খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান

আপনি কি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, ভ্রমণবিলাসী বা প্রকৃতিপ্রেমী? প্রাকৃতিক অনন্য সৌন্দর্য আর রহস্যময়তায় ঘেরা খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান গুলো হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ স্থান। পাহাড়ের রানী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাঙ্গামাটির মতই খাগড়াছড়িও (khagrachari) বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা।

পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি ও সমতল ভূমি কি নেই এখানে। প্রতিটি স্থান যেন অপরূপ মায়াময় সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এ জেলার বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। খাগড়াছড়িকে চেংমি, ফালাং তাউং এবং মং সার্কেল নামে স্থানীয়রা ডেকে থাকে।

খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে; আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝর্ণা, মায়াবিনী লেক, শান্তিপুর অরণ্য কুটির, নিউজিল্যান্ড পাড়া ইত্যাদি। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক উল্লেখ্যযোগ্য খাগড়াছড়ি (khagrachari) কয়েকটি দর্শনীয় স্থান।

আরও পড়ুনঃ নীলগিরি বান্দরবান

আলুটিলা গুহা

খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান আলুটিলা গুহা অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। মাটি থেকে ১ হাজার ফুট উঁচু আলুটিলা নামক পাহাড়ের উপর অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্র থেকে পাখির চোখে পুরো খাগড়াছড়ি (khagrachari) শহরটাকে দেখা যায়। বৌদ্ধদের স্বর্ণালী উপাসনালয় আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য এখানেই অবস্থিত।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রহস্যময় সূড়ঙ্গ। স্থানীয়রা অবশ্য একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। যার দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। গুহামুখের ব্যাস প্রায় ১৮ফুট। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ির নীচে আলুটিলা পাহাড়ের পাদদেশে পাথর আর শিলা মাটির ভাঁজে গড়া এ রহস্যময় সুড়ঙ্গের অবস্থান বলেই আমরা আলুটিলা গুহা নামে চিনি। আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে ফটকের দুই পাশে দুটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ।

প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার পরে বেশ খানিকটা পাহাড়ি পথ পেরুলেই মিলবে সেই রহস্যময় গুহার সন্ধান। অন্ধকারছন্ন ও শীতল সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত দেখতে গুহাটি যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। কিছু কিছু জায়গায় গুহাটির উচ্চতা খুব কম হওয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়।

গুহার ভেতরে পাথর গুলো পিচ্ছিল হবার কারনে পা পিছলে যায় এমন স্যান্ডেল বা জুতা পরা যাবে না। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য সাথে করে মোবাইল টর্চ বা টর্চ লাইট নিয়ে যেতে পারেন। অ্যাডভেঞ্চার ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার জন্য ভ্রমন পিপাসুদের জীবনে অন্তত একবার হলেও ঘুটঘুটে এই অন্ধকার গুহার ভেতরে ঘুরে আসা উচিত।

মাতাই পুখিরি/দেবতার পুকুর

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি (khagrachari) থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে মহালছড়ি উপজেলার নুনছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিক হ্রদ মাতাই পুখিরি (Matai Pukhiri)। মাতাই অর্থ দেবতা এবং পুখুরি অর্থ পুকুর। পর্যটকদের কাছে তাই তো এটি দেবতার পুকুর (Matai Pukhiri) নামে পরিচিত।

ধারণা করা হয় মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু লোককথা প্রচলিত আছে। ত্রিপুরাদের ধারণা, আশীর্বাদ স্বরুপ দেবতা নিজে এ পুকুর করে দিয়েছেন। তারা মনে করে, এ পুকুরে গোসল করলে মনোবাসনা পূরণ হবে। প্রতিবছর বৈসুকে এখানে তীর্থ মেলা বসে, দূরদূরান্তের দর্শনার্থী সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে।

দেবতার অলৌকিকতায় পুকুরটি সৃষ্ট বলে এতো উঁচুতে অবস্থানের পরও পুকুরের জল বছরের কোন সময়ই শুকিয়ে যায় না এবং বর্ষাকালে পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পুকুরের চারিদিক সুবিস্তৃত পর্বতশ্রেণী ঠিক তারই মাঝে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে প্রায় ১০০০ ফুটের উপর এর অবস্থান।

স্বচ্ছ স্থির জলরাশি পুকুরের আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০০ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬০০ফুট। চারিদিকে সবুজে ঘেরা স্বচ্ছ জলস্রোতের স্থির পাথর আপনাকে শুধু বিমোহিত করবেই না আপনার মনে এনে দিবে প্রশান্তির ছোঁয়া। বাংলাদেশের আর কোথাও এত উঁচু জায়গায় এমন লেক বা হ্রদ নেই।

রিসাং ঝর্ণা

খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ি(khagrachari) জেলা শহর থেকে প্রায় ১১ কিমি দূরে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত রিসাং ঝর্ণা । এছাড়া আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে (খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক হতে ১ কিমি দূরে) রিসাং ঝরনা। এখানে পাশাপাশি দুটি ঝরনা রয়েছে যার কলধ্বণি আপনি মূল রাস্তা থেকেই শুনতে পাবেন।

একটি ঝর্ণা থেকে আরেকটির ঝর্ণার দুরত্ব প্রায় ২০০ গজ। একটির নাম রিসাং ঝর্ণা অন্যটির নাম রিসাং ঝর্ণা ২ বা “অপু ঝর্ণা” নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার পানি প্রায় ৩০ মিটার উঁচু থেকে আছড়ে পড়ছে নিচে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যে কারো মন ভালো করে দেয়।

ঝর্ণা ধারাটি কবে থেকে বয়ে চলেছে তা কেউ বলতে না পারলেও ২০০৩ সালে এটি ভ্রমণপিপাসুদের চোখে পড়ে। তখন থেকেই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য একটি ঝর্ণায় যেতে পাকা সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

আপনি যখন উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে পায়ে হেঁটে যেতে থাকবেন তখন আপনার দৃষ্টি আটকে যাবে পাহাড়ী সবুজ আর জীবনধারার অপূর্ব সৌন্দর্য্যে। রিসাং ঝর্নার ঠান্ডা জলে নেমে আপনি সাঁতার কাটতে পারবেন, গোসল করতে পারেন। যারা একটু দুরন্ত প্রকৃতির তাদের জন্য এখানে ওয়াটার রাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে তাও আবার সব বিনা পয়সায়।

হর্টিকালচার পার্ক খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি(khagrachari) জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানের নির্মিত সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক খাগড়াছড়ি। শহরের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র এই পার্কটি ২২ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত। এখানে রয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজ,সবুজ বেস্টনী ও কৃত্রিম হ্রদ, সুইমিং পুল, বসার জায়গা সহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ফুলের বাগান।

হর্টিকালচার হেরিটেজ পার্ক:খাগড়াছড়ি জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানের নির্মিত সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক খাগড়াছড়ি। শহরের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র এই পার্কটি ২২ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত। এখানে রয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজ,সবুজ বেস্টনী ও কৃত্রিম হ্রদ, সুইমিং পুল, বসার জায়গা সহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ফুলের বাগান।

এছাড়াও পিকনিক স্পট,গেস্টহাউজ ও হলরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। বার্ডস পার্ক, অবজারভেশন টাওয়ার এবং ওপেন স্টেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সুযোগ। ছোটদের জন্য রয়েছে কিডস জোনের সুবিধা। এছাড়াও আপনি পেয়ে যাবেন ফুড জোনে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের দারুণ পরিবেশনা। সবকিছু মিলিয়ে আপনার মনে হবে চারপাশ যেন আঁকা কোন জল রঙের ছবি। এখানকার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটির দিনে বিনোদন প্রেমী মানুষেরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে।

তৈদুছড়া ঝর্ণা খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি (khagrachari)জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলার জামতলি পোমাংপাড়া হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা তৈদুছড়া ঝর্ণা। স্থানীয়দের ভাষায় তৈদু অর্থ পানির দরজা বা জানালা। আর ছড়া মানে ঝর্ণা। তাই স্থানীয় ত্রিপুরা আদিবাসীরা এ ঝর্ণাটির নাম দিয়েছে ‘তৈদুছড়া ঝর্ণা।

পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিঁচু মেঠ পথ পেরিয়ে দীঘিনালা হতে সব মিলিয়ে তৈদুছড়া পর্যন্ত পৌছতে প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগে। কোথাও দুর্গম পথ, অনেকগুলো ঝিরি, উচু নিচু পাহাড়, কোথাও বা হাটু সমান আবার কোথাও বুক সমান পানি আর বুনো জঙ্গল পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রায় তিন ঘন্টা হাঁটার পর আপনি পৌছবেন ১ম ঝর্ণাটিতে যা প্রায় ৬০ ফুট উঁচু।

প্রথম ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠলে খুব কাছাকাছি পেয়ে যাবেন ২য় ঝর্ণাটি যা প্রায় ৮০ ফুট উঁচু।এই চলার পথটি দারুণ রোমাঞ্চকর আর সুন্দর। এখানে সারা বছরই পানি থাকে তবে শীতে জল প্রবাহ কমে যায়। আর বর্ষার হয়ে উঠে কানায় কানায় পূর্ণ । শীতের আগে ও বর্ষার শেষে এখানে ঘুরতে যাওয়া উত্তম সিদ্ধান্ত।

ঝর্ণার আশে পাশে কেবল যেন সবুজেরই সমারোহ। এছাড়াও পাশের পাহাড় গুলোতে চলে জুম চাষ। যাত্রা পথে সবুজের সমারোহে চোখ যেন জুড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল

শান্তিপুর অরণ্য কুঠির খাগড়াছড়ি

বিশাল অরণ্যের মাঝে প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান শান্তিপুর অরন্য কুটির অবস্থান। ভিক্ষুরা যেন নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান করতে পারে সেই লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষ ভান্তে ভআদন্ত মাহথেরো কুটিরটি স্থাপন করেন।

৫০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি এখানেই রয়েছে। ছোট ছোট টিলা,প্রায় ২০ হাজারের বেশি বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ ,সুবিশাল মাঠ,দুইটি কৃত্রিম হ্রদ, অনুষ্ঠান মঞ্চ, ছোট বেড়ার ঘর এবং ভক্তদের উপাসনার বাতিঘর রয়েছে এখানে।

শান্তিপুর অরন্য কুটির সবার জন্যই উন্মুক্ত, যেকোন ধর্মের লোক এখানে যাতায়াত করতে পারে। তবে বড় মুর্তির পিছনে ১৩ টি কুটিরে ভান্তেরা ধ্যান করে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। এছাড়াও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তীর্থ স্থানটিতে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সমাগম ঘটে হাজার হাজার মানুষের।

হাতিমাথা বা হাতিমুড়া

খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ির(khagrachari) সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম হাতির মাথা পাহাড়ে অবস্থিত আকর্ষণীয় লোহার সিঁড়ি যা আদিবাসীদের কাছে এদোশিরা মোনে নামে পরিচিত। অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত সিঁড়িটি পাহাড় ও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। সিঁড়িটির দৈর্ঘ্য ৩০৮ ফুট এবং প্রায় ৩০০ ধাপ রয়েছে। এটি বেঁয়ে উঠতেই চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

এই সিঁড়ি দিয়ে আদিবাসী প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দা চলাচল করে। গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সিঁড়িটি নির্মাণ করেন। সবুজ ঘেরা পাহাড়ি প্রকৃতি ও মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে নিয়মিত পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে হাতিমাথা বা হাতিমুড়া।

নিউজিল্যান্ড পাড়া

নিউজিল্যান্ড পাড়া! তাও আবার বাংলাদেশে নাম শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? অবাক হলেও সত্যি বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি(khagrachari) জেলা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে পানখাইয়া পাড়ার পাশে নিউজিল্যান্ড পাড়া অবস্থিত। খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি যেখানে রয়েছে সবুজ শ্যামল শস্যক্ষেতের অপার সৌন্দর্য্য।

মূলত পানখাইয়া পাড়া ও পেরাছড়ার কিছু অংশ দেখতে নিউজিল্যান্ড এর মত হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাছে নিউজিল্যান্ড পাড়া নামে পরিচিত। সবুজ পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে উঠছে ছোট ছোট বসতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে বয়ে চলা ঝর্ণা ও নদীর কলধ্বণি, সাদা মেঘের ভেলা ও ফসলি মাঠের মেলাবন্ধনে অপরুপ দৃশ্য ভরপুর নিউজিল্যান্ড পাড়া সবাই কে মুগ্ধ করেছে।

মায়াবিনী লেক

খাগড়াছড়ি জেলা থেকে মাত্র ৩০ মিনিট দূরে পানছড়ি উপজেলার ভাইবোনছড়ার কংচাইরি পাড়ায় পাহাড়ের মাঝে অপূর্ব সুন্দর মায়াবিনী লেক অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পাহাড়ের উঁচু-নিচু ৪০ একর জায়গার মধ্যে লেকটি প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এবং এর মাঝখানে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্রটি।

সবুজের সমারোহে ঘেরা পাহাড়ের মাঝে হ্রদ, সেখানে রয়েছে শীতল স্বচ্ছ জল সেই স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ায় মাছ। হ্রদের মাঝখানেও রয়েছে ছোট বড় টিলা। পর্যটকদের জন্য টিলাগুলোতে তৈরি করা হয়েছে গোলঘর বিশ্রামাগার। সেখান থেকে পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বাঁশের সাঁকো।

এছাড়াও হ্রদে ঘোরাঘুরির জন্য রয়েছে ৪টি নৌকার ব্যবস্থা। যেকোন বয়সী ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে লেকটি’র স্বচ্ছ পানির প্রবাহমান ধারা। এটি পিকনিক স্পট হিসেবে ও পরিচিত। মনোরম পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন মায়াবনী লেক খাগড়াছড়ি(khagrachari) থেকে কাছাকাছি হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই।

মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী

খাগড়াছড়ি(khagrachari) জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে মানিকছড়িতে অবস্থিত মং রাজার আদি নিবাস মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী। মানিকছড়িতে রাজা কংজয়ের (১৭৯৬-১৮২৬) রাজত্বের মধ্য দিয়ে এখানে মং রাজার র্কযক্রম শুরু হয়। সপ্তম রাজা মং প্রু সাইন (১৯৫৪-১৯৮৪) রাজা থাকা অবস্থায় খাগড়াছড়ির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

রাজা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তি বাহিনীর সাথে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বর্ণালঙ্কার ও গুপ্তধন মাটির নিচে চাপা দিয়ে জীবন রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব গুপ্তধন হারিয়ে যাওয়া পরও মাটি মানুষের টানে ফের মানিকছড়ি রাজপ্রাসাদে ফিরে আসেন।রাজা দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে ১৯৮৪ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কালের বিবর্তনে এই মং রাজবাড়ী ঐতিহ্যগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সুদৃষ্টি পেলে এখনও তার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

পরিশেষ

উপরোক্ত আলোচ্য (khagrachari) খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান ছাড়াও রয়েছে বিডিআর স্মৃতিসৌধ, শতবর্ষী পুরনো বটবৃক্ষ, রাবার ড্যাম,রামগড় চা বাগান, পুরাতন চা বাগান সহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান চাইলে ওইসব স্থান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। খাগড়াছড়ির সবুজের সমারোহে আকাশ আর পাহাড়ের মিতালি আপনাকে বিমুগ্ধ করে ভুলিয়ে দেবে সকল ক্লান্তি।

খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর

১. খাগড়াছড়ি হোটেল ভাড়া?

উত্তর: সিঙ্গেল রুম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, ডাবল রুম 1800 টাকা এবং ভিআইপি রূপ ২৫০০ টাকা। 

২. ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি কত কিলোমিটার?

উত্তর:  প্রায় ২৭৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি ৬ থেকে ৭ ঘন্টা সুময় লাগে।

মন্তব্য করুন