মালদ্বীপ ভ্রমণ
মালদ্বীপ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অসংখ্য দ্বীপের দেশ, তার রাজধানী মালে আইল্যান্ডের জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় ১.৫ কিলোমিটার লম্বা ও ১ কিলোমিটার চওড়া এই দ্বীপটি বিশ্বের জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি।
মালদ্বীপে ভ্রমণ করতে গিয়ে আপনি স্থানীয় সাহিত্য এবং সংস্কৃতির আবহাওয়ায় প্রবেশ করবেন। মালদ্বীপের লোকসভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস পরিচয় করার সুযোগ থাকবে।
স্থানীয় মানুষের সাথে সাক্ষাত্কার করে তাদের সাহিত্য, কাব্য, গান, নৃত্য এবং অন্যান্য রসিকতা অনুভব করতে পারবেন।
মালদ্বীপে ভ্রমণ করে আপনি দৈনন্দিন জীবনের প্রেসার থেকে মুক্তি অনুভব করবেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা, পানির সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা, গালির বায়ু শ্বাস করা এবং প্রাকৃতিক রঙ এবং সুরক্ষা সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা আপনার মানসিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের জন্য মহত্ত্বপূর্ণ হয়।
ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য, আপনাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। আপনি মালদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের জীবনযাপন এবং পরিবেশের সংরক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারেন। সম্প্রদায়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে, আপনি মালদ্বীপে আরও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
মালদ্বীপে ভ্রমণ করতে গিয়ে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সংযোগ করবেন এবং একটি উচ্চমানের অভিজ্ঞতা অনুভব করবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সান্নিধ্যের মধ্যে থাকা, প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা আপনাকে একটি অদৃশ্য অভিজ্ঞতা অনুভব করার সুযোগ দেবে।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশের ভিসা সহজে পাওয়া যায়
কিভাবে যাবেন মালে দ্বীপে
মালদ্বীপে ভ্রমণের জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি ২-৩ টি ফ্লাইট পাওয়া যায়। তবে, বাংলাদেশিরা মালদ্বীপিয়ান এয়ার ও শ্রীলঙ্কান এয়ার লাইনস এ বেশী যাতায়াত করেন।
ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি মালদ্বীপের মালে ইন্টারন্যাশনাল বিমান বন্দরে যেতে পারবেন। পরে ইমিগ্রেশন শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে ৪ কিলো দূরত্বে মালে যেতে ট্যাক্সি অথবা ফেরী বা স্পিডবোটে করে যেতে পারবেন।
অথবা চাইলে, বাংলাদেশ থেকে প্রথমে শ্রীলঙ্কার বান্দারনায়াকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে ট্রানজিট করে মালদ্বীপের মালে ইন্টারন্যাশনাল বিমান বন্দরে যেতে পারবেন। শ্রীলঙ্কা থেকে বিমানে মালদ্বীপ যেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। এই ক্ষেত্রে খরচ কম হয় এবং একসাথে দুই দেশের ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
মালে শহরে থাকার জন্য কিছু রিসোর্ট এবং হোটেল
সামারসেট ইন
- মালের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং আরামদায়ক রুম।
- বিনামূল্যে Wi-Fi এবং এয়ার কন্ডিশনিং।
- রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল এবং জিম নেই।
দা মেলরসে
- মালের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
- আধুনিক এবং আরামদায়ক রুম।
- বিনামূল্যে Wi-Fi এবং এয়ার কন্ডিশনিং।
- রেস্তোরাঁ, বার এবং সুইমিং পুল আছে।
হোটেল জেন মালে
- মালের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
- ছোট কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রুম।
- বিনামূল্যে Wi-Fi এবং এয়ার কন্ডিশনিং।
- রেস্তোরাঁ বা সুইমিং পুল নেই।
হোটেল ওক্টেভে
- মালের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
- সাশ্রয়ী মূল্যের।
- বিনামূল্যে Wi-Fi এবং এয়ার কন্ডিশনিং।
- রেস্তোরাঁ বা সুইমিং পুল নেই।
মালদ্বীপের রিসোর্ট সমুহ
কুরুম্বা মালদিপ
- মালের কাছে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত।
- বিলাসবহুল ওয়াটার ভিলা।
- ব্যক্তিগত সুইমিং পুল।
- স্পা, রেস্তোরাঁ এবং বার।
হলিডে আইল্যান্ড রিসোর্ট
- মালের কাছে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত।
- পরিবার-বান্ধব রিসোর্ট।
- সুইমিং পুল, ওয়াটার স্পোর্টস এবং গেমস রুম।
- রেস্তোরাঁ এবং বার।
প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্ট
- মালের কাছে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত।
- রোমান্টিক রিসোর্ট।
- ওয়াটার ভিলা এবং ওয়াটার বার।
- স্পা, রেস্তোরাঁ এবং বার।
সান আইল্যান্ড এন্ড স্পা
- মালের কাছে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত।
- স্পা রিসোর্ট।
- ওয়াটার ভিলা এবং ওয়াটার বার।
- স্পা, রেস্তোরাঁ এবং বার।
বান্দোস আইল্যান্ড
- মালের কাছে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত।
- বিলাসবহুল রিসোর্ট।
- ওয়াটার ভিলা এবং ওয়াটার বার।
- স্পা, রেস্তোরাঁ এবং বার
মালদ্বীপ ভ্রমণের খরচ
মালদ্বীপ ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে আপনার ভ্রমণের ধরণ, থাকার ব্যবস্থা, খাওয়া-দাওয়া এবং কতদিন থাকবেন তার উপর।
বিমান ভাড়া
ঢাকা থেকে মালদ্বীপে যাওয়া-আসা বিমান ভাড়া ৪৩,০০০-৬০,০০০ টাকার মধ্যে। টিকিট কত আগে কাটবেন তার উপর বিমান ভাড়া নির্ভর করবে। কম খরচে টিকিট পেতে চাইলে টিকিট আগে থেকে বুকিং করে রাখা ভালো।
থাকার খরচ
মালে শহরের মধ্যে থাকলে এক রাতে ৩,০০০-৭,০০০ টাকায় দুইজন থাকা যাবে। আইল্যান্ডের কাছাকাছি রিসোর্টে রাতে থাকতে হলে জন প্রতি ১৬,০০০-২৮,০০০ টাকা খরচ হবে। কম খরচে থাকার জন্য লোকাল রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসে থাকতে পারেন।
খাওয়ার খরচ
সাধারণ মানের খাবার খেয়ে থাকলে প্রতিবেলা ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। রিসোর্টে খাবার খেলে খরচ বেশি হবে।
অন্যান্য খরচ
স্পীড বোট ভাড়া করে ঘুরতে চাইলে ১৫,০০০-১৭,০০০ টাকা খরচ হবে।
ফেরী ব্যবহার করে ঘুরলে খরচ কম হবে।
মোট খরচ
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিমানে যাতায়াত সহ ৩ রাত ২ দিন মালে থাকলে ৯০,০০০-১,০০,০০০ টাকা খরচ হবে।
কম খরচে বেড়াতে চাইলে, আগে থেকে পরিকল্পনা করে, লোকাল রিসোর্ট/গেস্ট হাউসে থাকা এবং ফেরী ব্যবহার করে খরচ অনেক কমানো সম্ভব।
খরচ কমানোর কিছু টিপস
- কম খরচে মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে চাইলে অফ-সিজনে (মে-জুন এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) ভ্রমণ করুন।
- লোকাল রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসে থাকুন।
- স্থানীয় খাবার খান।
- পাবলিক ফেরী ব্যবহার করে যাতায়াত করুন।
- ভ্রমণের আগে থেকে পরিকল্পনা করে
- বাজেট তৈরি করে
মালে আইল্যান্ড ভ্রমণ
নারিকেল, সুপারি এবং অন্যান্য গাছপালায় ভরা ছোট্ট দ্বীপ। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। নীল সাগর, মিষ্টি হাওয়া, এবং নগরায়নের মিশ্রণ।
আকর্ষণ
- রিসোর্টের ইনফিনিটি পুল: মালদ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ।
- জল ক্রীড়া: সাঁতার, সার্ফিং, স্নোরকেলিং।
- ভারুনুলা রালহুগান্ধু: মনোরম সূর্যাস্ত।
- স্থানীয় খাবার: মাস হুনি, ঠাণ্ডা পানীয়।
- বাংলা খাবার: “ঢাকা ফুড” রেস্তোরাঁ।
- আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্ট: অনন্য অভিজ্ঞতা।
মালে শহরের দর্শনীয় স্থান
- আর্টিফিশিয়াল বীচ
- ওল্ড ফ্রাইডে মস্ক
- ন্যাশনাল মিউজিয়াম
- সুলতানস পার্ক
- ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি
- চীনা মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশীপ ব্রিজ
- ফিশ মার্কেট
- গ্রান্ড ফ্রাইডে মস্ক
মালদ্বীপ ভ্রমণ এ কিছু নির্দেশনা
ভিসা
- মালদ্বীপে ৩০ দিন মেয়াদের অন এ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়।
- জব, বিজনেস, বা স্টুডেন্ট হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখুন।
সেরা সময়
- জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
- অফ-সিজনে গেলে খরচ কম হবে।
বিমান টিকিট
- ১-২ মাস আগে টিকিট বুকিং করলে কম খরচে পাওয়া যাবে।
- শ্রীলঙ্কা হয়ে মালদ্বীপ যেতে হয়।
- সময় থাকলে শ্রীলঙ্কা ঘুরে তারপর মালদ্বীপ যেতে পারেন।
হোটেল
- টুরিস্ট সিজনে আগে থেকে হোটেল বুকিং দেওয়া ভালো।
- মালদ্বীপের ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বুকিং করলে স্পেশাল অফার পাওয়া যায়।
পরিবহন
মালে আইল্যান্ড হেঁটে দেখার জন্য আরামদায়ক জুতা সাথে নিন।
থাকা
ঢাকা থেকে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবার কারনে রাতে মালে থাকার জন্য কম খরচের হোটেল বুক করুন।
খরচ
বুদ্ধি করে যাতায়াত ও শপিং করলে খরচ কম করা যাবে।
ডে ট্রিপ
- মালের কিছু রিসোর্ট ডে ট্রিপের ব্যবস্থা করে।
- রিসোর্ট ভাড়ার সাথে ট্রিপের প্যাকেজ নিলে খরচ কম হবে।
স্কুবা ডাইভিং
স্কুবা ডাইভিং না জানলে কোর্স করার ব্যবস্থা আছে।
খাবার
- রিসোর্টে থাকলে খাবার খরচ প্যাকেজের মধ্যে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- বাইরে খেলে লোকাল খাবার বেছে নিন।
মালদ্বীপ স্বপ্নের দেশ, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে আরও আনন্দময়।
আরও পড়ুন –
ইতালির ভিসা । বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়
নেপাল ভ্রমন | নেপাল ভ্রমণ খরচ ও ভ্রমন গাইড