শিমুল বাগান
শিমুল বাগান, যা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত, একটি আশ্চর্যজনক স্থান। এখানে প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপর প্রায় ৩ হাজার শিমুল গাছ রয়েছে। জয়নাল আবেদীন, এই বাগানের প্রথম অবন্ধনকারী, ২০০৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তার নামেই এটি পরিচিত।
বসন্তে, শিমুল বাগানের প্রতিটি গাছের মধ্যে অতুলনীয় সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। এখানে গাছের ডালে ডালে লেগে থাকা লাল ফুলগুলি মন জুড়ে নেয়। তারা সমস্ত দেখকের মন আবারও জোর করে আনে এবং মেঘালয়ের পাহাড়ের সাথে একসঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিশে মিলিয়ে থাকে। যাদুকাটা নদী তীরের শিমুল বাগান হল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অধ্যায়, যেখানে স্বর্গীয় লাল ফুলের সাথে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন।
শিমুল বাগান কখন যাবেন
শিমুল বাগানে যেতে আপনি যে কোন সময়েই যেতে পারেন। তবে লাল টকটকে শিমুল ফুল দেখতে চাইলে ফাল্গুন মাসের শুরুতে যেতে হবে। ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে যাওয়ার সময়টি সেরা।
আর বর্ষায় গেলে ফুল না থাকলেও সবুজ শিমুল বাগানের দেখা পাবেন। তখন টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। শিমুল বাগানে যাওয়ার সময় আপনি টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকায় চড়ে ঘুরে দেখতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন
শিমুল বাগানে পৌঁছার জন্য প্রথমে সুনামগঞ্জ সদরে যেতে হবে। ঢাকা মহাখালী, গাবতলী, সায়দেবাদ এবং ফকিরাপুল থেকে এনা, হানিফ এবং শ্যামলী পরিবহনের বাস নিয়মিত সুনামগঞ্জ রুটে যাতায়াত করে। নন-এসি বাসে ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, এবং যাতায়াতে প্রায় ৬ ঘণ্টা লাগবে।
শুকনো সময়ে, সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়েরগড় বা তাহিরপুরে যেতে পারেন, যা প্রায় ২ ঘণ্টা সময় নিবে। এখান থেকে আপনি শিমুল বাগানের সাথে অন্যান্য জায়গাও ঘুরতে পারেন। মোটরসাইকেলে পৌঁছানোর জন্য ২ জনের জন্য ভাড়া লাগবে ১০০০-১৫০০ টাকা, এবং সিএনজিতে ১৭০০-২২০০ টাকা। যদি বাজার দেখার জন্য নৌকা ভাড়া করতে চান, তাহলে সুনামগঞ্জ থেকে বাইকে বা সিএনজিতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত গিয়ে নদী পার হতে পারেন। আর বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর দেখার পাশাপাশি শিমুল বাগান সহ বাকি সব জায়গা নৌকা নিয়েই ঘুরে দেখা যায়।
নেত্রকোণা থেকেও শিমুল বাগানে যেতে সম্ভব। এখানে মোটরবাইক হলেও উপায় হতে পারে। নেত্রকোণা থেকে কলমাকান্দা, পাঁচগাঁও বাজার, মহিষখোলা, টেকেরঘাট, ধর্মপাশা, এবং অবশিষ্ট অংশে নৌকা বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে শিমুল বাগানে পৌঁছানো যেতে পারেন।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
সুনামগঞ্জের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান যা আপনি একদিনে ঘুরে দেখতে পারেন:
যাদুকাটা নদী: সুনামগঞ্জের একটি বিখ্যাত নদী যা তার সৌন্দর্য্যের জন্য পরিচিত। নদীর তীরে হেঁটে যাওয়া, নৌকা ভ্রমণ বা নদীর ধারে বসে প্রকৃতি উপভোগ করা যায়।
বারিক্কা টিলা: যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত একটি টিলা। টিলাটির চূড়া থেকে সুনামগঞ্জ শহর ও আশেপাশের এলাকার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী লেক): তেকেরঘাটে অবস্থিত একটি মনোরম হ্রদ। হ্রদের পাশে একটি পার্ক রয়েছে যেখানে আপনি হাঁটতে, বসতে বা নৌকা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
টাংগুয়ার হাওড়: বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল। হাওড়ে নৌকা ভ্রমণ করে বিভিন্ন পাখি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
যেখানে থাকবেন
শিমুল বাগানের নিকটে কোনও অত্যাধুনিক হোটেল পাওয়া যায় না। তবে, যদি থাকে তবে টেকেরঘাট নীলাদ্রী লেকের কাছে বড়ছড়া বাজারের হোটেল খন্দকার, হোটেল নিলাদ্রি অথবা মেঘালয়া গেস্ট হাউজে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায় রুম পাওয়া যাবে। বাগান এর নিকটে বাদাঘাট বাজারের আল মদিয়া হোটেল তুলনামূলক ভালো হবে। এছাড়া, সুনামগঞ্জ শহরে ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যাবে।
কিছু হোটেলের নাম
- হোটেল খন্দকার – বড়ছড়া বাজারে, টেকেরঘাটে
- হোটেল নীলাদ্রি – বড়ছড়া বাজারে, টেকেরঘাটে
- হোটেল আল মদিনা – বাদাঘাট বাজারে, তাহিরপুরে
- হোটেল সারপিনিয়া – জগন্নাথবাড়ী রোডে, সুনামগঞ্জে
- হোটেল নূর – পূর্ব বাজার স্টেশন রোডে, সুনামগঞ্জে
- হোটেল মিজান – পূর্ব বাজারে, সুনামগঞ্জে
- সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট
- হোটেল নূরানী – পুরাতন বাস স্ট্যান্ড, সুনামগঞ্জে
- হোটেল প্যালেস – পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোডে
যেখানে খাবেন
শিমুল বাগানকে ঘিরে কিছু অস্থায়ী খাবার দোকান আছে। এখানে আপনি চা, নাস্তা, হালকা খাবার ইত্যাদি পেতে পারেন।
আশেপাশে
- বারিক টিলার নিচে: এখানে কিছু ছোটো দোকান আছে যেখানে আপনি স্থানীয় খাবার পেতে পারেন।
- লাউড়েরগর বাজার: এখানে বেশ কিছু দোকান ও হোটেল আছে যেখানে আপনি ভালো মানের খাবার পেতে পারেন।
- বড়ছড়া বাজার: এটি একটি বড় বাজার যেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়।
- বাদাঘাট বাজার: এখানেও বেশ কিছু দোকান ও হোটেল আছে যেখানে আপনি ভালো মানের খাবার পেতে পারেন।
খাবারের ধরণ
- স্থানীয় তাজা সবজি: বাগানের আশেপাশের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে তাজা সবজি উৎপাদিত হয়। আপনি এখানে বিভিন্ন ধরণের তাজা সবজি কিনতে পারেন।
- হাওরের নানা মাছ: টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বিভিন্ন ধরণের মাছ পাওয়া যায়। আপনি এখানে তাজা মাছ কিনে রান্না করে খেতে পারেন।
- ভর্তা ভাজির নানা পদ: বাঙালি খাবারের একটি জনপ্রিয় অংশ হল ভর্তা ভাজি। বাগানের আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরণের ভর্তা ভাজি পাওয়া যায়।
ভ্রমণ পরিকল্পনা
- সকালে: ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যান। সুনামগঞ্জ পৌঁছে যাদুকাটা নদী ও বারিক্কা টিলা ঘুরে দেখুন।
- দুপুরে: তেকেরঘাটে গিয়ে শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী লেক) তে নৌকা ভ্রমণ ও দুপুরের খাবার খান।
- বিকেলে: শিমুল বাগান ঘুরে দেখুন।
- সন্ধ্যায়: সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা ফিরে যান।
কিছু টিপস
- সুনামগঞ্জে যাওয়ার সেরা সময় হল শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী)।
- শিমুল বাগানে যাওয়ার সেরা সময় হল ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস, যখন শিমুল ফুল ফোটে।
- টাংগুয়ার হাওড়ে নৌকা ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল (জুন-আগস্ট) সেরা সময়।
- সুনামগঞ্জে প্রচুর মশা আছে, তাই মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
- স্থানীয় খাবার যেমন: ইলিশ মাছ, খিচুড়ি, ভাত, ডাল, তরকারি ইত্যাদি স্বাদ গ্রহণ করুন।
- দর কষাকষি করে জিনিসপত্র কিনুন।
- পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।
আরও পড়ুনঃ-
সিলেটের হোটেল ও রিসোর্ট তালিকা ও যাবতীয় তথ্য