মহামায়া লেক
মহামায়া লেক চট্টগ্রামের মিরসরাই এ অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম হ্রদ। মীরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মহামায়া লেক (Mahamaya Lake) গড়ে উঠেছে।
লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালী ছাড়াও এখানে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। বোটে চড়ে লেকে ঘুরার পাশাপাশি চাইলে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্নার শীতল পানিতে ভিজে শরীর ও মনকে প্রশান্তি দিতে পারেন।
এখানে আপনি প্রাকৃতিক মনোরম একটি পরিবেশ পাবেন। মহামায়া লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা এবং চাইলে তাবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতেও পারবেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকা মহামায়া লেক (mohamaya lake) টির পানির কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুনঃ লালন শাহ মাজার
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম মানে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর। মহামায়া লেক (mohamaya lake) ভ্রমণের পাশাপাশি আপনি চাইলে এর আশেপাশে দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারেন। মহামায়া লেকের আশেপাশে আরো নানান আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে।
মহামায়া লেক ভ্রমণের পাশাপাশি আপনি সেগুলোও ভ্রমণ করতে পারেন। মহামায়া লেক ভ্রমণ করেও মিরসরাই ও সীতাকুন্ডের আশেপাশে যে সকল স্থান দেখতে পারেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হলঃ
- সীতাকুন্ড ইকোপার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- বাঁশবাড়িয়া সী বিচ
- গুলিয়াখালি সী বিচ
- কুমিরা সদ্বীপ ঘাট
সীতাকুন্ড ইকোপার্ক
সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যা বর্তমানে অসাধারণ এক পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখানে সহস্র দ্বারা এবং সত্য তারা নামে দুইটি অনিন্দ্য সৌন্দর্য রয়েছে। এছাড়া সীতাকুন্ড ইকোপার্কে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির গাছ। পাহাড়, বিক্ষরাজি, বন্যপ্রাণী, ঝরনা, পাখির কলরব ইকোপার্কটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। এখানে অনেক ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির
চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান আর সুবিশাল সমুদ্র। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ডকে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে।
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সা করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিচের গেটের কাছে যাওয়া যায়। এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীর গেলে চোখে পড়বে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড় চূড়াতে চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত।
গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত
গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম জেলায় সীতাকুন্ড উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে এই সৈকত মুরাদপুর বিচ নামেও পরিচিত। সীতাকুন্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সী বিচের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।
সমুদ্রের আশেপাশে অনেক ছোট ছোট নালাও রয়েছে। এইসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে ওঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানিপূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় যেন সব প্রাকৃতিক রূপ নিয়ে বসে আছে। এখানে আছে পাহাড় লেক ঝর্ণা সমুদ্র সৈকত প্রাচীন স্থাপনা সহ নানান কিছু। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত তেমনি পর্যটকের জন্য একটা আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ঝাউ গাছের সারি, খোলামেলা পরিবেশ, জেগে উঠা সবুজ ঘাসের চর, আছে পিকনিক স্পট, সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য। বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সেখানকার সূর্যাস্ত।
কুমিরাঘাট
সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়নের নাম কুমিরা। এখানে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যাওয়া আসার জন্য রয়েছে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরিঘাট বা কুমিরা ঘাট। সম্প্রতি এ ফেরি ঘাটের যাত্রীদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য গড়ে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ জেটি। যা স্থানীয় মানুষের কাছে কুমিরা সন্দীপ ফেরিঘাট ব্রিজ, ঘাটঘর ব্রিজ, কুমিরা ব্রিজ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত।
মহামায়া লেক যাওয়ার উপায়
মহামায়া লেক (mohamaya lake) মীরসরাই এর ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। তাই দেশের যে জায়গা থেকেই আসতে চান আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদিঘী বাজারে আসতে হবে।
ঢাকা থেকে মহামায়া লেক
ঢাকা থেকে বাসে
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে করে যেতে পারবেন মিরসরাই এর ঠাকুরদিঘী বাজার। এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাস ভাড়া ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা।
এসি বাসের মধ্যে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ এইসবের বাসপাড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে। আপনার পছন্দমত বাসে এসে মিশোরাই এর আগে ঠাকুরদিঘী বাজারে নেমে যেতে হবে।
ঠাকুর দিঘী থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন মহামায়া ইকো পার্কের মেইন গেটে। অথবা সিএনজি রিজার্ভ করে ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে চলে আসবেন মহামায়া ইকোপার্ক (Mahamaya Lake) । এই ইকো পার্কের ভিতরেই মহামায়া লেকের (Mahamaya Lake) অবস্থা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে
ডাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেণী ভেদে ট্রেন ভাড়া জনপ্রতি ২৬৫ থেকে ৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০, ১৫ টাকা রিক্সা বা অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে।
যেখান থেকে লোকাল বাসে ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় মিরসরাই এর আগে ঠাকুরদিঘী বাজার নেমে যেতে হবে। অথবা ৯০-১২০ টাকা ভাড়ায় মেইন ট্রেনে আসলে “চীনকি আস্তানা” স্টেশনে নেমে যেতে পারবেন।
যেখান থেকে অটো বা সিএনজি দিয়ে ২০-২৫ টাকা ভাড়ায় ঠাকুরদীঘি যেতে পারবেন। ঠাকুর দিঘী যেতে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা সিএনজি ভাড়া চলে যেতে পারবেন মহামায়া ইকোপার্ক।
চট্টগ্রাম থেকে মহামায়া লেক
কদমতলী বাস স্টপ থেকে মিরসরাই যাওয়ার বাস, সিএনজি, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস পাবেন। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের মাদারবাড়ি থেকে সরাসরি “চয়েজ” বাসে ৮০ টাকা ভাড়ায় ঠাকুরদীঘি বাজারে আসতে পারবেন।
আবার চট্টগ্রাম নগরের অলংকার সিটি গেইট থেকে কিছু লোকাল বাসে করে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় থানার ঠাকুরদিঘী যাওয়া যায়। ১৫-২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন মহামায়া লেক বা ইকোপার্ক।
আরও পড়ুনঃ মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর
টিকিট মূল্য
মহামায়া লেকে প্রবেশের জন্য দশ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হবে।
কোথায় থাকবেন
মিরসরাইয়ে থাকার মতো তেমন ভালো কোন আবাসিক হোটেল নেই। মহামায়া লেক (mohamaya lake) তাবুতে থাকতে পারেন। তবে মহামায়াতে ক্যাম্পিং এ মেয়েদের থাকার অনুমতি নেই, কেবলমাত্র ছেলেরা থাকতে পারবে।
সীতাকুণ্ড কাঁচাবাজার এলাকায় এবং সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্প কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। যাদের মধ্যে হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সাইমন বেশ মানসম্মত। এদের রুম ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। থাকতে চাইলে মীরসরাই এর কাছে সীতাকুন্ডে কিছু সাধারণ মানের হোটেলও আছে, সেখানে থাকতে পারবেন।
হোটেল সৌদিয়ায় ৪০০ থেকে ১০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন। সাইমন ও অন্য আবাসিক হোটেলে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারবেন। তবে আরো ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনার চট্টগ্রাম শহরে চলে যাওয়াটাই উত্তম। মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম যেতে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এর স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে পছন্দমত কোন এক হোটেলে রাত্রী যাপন করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
পার্কে খাওয়া দাওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ঠাকুর দিঘী বাজারে গেলে কিছু ছোট ছোট হোটেল পাওয়া যায় আপনি সেখানে দেশি সকল খাবার খেতে পারবেন। মিরসরাই ও সীতাকুন্ড বাজারে গেলে মোটামুটি ভালো মানের আরো কিছু খাওয়ার হোটেল পাওয়া যায়। সীতাকুণ্ডে পৌরসভার সামনে ভালো মানের কিছু হোটেল পাওয়া যায়। তার মধ্যে আল আমিন হোটেলের বেশ সুনাম রয়েছে।
কিছু দরকারি তথ্য
- ক্যাম্পিং এর সময়সীমা ১০ ঘন্টা
- সর্বোচ্চ ধারন ক্ষমতা ১০০ জন
- সর্বনিম্ন পাঁচজন হতে হবে
- বুকিং নিস্টিদের জন্যে ২৫০ টাকা দিতে হয় ।
- কেবলমাত্র ছেলেরা অংশগ্রহণ করতে পারে।
- মেয়েদের অংশগ্রহণের অনুমতি নেই।
শেষ কথা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। তাই সব সময় দেওয়া তথ্যের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন।
যেকোনো পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এসব স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকবো। দেশ আমাদের দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের। মহামায়া লেক (mohamaya lake) এই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মহামায়া লেক সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s
১. মহামায়া লেকে কি কি আছে?
উত্তর :- লেকের টলমলে উজ্জ্বল পানি আর পাহাড়ের মিতালী সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও সৌন্দর্যের রানী ঝর্ণা। পাহাড়ের কোলে ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে মহামায়া লেক।
আরও পড়ুন-
মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান
নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী