মেরিন ড্রাইভ
মেরিন ড্রাইভ রোডের বিশাল দৃশ্য, পাহাড়, সাগর, এবং ঝর্ণাগুলি কক্সবাজারে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান।
এই সুন্দর পরিবেশে যাওয়া সত্ত্বেও টেকনাফ পর্যন্ত ভ্রমণ করে দেখতে মিস করা উচিত নয়। খোলা জিপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি
বা অটোরিকশা দিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডে অভিনব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট একটি নির্দিষ্ট বন্য এলাকা,
যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বনজীবীর সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্র সৈকতে যাওয়া আরো একটি সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে।
এই ভ্রমণে সমুদ্র পাখি, সমুদ্র জীব, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পরিচিতি করা যায়। কক্সবাজারের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেরিন ড্রাইভ রোডে আপনাকে মনের মত সারাদিন আবির্ভাব করতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুনঃ হিমছড়ি পাহাড় ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় তথ্য সমূহ
মেরিন ড্রাইভ রোডে যা যা দেখবেন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
- বিশাল সমুদ্র সৈকত: মেরিন ড্রাইভ রোডের একপাশে বিশাল সমুদ্র সৈকত। নীল জল, সাদা বালি, এবং ঝলমলে রোদের আলোয় এই সৈকত অসাধারণ সুন্দর।
- উঁচু পাহাড়: রাস্তার অন্যদিকে উঁচু পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা নেমে আসে।
- সবুজ বনানী: পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝখানে সবুজ বনানী।
অন্যান্য আকর্ষণ
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ: মেরিন ড্রাইভ রোড থেকে নৌকা ভাড়া করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন। এই দ্বীপ তার নির্জন সৈকত, নীল জল, এবং ম্যানগ্রোভ বনের জন্য বিখ্যাত।
- টেকনাফ: মেরিন ড্রাইভ রোডের শেষ প্রান্তে টেকনাফ। এখান থেকে মায়ানমারের মরিশুমা দ্বীপ দেখা যায়।
- ঝিনুকের বাজার: মেরিন ড্রাইভ রোডের ধারে ঝিনুকের বাজার। এখানে বিভিন্ন রঙের ঝিনুক, শামুক, এবং সামুদ্রিক জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
- স্থানীয় খাবার: মেরিন ড্রাইভ রোডের ধারে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ আছে যেখানে সুস্বাদু স্থানীয় খাবার খেতে পারবেন।
কিছু টিপস
- মেরিন ড্রাইভ রোডে যাওয়ার সেরা সময় হলো শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)।
- রোদ থেকে বাঁচার জন্য সানস্ক্রিন, টুপি, এবং রোদচশমা ব্যবহার করুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- পরিবেশের যত্ন নিন এবং কোনো আবর্জনা ফেলবেন না।
মেরিন ড্রাইভ রোড বাংলাদেশের একটি অসাধারণ সুন্দর স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই এখানে ঘুরে আসুন।
মেরিন ড্রাইভ রোড যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে যেতে পারেন। বাসে যেতে চাইলে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বাসে উদ্দেশ্যে যেতে পারেন।
বাসের শ্রেণি ভেদে আপনি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে যা ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ট্রেনে যাওয়ার জন্য কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ব্যবহার করতে পারেন।
চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার আসতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন।
এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা, অলংকার মোড়, সিনেমা প্যালেস অথবা ধামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ অথবা ইউনিক পরিবহনের বাসে কক্সবাজার আসতে পারবেন।
বাসে ভাড়া হবে ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড
মেরিন ড্রাইভ রোডে পৌঁছার জন্য সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে খোলা জীপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি বা অটোরিক্সা পাওয়া যায়। সিএনজি বা অটোরিক্সায় যাওয়ায় মেরিন ড্রাইভ রোড ঘুরে আসতে বেশি সময় লাগে।
তাই যদি দিনে গিয়ে ফিরে আসার প্রতিক্রিয়া হয়, তবে খোলা জীপ ভাড়া করা উত্তম। যেহেতু সিজনের উপর ভাড়া নির্ভর করে, অফ সিজনে গাড়ি ভাড়া করতে ৪০০০ টাকা লাগতে পারে,
আর সিজনে প্রায় ৫০০০ টাকা খরচ হতে পারে। মেরিন ড্রাইভ রোড সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় নেয়। যদি আপনি সম্পূর্ণ মেরিন ড্রাইভ রোড দেখতে চান, তবে গাড়ি নির্ধারণের সময় ড্রাইভারকে জানান।
অন্যথায়, আপনি হিমছড়ি বা ইনানী বীচ পর্যন্ত যেতে এবং ফিরে আসতে পারেন। এই ক্ষেত্রে অটোরিক্সা/ইজিবাইক বা সিএনজি রিজার্ভ করতে পারেন।
যেখানে থাকবেন
কক্সবাজারে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল বা কটেজ আছে। এদের মধ্যে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট,
আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।
অফ সিজনে অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিলেও রুম পাবার নিশ্চয়তা থাকে কিন্তু ডিসেম্বরের ১৫ থেকে জানুয়ারী ১৫ তারিখ পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। অফসিজনে সাধারণত হোটে
সেটের ভাড়া অর্ধেকেরও কম থাকে। সময় থাকলে কক্সবাজার নেমেই একটু দরদাম করে হোটেল খুঁজে নিলেই ভালো। বিচ ও মেইন রোড থেকে হোটেল যত দূরে হবে থাকার ভাড়া সাধারণত কম হয়ে থাকে।
হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ নেয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
যেখানে খাবেন
মেরিন ড্রাইভ রোডে বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট আছে, যার মধ্যে রয়েছে-
সীফুড রেস্টুরেন্ট
- ঝাউবন সীফুড রেস্টুরেন্ট
- পৌষী সীফুড রেস্টুরেন্ট
- ধানসিঁড়ি সীফুড রেস্টুরেন্ট
বাঙালি খাবারের রেস্টুরেন্ট
- রোদেলা রেস্টুরেন্ট
- নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট
- ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের জন্য অন্যান্য ছোট রেস্টুরেন্ট
আন্তর্জাতিক খাবারের রেস্টুরেন্ট
- চাইনিজ রেস্টুরেন্ট
- থাই রেস্টুরেন্ট
- ইতালীয় রেস্টুরেন্ট
মূল্য
মেরিন ড্রাইভ রোডের রেস্টুরেন্টের দাম সাশ্রয়ী থেকে উচ্চ পর্যন্ত হতে পারে।
সাশ্রয়ী মূল্যের রেস্টুরেন্ট
- রাস্তার ধারের ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট
- স্থানীয় খাবার পরিবেশনকারী রেস্টুরেন্ট
মাঝারি মূল্যের রেস্টুরেন্ট
- রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষী, নিরিবিলি ইত্যাদি পরিবেশ এবং পরিষেবার জন্য কিছুটা বেশি খরচ হয়
উচ্চ মূল্যের রেস্টুরেন্ট
আন্তর্জাতিক খাবার পরিবেশনকারী রেস্টুরেন্ট বিশেষ পরিবেশ এবং পরিষেবা প্রদান করে
কিছু টিপস
- আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন: রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন।
- মেনু দেখুন: রেস্টুরেন্টে প্রবেশের আগে মেনু দেখে নিন এবং দাম সম্পর্কে ধারণা নিন।
- স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করুন: ভালো রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে জানতে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করুন।
- অনলাইন রিভিউ দেখুন: রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে অনলাইন রিভিউ দেখুন।
- মেরিন ড্রাইভ রোডে আপনার পছন্দ অনুযায়ী এবং বাজেট অনুসারে অবশ্যই একটি ভালো রেস্টুরেন্ট পাবেন।
কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের নাম
- ঝাউবন সীফুড রেস্টুরেন্ট
- রোদেলা রেস্টুরেন্ট
- পৌষী সীফুড রেস্টুরেন্ট
- ধানসিঁড়ি সীফুড রেস্টুরেন্ট
- নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট
এছাড়াও আরও অনেক ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।
আরও পরুন-
মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ, খরচ ও যাতায়াতসহ সকল তথ্য
রামু রাবার বাগান ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় খরচ