রামু রাবার বাগান
রামুর রাবার বাগান, ভ্রমনপিপাসুদের কাছে পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক নতুন আকর্ষণের নাম। বাগানটি কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।
বাগানের প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশ দর্শনার্থীদের যথেষ্ট আনন্দ দেয়। বর্তমানে রামু রাবার বাগান পর্যটকদের কাছে অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মহেশখালী আদিনাথ মন্দির
রামু রাবার বাগানের অবস্থান
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিমি দূরে ও রামু চৌমুহনী থেকে ২কিমি উত্তরে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তৃত এই রাবার বাগান। বাগানের পূর্ব পার্শে রয়েছে রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।
১৯৬০ -৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন নিজ উদ্যোগে অনাবাদি জমি জরিপ করে ৩০ একর জমিতে রাবার বাগান প্রতিষ্ঠিত করে। মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে সরকারিভাবে বাগানে রাবার চাষ শুরু হয়।
উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকায় রাবার চাষ করে কাচা রাবারে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা।
বর্তমানে বাগানটি ২ হাজার ৬৮২ একর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩০ একর এলাকা থেকে কষ সংগ্রহ করার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যাবহার করে।
বাগানে মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৬১৬ টি গাছ রয়েছে যার মধ্যে উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৫৮ হাজার। মহাসড়কের দুই পাশ ঘেসে চা বাগান এলাকা থেকে উত্তর এ জোয়ারিয়ানালার মালাপারা, পূর্বে জুমছড়ি, গর্জনিয়া, দক্ষিনে লট উখিয়ার ঘোনা পর্যন্ত বাগানের অবস্থান।
মুলত সারা বছরই রাবার উৎপাদন করা হয়। তবে অক্তবর-জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাস হচ্ছে ভরা মওসুম।
মওসুমে প্রতিদিন রাবারবাগান থেকে ৫ হাজার কেজি কষ সংগ্রহ করা হয়। তবে শীতে কষ আহরন বেশি হয়। বর্ষাকালে কষ উৎপাদন তুলনামুলক কম থাকে।
বাগান থেকে কষ সংগ্রহ করার পর সাত দিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কষকে শুকনো রাবারে পরিনত করা হয়। প্রতি বছরে আনুমানিক আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদন করা হয়।
একটি রাবার গাছ আনুমানিক ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করতে পারে। ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো উৎপাদন ক্ষমতা হারায়।
বর্তমানে এই বাগানটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রাবার বাগান দেখতে রামু রাবার বাগান এ ঘুরতে আসেন। রামু রাবার বাগান এর খোলামেলা পরিবেশ পিকনিক স্পট হিসেবে ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কিভাবে যাবেন
রামু রাবার বাগান যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার যেতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সায়দাবাদ, গাবতলি, মহাখালী, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল থেকে সোহাগ, ঈগল, গ্রিন লাইফ ও হানিফ পরিবহনের বাস রয়েছে।
এছাড়াও ট্রেনে বা বিমানে করেও চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে সিএনজি, অটো রিক্সা বা টমটমে করে রামু রাবার বাগান যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
রামু রাবার বাগান এ থাকার মত আশেপাশে তেমন কোন রিসোর্ট বা কটেজ নেই। তবে বাগান কর্তৃপক্ষের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে।
অনুমতি সাপেক্ষে এই রিসোর্টে থাকার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও থাকতে চাইলে কক্সবাজারের বিভিন্ন রিসোর্টে থাকার ব্যাবস্থা জরতে হবে।
কোথায় খাবেন
রামু উপজেলায় খাবার জন্য বেশ কিছু মধ্যম মানের রেস্তরা রয়েছে। তবে কক্সব্জার থেকে রামু খুব কাছে হওয়ায় কক্সবাজারে খাওয়ার ব্যাবস্থা করাই ভাল।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানসমুহ
কক্সবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমুহের মধ্যে, সমুদ্র সৈকত, মহেশখালী, ইনানি সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন, হিম ছড়ি, ছেরা দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, শাহ পরীর দ্বীপ, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, মেরিন ড্রাইভ রোড, রামু বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি অন্যতম।
রামু রাবার বাগান – ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ
১। শীতকাল কষ আহরনের উপযুক্ত সময়। তাই এই সময় ঘুরতে যাওয়া ভাল।
২। বাগানে প্রবেশে কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সম্ভব না।
৩। কারখানার মধ্যে চুল্লি গুলো অনেক উত্তপ্ত থাকে। তাই সাবধানে থাকতে হবে।
৪। বাগানের ভিতরে কোন ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
আরও পড়ুন-
কক্সবাজার বিচের নাম, দর্শনীয় স্থান ও সকল তথ্য
মেরিন ড্রাইভ রোড, ভ্রমন গাইড ও দর্শনীয় স্থানসমুহ