সাজেক ভ্যালি
শহরের ব্যাস্ত জীবন, কোলাহল, একটু জঞ্জাল ছেড়ে চাইছেন একটু খানি ছুটি কাটাতে তাই না? মাঝে মাঝে আমাদের অনেকেরই মনে হয় “ইশ” যদি সব ছেড়ে দিয়ে নিরালায় কোথাও গিয়ে যদি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারতাম! সেটা হোক দেশে ভ্রমন বা বিদেশ ভ্রমণ এর মাধ্যমে। আসলে সবাই চায় নিজের বন্ধু, পরিবার, পরিজন নিয়ে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যেতে।
বাংলাদেশ অপরুপ সৌন্দর্যের দেশ। আমাদের দেশে এমন সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা দেশী পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি দেরও মন কেড়েছে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সিলেটের সব দর্শনীয় স্থান। কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হলো সাজেক ভ্যালি।
আপনি যদি একবার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে যান, সেখানকার প্রকৃতির নীরব ছোঁয়া আপনার দৈন্দিন জীবনের ক্লান্তি এক নিমিষেই মুছে দিবে। কিন্তু ভাবছেন কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খাবেন কি, আর খরচ বা পড়বে কেমন? কোন চিন্তা নেই।
কারন আজকের আর্টিকেলে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ এর তথ্য আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাই আমি আশা রাখব অবশ্যই আপনি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন। চলুন শুরু করা যাক।
আরও পড়ুনঃ
সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত
রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত হলো সাজেক ভ্যালি । বাংলাদেশের মধ্যে সব থেকে বড় ইউনিয়ন হলো সাজেক, যার আয়তন হচ্ছে প্রায় ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক এর উত্তরে আছে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রয়েছে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে আছে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিমে অবস্থান করছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।
সাজেক ভ্যালি যদিও বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত, কিন্তু এর যাতায়াত সুবিধা বেশি হলো খাগড়াছড়ি এর দীঘিনালা থেকে এবং খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং দীঘিনালা থেকে এর দূরত্ব ৪৯ কিলোমিটার। আর বাঘাইহাট থেকে সাজেক ভ্যালি ৩৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
মুলত খাগড়াছড়ি জেলাটি থেকে দীঘিনালার যে আর্মি ক্যাম্প আছে সেটি পেরিয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে হয়। তারপর সেখানে আছে কাসালং ব্রিজ, মুলত ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে। কাসালাং ব্রিজের পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজারটি পার হওয়ার পরই পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া। যার উচ্চতা প্রায় ১৭২০ ফুট।
সাজেক এর শেষ গ্রামটি হলো কংলক পাড়া। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থান করছে এবং আরও জেনে রাখা ভালো এটি সাজেকের সর্বোচ্চ উচ্চতাও। এটিও কিন্তু লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। এই শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পর্বত দেখা যায়।
আর সেখান থেকেই মুলত কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি স্থল। আর এই এরিয়াতে বিজিবি ক্যাম্প ছাড়া অন্য কোন ক্যাম্প নেই। তাই নিরাপত্তা জনিত কারণে কংলাক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না।
সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
আপনি চাইলে সারা বছরের যেকোনো সময়েই সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে সতর্কতার খাতিরে বলছি শুধু মাত্র ভরা বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ না করাই উত্তম। কারন বর্ষা ঋতুতে রাস্তাতে পাহাড়ি ধস নামতে পারে, তাই সাজেক ভ্রমণের ভাল সময়টা হলো বর্ষার পরে শীতের শুরুর দিকে।
এই সময়টা সাজেক ভ্রমণ আদর্শ সময়। আর এই সময় গেলে আপনি সেখানে প্রচুর মেঘও দেখতে পারবেন। তবে হ্যাঁ কড়া গরম এড়িয়ে প্ল্যান করাটাই শ্রেষ্ঠ হবে।
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
সাজেকের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে সেখানে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারন সন্ধ্যার পর সাজেকের আসল সৌন্দর্য দেখা দেয়। তখন দিনের বেলা জমে থাকা মেঘগুলো সরে যায় এবং মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন যায়।
আর তখনই সেখানে মিটিমিটি করে জ্বলে উঠে একটি দুটি তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি দুটি থেকে সহস্র তারা আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে। আর সেটাই হয়ত হতে পারে আপনার সাজেক ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আনন্দ। তাছাড়া এখানকার ঘরগুলো দেখতেও বেশ চমৎকার ও আকর্ষনীয়। ছোট ছোট মাচার উপর করা ঘরগুলো আপনার নজর কাড়বেই।
তাছাড়া এখানকার পাহাড়, পাহাড়ি ঝর্ণা, ধুশর মেঘ সব কিছুই আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। এখানে আসলেই আপনি অনুভুব করবেন এক প্রকার শান্তি, যা আপনার ব্যস্ত জীবনের সকল ক্লান্তি দূর করে দিবে এক নিমিষেই।
যদি ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চান, তবে হ্যালি প্যাডে চলে যাবেন অবশ্যই। সেজন্য আপনাকে উঠতে হবে খুব ভোরে। আর আপনি চলে যাবেন এক বা দুই নম্বর হ্যালি প্যাডে। এখানে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদা মেঘের ওপর যখন ঠিকরে পড়ে তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের সূচনা হয়। মনে হবে এ যেন স্বর্গীয় সুখের একটি বিন্দু পরিমান অংশ বিশেষ।
সাজেক কোন জেলায় অবস্থিত
যেহেতু সাজেক পাবর্ত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত। সাজেক যাওয়ার অনেক উপায় আছে। যেমন আপনি খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। আবার রাঙামাটি এসে সেখান থেকেও সাজেকে ট্রাভেল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে রাঙামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ করার জন্য সড়ক ও নৌপথে দুটো জায়গাতেই আলাদা রুট আছে।
রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকালের ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে বাঘাইছড়ির লঞ্চ ছাড়ে। আর লঞ্চে করে যেতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে। এতে ভাড়া জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। আর যদি সড়ক পথে যেতে চান তবে রাঙামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে বাস ছাড়ে।
সেখান থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে ৫/৬ ঘন্টা। ভাড়া হবে জনপ্রতি ২শ টাকা আবার আপনি বাঘাইছড়ি থেকে মোটর সাইকেলে করেও সাজেক যেতে পারবেন। মোটর সাইকেল ভাড়া নিলে আসা যাওয়া জনপ্রতি খরচ পরবে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা।
সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
সাজেক যাওয়ার অনেক উপায় আছে। তাই আপনি সাজেক আসতে চাইলে আপনার নিজ জেলা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি অথবা খাগড়াছড়ি সরাসরি আসতে হবে। এরপর এখান থেকে আপনি সাজেক যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে শ্যামলী, হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে করে আপনি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন।
আর এজন্য ভাড়া জনপ্রতি পড়বে ৫২০ টাকা। আর যদি সরাসরি দীঘিনালা যেতে চান তবে শান্তি পরিবহনের বাস যায়। সেখানে একজনের ভাড়া ৫৮০ টাকা। তাছাড়া বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাসও খাগড়াছড়ি যায়।
- সেন্টমার্টিন পরিবহন, আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১, ০১৭৬২৬৯১৩৪০ খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮
- শ্যামলী পরিবহন, আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১, কল্যাণপুরঃ- ৯০০৩৩৩১, ৮০৩৪২৭৫ আসাদগেটঃ- ৮১২৪৮৮১, ৯১২৪৫৪ দামপাড়া, চট্টগ্রামঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫, ০১৭১১৩৭৭২৪৯
- শান্তি পরিবহন, আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ অক্সিজেন, চট্টগ্রামঃ ০১৮১৭৭১৫৫৫২
সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে সুবিধা। কারন খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব হলো প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আপনারা চাইলে এক গাড়িতে করেই ১২-১৪ জন খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর থেকে মাহিন্দ্রা বা চান্দের যেকোনো গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি নিয়েও সাজেক যেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে যদিও সিএনজি নিয়ে যাওয়াটা আপনার জন্য খুব ঝুকিপূর্ণ। কারন সিএনজি চালক যদি অভিজ্ঞ না হোন তবে উল্টে যাবার সম্ভাবনা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। আবার চাইলে কেউ খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ভাড়া পরবে ৪৫ টাকা।
এখান থেকে মোটর সাইকেল ভাড়া করেও যাওয়া যায়। মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া পরবে ১০০ টাকা। আর দীঘিনালা থেকে কিন্তু ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে একটি মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও পুরো সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই কিন্তু ফেরার পথে সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হব্, না হলে কিন্তু অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
আরেকটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, সেখানে ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ। খাগড়াছড়ি সিএনজি সমিতি যোগাযোগের জন্য মােবাইল নাম্বারঃ- ০১৮৪১০৪৮২০০, ০১৮৪১০৪৮২১১
চট্টগ্রাম থেকে সাজেক যাওয়ার উপায়
সাজেক যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত, তাই আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এর কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন BRTC এর এসি বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা। তাদের ফোন নাম্বার – ০১৬৮২৩৮৫১২৫।
তাছাড়া চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকেও শান্তি পরিবহনের বাস সহ বেশ কিছু লোকাল বাস ছাড়ে, এক্ষেত্রে আপনি এসি, নন-এসি দুই ধরনের বাসই পাবেন। শান্তি পরিবহনের নন-এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি পরবে ১৯০-২০০ টাকা। আর এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকা। এভাবে বাসে করে আপনি সরাসরি খাগড়াছড়ি পৌছে সেখান থেকে চান্দের গাড়ি কিংবা সিএনজি করে সাজেক যেতে পারবেন।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এর কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে BRTC এর এসি বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এক চান্দের গাড়ি গাড়িতে করে ১২-১৪ জন করে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। ভাড়া ৫৪০০-১২৫০০ টাকা।
সাজেক যেহেতু পর্যটন কেন্দ্র তাই সেখানে ভ্রমণকারীদের খাওয়ার জন্যে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে। সব জায়গায় প্রতিবেলা ২০০ টাকায় ডাল, ভাত, সবজি, দেশী মুরগীর প্যাকেজসহ খাবার পাওয়া যায়। আর যদি আপনার বারবিকিউ করতে ইচ্ছে করে তাহলে এখানে খরচ পরবে ২২০-২৫০ টাকা।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রেস্টুরেন্টের মধ্যে আছে – ফুডানকি রেস্টুরেন্ট, মারুতি দিদির রেস্তোরাঁ , চিম্বাল রেস্টুরেন্ট, কাশবন রেস্টুরেন্ট, মন টানার রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্তোরাঁর খাবারের মান বেশ ভালো।
তাছাড়া যদি খাগড়াছড়ি ঘুরে সেখান দিয়ে সাজেক যান তবে খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সিস্টেম রেঁস্তোরার অবস্থান। এখানে আবার আপনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী সকল খাবার খেতে পারবেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করার কিছু নাম্বার- ০৩৭১-৬২৬৩৪, ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩, ০১৭৩২৯০৬৩২২।
সাজেকের রিসোর্ট ও হোটেল
পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণকারীদের থাকার জন্যে সেখানে অনেকগুলো রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সেখানে বেসরকারি ভাবে প্রায় একশোটির মত রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আধুনিক মানের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কটেজ এবং রুম।
ইতিমধ্যে সাজেকে সেনাবাহিনীর ৩টি রিসোর্ট ছাড়াও আরও বেশ কিছু রিসোর্টে রয়েছে। যেগুলো আছে ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ, আধুনিক মানের টয়লেট সুবিধা, বিশাল বড় বড় ঝুল বারান্দাসহ অনেককিছু। নিচে সাজেকের বেশকিছু আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের তথ্য দেওয়া হলোঃ
সাজেক রিসোর্ট
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট। এখানের রুম গুলো বেশ সুন্দর। এখানে খাবারের জন্য আছে বেশ সুন্দর ব্যবস্থা। মোবাইলঃ ০১৮৫৯০২৫৬৯৪, ০১৮৪৭০৭০৩৯৫
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট
সর্বমোট ৪টি কটেজ নিয়ে মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট তৈর। আর এখানকার প্রতিটি কটেজই একটি থেকে আরেকটি আলাদা। ভ্রমণকারীরা যাতে সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে তাই সেইভাবেই কটেজগুলো বানানো হয়েছে। এখানে প্রতিটি কটেজে আছে একটি করে কাপল বেড এবং এক্সট্রা ফ্লোরিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। এর ফলে প্রতিটি কটেজেই চারজন করে বেশ সহজেই থাকতে পারেন।
আর এখানে প্রতিটি কটেজেই আছে অত্যাধুনিক মানের টয়লেট সুবিধা, ২৪ ঘন্টায় পানির সুবিধা, বিদ্যুৎ চলে গেলে সাথে সাথে জেনারেটর সুবিধা তাছাড়া আছে আলাদা আলাদা বারান্দা।
এখানে তারাশা কটেজটির ভাড়া পড়বে ৪৫০০ টাকা, আর পূর্বাশা, রোদেলা এবং মেঘলা কটেজগুলোর ভাড়া পড়বে ৪০০০ টাকার মত। আপনি যদি মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট এ বুকিং দিতে চান তবে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন – ০১৯১১৭২২০০৭
রুন্ময় রিসোর্ট
রুন্ময় রিসোর্টটিও সাজেকেই অবস্থিত। এই রিসোর্টটির নীচ তলায় মোট তিনটি কক্ষ আছে। এখানে প্রতিটি কক্ষেই সর্বোচ্চ ২ জন থাকতে পারবেন। তবে চাইলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এখান থেকে আপনি অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। আর এখানে আবার চারটি তাবু আছে, আর প্রতি তাবুতে মোট চার জন করে থাকতে পারবেন। রুন্ময় রির্সোটের জন্য যোগাযোগঃ ০১৮৬২০১১৮৫২
মেঘ মাচাং রিসোর্ট সাজেক
যেকোনো রিসোর্ট থেকে সাজেকের সেরা ভিউটা দেখার জন্যে মেঘমাচাং রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে সবার আগে থাকে। এখানে সব মিলিয়ে মোট পাঁচটি কটেজ আছে। যার মধ্যে কিছু আছে কাঠের এবং কিছু আছে বাঁশের কটেজ।
আর সবচেয়ে ভালো বিষয় হল এখানকার সবগুলো কটেজ থেকেই হিলভিউ পাওয়া যায়। প্রতিটি কটেজেই বাথরুম থাকলেও তিনটি কটেজ এর ওয়াশরুমে হাই কমোড, বাকি দুইটি কটেজে এর ওয়াশরুমে লো কমোড দেওয়া আছে। এখানকার কটেজগুলোর ভাড়া সাধারনত ৪০০০ টাকা এবং ছুটির দিনে এগুলোর ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫০০ টাকায়।
আর বাঁশের কটেজগুলোর ভাড়া ৩৫০০ টাকা। কিন্তু ছুটির দিনে তাও বেড়ে যায়। ভাড়া হয় ৪০০০ টাকা। এসব রুমে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ জন থাকা যাবে। তাছাড়া প্রতিটা কটেজেই ফ্যান এর সুব্যবস্থা আছে। যদিও এখানে সরাসরি বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা নেই, তবে ২৪ ঘন্টাই কক্ষ গুলো সোলার পাওয়ার দ্বারা ব্যাকাপ দেওয়া থাকে।
আর এখানে জেনারেটর দেওয়া হয় সন্ধ্যা ৭ টা রাট ১০ টা পর্যন্ত। যদি বুকিং করতে চান তবে এর জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮২২১৬৮৮৭৭ এই নাম্বারে।
জুমঘর ইকো রিসোর্ট
জুমঘর ইকো রিসোর্টে আছে মোট ৬ টি কটেজ রয়েছে। এদের মধ্যে গোলাকার ঘর আছে ৪ টি চারকোণা কটেজ আছে ২টি। গোলঘরে থাকতে পারবেন মোট ৪ জন করে এবং চারকোণা ঘর গুলোতে চাইলে ৫ জন করে একসাথে থাকতে পারবেন।
আর এই রিসোর্টের প্রতি কটেজের প্রতিরাতের ভাড়া মাত্র ৩০০০-৩৫০০ টাকা। আপনি যদি সাজেকের মেঘ উপভোগ করতে চান তবে অবশ্যই এই কটেজের খোলা বারান্দায় দাড়িয়ে তা দেখতে পারবেন। বুকিং এর জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন এই ফোন নাম্বারে – ০১৮৮৪২০৮০৬০
আদিবাসি ঘর
যদি আপনি সাজেকে একদম কম খরচে থাকতে চান তবে কিন্তু আদিবাসি ঘরের কোন বিকল্প নেই। কারন এসব ঘর গুলোতে জন প্রতি মাত্র ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় থাকা যায়। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালো পরিবার বা কাপলদের থাকার জন্য এই ঘর একেবারে আদর্শ নয়।
তাই নিজ বন্ধু বান্ধবরা মিলে যদি কম খরচে সাজেক ঘুরতে চায় এবং সেখানে থাকতে চায় তাহলে আদিবাসি ঘরে থাকা যেতে পারে। এতে করে আপনি সেসকল আদিবাসীদের জীবন যাত্রা সম্পর্কেও কিছুটা ধারনা পাবেন।
খাগড়াছড়ি হোটেল ও রিসোর্ট
আপনি যদি সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে আগে খাগড়াছড়ি আসতে চান তবে সেখানেও থাকার জন্য পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে। যদিও সেখানে দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল আছে, তবে দীঘিনালার গেস্ট হাউজের মান অনেকটা ভালো।
- পর্যটন মোটেল – এটি খাগড়াছড়ি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই সামনে পরবে। এই মোটেলের সব কক্ষই ২ টি বিছানার। এই মোটেলের একটি বিশেষত্ব হলো মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে। তবে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ভোল্টেজ ওঠানামা করে।আর তাই এসি রুমগুলো নন-এসি হিসেবেই ভাড়া দেয়া হচ্ছে। থাকার জন্য করতে পারেন যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
- হোটেল ইকো ছড়ি ইন – খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশেই সুন্দর পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত। এটি মুলত রিসোর্ট টাইপের একটি হোটেল। থাকবার জন্য যোগাযোগ করুনঃ- ০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫ এই নাম্বারে
- দীঘিনালা গেস্ট হাউজ – এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের একদম উল্টো পাশেই অবস্থিত। দীঘিনালার মধ্যে যতগুলো আবাসিক হোটেল আছে সে গুলোর মধ্যে এটি একটু মানসম্মত। যোগাযোগ করুনঃ- নূর মোহাম্মদ(ম্যানেজার) – ০১৮২৭৪৬৮৩৭৭
- হোটেল শৈল সুবর্ন – যোগাযোগঃ- ০৩৭১-৬১৪৩৬, ০১১৯০৭৭৬৮১২
- হোটেল জেরিন – যোগাযোগঃ-০৩৭১-৬১০৭১
- হোটেল লবিয়ত – যোগাযোগঃ-০৩৭১-৬১২২০, ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬, ০১১৯৯২৪৪৭৩০
- হোটেল শিল্পী – ফোনঃ-০৩৭১-৬১৭৯৫
পরিশেষে
বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাজেক ভ্যালি অন্যতম একটি সুন্দর জায়গায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করলে আপনার মন ভালো হবেই নিশ্চিত। আজকের আর্টিকেলটিতে চেষ্টা করেছি সাজেক ভ্যালি বিষয়ক সকল তথ্য দেওয়ার।
আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা কিছুটা হলেও সাজেক ভ্রমণ এর যাবতীয় তথ্য নিয়ে ধারনা পেয়েছেন। তাই আজই শহরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে চলে আসুন না সুন্দরের রানী “সাজেক ভ্যালি তে”। তার রুপ সৌন্দর্যতো আপনার অপেক্ষাতে মুখিয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য অনেক “ধন্যবাদ”।