পদ্মা রিসোর্ট
ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম, অপরূপ সুন্দর একটি রিসোর্ট যার নাম পদ্মা রিসোর্ট (Padma Resort)। যারা নগর জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে চান, একই সাথে প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্য পেতে চান,
ঢাকার আশে পাশে পরিবার নিয়ে একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে চাচ্ছেন। তাদের জন্য লৌহজংয়ের পদ্মা রিসোটটি একটি আদর্শ স্থান হতে পারে। যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, কোলাহল, এবং সর্বোপরি নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে আপনার মাঝে নির্মল প্রশান্তির দিতে পারে।
পদ্মা নদীর মাঝে জেগে উঠা চরে গড়ে উঠা এই রিসোর্টটি। প্রাত্যহিক ধরাবাঁধা নিয়মের বাহিরে এসে এখানে পরিবার নিয়ে অথবা, বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় কাটানো মুহূর্ত গুলো আপনাকে আগামী কিছুদিনের জন্য আরও উদ্যমী করে তুলতে সক্ষম। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক- পদ্মা রিসোর্ট ভ্রমন সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
আরও পড়ুনঃ মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল
পদ্মা রিসোর্ট এ যা আছে
শীতকালে কটেজের চারপাশ নানা রঙ বেরঙের ফুল আর অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে। ভোরে আগমনী পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজে ভরে ওঠে চারিদিক। আর বর্ষায় ভেসে যায় পানির রাজ্যে, তখন দূর থেকে কটেজগুলোকে মনে হয় ভাসমান দ্বীপের মতো। এছাড়া রিসোর্টটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক ইজি চেয়ারের ব্যবস্থা।
যেখানে বসে অনায়াসে আপন মনে যে কেউই রাতের তারা গুনতে পারেন, আর দিনে ঘুরে বেড়াতে পারেন দেশি নৌকায় পদ্মা বুকে। এই রিসোর্টটির যে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য পদ্মার টাটকা ইলিশের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া এখানে শাকসবজি, গরু, মুরগি আর হাঁসের মাংসের, এমনকি মৌসুমি ফলমূলের ও ব্যবস্থা রয়েছে।
রিসোটের বাইরের দিকটায় আছে কিছু বিচ চেয়ার। যেখানে হেলান দিয়ে বসে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা উপভোগ করতে পারবেন নদীর পারের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রিসোর্টের ভেতরের দিকটায় বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত একটি রেস্টুরেন্ট।
যেখানে অনায়াসেই ২০০ জনের মতো বসার জায়গা আছে। যারা নৌকায় করে ঘুরতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের ছোট বড় নৌকার ব্যবস্থা। সেই সাথে আছে বাঙালির আদি ঐতিহ্য বাহারি পালতোলা নৌকার ব্যবস্থাও। এখানে রাবার বোটেরও ব্যবস্থা রয়েছে যাতে ২ থেকে ৬ জন বসতে পারে অনায়াসেই। তাছাড়া রিসোটটির নিজস্ব স্পিড বোট ব্যবস্থাও রয়েছে।
আর যাদের মাছ ধরার শখ তারা আলাদা করে ফিশিং বোটেও চড়তে পারেন। সব বোটেই লাইফ জ্যাকেটের আলাদা ব্যবস্থা আছে। নদীর ধারের পড়ন্ত বিকেলে রিসোর্টটিতে আপনি চাইলে আপনার পরিবারের সদস্য অথবা, বন্ধুদের সাথে মেতে উঠতে পারেন বিভিন্ন খেলায়, যেমন: ক্রিকেট, ফুটবল, বিচ ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ঘুড়ি উড়ানো, ফ্রিজবি, এমনকি আমাদের দেশীয় ও আঞ্চলিক খেলাগুলো চাইলেও খেলতে পারবেন।
তবে সরকারী ছুটির থাকলে অবশ্যই যাবার আগে আগেই কটেজ বুক করে যেতে ভুলবেন না যেনো। অন্যথায় পদ্মা রিসোর্ট ফাকা পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আগে থেকে যদি কেউ বুক করতে চান তাহলে পদ্মা রিসোর্টের ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে যে অফিস রয়েছে সেখানে আপনাকে বুকিং মানি দিয়ে বুক করে নিতে হবে।
পদ্মা রিসোর্ট যাওয়ার উপায়
ঢাকা বা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনেক ভাবেই আপনি পদ্মা রিসোর্ট টিতে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে আসেন তখন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন। প্রতিদিন ঢাকার গুলিস্থান থেকে এই রুটে ছেড়ে আসে গাংচিল এবং ইলিশ পরিবহন। বাসে এলে জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৭০ টাকা। এছাড়া মিরপুর ১০, ফার্মগেট , শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন এ করে।
অন্যাদিকে যদি মাওয়া ঘাট হয়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে যেতে পারেন গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহনে করে। এই বাসটিও মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া রুটে চলাচল করে, কিংবা গোধুলী পরিবহনে (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া) করেও আপনি ঘাটে পৌঁছাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেরীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানায় যাবার পথের যে চৌরাস্তা মোড় রয়েছে, সেখানে নেমে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ গেলেই চলবে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০ টাকা।
আর আপনার সাথে যদি গাড়ি থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই। সেক্ষেত্রে যাত্রাপথে আপনাকে দুই জায়গায় সর্বমোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা’র সামনে অনেক ফাকা জায়গা রয়েছে। লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটেই রয়েছে অনেক ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং স্পিডবোট। তাছাড়া মাওয়া ফেরিঘাট হতে রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোটে করে সরাসরি রিসোটেও চলে যেতে পারেন।
যদি আগে থেকে ফোনে যোগাযোগ করা থাকে তবে রিসোর্টের নিজেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে আপনাকে তারা রিসোর্টে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে। অবশ্য এই ভাড়ায় আসা-যাওয়ার উভয় পারাপারই রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সুন্দরবন ভ্রমণ : ইতিহাস, যাওয়ার উপায়, ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থান
পদ্মা রিসোর্ট কটেজ ভাড়া
সারাদিনের জন্য কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) এবং সারাদিন সমেত রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)।
এছাড়া রিসোটের নিজস্ব নৌযানে করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে খরচ হবেঃ
নদীর পানিতে গোসল করা কিংবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা),
নদীর পানিতে গোসল করা কিংবা সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা)
অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা) করে ঘুরতে পারেন পদ্মার নদীর অপার সৌন্দয্য।
পদ্মা রিসোর্ট গিয়ে কোথায় থাকবেন
এই রিসোটে রয়েছে সর্বমোট ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজ। যার মধ্যে ১২টি কটেজের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাই, ১২ মাসের নাম অনুসারে, আর বাকি ৪টি কটেজের নাম দেয়া হয়েছে বাংলা ঋতুর নামে। বলে রাখা ভালো যারা একটু বেশি নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করেন তাদের জন্য রিসোটের সর্ব পশ্চিমের কটেজগুলো বেশ মানানসই ই হবে। আর এই কটেজগুলোর নাম করণ বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী শুরু হয়েছে।
প্রতিটি কটেজেই আছে একটি বড় বেড রুম, দুটি সিঙ্গেল বেড রুম, একটি ড্রইং এবং ডাইনিং রুম। আছে দুটো ব্যালকনি এবং একটি বাথরুমের ব্যবস্থ ও। তাছাড়া প্রতিটি কটেজে অনায়াসেই ৮ জন করে থাকা যাবে। এখানকার কটেজগুলোতে বিশেষ আকর্ষন হিসেবে রয়েছে সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি করা ঘরের চাল।
রিসোটটির দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলা সাজানো হয়েছে এক সেট সোফা, টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, উপরের তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক ফিটিংসহ কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম এবং বসার জন্য রয়েছে সুবিশাল বারান্দা।
এছাড়াও ২য় তলায় পেয়ে যাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, সেইসাথে মাঝখানে সেন্টার টেবিল ও ওয়ারড্রোবেরও দেখা পাবেন রুমগুলোয়। তবে কটেজগুলো বেশ সুসজ্জিত এবং ছিমছাম হওয়ায় কটেজগুলো দেখলে যে কারোরই পছন্দ হতে বাধ্য।
পদ্মা রিসোর্ট খাবার ব্যবস্থা
পদ্মা রিসোর্ট আছে সু-সজ্জিত একটি রেস্টুরেন্ট। যা ২০টি টেবিল ও চেয়ারের সমন্বয়ে সাজানো। যেখানে অনায়েসে প্রায় ২০০ জন লোক একসাথে খেতে পারবে, এবং চাইলে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টির ও আয়োজন করা যাবে। এখানকার খাবারের ম্যেনুতে আপনি ভর্তা, পরোটা, ভাত, সবজি, ডিম, চা, ডাল, মাছ, মাংস, খিচুরি, বিরিয়ানী, পোলাও, কাচ্চি, কাবাব, ফাস্ট ফুড আইটেম থেকে শুরু করে কোল ড্রিংকস সহ প্রায় সব ধরনের খাবারের আইটেম ই পেয়ে যাবেন।
তবে পদ্মা রিসোর্ট খাবারের দাম অনান্য রিসোটের তুলনায় তুলনামূলক বেশি এবং এখানে বাহিরে থেকে খাবার আনারও কোনো অনুমতি নাই। তবে এন্ট্রির সময় এখানে আগত পর্যটকদের চেক করা হয় না, তাই আপনি চাইলে আপনার ব্যাকপ্যাকে করে আলাদা করে খাবার নিয়েও এখানে আসতে পারেন।
পদ্মা রিসোটে সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ
পেইজ: পদ্মা রিসোট বিডি, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ
মোবাইলঃ ০১৭১২-১৭০৩৩০, ০১৭৫২-৯৮৭৬৮৮
রিসোটেঃ ০১৭৪৬-০২৬১৩৪, ০১৬২৫-৭৮৮৯২০
ইমেইলঃ info@padmaresort.net
ওয়েবসাইটঃ padmaresotr.net
ফেসবুকঃ Padma Resort
পদ্মা রিসোর্ট নিয়ে আমাদের শেষ কথা
সর্বোপরি, আপনারা যদি রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি কোথাও ভ্রমণ করতে চান সেক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় পদ্মা রিসোট কে বেছে নিতে পারেন। এখানকার নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং পদ্মা পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দররয আপনাদের দারুণ কিছু সময় উপহার দিবে।
আশা করছি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা মুন্সীগঞ্জ জেলার পদ্মা রিসোট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়া আপনারা যদি এ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান বা কোনো বিষয় নিয়ে সংশয় থাকে। তাহলে উপরের দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।
আর এতক্ষণ যাবৎ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি, সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর নিরাপদে ভ্রমণ করুন।
আরও পড়ুন-
নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ভ্রমন