সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। এই উদ্যানটি রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। ২০০৫ সালে এই উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। উদ্যানটি ২৪৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। উদ্যানের অভ্যন্তরে সাতটি ছড়া আছে। আর এই সাত টি ছড়ায় কারনেই জায়গাটার নাম সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের ছড়া গুলো হলো
১. বড়ছড়া,
২.ছোটছড়া,
৩. খোকাইছড়া,
৪.ঝুমঝুমছড়া,
৫.ঝর্ণাছড়া,
৬.কেওড়াছড়া, ও
৭.পানিছড়া।
এই ছড়াগুলো বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও স্মরণীয় ইতিহাস
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এর বৈচিত্র্য
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছপালা, ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু এবং ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর এবং উদ্যানটিতে রয়েছে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদি।
সাতছড়ি উদ্যান বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন। এই উদ্যান টি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্যানে ভ্রমণের জন্য রয়েছে সু-সজ্জিত কটেজ, রেস্ট হাউস এবং ক্যাম্পিং স্পট।ঘোরার জন্য মনোরম একটি স্থান এটি।এখানে আসলে,পর্যটকেরা স্নিগ্ধ পরিবেশ খুজে পাবে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেতে হলে দুইটি উপায় রয়েছে:
• সড়কপথে
ঢাকা থেকে সাতছড়ি দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে সিলেটগামী যেকোনো বাসে করে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে যেতে হয়।
মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে করে সাতছড়ি যেতে হয়। মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সাতছড়ি উদ্যান যেতে বাসের ভাড়া সাধারণত ৫০০-১০০০ টাকা। ম্যাক্সির ভাড়া সাধারণত ৩০০-৫০০ টাকা।
• রেলপথে
ঢাকা থেকে হবিগঞ্জগামী যেকোনো ট্রেনে করে সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে নেমে যেতে হয়। সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেতে হয়। সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে সাতছড়ি উদ্যানের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে হবিগঞ্জগামী ট্রেনের ভাড়া সাধারণত ১০০-৬৭৩ টাকা। সায়েস্তাগঞ্জ থেকে সাতছড়ি যেতে বাসের ভাড়া সাধারণত ৩০০-৫০০ টাকা। ম্যাক্সির ভাড়া সাধারণত ২০০-৩০০ টাকা।আপনার সুবিধামত যেকোনো উপায়ে আপনি সাতছড়ি উদ্যান যেতে পারেন।
সাতছড়ি উদ্যানের নিদর্শন
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:
১.প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা
২.বন্যপ্রাণী দেখতে
৩.ইকো-ট্যুর উপভোগ করা
• প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা: জাতীয় উদ্যান তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে পাহাড়, ঝর্ণা, জলাশয়, বন্যপ্রাণী এবং নানা রকম উদ্ভিদ রয়েছে।
• বন্যপ্রাণী দেখতে: সাতছড়ি উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ, বনমোরগ, কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া ইত্যাদি।
• ইকো-ট্যুর উপভোগ করা: সাতছড়ি উদ্যানে ইকো-ট্যুর সুবিধা রয়েছে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন পদ্ধতি যা বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশের ক্ষতি রোধ করে।
কোথায় থাকবেন
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে থাকার জন্য দুটি মূল বিকল্প রয়েছে:
• হবিগঞ্জ শহরের হোটেলে থাকা: হবিগঞ্জ শহর থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। শহর থেকে উদ্যানে যাওয়ার জন্য সিএনজি বা মাইক্রোবাসে করে যেতে পারেন। শহরে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি রাত্রিযাপন করতে পারেন। হোটেলগুলির ভাড়া সাধারণত ৪০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।
• বন বিভাগের রেস্ট হাউসে থাকা: সাতছড়ি উদ্যানে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস রয়েছে। এটি একটি ছোট্ট রেস্ট হাউস যেখানে মোট ৮টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৫০০ টাকা। রেস্ট হাউসে থাকার জন্য বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী আপনি যেকোনো একটি বিকল্প বেছে নিতে পারেন।
যদি আপনি সাতছড়ি বেশি দিন কাটাতে চান, তাহলে আপনি হবিগঞ্জ শহরের হোটেলে থাকার বিকল্পটি বেছে নিতে পারেন। এতে আপনি উদ্যানের পাশাপাশি শহরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলিও ঘুরে দেখতে পারবেন।
তবে যদি আপনি উদ্যানে শুধুমাত্র একদিনের জন্য ঘুরতে চান, তাহলে আপনি বন বিভাগের রেস্ট হাউসে থাকার বিকল্পটি বেছে নিতে পারেন। এতে আপনি উদ্যানের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
এখানে কিছু নির্দিষ্ট হোটেলের নাম দেওয়া হল:
• হবিগঞ্জ শহরে: জামিল,সোনারতরী,আমাদ হোটেল।
• সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে: সাতছড়ি রেস্ট হাউস
খাওয়া-দাওয়া
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে খাওয়া দাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। আপনি চাইলে উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি উদ্যানের বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসতে পারেন।
উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত ক্যাফে বা রেস্তোরাঁগুলিতে সাধারণত বাংলা খাবার পরিবেশন করা হয়। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের খাবার পাবেন। তবে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি।
আপনি যদি উদ্যানের বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসতে চান, তাহলে আপনি হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেল বা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে নিতে পারেন। শহরের হোটেল বা রেস্তোরাঁগুলিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি খাবার।
সাতছড়ি উদ্যানের বাজেট কেমন
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বাজেট আপনার ভ্রমণের সময়কাল, থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের উপর নির্ভর করবে।
ঢাকা থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার খরচ:
• **ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ শহরে যেতে বাসের ভাড়া: ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা
• **হবিগঞ্জ শহর থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যেতে সিএনজি বা মাইক্রোবাসের ভাড়া: ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে থাকার খরচ:
• **হবিগঞ্জ শহরের হোটেলে থাকার খরচ: ৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা
• **বন বিভাগের রেস্ট হাউসে থাকার খরচ: ৫০০ টাকা
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে খাবারের খরচ:
• **স্থানীয় খাবারের দোকানে খাবারের খরচ: ২০০ থেকে ৫০০ টাকা
• **হোটেলে খাবারের খরচ: ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি:
• **বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য: ১০০ টাকা
• **বিদেশী নাগরিকদের জন্য: ৫০০ টাকা
পরিশেষে
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য নতুন একটি ঠিকানা। সবুজে ঘেরা এই উদ্যানে ঘুরতে হলে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। খরচ ও থাকার ব্যাবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিয়ে তবেই যাওয়া উচিত।
যেকোনো জায়গাতে ভ্রমণ করতে হলে অবশ্য সচেতন হতে হবে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এই উদ্যান উপভোগের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১.ঢাকা থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যেতে মাথাপিছু খরচ কত পড়বে??
উত্তরঃ্মাথাপিছু খরচ কমপক্ষে ৩০০০
২.প্রবেশ ফি কেমন?
উত্তরবাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা, বিদেশী নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা।
৩.সেখানে কোন গাইড এর ব্যবস্থা আছে কিনা?
উত্তরঃহ্যাঁ অবশ্যই আছে, তবে তাকে ঘন্টা প্রতি ১০০-১৫০ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন-
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান – এক বীর মুক্তিযোদ্ধা
সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ