শুকতারা রিসোর্ট ভ্রমণ খরচ ও ভ্রমনের সকল তথ্য

শুকতারা রিসোর্ট

শুকতারা রিসোর্ট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সবুজ অরণ্যে ভরপুর, বাংলাদেশের সিলেটের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে খাদিম/বুর্জান চা বাগানের পাশে পাহাড়ে অবস্থিত। সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের টিলার চূড়ায় অবস্থিত শুকতারা রিসোর্টটি, সিলেট শহর থেকে মাত্র ৭.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার গেট থেকে একটু এগিয়ে বামে মোড় নিয়ে মিনিট দুয়েক এগোলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত শুকতারা। ১৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টটি স্থাপত্য এবং নির্মাণশৈলীতে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রকৃতির সৌন্দর্যে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। 

শুকতারা নেচার রিট্রিট রিসোর্ট নামেও পরিচিত এই রিসোর্টটি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী এবং প্রিয়জনদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ স্থান। এখানে এসে আপনি সাইকেল চালিয়ে চা বাগান ঘুরে দেখতে পারবেন এবং পাহাড়ের চারপাশে ড্রাগনফ্লাই, প্রজাপতি এবং ফায়ারফ্লাই এর খেলা উপভোগ করতে পারবেন।

শুকতারা রিসোর্টে থাকা অবস্থায় আপনি লাল্লাখালের স্বচ্ছ নীল পানিতে এবং জাফলংয়ের পাই-আইন নদীতে নৌকায় ভ্রমণ করতে বা সাঁতার কাটতে পারবেন। খেলাধুলার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে; আপনি ব্যাডমিন্টন, ফুটবল এবং ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের খেলা উপভোগ করতে পারবেন।

শুকতারা রিসোর্টের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে এর সমস্ত কাঠামো প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে হাতে তৈরি এবং সৌরশক্তি দিয়ে পানি গরম করা হয়। অতিথিদের বিনোদনের জন্য এবং প্রকৃতি প্রেমীদের সবুজে ঘেরা অরণ্য উপভোগ করার জন্য এখানে রয়েছে ৭ একরের বেশি জায়গা। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে আপনার মন কখনোই খারাপ হবে না। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের শুকতারা রিসোর্ট এর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও ভ্রমণ সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাব। 

শুকতারা রিসোর্ট এর বর্ণনা 

চা বাগানের রাস্তা ধরে শুকতারা রিসোর্টের পথে এগোলে প্রথমেই সবুজে মোড়ানো একটি টিলা স্বাগত জানায়। টিলার নিচে রিসোর্টের ফটক আর চূড়ায় উঠার একটি মাত্র পথ। পথে রয়েছে টয় ট্রেন লাইন। সমতল থেকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত কটেজগুলো প্রকৃতির সাথে মিশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।

শুকতারা রিসোর্ট Shuktara resort
শুকতারা রিসোর্ট

টিলার চূড়ায় উঠলেই চোখে পড়বে তিনতলা বিশিষ্ট একাশিয়া রেস্টুরেন্ট। দ্বিতীয় তলায় খাবারের ব্যবস্থা, পাশে ৪০ জনের মিটিং রুম, আর তৃতীয় তলায় রয়েছে বসার এবং আলাপচারিতার ঘর, সঙ্গে একটি বিশাল পাঠাগার যেখানে সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণ সম্পর্কিত বই পাওয়া যায়। নিচতলায় গায়ে হলুদ, করপোরেট মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি তলাতেই নান্দনিকতার ছোঁয়া এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা আছে, সঙ্গে ব্যালকনিও রয়েছে যেখানে মুক্ত হাওয়ার উত্তম আয়োজন রয়েছে।

একাশিয়া থেকে বেরিয়ে উজান পথে গিয়ে আপনার বিশ্রাম নিবাসে পৌঁছাতে হবে। ওপরে উঠলেই খোলা মঞ্চের মতো বনাক কোর্ট। এখান থেকে যে দিকেই তাকাবেন সবুজের হাতছানি, দূরে সুরমা নদী, আর আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের সারি। মেঘালয় রেঞ্জের এই দৃশ্য শরতে আকাশের রূপকে আরও বর্ণময় করে তোলে। খোলামেলা রুম এবং খোলা বারান্দা থেকে পাহাড় ও সবুজের মিতালি দেখতে পারবেন। বৃষ্টিমুখর রাতে বারান্দায় বসে প্রিয়জনের সাথে স্মৃতিময় সময় কাটানো যাবে। রুমের ছাদে বসেও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

রিসোর্টে নান্দনিক কিছু শিল্পকর্ম রয়েছে, যা করেছেন নন্দিত ভাস্কর অলক রায়। এছাড়াও ইয়াং স্টারের কিছু পেইন্টিং এবং আলোকচিত্র রয়েছে। রাতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাউল সংগীত ও মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করা হয়। খাবারের মেনুতে থাকে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার।

রিসোর্টে মোট ১১টি কটেজ রয়েছে, যেমন নয়নতারা, বরুণ, শিরীষ, দোলনচাঁপা, মাধবী লতা, কামিনী, জুঁই, করবী, শিমুল, হিজল। প্রতিটি কটেজে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতের তৈরি আসবাবপত্র রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং ২৪ ঘণ্টা গরম পানির ব্যবস্থাও আছে। কটেজের জানালা এবং বারান্দা থেকে পাহাড় ও টিলার অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। গ্রন্থাগারে দেশ-বিদেশের বই ও পত্রিকা এবং বড় পর্দার টেলিভিশন রয়েছে। টিলার চূড়ায় সভা-সেমিনার-কর্মশালা ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থাও আছে।

শুকতারায় আগত পর্যটকদের জন্য রিসোর্টে গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, যারা সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগান, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, লালাখাল, সারি নদী, জাফলং, পিয়াইন নদী, তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ অন্যান্য জায়গায় ঘুরিয়ে দেখাবেন।

শুকতারা রিসোর্ট এর সুবিধা 

১। অ্যাকিয়া’ মাল্টি-কুইজিন রেস্টুরেন্ট

শুকতারা রিসোর্ট এর অন্যতম আকর্ষণ হল অ্যাকিয়া মাল্টি-কুইজিন রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্টটির বিশেষত্ব হল এটি সম্পূর্ণ খোলা স্থানে অবস্থিত। রেস্টুরেন্টটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যেখানে আপনি পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং একই সাথে আপনার পছন্দের বিভিন্ন খাবার উপভোগ করতে পারবেন। 

২। লাইব্রেরি

বই প্রেমীদের জন্য এই রিসোর্টে রয়েছে লাইব্রেরির মত সুবিধা। আপনি চাইলে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে পারেন। 

৩। পার্টি রুম 

এই রিসোর্টে রয়েছে একটি বিশাল পার্টি রুম। জন্মদিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পার্টি আয়োজন করা যাবে। 

৪। কনফারেন্স রুম 

সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেন্স রুমে সাউন্ড সিস্টেম এবং প্রজেক্টর স্ক্রিনসহ ৪০ জন ব্যক্তির আসন ব্যবস্থা রয়েছে এই কনফারেন্স রুমে। এই রুমে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সবরকম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

৫। লিলি গেমস রুম

লিলি গেমস রুম নামে বৃহৎ গেমস এরিয়া রয়েছে, যেটি ক্যারাম, ডার্টস এবং টেবিল টেনিস সহ নানা ধরনের ইনডোর গেমস দিয়ে সুসজ্জিত। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের ইনডোর গেমস খেলার সুযোগ পাবেন।

৬। সুইমিংপুল 

একটি বড় সুইমিংপুল রয়েছে যেখানে সাতার কেটে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। 

এছাড়াও যারা ফিটনেস নিয়ে সচেতন তাদের জন্য জিম রয়েছে, বারবিকিউ পার্টি করার জন্য সাঁঝের মায়া নামক একটি ছাদ রয়েছে, পুরো রিসোর্টে উচ্চ গতির ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ ও অতিথিদের ঘোরার জন্য পিকাপের ব্যাবস্থা রয়েছে। 

শুকতারা রিসোর্ট এর রুম ভাড়া

শুকতারা রিসোর্টে প্রতি রুমের ভাড়া সর্বনিম্ন ২৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

হিল ভিউ

নিজের রুম থেকে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এই রুম গুলো ভাড়া করতে পারবেন। 

১। রুমের নামঃ মাধবী লতা, করবী 

রুমের ধরনঃ লার্জ স্যুট। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৮,৫০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

রুমের নামঃ বরুন, পলাশ, নয়নতারা। 

রুমের ধরনঃ সেমী স্যুট। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৭,৮০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

২। রুমের নামঃ জুঁই, কামিনী 

রুমের ধরনঃ ফ্যামিলি স্যুট। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৭,৫০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

৩। রুমের নামঃ হিজল

রুমের ধরনঃ স্ট্যান্ডার্ড স্যুট। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। 

ভাড়াঃ ৩,৫০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

৪। রুমের নামঃ জোনাকি, প্রজাপতি, শশী, বৈশাখী, গোধূলি, রবি

রুমের ধরনঃ ডিলাক্স। রুমগুলো ট্রিপল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

ভাড়াঃ ৬,৫০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

৫। রুমের নামঃ ঊষা ও আলো 

রুমের ধরনঃ সুপিরিয়র ডিলাক্স। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৭,০০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

৬। রুমের নামঃ কুয়াশা ও শিশির 

রুমের ধরনঃ ডিলাক্স। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৫,৫০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

৭। রুমের নামঃ প্রভাত ও পাখি

রুমের ধরনঃ ইকোনোমি। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়।

ভাড়াঃ ২,৮০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

ফরেস্ট ভিউ 

আপনি যদি আপনার রুমে থাকার সময়টা আশেপাশের জঙ্গল এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সাথে উপভোগ করতে চান তাহলে ফরেস্ট ভিউ এর রুমগুলো আপনার পছন্দ হবে আশা করা যায়।

সুইমিংপুল ভিউ

রিসোর্টে এসে সাতার কাটতে চাইলে সুইমিংপুলের পাশে পছন্দের রুমটি ভাড়া করতে পারেন।

১) রুমের নামঃ ঝর্না। 

রুমের ধরনঃ স্টুডিও স্যুট। রুমগুলো ডাবল অকুপেন্সি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। 

ভাড়াঃ ৯,০০০ টাকা (প্রতি রুম এর জন্য)।

শুকতারা রিসোর্টে যেভাবে যাবেন 

আপনি যদি ঢাকার বাসিন্দা হয়ে থাকেন তবে আগে আপনাকে সিলেটে আসতে হবে। তারপর সিলেট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রিসোর্টে আসতে পারেন। 

১। বিমানে করেঃ আপনি চাইলে বিমানের মাধ্যমে সহজেই এই রিসোর্টে আসতে পারেন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট থেকে এই রিসোর্টে পৌঁছানো যায়। বিমানবন্দরটি থেকে রিসোর্টটি মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানে এসে এই রিসোর্টে পৌঁছাতে আপনার প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগবে।

২। রেলপথেঃ সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে এই রিসোর্টের দূরত্ব ৭.৫ কিলোমিটার। রেলপথে এই রিসোর্টে আসতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট।

৩। বাসেঃ ইন্টারসিটি বাস, হুমায়ুন চত্তর বাস টার্মিনাল থেকে শুকতারা রিসোর্টের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। বাসে যাত্রা করে এই রিসোর্টে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ২৫ মিনিট। রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাসগুলো শুকতারা রিসোর্টের নিকটবর্তী সুবহানী ঘাট এলাকায় যাত্রী নামায়, যা রিসোর্ট থেকে প্রায় ৬.৫ কিলোমিটার দূরে। আপনি চাইলে বাসে করেই সহজে রিসোর্টে পৌঁছাতে পারেন।

যেভাবে যোগাযোগ করবেন 

দুটি মাধ্যমে শুকতারা রিসোর্টে যোগাযোগ করতে পারবেন। ইমেইল এবং ফোনের মাধ্যমে।

ইমেইলঃ

১) info@shuktararetreat.com

২) shuktararetreat@gmail.com  

মোবাইল নাম্বারঃ ০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫, ০১৭৪৫৫০০৭৬৬, ০১৭২১২৫৮৬৩৮

টেলিফোন নাম্বারঃ ০৮২১২৮৭০২৭৯,  ০৮২১২৮৭০২৮১

ঠিকানাঃ 

শুকতারা নেচার রিট্রিট, উদ্দিন হিল, শাহপরান উপ শহর,

খাদিমনগর, সিলেট, বাংলাদেশ।

Website

মন্তব্য করুন