জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ (national memorial of bangladesh) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদানকারী সকলের স্মৃতি স্মরণে জাতীয় শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক হলো জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরপরই ১৭৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয় পর্যায় থেকে শহীদএর স্মৃতি স্মরণে এই স্মৃতিসৌধ (national monument) নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় শহীদদের স্মরনে নির্মিত সর্বজনীন স্মৃতিস্তম্ভ হলো-জাতীয় স্মৃতিসৌধ (savar sriti shoudho)। যা বাংলাদেশের ঢাকা সাভারে অবস্থিত।
স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ সহ আরো ছয়টি আন্দোলনে নিহত বেসমরিক বাঙালি এবং অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্থাপনা। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে যেটি রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত করা হয়। আর এই মহান স্মৃতিসৌধ নিয়ে সবারই জানার আগ্রহ রয়েছে।
তাই আপনারা যারা স্মৃতিসৌধ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আশা করি, মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়লে স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান
জাতীয় স্মৃতিসৌধ কি
জাতীয় স্মৃতিসৌধের অর্থ হলো- শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত সৌধ। একটি দেশ বা জাতীর স্মৃতি বহন করে থাকে স্মৃতিসৌধ। বাঙালি জাতীর স্মৃতি এবং গৌরবময় বিজয়ের ধারক ও বাহক হলো এই স্মৃতিসৌধ (jatiyo sriti shoudho)। যা স্বাধীন মুক্তিযুদ্ধাদের এবং বাঙালি জাতীর গৌরব। এ ছাড়াও জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখার পাশাপাশি আপনার হাতে যদি সময় থাকে।
এবং আপনি যদি একজন ভ্রমন পিপাসক হয়ে থাকে, তাহলে আপনি ঢাকা সাভারের আসে পাশে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করে দেখতে পারের। যেমন- ফ্যান্টাসি কিংডম যা কিনা ঢাকা সাভার আশুলিয়া তে অবস্থিত। আরও আসে নন্দন পার্ক এটি সাভার নবিনগরে অবস্থিত। জাতীয় স্মৃতিসৌধ (national monument) থেকে এটি আপনার খুবি নিকট হবে আশা করি, এ গুলি ও ঘুরে দেখবেন আপনার ভালো লাগবে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভ কেন
বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের (sriti shoudho) সাতটি স্তম্ভ রয়েছে। আর এই সাতটি স্তম্ভের রায়েছে সাতটি স্বতন্ত্র কারণ। সাতটি স্তম্ভের সাথে মিশে রয়েছে দেশের সাতটি ইতিহাসের ঘটনা। যেটি একটি স্তম্ভ একটি চূড়া হিসেবে বহন করে। নিন্মে সাতটি স্তম্ভের কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
১। ১৯৫২ এর মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন
ভাষা আন্দোলন হলো বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবীতে এক সংগঠিত গণআন্দোলন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে পাকিস্তান্ এবং ভারত নামের দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। আর এই পরপরেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাষা কি হবে এটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় নেতাদের মধ্যে।
পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবি গণ বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু আর পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবী তোলা হয় উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
১৯৫৭ সালের ২৭ জানুয়ারী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় আসেন এবং এবং তিনি পল্টনের এক ময়দানে ভাষন দেন পাকিস্তানের সরকারি কাজকর্মে কোন ভাষা ব্যবহৃত হবে সেটা প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু।
আর এর পরেইই “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই স্লোগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ধর্মঘাট পালিত। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের সভাপতি ভাসানীর নেতৃত্বে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষধ গঠিত হয়।
২১ এ ফেব্রুয়ারী সমগ্র পূর্বপাস্তানে হরতাল জনসভা এবং মিছিল আয়োজনের সীদ্ধান্ত নেওয়া হয় আর এসব কর্মসূচীর সময়ে ১৪৪ ধারা জারী করে সমাবেশ এবং শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ২০ই ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষোধ গঠিত করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সংকল্পে অটুট থাকে সকল জনগণ।
পরের দিন সকালে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই স্লোগানে বেড়িয়ে পরে। এর ফলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে। আর এর ফলে রফিক, শফিক আব্দুল জব্বার নিহত হন এবং অনেকেই আহত হয়।
১৯৫৬ সাল অব্দি রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন অব্যহত থাকে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষধে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়। বাঙালি জাতি ১৯৫২ এর পরে থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাঙ্গালির অত্মত্যাগের দিন হিসেবে পালন করে আসছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
২। ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ছিল বাংলার ইতিহাসের একটি স্মরণীয় এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। মুসলিম লীগ সহ আরো ৫ টি দলের স্বমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। মার্চ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ অব্দি নির্বাচন হয়েছিল এবং প্রদেশিক ৩০৯ আসনের মধ্যে ২২৮ টি আসন পেয়েছিল।
নির্বাচনী প্রচরনার জন্য যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি পেশ করে যা বাংলার মানুষের দাবি ছিলো। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন এবং ১৯৩৫ সালের ভারত শাসনের আইনের অধীনে সর্বজনীন ভোটাধিকারের পূর্বে। এবং গঠিত হবার পরে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছিল।
৩। ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন
১৯৫৬ সালের আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানে নতুন শাসনতন্ত্র গঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানে নতুন শাসতন্ত্র গৃহীয় এবং এবং ২৩ মার্চ ১৯৫৬ সালে সেটা কার্যকার করা হয়। শাসন তন্ত্র অনুযায়ী পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। এবং ১৯৫৬ সালের নতুন শাসন তন্ত্রে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বকৃতি প্রদান করা হয়।
৪। ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন
সংগ্রাম এবং ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস হলো ১৭ সেপ্টম্বর। ১৯৬২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি শসন, শোষন ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, বাবুল, গোলাম মোস্তফা সহ আরো অনেকেই যাদের নাম না জানাই থেকে যায়। তাদের স্মরণে প্রতি বছর ১৭ই সেপ্টেম্বর কে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
৫। ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন
১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ছয় দফা কে বলা হয় বাংলার মুক্তির সনদ। নিচে ছয় দফার দাবি গুলো দেওয়া হলোঃ
- সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে ফেডারেল বা যৌথরাষ্ট্রী এবং সংসদীয় পদ্ধতির অন্তভূর্ক্ত, আর এতে যৌথ রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীণ প্রাপ্তবয়স্ত ভোটাধিকারের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সবার প্রতিনিধি নির্বাচন হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে।
- কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা এবং বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্থিত শর্তের সাপেক্ষিক বিষয়।
- পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের দুটি মুদ্রা চালু করতে হবে, যা পারস্পারিক ভাবে অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময় করা যাবে, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যংকের দুটি অঞ্চলের জন্য দুটি রিজার্ভ ব্যংক থাকবে এবং তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর বা মুল্ধন পাচার হতে না পারে।
- রাজস্ব ধার্য ও ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যের হাতে, প্রতিরক্ষা এবং বৈদাশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাসস্বের যোগা দেওয়া হবে। সংবিধানের নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জমা হয়ে যাবে।
- যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করবে সেই অঙ্গরাজ্যের নিজেস্ব নিয়ন্ত্রণাধীনে তার পৃথক হিসেব রাখবে এবং সংবিধানে এরুপ বিধান থাকতে হবে।
- ফলপ্রসুতভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে মিলিশিয়া সামরিক বাহিনি গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।
৬। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি প্রধান স্তম্ভ। আর এই গণঅভ্যুণথানে অনেকেই শহীদ হন। এদের মধ্যে কৃষক শ্রমিক দিনমজুদের সংখ্যাটা বেশি ছিলো। ২৪ জানুয়ারী বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণে আইয়ুব খানের পতন ঘটে।
৭। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গুরত্বপূর্ন একটি ঘটনা হলো বাংলার মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশের সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেক গৌরবময়। পাকিস্তানিদের অত্যাচার যখন ক্রমই বেড়ে চলে তখন ই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন এবং দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই মুক্তিযুদ্ধের কারণে ত্রিশ লাখের ও বেশি মানুষ প্রাণ দেন এবং সেই সাথে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ভিটে মাটি হারান। অবশেষে ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।
আরও পড়ুনঃ তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয় কেন
স্মৃতিসৌধ বাংলার মানুষের ইতিহাসের এক অন্যন্য সাক্ষী প্রদান করে থাকে। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতার আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করা জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের সময়সূচী
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে স্মৃতিসৌধ একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধ (national monument of bangladesh) দেখতে আসে। আর বিলাশ এবং গৌরবময় স্থাপনার সুরক্ষার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের সরকার একটা সময়সূচী নির্বাচন করে দিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রতি দিন সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা অব্দি খোলা থাকে। স্মৃতিসৌধ সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, জাতীয় স্মৃতিসৌধ সকল প্রবেশকারীদের জন্য উন্মুক্ত এখানে প্রবেশ করার জন্য কোন প্রকারের টাকা খরচ করতে হয় না।
তাই প্রতিদিনের পাশাপাশি বিশেষ করে ছুটির দিনগুলো তে দর্শনার্থীর অনেক ভিড় থাকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। স্মৃতিসৌধের (martyrs monument) ইতিহাসের পাশাপাশি এর মনোরম এবং সুন্দর পরিবেশ সবার মনকেই ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায়
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর পশ্চিমে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ (martyrs monument) অবস্থিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাভার একলার গ্রাম থেকে অসংখ্য বাঙ্গালিকে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাদের ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে।
এবং তাদের হত্যা করে নীচু জমিতে ফেলে রেখে দেয় সেই সাথে মাটিচাপা এবং গণকবর দেয়। যুদ্ধের পরে সাভার একালায় আবিস্কৃত হয় বধ্যভূমি এবং গণকবর। আর এই গণকবরগুলো স্মৃতিসৌধ এলাকায় অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে (national monument) যাওয়ার জন্য রয়েছে অসংখ্য যানবাহন। আপনি তাদের যেকোন একটিতে উঠে খুব সহজেই স্মৃতিসৌধে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্য বি আর টি সি বাস রয়েছে। বি আর টি সি বাসে চড়ে ঢাকার, মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, শ্যামলি, গাবতলী থেকে স্মৃতিসৌধে খুব অনায়াসেই যেতে পারবেন।
এছাড়া মিরপুর-১২ থেকে তিতাস পরিবহন এর মাধ্যমে স্মৃতিসৌধে যেতে পারবেন, তিতাস পরিবহন মিরপুর-১০, মিরপুর-২, মিরপুর ১ হয়ে স্মৃতিসৌধ অব্দি যায়। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বাসে করে খুব সহজেই স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করতে যেতে পারেন।
লালা-সবুজ নামক আরো একটি এসি বাস আছে যেটির মাধ্যমেও ঢাকার মতিঝিল থেকে স্মৃতিসোধ যেতে পারবেন। মতিঝিল, গুলিস্তান ফার্মগেট থেকে সাভার এই রুটে মোট ২০ টি এর ও বেশি বাস চলাচল করে থাকে। তাই আপনি চাইলে ঢাকার যেকোন স্থান থেকে খুব অনায়াসেই স্মৃতিসৌধে যেতে পারবেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর উচ্চতা
স্বতন্ত্র ভিত্তি এবং আসমান উচ্চতা নিয়ে সাতটি ত্রিভুজাকৃতির প্রাচীর দিয়ে মূল সৌধটি গঠিত। স্মৃতিসৌধটি (national monument) বানানো হয়েছে সর্বোচ্চ স্তম্ভটি সর্বনিন্ম দৈর্ঘ্যের ভিত্তির উপর, আর সর্বদীর্ঘ ভিত্তির উপর স্থাপিত স্তম্ভটি সবচেয়ে কম উচ্চতার। স্মৃতিসৌধের প্রচারীগুলি মাঝখানে একটি ভাজ দ্বারা কোণাকৃতির এবং একটির পরে একটি সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে।
কাঠামোগতভাবে স্মৃতিসৌধের ১৫০ ফুট বা ৪৫.৫ মিটার। জাতীয় স্মৃতিসৌধের (sriti shoudho) মিনারটি ৪৫ মিটার উচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থান করছে। স্মৃতিসৌধ প্রঙ্গণের সর্বমোট আয়তন ৮৪ একর। স্মৃতিস্তম্ভের পরিবেষ্টন করে রয়েছে ২৪ একর বাকী গাছপালা দিয়ে শোভা রচিত রয়েছে। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট। এবং স্তম্ভগুলো ছোট থেকে ক্রমশ বড়ক্রমে সাজানো হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর স্থপতি
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় অর্জনের পরপরই ১৯৭২ সালে মহান শহীদের স্মৃতি স্মরণে জাতীয় পর্যায়র স্মৃতি সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সাভারের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয়, তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্মরণে সাভারে স্মৃতি সৌধ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
আর এই স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য সেই সময়ে দেশের সকল স্থপতি, ভাস্কার্য নির্মাতাদের নকশা নির্বাচন করতে আহবান করা হয়। ১৯৭৮ সালের জুন মাসের দিকে স্মৃতি সৌধের নকশা জমা দেওয়ার প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থপতি এবং ভাস্কার্য নির্মাতারা সেখানে নকশা দিয়ে অংশগ্রহণ করেন। মোট ৫৭ টি নকশা যেখানে প্রদর্শন করা হয়।
উক্ত ৫৭ নকশার মধ্যে স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের প্রদত্ত নকশা কে সিলেক্ট করা হয়। ১৯৮২ সালের পরে স্মৃতিসৌধ এর মূল কাঠামো, কৃত্রিম লেক এবং উদ্যান তৈরির কাজ শেষ করা হয়।
পরিশীষ্ট
স্মৃতিসৌধ হলো দেশের শহীদের স্মৃতিতে নির্মিত একটি স্তম্ভ। যা বাংলার মানুষের দেশের প্রতি শহীদের ভালোবাসা এবং বিরত্বের বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজের গোড়াপত্তন ১৯৭২ সালে শুরু হয়ে তা শেষ হয় ১৯৮৮ সালে।
সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহনির্মাণ এবং পণপূর্ত মন্ত্রণালয়ধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর। বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধ প্রথম উদ্ভোদন করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরশাদ।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে সকল খুটিনাটি বিষয় জানতে পেরেছেন। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
১। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ৪৫.৫ মিটার।
২। স্মৃতিসৌধের স্তম্ভ কয়টি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধের স্তম্ভ ৭ টি।
৩। স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ স্মৃতিসৌধ সাভার নবীনগর অবস্থিত।
৪। জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে?
উত্তরঃ বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ ময়নুন হোসেন।
৫। জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপর নাম কি?
উত্তরঃ সম্মিলিত প্রয়াস।
আরও পড়ুন-
নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী
শোলাকিয়া ঈদগাহ কিশোরগঞ্জ