লালবাগ কেল্লা
মোগল আমলে স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম রাজধানী হল- পুরান ঢাকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা(lalbagh kella)। যা পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার কোলঘেঁষে অবস্থিত। কালের সাক্ষী হয়ে থাকা ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি দেশ-বিদেশের সকল পর্যটকদের কাছেও এটি একটি আকর্ষণীয় স্থাপনা।
প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের বহু দর্শনার্থী এটি দেখতে আসেন,আর উপভোগ করেন মোঘল আমলের সব কিছু। পর্যটকরা এই দুর্গটির নির্মাণশৈলী ও কারুকার্য দেখে বেশ মুগ্ধ হন। অবশ্য হাওয়ারই কথা। কারন রাজা বাদশাদের কেল্লা বলে কথা।
আর সমগ্র রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছেও এই লালবাগ কেল্লা একটি রোমাঞ্চকর বিনোদন কেন্দ্র। যারা এখনো লালবাগ কেল্লা এখুনও যান নি তাদের জন্য আমি আজকের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। কেননা আজকের আর্টিকেলে আমি বলব কিভাবে লালবাগ কেল্লা যাবেন, খরচ কত হবে, কী কী দেখবেন ইত্যাদি।
তাহলে চলুন না আর দেরি না করে আপনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্থান লালবাগ কেল্লা থেকে। তার সাথে আরও ঘুরে আসি চট্টগ্রাম ভ্রমনের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান থেকে। চলুন তাহলে লালবাগ কেল্লা (lalbagh kella)সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাক।
আরও পড়ুনঃ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : সমুদ্র কন্যা, পটুয়াখালী
লালবাগ কেল্লা ইতিহাস
ইতিহাস এর দিকে তাকালে জানা যায়, এই লালবাগ কেল্লা (lalbagh kella)আসল নাম ছিল “কিল্লা আওরঙ্গবাদ“। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র যুবরাজ আজম শাহ ১৬৭৮ সালের দিকে বাংলার সুবাদার হয়ে এই ঢাকায় আসেন। তিনি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ‘কিল্লা আওরঙ্গবাদ’ নামে একটি দুর্গ নির্মাণের কাজে হাত দেন।
কিন্তু তিনি দুর্গটির নির্মাণকাজ পুরোশেষ করতে পারেননি, ওর কারণ ছিল মারাঠাদের মোকাবেলার জন্য ১৬৭৯ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ফলে দুর্গটির নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখেই তাকে ঢাকা শহর ত্যাগ করতে হয়েছিল।
এরপর ১৬৮০ সালের দিকে শায়েস্তা খান বাংলার সুবাদার ঢাকায় আসার পর সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে কেল্লাটির স্বত্ব দান করে দিয়েছিলেন। আর যুবরাজ আজম শাহ তাকে এই কেল্লার নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন। আর সুবাদার শায়েস্তা খান ব্যক্তিগতভাবে এর মালিক হওয়ায় আবার নতুন করে দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং তিনিই অবশেষে তা সমাপ্ত করতে পেরেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি দুর্গটির আগের নাম পরিবর্তন করে এর নাম রাখেন “লালবাগ দুর্গ’।
কারো কারো মতে, শায়েস্তা খান ব্যক্তিগতভাবে এই দুর্গটির প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ বোধ প্রকাশই করেননি। মানুষের কাছ থেকে শোনা যায়, শায়েস্তা খান লালবাগ কেল্লার(lalbagh kella) নির্মাণকাজে হাত দেয়ার কিছু দিন পর পরই তার অতি আদরের মেয়ে পরীবিবি (ইরান দূখত) মৃত্যু বরণ করেন। মেয়ের মৃত্যুতে তিনি বেশ গভীরভাবে শোকাহত হয়ে পরেন।
তাছাড়াও এই পরীবিবির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল যুবরাজ আজম শাহ এর সাথে। তাই সুবেদার শায়েস্তা খান ভেবেছিলেন যে, দুর্গটি তাহলে অপয়া। এ জন্য তিনি লালবাগ দুর্গের নির্মাণকাজ আর শেষ করতে পারেন নি। তার পরিবর্তে এখানে দরবার হল এবং দুর্গের মাঝখানে পরীবিবিকে দাফন করে দেওয়া হলো এবং তার ওপর দৃষ্টিনন্দন একটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন তিনি।
লাল কেল্লা কোথায় অবস্থিত
লালবাগ কেল্লার(lalbagh kella) আয়তন হলো প্রায় ১৯ একর। ঐতিহাসিক এ দুর্গটির ভেতরে গেলে আপনি দেখতে পারবেন একটি দরবারগৃহ, পরীবিবির সমাধিসৌধ, হাম্মামখানা, পুকুর, মাটির ঢিবি, দুর্গ, মসজিদ, পানির নল, ফোয়ারা প্রভৃতি স্থাপনা। পরীবিবির সমাধিসৌধের নির্মাণশৈলী বেশ অনুপম ও এর নির্মাণসামগ্রী অতি মূল্যবান। এটি গোলাপি রঙের মধ্যে কালো পাথরে বাঁধানো একটি অনুচ্চ প্লাটফর্মের ওপর নির্মিত হয়েছে।
এখানে চার কোণে চারটি অষ্টকোণ উঁচু মিনার রয়েছে। আর এই মিনারের শীর্ষ ছোট গম্বুজ দ্বারা সুশোভিত। তাছাড়া পরিবিবির সৌধের ঠিক মাঝখানে একটি গম্বুজ আছে। আর তার সৌধের চার দিকেই আছে একটি করে দরজা। আর এউ দরজা গুলো আবার খাঁজকাটা মিনার দিয়ে বেষ্টিত।
পরীবিবির সমাধি সৌধের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে এর ভেতরকার সৌন্দর্য বেশ চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর। সৌধের ভেতরে রয়েছে মার্বেল পাথর, বেলে পাথর ও কালো পাথরের কারুকাজ যা বেশ বিস্ময়কর। সৌধের ভেতরে আরও আছে ছোট-বড় ৯টি কক্ষ। তবে এর কেন্দ্রীয় কক্ষটিই বাকি গুলোর চেয়ে বেশ বড়। আর এই কক্ষের মাঝেই আছে পরীবিবির সমাধি। এ সমাধি কক্ষের চার দিকেই আছে দরজা।
পরীবিবির সমাধি দক্ষিণ-পূর্ব কোণের কক্ষে ছোট আকারের আবার একটি সমাধি আছে। আর এই সমাধিটি হলো সুবেদার শায়েস্তা খানের পালিত মেয়ের সমাধি। এই সৌধের ভেতরে আলো বাতাস চলাচলের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। শায়েস্তা খান তার সুবাদারি পদ থেকে অবসর নিয়ে ১৬৮৮ সালের দিকে আগ্রা গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন।
লালবাগ কেল্লা দুর্গটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় দুই হাজার ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণ পাশ প্রায় আট শ’ ফুটের মত চওড়া। আমাদের বুড়িগঙ্গা নদী বয়ে যেত এই দুর্গের দক্ষিণ পাশ দিয়ে। আজ তা কালের বিবর্তনে বুড়িগঙ্গা নদীটিই সরে গেছে। লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ দিকেই মূলত এর প্রধান তোরণ বা প্রবেশপথ বিদ্যমান।
যদিও এখন পর্যন্ত এটির কাজ অসমাপ্তই আছে। কিন্তু এ দুর্গটি এতোটাই সুন্দর অর্থাৎ এর নির্মাণকাজ এতই শৈল্পিক যে, এর অসম্পূর্ণতা অতি সহজেই কিন্তু ধরা যায় না।
লালবাগ কেল্লা সময়সূচী
ধরুন, আপনি অনেক কষ্ট করেই দেশের দূর প্রান্ত থেকে ভ্রমণস্থলে গেলেন। কিন্তু পৌঁছানোর পর যদি দেখেন ওই ভ্রমণকেন্দ্র বন্ধ আছে, তাহলে আপনার কাছে কেমন লাগবে। নিজেকে অনেক দুর্ভাগা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। মোঘল আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক এই স্থানে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন কমবেশি সব পর্যটকরাই, আর এর কারণ এর শৈল্পিক স্থাপত্য শিল্প। কিন্তু আপনি কোন সময়গুলোতে গেলে এটি খোলা পাবেন চলুন জেনে নেই –
গ্রীষ্মকালীন সময়:- ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল খোলা থাকে সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৬.০০ টা পর্যন্ত।
আবার দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি চলে।
শুক্রবার দিন:- সকাল ১০.০০ টা থেকে ৩.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
আবার বেলা ১২.৩০ মিনিট থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি থাকে।
শীতকালীন সময়ে:- ১লা অক্টোবর থেকে ৩০শে মার্চ পর্যন্ত খোলা থাকে। সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
আর দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি থাকে।
শুক্রবারে সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল পর্যন্ত খোলা থাকে। এরই মাঝে দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে ২.০০ টা পর্যন্ত বিরতি চলে।
তাছাড়া এই কেল্লা রবিবার পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে ও সোমবার দিন অর্ধ দিবস পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এছাড়াও সরকারী যে ছুটির দিনগুলো আছে সে দিনগুলোতে লালবাগ কেল্লা পূর্নদিবস পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
লালবাগ কেল্লাই কিভাবে যাবেন
লালবাগ কেল্লা (lalbagh kella) বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় অবস্থিত। তাই এই স্থাপনাটি পরিদর্শন করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে আপনার নিজ জেলা থেকে আগে ঢাকায় আসতে হবে।
এজন্য আপনি চাইলে রেল, বাস অথবা লঞ্চে করেও ঢাকায় আসতে পারেন। ঢাকা লঞ্চ টার্মিনালের কাছেই পুরান ঢাকা। সেক্ষেত্রে আপনি যদি লঞ্চে করে আসেন তবে খুব সহজেই রিকশা অথবা সিএনজিতে করে লালবাগ কেল্লায় আসতে পারবেন।
আর যদি নিজ জেলা থেকে সরাসরি আসতে চান তাহলে প্রাইভেট কার বা মোটর সাইকেলে সরাসরি আসতে পারবেন। আপনি চাইলে ঢাকার যে কোনো স্থান থেকেই লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন। আপনি যদি ঢাকার গুলিস্তান থেকে যান তবে রিকশা অথবা সিএনজিতে চড়ই আপনি সরাসরি লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি ঢাকার নিউমার্কেট, শাহবাগ কিংবা আজিমপুর বাসস্টান্ড থেকেও খুব সহজেই লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন। আর যদি লাইন বাসে যেতে চান তাহলে আপনাকে একটু নামতে হবে আজিমপুর এতিমখানা বাসস্ট্যান্ডে।
সেখান থেকে আবার রিকশায় মাত্র ২০-৩০ টাকায় আপনি পৌঁছে যাবেন ঢাকার লালবাগ কেল্লায়। আর যদি নিউমার্কেট থেকে রিকশায় যেতে চান তাইলে আপনাকে ৪০-৫০ টাকার মাথা পিছু গুনতে হবে।
লালবাগ কেল্লা টিকেট মূল্য
লালবাগ দুর্গটি প্রায় বহু বছর অযত্নে পড়ে থাকার পর এই লালবাগ কেল্লার (lalbagh kella) সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই কেল্লাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এর প্রতিষ্ঠিত লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো।
২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ছবিগুলো ।
এটি উপভোগ করতে হলে দর্শনার্থীদের জমা দিতে হবে অতিরিক্ত ২০ টাকা। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো প্রদর্শিত হয় সন্ধ্যা ৬টা ১০ থেকে পরবর্তী ৩০ মিনিট এর মত। তাই কেল্লার দর্শনার্থীরা সেখান থেকে বের হওয়ার পর পরই নতুন টিকিটে তা দর্শন করতে পারেন।
এর জন্য সময়ও নির্ধারিত রয়েছে আলাদাভাবে। লালবাগ কেল্লায় প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দেশী পর্যটক দের জন্য মাত্র ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশ গুলো পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা, অন্য বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা।
কেল্লায় যে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন
লালবাগ কেল্লা (lalbagh kella) আমাদের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি রক্ষা করা একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু অনেকেই আছে কেল্লায় প্রবেশ করে কুরুচিকর কার্যকলাপ করে থাকে। কেল্লায় অবশ্যই এই কাজগুল করবেন না:-
- দুর্গের ভেতরে কোনো প্রকার যানবাহন, এমনকি দুই চাকার সাইকেল নিয়েও প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই সেখানে গেলে যানবাহন নিয়ে প্রবেশ না করাই ভালো
- কেল্লায় খেলাধুলা করা সম্পূর্ণ নিষেধ আছে। অনেকে ভাবেন কেল্লায় গিয়ে একটু ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলবেন,কিন্তু এটা করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
- আপনি চাইলে বড় ধরনের ব্যাগ নিয়ে কেল্লায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই সেখানে ঘুরতে যাওয়ার সময় চেষ্টা করবেন ছোট হাত ব্যাগ নিয়ে যেতে।
- লালবাগ কেল্লার ভেতরের ফুলের বাগান থেকে কোন ধরনের ফুল ছেড়া বা বাগানের কোন ক্ষতি করা যাবে না। অনেকেই আছেন যারা শখের বসে কিংবা ছবি তোলার জন্য গাছের ফুল ছিড়েন এটা খুবই বাজে একটা অভ্যাস।তাই এই কাজ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকবেন।এতে পরিবেশ সুন্দর থাকবে।
- দুর্গের মধ্যে কোনভাবেই পানাহার ও মূত্রত্যাগ করা যাবে না। যেখানে সেখানে বাচ্চাদের কিংবা বড়রা মূত্র ত্যাগ করেন। এটা খুবই বাজে দেখায়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে না। তাই কেল্লায় প্রবেশ করে এমন কাজ ভুলেও করবেন না।
- দুর্গের কোনো স্থাপনার ক্ষতি সাধন বা খোদাই করে কিছু লিখলে অবশ্যই এক বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তাই আবেগের বসে সেখানে কিছু লিখে বসবেন না। এতে আপনার জরিমানা হয়ে যাবে।
উপরের বিষয় গুলো মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুনঃ কুয়াকাটা ভ্রমণ : যাওয়ার উপায়, হোটেল, খরচ, প্ল্যান
লালবাগ কেল্লা দেখতে কেমন
লালবাগ কেল্লার(lalbagh kella) মূল ভবনটি মূলত তিনতলা বিশিষ্ট। আর তিনতলা ভবনের নিচ তলার মাঝখান দিয়ে আবার বের হওয়ার এবং প্রবেশ করার একটি পথ রয়েছে। আর প্রবেশ পথেই আবার আরেকটি তোরণ আছে। আর এই তোরণটিই এখনো সদর তোরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা এই তোরণ দিয়েই মূল ভবনে প্রবেশ করে থাকেন। আপনি গেলেই বুঝবেন কারন অতি মূল্যবান সুদৃশ্য পাথর দিয়ে এ তোরণটি নির্মান করা হয়েছে।
তাছাড়া লালবাগ কেল্লা দুর্গটির মূল ভবনের পাশেই আবার রয়েছে আরো একটি দোতলা ভবন। জানা যায় যে, এ ভবনের ওপর তলায়ই ছিল দরবারগৃহটি। এই স্থানেই তৎকালীন সময়ের বিচারসহ যাবতীয় রাজকার্য সম্পাদন হত। এর নিচতলায় আপনার চোখে পরবে হাম্মামখানা বা গোসলখানা।
এখানেই রাজ পরিবারের সবাই, বিশেষ করে মহিলারা গোসল কার্য সম্পাদন করতেন। এমনকি সে সময়টাতে গোসলের জন্য গরম ও ঠাণ্ডা পানির সু-ব্যবস্থাও ছিল। এই হাম্মামখানা বা গোসলখানাটি সব সময়ই সুগন্ধিতে ভরপুর থাকত। এ ছাড়াও এই হাম্মামখানায় বিভিন্ন ধরনের বিদেশী সুগন্ধিও মজুদ থাকত।
এই দুর্গের ভেতরেই আবার একটি পুকুর আছে। পুকুরটি কখনো কোন গোসল অথবা এ ধরনের কোনো কাজেই ব্যবহৃত হতো না, যদিও এই গোসলের উদ্দেশ্যেই এ পুকুরটি খনন করা হয়েছিল।
সুবাদার শায়েস্তা খান যখন চলে যান তার যাওয়ার পরপরই ঢাকার রাজনৈতিক গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ১৭০৪ সালের দিকে বাংলার এই রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করা হয়েছিল। আর এর পর থেকেই এই লালবাগ কেল্লা (lalbagh kella)দুর্গটি অবহেলার শিকার হয়।
জানা যায়, ১৮৫৩ সালের দিকে ঢাকার পুরানা পল্টন থেকে সেনানিবাস স্থানান্তর করে লালবাগ দুর্গে নেয়া হয়েছিল। এরপর ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত সেনানিবাস এখানে এই জায়গায়ই ছিল। দুর্গটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলা পরেছিল। তার সাথে সাথে একই অবস্থা হয়েছিল পরীবিবির সমাধিসৌধটিরও। কিন্তু অলৌকিক এক ব্যপার হলো ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পরও বিস্ময়করভাবে পরীবিবির সমাধিসৌধ অক্ষত থাকে।
পুরান ঢাকার যত বিখাত খাবার
লালবাগ কেল্লা যেহেতু পুরান ঢাকায় অবস্থিত তাই ভ্রমণ শেষে আপনি চাইলে পুরান ঢাকার খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। লালবাগ কেল্লার প্রধান ফটকের আশপাশে বেশ অনেকগুলো রেস্তোরা আছে। যেখানে পুরান ঢাকার বেশ কিছু খাবার পাওয়া যায়। কম দামের মধ্যে খেয়ে দেখতে পারেন।
এছাড়াও একটু হাঁটলে আপনি পেয়ে যাবেন পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্যবাহী শাহি বিরিয়ানি, হাজি বিরিয়ানি। আর পুরান ঢাকায় যাবেন অথচ বিরিয়ানি খাবেন না তা কি কখনো হয় বলুন। তাই অবশ্যই খেয়ে আসবেন।
শেষ কিছু কথা
প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের টানেই এখনো লালবাগ কেল্লায় ছুটে আসেন শত শত পর্যটক। তাই ছুটির দিনগুলোতে কিংবা অবসর সময়ে পুরান ঢাকার লালবাগে (lalbagh kella) অবস্থিত এই দুর্গে নামে পর্যটকদের বিশাল ঢল। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে আসেন পুরনো এ স্থাপনায়।
এই লালবাগ দুর্গে ছুটে এলেই আপনার চোখে পড়ে যাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানানছবি। এখানে আসলে এসব দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় ছেলে মুহাম্মদ আজমের কথা।
এই লালবাগ কেল্লার অপরূপ দৃশ্য দেখতে শুধু এ ঢাকা শহরের বাসিন্দাই নয়,বরং দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে আসেন অনেকে। পুরান ঢাকার সরু রাস্তা ধরে এই কেল্লায় পৌঁছাতেই ক্লান্ত হতে হয় পর্যটকদের,তার সাথে সাথে টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও ধরতে হয় দীর্ঘলাইন।
এখানে সবুজ ঘাসে কেউ কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে হারিয়ে যায় সবুজের সমারোহে, আবার কেউ কেউ কালের সাক্ষী স্থাপনার ছবি আর সেলফি তুলতে অথবা নানাবিধ সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য চিত্রকর্ম ধারণ করতেই ব্যস্ত হয়ে পরে। তবুও জায়গায়টিতে আসলেই যেন উপলব্ধি করা যায় মোগলরা কেমন ছিল। তাই এদেশের প্রাচীন ইতিহাস জানতে ঐতিহ্য কে চিনতে চলে আসুন (lalbagh kella) লালবাগ কেল্লা।
আরও পড়ুন-
কক্সবাজারের সেরা কিছু হোটেল ও রিসোর্ট তথ্য
সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ