মিঠামইন হাওর ভ্রমণ, ঘুরে দেখার মত সকল স্থান

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর, কিশোরগঞ্জের একটি উল্লেখযোগ্য হাওর, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বর্ষাকালে হাওরের জলরাশি ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে। মিঠামইন হাওরের আশেপাশে অবস্থিত ইটনা, অষ্টগ্রাম এবং বানিয়াচং উপজেলাগুলির সঙ্গে এর সীমানা ভাগ করেছে।

সম্প্রতি নির্মিত অল ওয়েদার রোডের জন্য হাওর এখন আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। এই সড়কটি হাওর অঞ্চলের সাথে সহজে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করেছে এবং পর্যটকদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এলাকাটির উন্নয়নের জন্য ২০১৯ অর্থবছরে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যার খরচ প্রায় ১,২৬৮ কোটি টাকা। এই সড়কটি কিশোরগঞ্জের তিনটি হাওর উপজেলা – ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম – কে সংযুক্ত করেছে।

এই উন্নয়ন মিঠামইন হাওরের চেহারাকে পরিবর্তন করেছে এবং এখন এটি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণস্থল হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ

মিঠামইন হাওরের কিছু আকর্ষণ

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর, কিশোরগঞ্জ জেলার এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সম্পদ, যা বর্ষাকালে বিশাল জলরাশির জন্য বিখ্যাত। এই হাওর ইটনা, অষ্টগ্রাম এবং বানিয়াচং উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত এবং এর মনোরম পরিবেশ ভ্রমণপ্রিয়দের মনে এক অপূর্ব আকর্ষণ তৈরি করে।

সম্প্রতি নির্মিত অল ওয়েদার রোড মিঠামইন হাওরকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। এই রাস্তার ফলে পর্যটকরা এখন আরও সহজে হাওর অঞ্চলে যেতে পারছেন এবং এখানকার মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারছেন।

  • বিশাল জলরাশি: বর্ষাকালে হাওর এক বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়। নৌকা ভ্রমণ এই হাওর উপভোগ করার একটি জনপ্রিয় উপায়।
  • চাষাবাদ: হাওরের আশেপাশে বিস্তৃত এলাকায় ধান, পাট, শাকসবজির চাষ হয়।
  • বন্যপ্রাণী: হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখা যায়।
  • ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি: হাওরের আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী মানুষের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রয়েছে।

মিঠামইন হাওরের কিছু দর্শনীয় স্থান

  • নিকলী হাওর: মিঠামইন হাওরের অংশ নিকলী হাওর। এখানে নৌকা ভ্রমণ ও পাখি দেখার জন্য বিখ্যাত। 
  • চন্দ্রাবতী মন্দির: হাওরের তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির।
  • মিঠামইন জমিদার বাড়ি:  মিঠামইন হাওরের আশেপাশে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
  • হাওরের বিল:  হাওরে বিভিন্ন ছোট বড় বিল রয়েছে। এই বিলগুলোতে নৌকা ভ্রমণ ও মাছ ধরা যায়।
  • স্থানীয় বাজার:  মিঠামইন হাওরের আশেপাশের এলাকায় বেশ কিছু স্থানীয় বাজার রয়েছে। এই বাজারগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা যায়।

মিঠামইন হাওর ভ্রমণের সময় কিছু টিপস

  • বর্ষাকালে: বর্ষাকালে হাওরের জলরাশি বেশি থাকে, তাই নৌকা ভ্রমণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • পোশাক: হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত।
  • প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র: সানস্ক্রিন, মশা তাড়ানোর ক্রিম, টুপি, ওয়াটার বোতল ইত্যাদি সাথে নেওয়া উচিত।
  • স্থানীয় রীতিনীতি: স্থানীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করা উচিত।

কখন যাবেন মিঠামইন হাওর

হাওরের প্রকৃতি সত্যিই একেক ঋতুতে একেক রকম। বর্ষাকালে মিঠামইন হাওর ভ্রমণ সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, যখন হাওর তার পূর্ণ সৌন্দর্যে ভরা থাকে। 

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাওরের জলমগ্ন অবস্থা ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে। এই সময়ে আপনি হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন, চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। 

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হাওরের পানি কমতে শুরু করে, তাই ভরা বর্ষায়, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের আগেই, মিঠামইন হাওর ভ্রমণ করার চেষ্টা করা উচিত। এতে আপনি হাওরের সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

মিঠামইন হাওর যেভাবে যাবেন

মিঠামইন হাওর ভ্রমণ করতে প্রথমে আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে। ঢাকার থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জে আসা সম্ভব। ঢাকার মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা পরিবহন ও অনন্যা সুপার বাসে এবং সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা সুপার ও যাতায়াত বাসে করে সরাসরি কিশোরগঞ্জ সদরে পৌঁছাতে পারেন। বাস ভাড়া ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে চাইলে প্রতিদিন সকাল ৭:১৫ মিনিটে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে এগারসিন্দুর প্রভাতি ট্রেন ছাড়ে (বুধবার বন্ধ)। ট্রেনে ভ্রমণে শ্রেণী ভেদে ১২৫ টাকা থেকে ৩৪৫ টাকা খরচ হতে পারে। এই ট্রেনে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে রিক্সা/ইজিবাইকে করে একরামপুর বাস/সিএনজি স্ট্যান্ডে যেতে পারেন। সেখান থেকে লোকাল সিএনজি/অটো অথবা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে বালিখলা ঘাটে যেতে হবে। বালিখলা ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন হাওরের চারপাশে ভ্রমণ করতে পারবেন। 

ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ২০০-৪০০ টাকা হতে পারে, যা দরদামের উপর নির্ভর করে। বালিখলা ঘাট থেকে মিঠামইন হাওর যেতে প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এছাড়া বালিখলা ঘাট হতে মিঠামইন যাওয়ার জন্য লোকাল নৌকা সার্ভিসও রয়েছে।

যেখানে থাকবেন 

মিঠামইনে থাকার জন্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের আরামদায়কভাবে থাকার সুযোগ করে দেয়। এখানে থাকার জন্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপশন হলো:

1. **প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট**: এটি মিঠামইনে থাকার অন্যতম ভালো জায়গা। তবে এর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। রিসোর্টটি সুন্দর ও আরামদায়ক থাকার সুযোগ প্রদান করে।

2. **হোটেল আল-কামাল**: মিঠামইন বাজারে অবস্থিত এই হোটেলে মান অনুযায়ী রুম ভাড়া করতে পারবেন। রুম ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর: ০১৬৮৯-০৯০১০১।

3. **হোটেল সিকদার আবাসিক**: এই হোটেলটিও মিঠামইন বাজারে অবস্থিত। এখানেও মান অনুযায়ী রুম ভাড়া ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর: ০১৭৫৩-৮০৪৫৪৫।

4. **উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলো**: মিঠামইনে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। এখানেও থাকতে পারবেন। 

এছাড়া, থাকার ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের পছন্দ ও বাজেটের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া যায়। ভ্রমণের সময় আগে থেকেই রুম বুকিং করে রাখাটা ভালো হবে।

যা খাবেন

মিঠামইন বাজার স্থানীয় খাবারের জন্য বিখ্যাত। হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছের পদ এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।

মিঠামইন বাজারের কিছু উল্লেখযোগ্য খাবার হোটেল:

  • কাচা লংকা:  এই হোটেলটি হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছের পদ পরিবেশনের জন্য বিখ্যাত। তাদের বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে রুই মাছের কারি, কাতলা মাছের ভাজা, এবং শিং মাছের তরকারি। 
  • সেলিম রেস্টুরেন্ট:  এই রেস্টুরেন্টটি তাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের জন্য বিখ্যাত। তাদের বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে ইলিশ মাছের ভুনা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, এবং মুরগির রোস্ট।
  • হোটেল চাঁনপুর:  এই হোটেলটি তাদের বাজারজাত খাবারের জন্য বিখ্যাত। তাদের বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে পোলাও, বিরিয়ানি, এবং রুটি।

এছাড়াও, মিঠামইন বাজারে আরও অনেক ছোট ছোট খাবারের দোকান রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় খাবার খেতে পারবেন।

আরও পরুন-

মন্তব্য করুন