয়ে পড়ে রয়েছে। যদিও বা তার সম্পূর্ণ অংশই দখনদারীদের হাতে চলে গেছে। তারপরও জমিদারদের অপূর্ব এই ভবনটিতে ইউরোপীয় ও মুঘল স্থাপত্তের এক চমৎকার মিশ্রণ প্রতিফলিত হয়।

তেওতা জমিদার বাড়ির পাশের নবরত্ন মঠটি ও দাঁড়িয়ে রয়েছো ঐতিহাসিক পুরনো স্মৃতি বিজড়িত হয়ে। তাই হাজারো কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে কিছুটা সময় বের করে ঐতিহাসিক ইতিহাস ও সাহিত্যের রসদ পেতে ঘুরে আসুন মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়ি থেকে। ঐতিহাসিক অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন ঐতিহাসিক পুরনো এই তেওতা জমিদার বাড়িটি পরিদর্শন করলে। 

কোথায় থাকবেন 

বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি প্রন্ততান্ত্রিক স্থাপনা মানিকগঞ্জের বিখ্যাত তেওতা জমিদার বাড়ি। ঐতিহাসিক এই স্থাপনা ভ্রমণ করতে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভীড় লেগে থাকে সচরাচর সব সময়ই মানিকগঞ্জে (manikganj)। মানিকগঞ্জের আলাদা একটা সুনাম অর্জিত হয়েছে ঐতিহাসিক পুরনো এই  তেওতা জমিদার বাড়িটির জন্য।

এর চারপাশ সবুজ গাছপালায় পরিবেষ্টিত যার কারণে পরিবেশটা খুবই শান্তিপূর্ণ ও মনোরমা। যেকোনো দর্শনার্থী এর পরিবেশটা দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান। যেহেতু মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়ি ঢাকার কাছাকাছি, তাই দিনের মধ্যে জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করে আবার ঢাকাতে ফিরে আসা যাবে।

তাছাড়া জমিদার বাড়ির আশেপাশেও থাকার তেমন কোন ভালো ব্যবস্থাও নেই। নিতান্তই যদি আপনাকে সেখানে থাকতে হয় তাহলে মানিকগঞ্জ (manikganj) শহরের মধ্যে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে সেগুলোতে আপনি থাকতে পারেন। 

কোথায় খাবেন

তেওতা জমিদার বাড়ি ভ্রমণে এসে এখানে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে মানিকগঞ্জ (manikganj) শহরে খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাছাড়াও আপনার সঙ্গে করে খাবার এনে এখানে খেতে পারেন অথবা পিকনিক স্পটের জন্য এখানে এসে রান্নার ব্যবস্থা করে খেতে পারেন। যেহেতু তেওতা জমিদার বাড়ি ঢাকা থেকে খুব একটা দূরে নয়, জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করে দিনে দিনে ঢাকা ফিরে যাওয়াই ভালো।

অনেক শিক্ষার্থী এখানে পিকনিক স্পটের জন্য ভ্রমণে আছে। ছাত্র জীবনে শিক্ষা সফর আরও একটি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। তাছাড়া সেই শিক্ষা সফরগুলো যদি হয় এরকম ঐতিহাসিক পুরনো ইতিহাসকে জানা,তবে সেটাই হবে সুশিক্ষার সুফল।

শেষকথা

কর্মব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে একটু প্রশান্তি দিতে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসতে পারেন মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়ি থেকে। ঐতিহ্যবাহী এইসব দর্শনীয় স্থানগুলো শুধু সৌন্দর্যই উপভোগ করার জন্য নয় বরং এগুলো থেকে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সুন্দর সুন্দর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি তেওতা জমিদার বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেন।  তারপরও যদি তেওতা জমিদার বাড়ির সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। আমাদের এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

তেওতা জমিদার বাড়ি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ’s

১. তেওতা জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য কোন এন্ট্রি ফি লাগে কি না?

উওর:- না, তেওতা জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করতে কোন এন্ট্রি ফি লাগেনা। 

আরও পড়ুন-

দেবতাখুম বান্দরবান 

ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক কুমিল্লা

মন্তব্য করুন