মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন
পারমিট ভিসা বা ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ মালয়েশিয়ায় যেতে চায়। কোনরকম দালালের সাহায্য ছাড়া নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে আপনিও যেতে পারবেন মালয়েশিয়ায়। তবে কিভাবে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করতে হয় অনেকেই জানেন না।
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং ভিসা ফি পরিশোধ করে সংগ্রহ করতে পারবেন মালয়েশিয়ার ভিসা।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করা থেকে শুরু করে ভিসা গ্রহণ করা পর্যন্ত সকল কার্যক্রম আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব। সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইল।
আরও পড়ুনঃ ভুটান ভ্রমণ – ভ্রমন পরিকল্পনা ও খরচ
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন এর প্রকারভেদ
যারা মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করতে চান তাদেরকে অবশ্যই বিএমইটি (BMET – Bureau of Manpower Employment and Training) এর ডাটাবেজে রেজিস্টার করতে হবে। পরের ধাপ হচ্ছে আপনি যে কাজের উপর দক্ষ সেই কাজ অনুযায়ী অনলাইনে ভিসা আবেদন করা।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্সি অথবা সরকারিভাবে মালয়েশিয়া ভিসা প্রসেস করতে পারবেন। ভিসা আবেদন করার প্রকারভেদ নিচর আলোচনা করা হলো :
১. মালয়েশিয়া ই-ভিসা
২. বিএমইটি (BMET) এর কার্যালয় থেকে
৩. “আমি প্রবাসী” অ্যাপ এর মাধ্যমে
উল্লেখ্য যে, বিএমইটি এবং “আমি প্রবাসী” অ্যাপ এই দুই উপায়ে সরকারিভাবে আপনি কম খরচে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
মালয়েশিয়া ই-ভিসা আবেদন
১. ভাল কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে চাইলে নিম্নের লিংকে প্রবেশ করতে হবে –
https://www.imi.gov.my/
২. উপরোক্ত লিঙ্কে প্রবেশ করে আপনার ভিসার ধরন অনুযায়ী ডাউনলোড করুন আবেদন ফরম।
৩. সঠিকভাবে আবেদন ফরমটি পূরণ করুন।
৪. এরপর পূরনকৃত আবেদন ফরম এবং প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস দিয়ে অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।
৫. এরপর ভিসা ফি প্রদান করে আপনার কাঙ্খিত ভিসা সংগ্রহ করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং অন্যান্য ভিসার আবেদন উপরোক্ত নিয়মে করতে পারবেন।
বিএমইটি (BMET) কার্যালয় থেকে আবেদন
১. বিএমইটি (BMET) কার্যালয় থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং দক্ষতা ভিত্তিক সনদপত্র লাগবে।
২. সকল প্রকার ডকুমেন্টস নিয়ে বিএমইটি এর কার্যালয়ে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪২ টি বিএমইটি (BMET) এর কার্যালয়ে আছে।
৩. এছাড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েও দক্ষতা অনুযায়ী অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
সারাদেশের মোট ১১ টি “বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার সুযোগ আছে।
৪. অতঃপর আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হলে বিএমইটি (BMET) এর ডাটাবেজ থেকে বা মোবাইল নম্বরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
“আমি প্রবাসী” অ্যাপ এর মাধ্যমে আবেদন
১. ঘরে বসেই আপনার স্মার্টফোনটি দিয়ে “আমি প্রবাসী” নামক অ্যাপের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
২. সর্বপ্রথম গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে “আমি প্রবাসী” (Ami Probashi) অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে।
৩. এরপর আপনার পাসপোর্টটি স্ক্যান করে এবং অন্যান্য তথ্য প্রদান করে বিএমইটি (BMET) এর রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট করুন।
৪. প্রদান করা তথ্য যাচাই করতে ৭২ ঘণ্টা সময় নিবে। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিকাশ অথবা অন্যান্য মাধ্যমে ৩০০ টাকা ফি পরিশোধ করে সম্পূর্ণ করুন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া।
৫. এরপর আপনার মোবাইলের “আমি প্রবাসী” (Ami Probashi) অ্যাপটি লগইন করলে বিএমইটি এর রেজিস্ট্রেশন এর পাশে চাকরি খোঁজার অপশন পাবেন।
৬. বিভিন্ন রকম চাকরির বিজ্ঞাপন অনুযায়ী আপনি আপনার পছন্দের চাকরির জন্য অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন।
৭. যদি আপনার সাবমিট করা চাকরির আবেদন মঞ্জুর হয়, তাহলে প্রবাসী অ্যাপ মেসেজ ইনবক্স থেকে জানতে পারবেন।
কয়েকদিন পর পরই এই অ্যাপের মেসেজ চেক করবেন। আর এভাবে খুব কম খরচেই সরকারি ভাবে মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।
মালয়েশিয়া ভিসার প্রকারভেদ
বিভিন্ন ধরনের ভিসা আছে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। কোন কারনে যেতে চান তার ওপর নির্ভর করে আপনার ভিসার ধরন। বিভিন্ন প্রকার মালয়েশিয়া ভিসা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
ভিজিট ভিসা (Visit Visa)
মালয়েশিয়ায় ব্যবসায়িক মিটিং, চিকিৎসা অথবা কোন ব্যাক্তিগত কারনে ভ্রমণ করার জন্য ভিজিট ভিসা প্রদান করা হয়। সাধারণত ৩০-৯০ দিন হয় ভিজিট ভিসার মেয়াদ।
ট্যুরিস্ট ভিসা (Tourist Visa)
মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক ভ্রমণ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা প্রয়োজন। সাধারণত ৩০ দিন হয় ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ।
স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
মালয়েশিয়ার শিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করা হয়। সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ থাকে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (Work Permit Visa)
কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রদান করা হয়। সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ থাকে।
ইমিগ্রেশন পারমিট ভিসা (Immigration Permit Visa)
স্থায়ীভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করার জন্য ইমিগ্রেশন পারমিট ভিসা প্রদান করা হয়। সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত ইমিগ্রেশন পারমিট ভিসার মেয়াদ থাকে।
মালয়েশিয়া ভিসা পেতে কি কি লাগে
মালয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের ভিসা পেতে যা লাগে –
- ভিসা আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট। পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর থাকতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা ভোটার আইডি কার্ড।
- বয়সসীমা ২১-৪৫ বছর।
- বিএমইটি (BMET) ডাটাবেজ রেজিস্ট্রেশন।
- সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড এর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- করোনা ভাইরাসের টিকা কার্ড।
- বিএমইটি কার্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অথবা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার আবেদন।
মালেশিয়ার টুরিস্ট ভিসা বা ভিজিট ভিসা পেতে যা লাগে –
- ভিসা আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট। পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
- অনলাইনে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন ফরম।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট কপি।
- রিটার্ন বিমান টিকেট।
- হোটেল বুকিং কপি।
- রেফারেন্স লেটার (কারও আমন্ত্রণে মালয়েশিয়া গেলে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।
- মালয়েশিয়াতে পূর্বে ভ্রমন করে থাকলে, সেই ভিসার কপি।
মালয়েশিয়া ভিসার দাম
১. বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে যারা মালয়েশিয়ায় যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসার দাম ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা মাত্র।
২. টুরিস্ট ভিসা বা ট্যুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং ফি ৫ হাজার ৮০০ টাকা মাত্র।
৩. বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে চাইলে ভিসার দাম ৪-৫ লক্ষ টাকা।
৪. বেসরকারিভাবে টুরিস্ট ভিসার দাম ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ আছে।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন চেক করার নিয়ম
১. মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন চেক করতে প্রয়োজন পাসপোর্ট নম্বর এবং ভিসা আবেদন নম্বর।
২. প্রথমে নিচের ওয়েবসাইটটি তে ভিজিট করুন। ://eservices.imi.gov.my/myimms/PRAStatus?lang=en
৩. এরপর “Visa Application Status” অপশনে ক্লিক করুন।
৪. পাসপোর্ট নম্বর এবং ভিসা আবেদন নম্বরটি লিখুন।
৫. এরপর সাবমিট বাটনে (Submit Button) ক্লিক করুন।
৬. আপনার ভিসা আবেদনের স্ট্যাটাসটি দেখানো হবে।
৭. যদি ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় তাহলে তার কারণ উল্লেখ করা হবে।
৮. কলিং ভিসার প্রথম পাতায় দেয়া Company Registration No (উদাহরণ : 779434-V) দিয়ে সার্চ করে আপনার ভিসা চেক করতে পারবেন।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন চেক করতে সতর্কতা
- ভিসা আবেদন নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বর সঠিকভাবে লিখতে হবে।
- ভিসা আবেদন প্রসেসিং এর জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
- যদি আপনার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় তাহলে কারণগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন। যেন ভবিষ্যতে আপনার আবেদনটি ঠিকভাবে করতে পারেন।
- যদি মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন চেক করার সময় কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে “মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস” এ যোগাযোগ করতে পারেন।
শেষকথা
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই দালালের খপ্পরে না পড়ে নিজে থেকেই ভিসা আবেদন করতে পারবেন এখন থেকে। খুবই কম সময়ে এবং কম খরচে যেতে পারবেন মালয়েশিয়ায়।
তবে সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, নতুন বিদেশী কর্মী নিয়োগ এবং ভিসা প্রদান বন্ধ করেছে মালয়েশিয়ান সরকার। পূর্বে যারা আবেদন করেছে এবং যাদের আবেদন ডাটা বেজে আছে, তারা পালাক্রমে যেতে পারবে মালয়েশিয়ায়। মালয়েশিয়ার সঙ্গে ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং থেকে ২০ মার্চ ২০২৩ সালে এই ঘোষণাটি জানানো হয়।
বর্তমানে নতুন ভিসা আবেদন প্রসেস বন্ধ আছে। পরবর্তীতে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে আবেদন গ্রহণ এবং ভিসা প্রদান করবে না মালয়েশিয়ান সরকার। মালয়েশিয়া ভিসা সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা সর্বদা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ
১. মালয়েশিয়া কলিং ভিসা কি এবং কলিং ভিসার আবেদন করতে কি কি লাগে?
উত্তর : মালয়েশিয়া কলিং ভিসা একটি শ্রম ভিসা। এই ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ প্রদান করা হয়।
কলিং ভিসা আবেদন করতে যা লাগে –
- ভিসা আবেদন ফরম
- পাসপোর্ট
- সাম্প্রতিক তোলা দুইটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- নাম পরিবর্তন সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
- নিষ্পত্তি বা আয়ের সনদ
- মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তার নিকট থেকে আমন্ত্রণ পত্র
২. মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন ফরম কোথা থেকে ডাউনলোড করব?
উত্তর : নিচের লিংক থেকে মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে পারবেন।
https://www.imi.gov.my/
৩. মালয়েশিয়া কলিং ভিসা আবেদনের ফি কত?
উত্তর : মালয়েশিয়া কলিং ভিসা আবেদনের ফি –
- জনসাধারণের জন্য ৫০০ মার্কিন ডলার।
- বয়স্কদের জন্য ৪০০ মার্কিন ডলার।
- ছাত্রদের জন্য ৩০০ মার্কিন ডলার।
৪. মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার জন্য কি যোগ্যতা লাগে?
উত্তর : মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার জন্য নিচের যোগ্যতা গুলো লাগে –
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
- সুস্থ বা স্বাস্থ্যসম্মত থাকতে হবে।
- মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন-
নেপাল ভ্রমন | নেপাল ভ্রমণ খরচ ও ভ্রমন গাইড
ইউরোপের কোন দেশের ভিসা সহজে পাওয়া যায়