সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ

সেন্টমার্টিন 

সমুদ্রের নীল বিশালতা সেইসাথে রাশি রাশি ঢেউয়ের গর্জন, যা আপনার মনের ব্যাকুলতা এবং অস্থিরতাকে দূর করার জন্য যথেষ্ট। সমুদ্র ভালোবাসেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া দায়। সমুদ্রের অপূর্ব সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কারোরই নেই। সমুদ্র প্রেমীদের জন্য আজকের আলোচনায় থাকছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল বা কোরাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত। এই দ্বীপ বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণের শেষ স্থানে অবস্থিত। এখানে গেলে অনুভব করবেন প্রকৃতি যেন দুই হাত মেলে এর সৌন্দর্যকে ঢেলে দিয়েছে।

“দক্ষিণের স্বর্গ” নামে পরিচিত এই দ্বীপের খোলামেলা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত এবং সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন যেন নীল রঙের রাজ্যে পরিণত করেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাংচিল, কেয়াবন, সৈকতের স্নিগ্ধ বাতাস সবমিলিয়ে আপনাকে রোমাঞ্চকর অনুভুতি দিবে।

অনিন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপকে অবকাশ যাপনের জন্য পছন্দের শীর্ষে রেখেছিলেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা হুমায়ূন আহমেদ। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :

দূর দ্বীপ-বাসিনী, চিনি তোমারে চিনি।

দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনী গো, সুমন্দভাষিণী॥

  প্রশান্ত সাগরে

    তুফানে ও ঝড়ে

শুনেছি তোমারি অশান্ত রাগিণী॥

আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান

সেন্টমার্টিন – অবস্থান 

বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের শেষ স্থানে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এই দ্বীপের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিনে গড়ে ওঠা এই ছোট দ্বীপ। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে সেন্টমার্টিন এর অবস্থান।

এই দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লম্বা এবং আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এর তিন দিকের ভিত শিলা, যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। এগুলোকে ধরলে সবমিলিয়ে আয়তন হবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত আছে অসংখ্য শিলাস্তুপ। এই দ্বীপ সমতল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩.৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড এবং দ্বীপের মধ্যবর্তী ৯.৬৬ কিলোমিটার প্রশস্ত প্রণালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম  দিক জুড়ে রয়েছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। এখানে মূল সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়াও ১০০ থেকে ৫০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে। এই দ্বীপ গুলোকে স্থানীয়রা ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে ডাকে।

ছেঁড়া দ্বীপ অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, যা বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। এই দ্বীপের পরে দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের মানচিত্রের আর কোনো ভূখণ্ড পাবেন না। 

সেন্টমার্টিন – ইতিহাস

প্রথম কবে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মানুষ শনাক্ত করেছিল সেই সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ২৫০ বছর পূর্বে আরবের কিছু বণিক এই দ্বীপ আবিষ্কার করেছিল। সেই সময় তারা এর নামকরণ করেন “জিঞ্জিরা”। বণিকগণ চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াত করার সময় বিশ্রাম করার জন্য ব্যবহার করত এই দ্বীপ।

কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষজন এই দ্বীপকে জিঞ্জিরা নামেই চিনত। এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করার জন্য ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ আসে। মূলত এরা ছিল মৎস্যজীবী। প্রথম অধিবাসী হিসেবে ১৩ টি পরিবার এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। 

আগে থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউ গাছ ছিল। বাঙালি জেলেরা সম্ভবত পানির কষ্ট এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসেবে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ রোপণ করেছিলেন এখানে। যার ফলে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করেন।

কথিত আছে, অনেক অনেক বছর আগে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে এখানে দারুচিনি বোঝাই করা আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নিচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে। যার ফলে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে পরে এবং পরবর্তীতে এই দ্বীপের নাম হয় “দারুচিনি দ্বীপ”। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এর মতে, ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই দ্বীপকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়। 

প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপে লোক বসতি শুরু হয়। বর্তমানে এই দ্বীপে ১২ হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা মাছ ধরা। পর্যটক এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রধানত তাদের নিকট থেকে মাছ কেনেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র।

২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী আইন ২০১২ অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১,৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখা এবং তৌকির আহমেদের পরিচালিত “দারুচিনি দ্বীপ” সিনেমার শুটিং হয়েছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ Sainmartin
সেন্টমার্টিন দ্বীপ

সেন্টমার্টিন – বর্ণনা 

ভূপ্রকৃতি

ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল সেন্টমার্টিন দ্বীপের। তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়। এই দ্বীপের প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথর। এর উত্তরপাড়া এবং দক্ষিণপাড়া দুই জায়গারই প্রায় মধ্যখানে জলাভূমি রয়েছে। জলাভূমিগুলো মিঠা পানি সমৃদ্ধ এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক। 

জীববৈচিত্র্য

প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর এবং ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে আছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে আছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, উড়ুক্কু মাছ, লাল মাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদবৈচিত্র

কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বুঝায় তা সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেই। তবে এর দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় রয়েছে। দক্ষিণ দিকে আছে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেয়া, শেওড়া, সাগরলতা, বাইন, নারিকেল গাছ ইত্যাদি। 

পর্যটন কেন্দ্র

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন, যা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। নারিকেল জিঞ্জিরা নামে খ্যাত এই দ্বীপটি বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে এখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হতে যাওয়া আসা করে। পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল। আছে একটি সরকারি ডাকবাংলো। 

সেন্টমার্টিন কেন যাবেন 

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আকাশ এবং সমুদ্রের নীল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে। যেদিকে চোখ যাবে শুধু নীল আর নীল। অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল , সাগরের ঢেউয়ের ছন্দ সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে। সারি সারি নান্দনিক নারিকেল গাছ যেন চিরল পাতায় দোলা দিয়ে যায়।

সাগর তীরে বাঁধা মাছ ধরার নৌকা বা ট্রলার, সৈকতজুড়ে কাঁকড়া, ঝিনুক, গাংচিল সবই এই দ্বীপের বৈশিষ্ট্য। স্বচ্ছ পানিতে জেলী ফিস, নানা রকমের সামুদ্রিক মাছ কচ্ছপ এবং প্রবাল সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। 

উপরে নীল আকাশ নিচে সমুদ্রের নীল ঢেউ মুহূর্তেই আপনার মনকে ছুঁয়ে যাবে। মনে হবে প্রকৃতির সাথে মিতালী গড়ে তোলার একমাত্র জায়গা এটি। দ্বীপের মিষ্টি শীতল বাতাস আপনার মন খারাপের সময় একান্ত প্রিয় হয়ে উঠবে। নাফ নদীর ঝাকে ঝাকে গাংচিল যেন আপনাকে অভ্যর্থনা জানায়।

শুধু সমুদ্র দর্শন নয়, সেন্টমার্টিন গেলে মনে হবে আপনি কোন রহস্যের উদঘাটন করতে যাচ্ছেন। এর নির্জনতার রহস্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রহস্য, সাগরতলের বিস্ময়কর রহস্য।

আরও পড়ুনঃ নিকলী হাওর, কিশোরগঞ্জ

সেন্টমার্টিন – স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং 

স্কুবা ডাইভিং মানে পানির নিচে নিজে বহনযোগ্য শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার যন্ত্রের সাহায্যে ডাইভিং করা। স্নোরকেলাররা পানির পৃষ্ঠে সাঁতার কাটে এবং স্নোরকেলের মাধ্যমে শ্বাস নেয়। কিন্তু স্কুবা ডাইভাররা পানির গভীরে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে থাকে। 

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমনে গেলে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি অ্যাডভেঞ্চার করার জন্য আপনি স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং করতে পারেন। সমুদ্রের তলদেশে যে অন্য একটি জগত আছে সেখানে গেলে তা অনুভব করতে পারবেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্বচ্ছ সমুদ্রের নিচে দেখা পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, বিচিত্র রকম জীবন্ত কোরাল, বহুবর্ণের জলজ উদ্ভিদ। মাছের সাথে সাঁতার কাটার সুযোগ পাবেন। স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং করা যায়। 

স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং – যোগাযোগ

  • কোরাল ভিউ রিসোর্ট সেন্টমার্টিন : 01796-446653
  • ওসেনিক স্কুবা ডাইভিং সার্ভিস : 01711-867991
  • ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব : 01711-671130

স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং – খরচ 

  • শুধুমাত্র স্নোরকেলিং : ৭০০ টাকা
  • শুধুমাত্র স্কুবা ডাইভিং : ২৫০০ টাকা
  • একসাথে স্নোরকেলিং এবং স্কুবা ডাইভিং : ৩০০০ টাকা 

কিভাবে যাবেন

সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে আপনাকে টেকনাফ যেতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে বাসে করে আপনি টেকনাফ যেতে পারবেন।  আপনি চাইলে কক্সবাজার থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করেও টেকনাফ যেতে পারবেন।

ঢাকা-টেকনাফ

রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুল এবং সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে টেকনাফে যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। এস আলম, মডার্ন লাইন , ঈগল, শ্যামলী, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস টেকনাফে যায়।

সময় লাগবে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা। বাস অনুযায়ী ভাড়া সাধারণত ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি চাইলে প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে টেকনাফে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্লেনেও সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়া যায়। 

ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার গাড়িতে বাসে উঠলে সকাল ৬/৭ টার মধ্যে দমদমিয়া জাহাজ ঘাট বা টেকনাফ শহরে নেমে জাহাজ অথবা ট্রলারে যেতে পারেন। জাহাজ মিস হলে ট্রলার অথবা স্পিডবোটে  করে যেতে পারবেন। 

কক্সবাজার-টেকনাফ

কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, জিপ এসব ভাড়া করে টেকনাফে যেতে পারবেন। বাস ভাড়া ১৫০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। অবস্থাভেদে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগবে প্রায় দুই ঘন্টা। সকালের জাহাজ ধরতে চাইলে কক্সবাজার থেকে ভোর ৬ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। এছাড়াও কক্সবাজার থেকে “এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস” শীপে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। 

চট্টগ্রাম-টেকনাফ

চট্টগ্রাম জেলার সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২ টায় ছেড়ে যায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে। এছাড়াও জিএসই গরিবুল্লাশাহ মাজার এবং দামপাড়া থেকেও কিছু বাস এই রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যাওয়ার বাস ভাড়া ৫৫০ থেকে ১২০০ টাকা। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার “এমভি বে ওয়ান শীপ” চালু হয়েছে। 

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন

নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সাধারণত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন জাহাজ বা শীপ আসা-যাওয়া করে। এই রুটে চলাচলকারী শীপের মধ্যে রয়েছে কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক ইত্যাদি। দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে। 

জাহাজের ক্লাস এবং মান অনুযায়ী সেন্টমার্টিন যাওয়া এবং আসার টিকেট ভাড়া ৮৫০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেকনাফের জেটি ঘাট থেকে জাহাজগুলো প্রতিদিন সকাল ৯ঃ০০-৯ঃ৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেন্টমার্টিন থেকে বিকাল ৩ঃ০০-৩ঃ৩০ মিনিটে ফেরত আসে।

জাহাজগুলোর টিকেট সাধারণত যাওয়া এবং আসা সহ হয়ে থাকে। টিকেট করার সময় কবে ফিরবেন তা অবশ্যই উল্লেখ করবেন। নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল এই ৫ মাস সাধারণত জাহাজ চলে। অন্য সময় যেতে চাইলে ট্রলার অথবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীতের মৌসুম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই মৌসুমে ভ্রমণ করা নিরাপদ নয়।

টেকনাফ নামারবাজার ব্রিজ অথবা জেটি ঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোট এবং মালবাহী ট্রলার ছাড়ে। সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ট্রলার ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে এই ভাড়া সিজন এবং যাত্রীভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগবে সেন্টমার্টিন যেতে। 

কোথায় থাকবেন

সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার জন্য আছে বেশ কিছু হোটেল এবং রিসোর্ট। বেশিরভাগ রিসোর্ট গড়ে উঠেছে ইকো ট্যুরিজমের কথা মাথায় রেখে। এখানকার হোটেলগুলো গড়ে উঠেছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত কংক্রিটের দালাল হয়ে। সেন্টমার্টিন এর হোটেল এবং রিসোর্ট এর তালিকা নিচে দেওয়া হল : 

১. হুমায়ূন আহমেদ এর সমুদ্র বিলাস (পশ্চিম বীচ) : 01911-920666

 ২. শায়রি ইকো রিসোর্ট (গলাচিপা) : 01711-232917  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

৩. ব্লু মেরিন রিসোর্ট: 01713-399001, 01841-399250, ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। 

৪. অবকাশ পর্যটক লিঃ: 01716-789634  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৩ হাজার  টাকা। 

৫. এস কে ডি রিসোর্ট (বিছানাকান্দি) : 01797-261261  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। 

৬. কোরাল ব্লু রিসোর্ট : 01713-190013, 01713-190007

৭. কিংসুক ইকো রিসোর্ট (গলাচিপা) :  01753-222286 ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 

৮. সিটিভি রিসোর্ট : 01815-632037  ভাড়া : ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 

৯. ডায়মন্ড সি রিসোর্ট (পশ্চিম বীচ): 01677-577899  ভাড়া : ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

১০. ড্রিম নাইট রিসোর্ট (পশ্চিম বীচ): 01812-155050  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

১১. হোটেল স্যান্ড শোর (বাজার এলাকা) : ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

১২. হোটেল সী ইন (বাজার এলাকা) : 01722-109670  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

১৩. হোটেল সী ফাইন্ড (পশ্চিম বীচ): 01626-182725  ভাড়া : ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। 

১৪. ফরহাদ রিসোর্ট (পশ্চিম বীচ): 01912-760010  ভাড়া : ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। 

১৫. ব্লু লাগুন রিসোর্ট (পশ্চিম বীচ জেটির পাশে) : 01818-748946  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। 

১৬. কোকোনাট কোরাল রিসোর্ট (বিলাইবান্ধা) : 01790-505050  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। 

১৭. লাবিবা বিলাস রিসোর্ট (ওয়েস্ট বীচ) : 01714-634762  ভাড়া : ৩০০০ থেকে ১২০০০ টাকা। 

১৮. লাইট হাউস রিসোর্ট (পশ্চিম বীচ): 01819-03636  ভাড়া : ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বাড়ি

কোথায় খাবেন  

সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর প্রায় সকল আবাসিক হোটেলেই রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাই আপনি চাইলে সেই সব রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। এছাড়াও এসব খাবার হোটেলের বাইরে সাজিয়ে রাখা হয় হরেক রকম জ্যান্ত মাছ। সেখান থেকে আপনার পছন্দমত মাছ বেছে অর্ডার করতে পারবেন।

রাতের বেলা বার-বি-কিউ করার ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার পছন্দের মাছটি বাছাই করে ওদেরকে অর্ডার করলে বার-বি-কিউ করে দিবে। 

সেন্টমার্টিন বাজারে বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। আপনি যদি রাতে না থেকে দিনেই ফিরতে চান সেক্ষেত্রে বাজারের হোটেল থেকে খেতে পারেন। কয়েকটি হোটেল এবং রেস্তোরাঁর তালিকা দেওয়া হল:

  • কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ 
  • বিচ পয়েন্ট 
  • হোটেল আল্লার দান 
  • বাজার বিচ 
  • আসাম হোটেল 
  • সি বিচ  
  • সেন্টমার্টিন 
  • কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট 
  • রিয়েল রেস্তোরাঁ
  • হাজী সেলিম পার্ক  
  • সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক 
  • হোটেল সাদেক ইত্যাদি 

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা 

  • জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখবেন সেন্টমার্টিনে যাওয়া আসা করার সময়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য যেকোনো চেকিং এ জাতীয় পরিচয় পত্র লাগতে পারে। 
  • যেহেতু সমুদ্র পথে যেতে হবে তাই সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে অবশ্যই স্থানীয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যাবেন। 
  • সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের দেশের সম্পদ। তাই সেখানকার ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
  • মোবাইলে ফ্রিকুয়েন্সি কম থাকায় কথা বলতে সমস্যা হতে পারে মোবাইলে। এই ক্ষেত্রে টেলিটক সিম তুলনামূলকভাবে ভালো সার্ভিস দেয়। 
  • সেন্টমার্টিনে বর্তমানে নিয়মিতভাবে বিজিবি টহল দেয়। অনেক সময় তারা রাত ১২ টার পর পর্যটকদের বীচ বা জেটি এলাকায় থাকতে নিষেধ করেন।  
  • আপনি যদি কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে চান, সেক্ষেত্রে ছুটির দিনগুলোতে না গিয়ে অন্যান্য দিন যেতে পারেন। 
  • সেন্টমার্টিন গিয়ে থাকা এবং খাওয়ার জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। পর্যটকদের জন্য সেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ হোটেল এবং কটেজ। 
  • কেনাকাটা করতে গেলে অবশ্যই সবকিছুর দরদাম করে নিবেন। 
  • মানুষ বেশি হলে আগে শীপের টিকিট কেটে রাখলে ভালো হয়। 
  • নিজেই সবকিছু করার চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে কক্সবাজারের বিভিন্ন এজেন্ট থেকে সেন্টমার্টিন প্যাকেজ কিনে নিতে পারেন। 
  • জাহাজে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার সময় এর ডেক থেকেই অনেক সুন্দর ভিউ পাবেন। 
  • প্রবালের ওপর হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন নইলে পা কেটে যেতে পারে। 
  • সমুদ্রে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। নইলে সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ভাটার সময় বীচে না নামাই উত্তম। 

শেষকথা 

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ অন্যতম। “বঙ্গোপসাগরের টিপ” নামে খ্যাত এই দ্বীপ সবসময়ই পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। এই দ্বীপের সৌন্দর্য আসলে একদিনে উপভোগ করা সম্ভব নয় বা আপনার একদিনে মনও ভরবে না। সবচেয়ে ভালো হয় কমপক্ষে যদি দুইটা রাত থাকতে পারেন।

একদিন রাখলেন সেন্টমার্টিন এর জন্য, আরেকদিন রাখলেন ছেড়া দ্বীপের জন্য। অনেক পর্যটকরা বিকেলের মধ্যেই চলে যায়। তবে বিকেলের পর এই দ্বীপে ঘোরাফেরা করার মজাই আলাদা। আপনার যাত্রাকে আরো সহজ করতে ঢাকা থেকে বিভিন্ন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে যেতে পারেন।

ভ্রমণ প্যাকেজগুলোতে সাধারণত ১ রাত বা ২ রাত থাকা, যাওয়া-আসার খরচ, খাবার খরচসহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

সেন্টমার্টিন সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s

১. সেন্টমার্টিন এর দৈর্ঘ্য কত বর্গ কিলোমিটার ? 

উত্তর : সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। 

২. সেন্টমার্টিন কখন যাওয়া যায়?

উত্তর : টেকনাফ থেকে জাহাজ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।

আরও পড়ুন-

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা – চট্টগ্রাম

বায়েজিদ বোস্তামী মাজার – চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন