মিঠামইন অষ্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড ও যাতায়াত খরচসমূহ

মিঠামইন অষ্টগ্রাম

মিঠামইন অষ্টগ্রাম বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি হাওর অধ্যুষিত উপজেলা। এটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং হাওরের পানিতে ভ্রমণ প্রিয় মানুষের আগ্রহী গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত।

মিঠামইনের আশেপাশের এলাকাগুলোও হাওর অঞ্চলে অবস্থিত এবং পানিতে ঘেরা হওয়ায় এ অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা অনেকটাই নৌপথের উপর নির্ভরশীল।

মিঠামইনের নামের উৎস নিয়ে মতামত রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এক সময় এই অঞ্চলে প্রচুর মিষ্টি বা মিঠা রসের খাগড়া গাছের বন ছিল, যা থেকে এর নামকরণ হতে পারে।

মিঠামইনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

আরও পড়ুনঃ- মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণ গাইড, খরচ ও সকল তথ্য

মিঠামইনের আকর্ষণ

মিঠামইন অষ্টগ্রাম
  • হাওর ভ্রমণ: মিঠামইন অষ্টগ্রাম এর প্রধান আকর্ষণ হল হাওর ভ্রমণ। নৌকা ভাড়া করে আপনি হাওরের বিস্তৃত জলরাশিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। হাওরের পাশে থাকা বিভিন্ন গ্রামেও নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে যেতে পারেন।
  • প্রকৃতি উপভোগ: মিঠামইন প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। হাওরের পাশাপাশি এখানে আছে সবুজের সমারোহ, নদী, খাল, বিল, বনানী, যা আপনার মনকে মুগ্ধ করবে।
  • ঐতিহ্যবাহী খাবার: মিঠামইনের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেন না। বিশেষ করে এখানকার মাছের ঝোল ও ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু।
  • স্থানীয় সংস্কৃতি: মিঠামইনের মানুষ অত্যন্ত আতিথেয়তাশীল। এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারেন।

মিঠামইনে দেখার মত কিছু স্থান

  • কালীবাড়ি বাজার: কালীবাড়ি বাজার মিঠামইন অষ্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখানে আপনি স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
  • মিঠামইন জামে মসজিদ: মিঠামইন জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল। 
  • মিঠামইন রাজবাড়ি: মিঠামইন রাজবাড়ি ছিল একটি জমিদার বাড়ি। বর্তমানে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত।
  • কুলিয়াখালী: কুলিয়াখালী মিঠামইনের একটি মনোরম গ্রাম। এখানে আপনি হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলতে পারবেন।
  • চাঁদপুর: চাঁদপুর মিঠামইনের আরেকটি মনোরম গ্রাম। এখানে আপনি নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন এবং হাওরের পাখি দেখতে পারবেন।

মিঠামইন অষ্টগ্রামের পাশে দেখার মত আরও কয়েকটি স্থান রয়েছে –

মালিকের দরগা

মিঠামইন থেকে ট্রলার যোগে ঘাগড়া যেতে এবং সেখান থেকে মালিকের দরগা যেতে এক ধরনের চমৎকার হাওর ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। এই পথ দিয়ে যেতে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।

মিঠামইন থেকে ঘাগড়া পৌঁছাতে এবং সেখান থেকে মালিকের দরগা যেতে মোটামুটি ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে।

শুকনো মৌসুমে, মিঠামইন থেকে টেম্পু বা মোটর সাইকেলে ঘাগড়া অথবা মালিকের দরগা যাওয়ার সুযোগ আছে। এটি একটি মজাদার ও সহজ মাধ্যম, যেখানে আপনি হাওরের পাশের গ্রামীণ পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রা দেখে উপভোগ করতে পারবেন।

দিল্লির আখড়া

কিশোরগঞ্জ থেকে চামড়া ঘাটে বাস বা সিএনজি করে যেতে পারেন। এই যাত্রা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন পরিবহন পরিষেবার মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। চামড়া ঘাটে পৌঁছানো অনেকেই সহজ এবং দ্রুত পরিবহন সুবিধা হিসেবে সিএনজি বা বাস ব্যবহার করে থাকেন।

চামড়া ঘাটে পৌঁছে, ট্রলার ব্যবহার করে দিল্লির আখড়ায় যাওয়া সম্ভব। ট্রলার ভ্রমণ হাওর অঞ্চল পেরিয়ে একটি চমৎকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

দিল্লির আখড়ায় যাওয়ার পথে আপনি প্রাকৃতিক দৃশ্য, হাওর, এবং আশেপাশের গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে পারবেন। ট্রলার ভাড়া এবং সময়কাল সম্পর্কে স্থানীয় পরিবহন পরিষেবার সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া ভালো।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি মিঠামইন উপজেলার একরামপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে অবস্থিত। সেখানে কিছু সময় কাটাতে পারেন। আবদুল হামিদ ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার বাড়ি মিঠামইনে একটি সাধারণ গ্রাম্য পরিবেশে অবস্থিত এবং এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান যেখানে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন করে। এর সাথে সাথে তার বাড়ি দেখতে গেলে, আশেপাশের হাওর এবং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

মিঠামইন অষ্টগ্রাম হাওরে যাবার উপায়

মিঠামইন অষ্টগ্রাম ভ্রমণের জন্য প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসা প্রয়োজন। ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে করে কিশোরগঞ্জ আসা সম্ভব। 

ট্রেনে আসা

– ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি ট্রেন (বুধবার বন্ধ) কিশোরগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে ছাড়ে।

– এই ট্রেন ভ্রমণ ৩-৪ ঘণ্টা সময় নেয় এবং খরচ হয় শ্রেণী ভেদে ১২৫-৩৪৫ টাকা।

বাসে আসা

– ঢাকা থেকে মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা পরিবহণ ও অনন্যা সুপার বাসে অথবা সায়েদাবাদ থেকে অনন্যা সুপার ও যাতায়াত বাসে করে সরাসরি কিশোরগঞ্জ সদরে আসা যায়।

– বাস ভাড়া ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে রিক্সা/ইজিবাইকে একরামপুর বাস/সিএনজি স্ট্যান্ডে পৌঁছানো যায়। তারপর লোকাল সিএনজি/অটো বা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে বালিখলা ঘাটে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ঘন্টা বা সারাদিনের জন্য ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন হাওরের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়। 

নৌকা ভাড়া

– ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, যা দরদামের উপর নির্ভর করে।

– বালিখলা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় মিঠামইন যেতে প্রায় এক ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় লাগে।

বালিখলা ঘাট হতে মিটামইন যাওয়ার লোকাল নৌকা সার্ভিসও রয়েছে।

যেখানে থাকবেন

মিঠামইন অষ্টগ্রাম এ থাকার জন্য আপনি বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্থানে থাকতে পারেন:

  • প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট: এটি মিঠামইনের অন্যতম ভালো এবং আধুনিক রিসোর্ট। তবে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • হোটেল আল-কামাল: মিঠামইন বাজারে অবস্থিত এই হোটেলে আপনি মান অনুযায়ী ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় রুম ভাড়া নিতে পারবেন। হোটেলটি স্বাচ্ছন্দ্যময় থাকার জন্য একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
  • হোটেল সিকদার আবাসিক: মিঠামইন বাজারে অবস্থিত এই হোটেলে একই দামে রুম ভাড়া নেওয়া সম্ভব। হোটেলটি আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য ভাল একটি পছন্দ।
  • উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলো: মিঠামইনে থাকার জন্য আরেকটি সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক ব্যবস্থা হল উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলো। এখানেও আপনি রাত্রিযাপন করতে পারেন।

এই বিকল্পগুলো বিবেচনা করে আপনার বাজেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পছন্দ করতে পারেন।

যেখান খাবেন

মিঠামইন বাজারের স্থানীয় খাবার হোটেলগুলোতে হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছের পদ উপভোগ করতে পারবেন। এ অঞ্চলের হাওর থেকে প্রাপ্ত নানা প্রকারের মাছের খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বিখ্যাত। এখানে উল্লেখযোগ্য খাবার হোটেলের মধ্যে রয়েছে:

  • কাচা লংকা: এই খাবার হোটেলে হাওরের তাজা মাছের পদসহ বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। হোটেলটি মিঠামইন বাজারের একটি পরিচিত খাবারের জায়গা।
  • সেলিম রেস্টুরেন্ট: সেলিম রেস্টুরেন্টে আপনি তাজা মাছের পদ এবং হাওরের বিশেষ খাবার উপভোগ করতে পারেন। এটি স্থানীয়দের এবং পর্যটকদের পছন্দের একটি জায়গা।
  • হোটেল চাঁনপুর: এই হোটেলে হাওরের মাছের বিভিন্ন পদ পাওয়া যায়। এটি মিঠামইনের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হোটেল।

এই হোটেলগুলোতে হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছের পদ খাওয়ার অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ-

হিমছড়ি পাহাড় ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় তথ্য সমূহ

মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ, খরচ ও যাতায়াতসহ সকল তথ্য

মন্তব্য করুন