কুয়াকাটা ভ্রমণ : যাওয়ার উপায়, হোটেল, খরচ, প্ল্যান

কুয়াকাটা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর একটি সমুদ্র সৈকত নাম কুয়াকাটা (kuakata)সমুদ্র সৈকত। যার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে উপাধি পেয়েছে সাগরকন্যা হিসাবে। আর, যে বৈশিষ্ট্যের জন্য সবথেকে বেশি জনপ্রিয় তা হল এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে আপনি দাঁড়িয়ে একসাথে সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

এখানে আসলে আপনি খুঁজে পাবেন বিস্তীর্ণ ঝাউবন সাদা বালি সবুজ আর সাগরের এক নিবিড় সম্পর্ক। যেখানে মনের সমস্ত দুঃখ ,কষ্ট ,যন্ত্রনা কে আপনি চাইলে সাগরে ফেলে দিতে পারবেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পে দেখা দিয়েছে এক নতুন সম্ভাবনা।

ঢাকা থেকে সড়কপথে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান ভ্রমন থেকে তুলনামূলক অনেক কম খরচে্র এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন কুয়াকাটা (kuakata)সমুদ্র সৈকত ।

আরও পড়ুনঃ সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সকল তথ্য

কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থান

কুয়াকাটা (kuakata) সমুদ্র সৈকত এর কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো হলঃ পানি জাদুঘর, সোনার চর, লাল কাঁকড়ার চর, লেম্বুর বন, স্বপ্নরাজ্য পার্ক ও রিসোর্ট, শুটকি পল্লী, ইলিশ পার্ক এন্ড রিসোর্ট,নয়পাড়া বৌদ্ধবিহার,আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য বন্দর,গোড়া আমখোলাপাড়া রাখাইন পল্লঈ, মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার,আব্দুল আলী গাড়ুলির স্মৃতি বিজড়িত স্থান এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান।

কুয়াকাটা (kuakata)যাওয়ার পর সেখানে দর্শনের দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য অসংখ্য বাইক পেয়ে যাবেন সাথে টুরিস্ট গাইড। এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখা যায় খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়। আর এই সূর্য উদয় দেখতে যাওয়ার জন্য গঙ্গামতিচর যেতে হয়। এরপর গঙ্গামতি লেক পার হয়ে কাউয়ারচর।

কাছে রাখায়ন পল্লী ওখানে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির। এরপরে রয়েছে কুয়াকাটার কুয়া যার জন্য কুয়াকাটার নাম হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ২০০ বছর আগের নৌউয়াচড়ে রয়েছে অসংখ্য লাল কাকরা। সুন্দর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এরপর রয়েছে ঝাউবন অপরূপ সৌন্দর্য এই ঝাউবন। 

এরপরে সূর্যাস্তের দেখার জন্য চলে যেতে হবে লেবুর বন যেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। এরপর রয়েছে তিন নদীর মোহনা যার নাম আন্দরমানিক। আরো আছে সুন্দরবনের অংশ ফাতরা বোন। এই এতগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরতে আপনার খরচ হবে ১৭০০ টাকা। এখানে আপনি চাইলেই দরদাম করে আরো কিছু কমাতে পারবেন।

কুয়াকাটার কুয়া

কুয়াকাটা(kuakata) নামকরণ যে কারণে করা হয়েছে যে ইতিহাস আছে এই নামকরণটির পিছনে সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে কুয়াটি এখনো আছে। এই কুয়াটি আপনি দেখতে পারবেন রাখাইনদের বাসস্থান কেরানিপাড়ায় গেলে।

কথিত আছে রাখাইনরা নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালী দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। সাগরের নোনা জল ব্যবহার অনুউপযোগী হওয়ার কারণে মিষ্টি পানির জন্য নতুন কূপ খনন করে। আর ধীরে ধীরে এই থেকে জায়গাটির নাম কুয়াকাটা হিসেবে পরিচিত হয়।

সীমা বৌদ্ধ মন্দির

প্রাচীন কোয়াটির একটু সামনে গেলেই দেখতে পারবেন বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের রয়েছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি। এখন কাঠের তৈরি এই মন্দিরটি ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে।

কুয়াকাটা(kuakata)

শুটকি পল্লী

কুয়কাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে শুটকি পল্লীর অবস্থান। এখানে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুটকি তৈরির মৌসুম চলে। সরাসরি সমুদ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরে বিচের পাশে মাচা বানিয়ে মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। আপনি চাইলে এসব দেখে সময় কাটাতে পারবেন কুয়াকাটাতে(kuakata)। আর তাদের সাথে দামাদামি করে অনেক কম দামে চাইলে এই শুটকি কিনে আনতে পারবেন।

কুয়াকাটা(kuakata)

ক্রাব আইল্যান্ড

কুয়াকাটা (kuakata)সমুদ্র সৈকত থেকে পূর্ব দিকে গেলে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাকড়া দ্বীপ। এখানে উঠে আসে সমুদ্র থেকে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া যে মনোরম দৃশ্য দেখে কেটে যাবে আপনার সময়।

কুয়াকাটা(kuakata)

গঙ্গামতির জঙ্গল

গঙ্গামতীর খাল পর্যন্ত এসে কুয়াকাটা (kuakata) সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে। এরপরে শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখি ও বিভিন্ন ধরনের বনপশু পাখি। এই জঙ্গলের আরেকটি নাম আছে যা হল গজমতির জঙ্গল।

গঙ্গামতির জঙ্গল

ফাতরার বন

কুয়াকাটা (kuakata) সমুদ্র সৈকত এর পশ্চিম দিকে অবস্থিত নদীর অন্যপাড় থেকে ফাতরার বন শুরু। এই বনকে বলা হয় সুন্দরবনের অংশ এই মনে রয়েছে প্রায় সুন্দরবনের সকল বৈশিষ্ট্য। এখানে বানর,শুকর, মোরগ ,ও নানান ধরনের পশু পাখি পাওয়া যায়। যা এই মনোরম দৃশ্য দেখে আপনি সময় কাটাতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ ভিন্ন জগৎ, রংপুর

কেরানি পাড়া

বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলে সামনে পাওয়া যায় রাখাইনদের বসবাসস্থল কেরানিপাড়া। যেখানে গেলে আপনি পাবেন রাখাইন নারীদের তৈরি বিভিন্ন বুনন কাপড়। আপনি চাইলে কিনে নিয়ে আসতে পারবেন।

মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির

কুয়াকাটা (kuakata)সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের আরেকটি গ্রাম মিশ্রি পাড়ায় বড় একটি বৌদ্ধমন্দির আছে। এই বৌদ্ধ মন্দিরে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি।

ইলিশ পার্ক

কুয়াকাটা (kuakata)সমুদ্র সৈকত পয়েন্ট থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইলিশ পার্ক এর অবস্থান। ৭২ ফুট লম্বা বিশাল আকৃতির ইলিশ মাছের ভাস্কর্য রয়েছে এই পার্কে। ইলিশ মাছের ভাস্কর্য ছাড়া অন্যান্য কিছু প্রাণীরও ভাস্কর্য মিলবে এই পার্কে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে এখানে বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী এছাড়াও খাবার-দাবার জন্য রয়েছে বিশাল রেস্টুরেন্ট।

কুয়াকাটা কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি কুয়াকাটার বাস পাওয়া যায় ভরা ৭০০-৭৫০ টাকা। তবে কুয়াকাটা(kuakata) আসার ক্ষেত্রে লঞ্চ জার্নিটাই বেশি কম্ফোর্টেবল। লঞ্চে করে বরিশাল পটুয়াখালী যেখানেই যান না কেন সেখান থেকেই কুয়াকাটার বাস পাওয়া যায় ।

তবে বরিশালের লঞ্চ গুলো বিলাসবহুল হওয়ায় একটু বড় হওয়ায় বরিশাল থেকে যাওয়াই বেশি ভালো । রাত ৮.০০ থেকে ৯.৩০ এর মধ্যে সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে সবগুলো লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চ ভোর পাঁচটার মধ্যে বরিশালে পৌঁছে যাবে । এরপরে লঞ্চ থেকে নেমে লঞ্চ ঘাটে সামনে থেকে বাসস্ট্যান্ড অনেক অটো পেয়ে যাবেন।

অটোতে করে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে যাবেন যেখান থেকে কুয়াকাটার (kuakata) বাস পেয়ে যাবেন ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বাস ছারার কিছুক্ষনের মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন কীর্তনকলা ব্রিজ। আর এই কীর্তনকলা ব্রিজ পার হওয়ার পরেই হাতের বাঁদিকে তাকালেই দেখতে পারবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। আর কুয়াকাটা যেতে একমাত্র লেবুখালী ফেরি পার হওয়ার সময় হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে শেখ হাসিনা সেনানিবাস।

এটি হচ্ছে বরিশাল কুয়াকাটা রোডের বর্তমান সময়ের একমাত্র ফেরি। তবে কয়েক বছর আগেও এর সংখ্যা ছিল ৫ মানে ৫ টি ফেরি পার হতে হতো বরিশাল থেকে কুয়াকাটা আসার জন্য । যাওয়ার পথ কুয়াকাটার পাশেই পড়ে পায়রা বন্দর। বরিশাল থেকে বাসে ওঠার পর তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যেই আপনি কুয়াকাটা এসে পৌঁছে যাবেন । বাস থেকে নামার পরেই আপনি শুনতে পারবেন সমুদ্রের গর্জন।

কুয়াকাটা থাকার জায়গা

কুয়াকাটা (kuakata)যাওয়ার পর সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে আপনার হোটেল বুক করা। এখানে বিচের পাশে অসংখ্য হোটেল রয়েছে ।দামি হোটেল থেকে শুরু করে স্বল্প খরচে হোটেল পর্যন্ত পাওয়া যায় এখানে। এ সকল হোটেলে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় নন এসি রুম এবং, ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এসি রুম পেয়ে যাবেন। তবে যখন অতিরিক্ত পর্যটক থাকে ভাড়া তুলনামূলক বেড়ে যায় তাই দর কষাকষি করে নিবেন ।.

কুয়াকাটা খাবার

কুয়াকাটায় (kuakata) আপনি বিভিন্ন হোটেলে বিভিন্ন খাবার-দাবার পেয়ে যাবেন। এছাড়াও রয়েছে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ ও সেখানকার স্থানীয় কিছু খাবার। সমুদ্র থেকে তরতাজা মাছ মেরে শুধুমাত্র লবন মেখে সৈকতের পাশে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হয় শুঁটকি‌।

রূপচাঁদা মধুফাইস্যা,চাপিলা, শাপলাপাতা, চিংড়ি, ফাইস্যা, লইট্রা, হাঙ্গর,সোনাপাতা, ছুড়ি ,ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাধু শুঁটকি মাছ। এছাড়াও আপনি সেখানে খেতে পারবেন বিচের পাশেই বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদ্য।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর, ঢাকা

কুয়াকাটা ভ্রমণ খরচ

নিজের উপর নির্ভর করে এখানে একেকজনের একেক রকম খরচ হতে পারে তাও কুয়াকাটা(kuakata) ভ্রমণের মোকাটা ভ্রমণের সট খরচ নিচে উল্লেখ করা হলো। ঢাকা থেকে বরিশাল বা পটুয়াখালী লঞ্চে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। লঞ্চ থেকে নামার পর ২০০ থেকে আড়াইশো টাকার বাস ভাড়া লাগবে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য। হোটেল বাড়ার জন্য ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

মোটরসাইকেল ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। ‌তিন বেলার খাবারের খরচ দুই দিনের জন্য হতে পারে ১৫০০ টাকা। অন্যান্য খরচ হতে পারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় খুব স্বাভাবিকতা অবস্থায় কুয়াকাটা (kuakata)থেকে ঘুরে আসা যাবে। এটাই ছিল সাধারণত কুয়াকাটা ভ্রমণের দুই দিনের খরচ এছাড়াও আরো অনেক বেশি খরচ হতে পারে যা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কুয়াকাটা(kuakata)

সতর্কতা

বর্ষার মৌসুমে সমুদ্র খুব বেশি উত্তাল থাকে। বর্ষার মৌসুমে কুয়াকাটা(kuakata) ভ্রমণের ক্ষেত্রে সমুদ্রের সিগনাল খেয়াল করবেন সিগন্যাল চলাকালীন সময় সমুদ্রে নামবেন না এবং সব ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করুন। এছাড়াও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার জন্য একটি পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

এবং বাচ্চাদের ভালমতো খেয়াল রাখুন এবং চোখে-চোখে রাখবেন‌। এছাড়াও যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে টুরিস্ট পুলিশকে জানান তারা আপনাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

শেষকথা

সবশেষে এটাই বলা যায় কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি দর্শনীয় স্থান। যেখান থেকে আপনি সমুদ্রসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখতে পারবেন। আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু  মানুষ হন তাহলে কুয়াকাটা (kuakata) সৌন্দর্য আপনাকে অবশ্যই টানবে ‌এবং মুগ্ধ করবে।

আরও পড়ুন-

মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল

বজরা শাহী মসজিদ নোয়াখালী

মন্তব্য করুন