নীলগিরি বান্দরবান

নীলগিরি 

আপনি যদি নিরিবিলি পরিবেশে দিগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে নীলগিরিতে। নীলগিরি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় মেঘ ছুঁতে পারা যায় এমন একটি পাহাড়।

সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে হবে নীলগিরি তে। উঁচু অবস্থান করার কারণে বাংলাদেশের সর্ব উঁচুতে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নীলগিরির (nilgiri) পরিচিতি সারা দেশজোড়া! 

এই বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রতিষ্ঠিত করার পর থেকেই এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশব্যাপী মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পূর্বে নীলগিরি (nilgiri) খুব একটা জনপ্রিয় ছিলো না।

মূলত একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এটি ধীরে ধীরে মানুষের চক্ষুর কাছাকাছি আসতে শুরু করে। বান্দরবান থেকে নীলগিরি দিনে গিয়ে দিনেই বান্দরবান ফিরে আসতে পারে। এ কারণে অনেকেই বান্দরবান ট্যুরের অংশ হিসাবে এই নীলগিরি ভ্রমনকে বেছে নেন।

আরও পড়ুনঃ মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান

নীলগিরি পাহাড়

নীলগিরি মূলত বান্দরবানে অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে গেলে একটি পাহাড়ের দেখা মিলবে। আর এই পাহাড়টি ২২০০ ফুট উঁচু। যা নীলগিরি পাহাড় হিসাবে জনপ্রিয়। নীলগিরির পাশাপাশি এই পাহাড়কে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলে থাকে অনেকেই৷ 

বলে রাখা ভালো নীলগিরি (nilgiri) পাহাড়ে গেলে নিরাপত্তা জনিত কারণে আপনাকে সেনা চেকপোষ্টে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। যাওয়ার সময় এই বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হলেও আসার সময় কিন্তু চিম্বুক পাহাড়ে কিছু সময়, তারপর শৈলপ্রপাত ঝর্ণাতেও নিশ্চিন্তে বেশকিছু সময় কাটাতে পারবেন।

নীলগিরি (nilgiri) পাহাড়ের আশেপাশে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে অবস্থিত চিম্বুক পাহাড়, সাইরু হিল রিসোর্ট, শৈল প্রপাত, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির এবং বগালেকের সৌন্দর্যকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। 

নীলগিরির দর্শনীয় স্থানসমূহ  

নীলগিরি (nilgiri) পাহাড়ের সর্বোচ্চ উঁচুতে উঠতে পারলে একই সাথে আপনি বগালেক, বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া কেওক্রাডং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরিতে এর পাশাপাশি সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। 

নীলগিরির পথেই রয়েছে মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, শৈল প্রপাত ঝর্ণা, সাইরু হিল রিসোর্ট ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র উপভোগ করার সুযোগ। যারা নীলগিরির আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তারা অবশ্যই দুপুরের পরের সময়টাতে নীলগিরিতে কাটানোর চেষ্টা করবেন। কারণ এই সময়টাতে সূর্যের ডুবে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের স্বাদ অন্য কোনো পর্যটন কেন্দ্রে ভালোমতো উপভোগ করা সম্ভব না। 

কিভাবে যাবেন

যারা ঢাকা থেকে নীলগিরি (nilgiri) আসবেন তারা বাসে করে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ, কল্যাণপুর, গাবতলী ও সায়েদাবাদ এবং ট্রেনে করে হলে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি থেকে সরাসরি বান্দরবনে চলে আসবেন৷ এছাড়াও ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম চলে আসতে পারেন। মোটকথা নীলগিরিতে আসতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রামে অথবা সরাসরি বান্দরবানে আসতেই হবে। 

যারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম বাসে করে আসবেন তাদের গুনতে হবে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার মতো। আর যারা ট্রেনে আসবেন তাদের গুনতে হবে ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা৷ চট্টগ্রাম শহর থেকে বান্দরবানে আসতে হলে বদ্দারহাট থেকে পুবালি ও পূর্বানী যেকোনো বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়ায় উঠে যেতে পারেন৷ এছাড়াও ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বান্দরবান আসতে চাইলে ২০০-৩০০ টাকায় চলে আসতে পারবেন। 

সবশেষে আপনাকে বান্দরবান (nilgiri bandarban) হতে সরাসরি জীপ/চান্দের গাড়ি/মহেন্দ্র/সিএনজি অথবা লোকাল বাস দিয়ে থানচিতে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে গাড়ি অনুযায়ী ১২-১৪ জন মানুষ একসাথে গেলে ৩০০০-৫০০০ টাকা ভাড়া লাগবে। থানচিতে যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো। সেখান থেকে ৫/৬ মিনিটে জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং গাড়ির জন্য আলাদা ৩০০ পার্কিং ফি পরিশোধ করে নীলগিরিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ পালকি চর সমুদ্র সৈকত

কোথায় খাবেন

নীলগিরির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে খিদে লেগে গেলে নীলগিরির (nilgiri bandarban) রেস্তোরাঁয় বসে পড়তে পারেন৷ এটি ছাড়াও বান্দরবানের মেইন স্থানে অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেসব ট্রাই করতে পারেন। এসব রেস্তোরাঁর মাঝে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্তোরাঁ, রুপসী বাংলা রেস্তোরাঁ, রী সং সং, কলাপাতা রেস্তোরাঁর খাবারগুলি মূলত বেশ ট্রেডিশনাল, মুখরোচক এবং অনেক মজার হয়ে থাকে। 

কোথায় থাকবেন 

নীলগিরি (nilgiri bandarban) পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে রাত্রিযাপন করতে হোটেল হিল ভিউ বেছে নিতে পারেন। বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই এটি বেশ জনপ্রিয়। প্রায় সকল পর্যটকই এখানে উঠে। কারণ এর ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে এবং সার্ভিস তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো।

এছাড়াও যারা আরেকটু কম প্রাইজের হোটেল চাচ্ছেন তারা রিভার ভিউতে উঠতে পারেন। এটি শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে এবং ভাড়া মাত্র ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা। 

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

নীলগিরি ভ্রমণ টিপস

  • গাড়ি ঠিক করার জন্যে সরাসরি জীপ স্ট্যান্ডে কথা বলবেন। প্রয়োজনে দরদাম করে নিবেন।
  • শৈল প্রপাত বা চিম্বুকে আদিবাসীদের তৈরি জিনিস পত্র কিনতে পারবেন কম দামে।
  • বান্দরবান থেকে নীলগিরি পুরো পথ পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, তাই সাবধানে চলবেন।
  • চান্দের গাড়িতে ছাঁদে চড়বেন না।
  • শৈল প্রপাত ঝর্ণায় নামার সময় সাবধানে নামবেন, পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল হয়।
  • আদীবাসিদের সম্মানহানি হতে পারে এমন কিছু দয়া করে করবেন না।
  • সম্ভব হলে নীলগিরিতে একটি রাতযাপন করবেন, আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
  • অযথা কোন রিক্স নিতে যাবেন না।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সাথে রাখুন সবসময়।

শেষ কথা

নীলগিরিতে জনপ্রতি ৩০০-৬০০ টাকায় খাবার খাওয়ার সুযোগ। তবুও খাবার কেনার পূর্বে ভালোভাবে দাম জেনে নিবেন এবং সেখানকার ট্রেডিশনাল ফুডগুলি ট্রাই করতে ভুলবেন না। পাশাপাশি নীলগিরি (nilgiri) ভালোমতো উপভোগ করতে চাইলে খুব ভোরে রওনা দেওয়াটাই উত্তম। এতে করে ৭-৮ টার ভেতরেই নীলগিরিতে অবস্থান করা যায়।

পাশাপাশি এখানে ঘোরকঘুরি করার জন্য মাস হিসাবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তই সেরা। তবে পরামর্শ থাকবে বর্ষায় অতি বৃষ্টি হলে কখনোই নীলগিরিতে না যাওয়ার। কারণ এই সময় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং অনেক সময় নীলগিরি (nilgiri) বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

নীলগিরি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. নীলগিরি পাহাড়ের উচ্চতা কত?

উত্তরঃ নীলগিরি পাহাড়ের উচ্চতা হলো ২২০০ ফুট। 

২. নীলগিরির উচ্চতম শৃঙ্গের peak নাম কী?

উত্তরঃ এই নীলগিরি পর্বতেই পূর্বঘাট এবং পশ্চিম ঘাট পর্বতমালা এসে মিশেছে। এটি নীলগিরি পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেতা।

৩. নীলগিরি পর্বত কোথায় অবস্থিত? 

উত্তরঃ নীলগিরি পর্বত বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

৪. নীলগিরি কি জন্য বিখ্যাত?

উত্তরঃ নীলগিরি অঞ্চলে চা, কফি, বিভিন্ন মশলা, আলু, বাঁধাকপি, গাজর, নানাপ্রকার ফল উৎপাদিত হয়। দক্ষিণ ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল নীলগিরি।

৫. নীলগিরিকে নীল পর্বত বলা হয় কেন?

উত্তরঃ পাহাড়ের আকর্ষণীয় নীল রঙের জন্য গণ-ফুল প্রজাতির গুচ্ছ পুষ্পের জন্য দায়ী করা হয় ‘স্ট্রোবিলান্থেস কুন্থিয়ানা’ মানে তামিল ভাষায় ‘নীলা কুরিঞ্জি’। তাই নীলগিরি পর্বতকে নীল পর্বত বলা হয়।

আরও পড়ুন- 

ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাগেরহাট

কুমিরা ঘাট, চট্রগ্রাম

মন্তব্য করুন