যমুনা ফিউচার পার্ক
বাংলাদেশেই অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিং মল “যমুনা ফিউচার পার্ক”। এছাড়াও এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শপিং মল। রাজধানী ঢাকার বারিধারাতে অবস্থিত বহুতল বিশিষ্ট বিপণী কেন্দ্র যমুনা ফিউচার পার্ক (Jamuna Future Park) এর আয়তন প্রায় ৪,১০০,০০০ বর্গফুট।
২০০২ সালে যমুনা বিল্ডার্স লিঃ এই স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করে। এই শপিং মলটি সর্বসাধারণের জন্য ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কের স্থপতি এ জে এম আলমগীর।
প্রায় ৩০০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ৮ তলা বিশিষ্ট এই ভবনের দোকান এবং সেবার সংখ্যা ৫০০ টিরও বেশি। “যমুনা গ্রুপ” এই শপিং মলের তত্ত্বাবধায়ক এবং মালিক।
যমুনা ফিউচার পার্ক – অবস্থান
রাজধানী ঢাকার অভিজাত জায়গা কুড়িল বিশ্ব রোড, বসুন্ধরা, গুলশান, প্রগতি সরণি, বারিধারার মতো অভিজাত জায়গার পাশে অবস্থিত যমুনা ফিউচার পার্ক। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর খুব নিকটেই শপিং মলটির অবস্থান।
ঠিকানা : ক-২৪৪, প্রগতি সরণি, কুড়িল, বারিধারা, ঢাকা, বাংলাদেশ
ফোন : ৮৪১৬০৫১-২
মোবাইল : ০১৯৩৭-৪০০২০৫ – ২২
ফ্যাক্স : ০২-৮৪১৬০৫০
ওয়েবসাইট : www.jamunafuturepark.com
যমুনা ফিউচার পার্ক – বর্ণনা
আউটডোর রাইড
যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গণের প্রবেশের শুরুতেই রয়েছে ছয়টি রোমাঞ্চকর আউটডোর রাইড। রাইডগুলো হল :
১. স্কাইড্রপ
২. রোলার কোস্টার
৩. পাইরেট শিপ
৪. ম্যাজিক উইন্ডমিল
৫. ফ্লাইং ডিসকো
৬. টাওয়ার চ্যালেঞ্জার
টিকেট মূল্য
- স্কাইড্রপ – ১৫০ টাকা
- রোলার কোস্টার – ৩০০ টাকা
- পাইরেট শিপ – ১৫০ টাকা
- ম্যাজিক উইন্ডমিল – ১৫০ টাকা
- ফ্লাইং ডিসকো – ১৫০ টাকা
- টাওয়ার চ্যালেঞ্জার – ১৫০ টাকা
অর্থাৎ ৭৫০ টাকার মধ্যে আপনি সবগুলো রাইডে উঠতে পারবেন। রাইডগুলোতে চড়ে আপনি রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিতে পারবেন।
কি কি আছে
- যমুনা ফিউচার পার্কের প্রথম তলা পুরোটাই গাড়ি পার্কিং করার জন্য নির্ধারিত। এখানে রয়েছে সুবিশাল পার্কিং সুবিধা।
- প্রথম তলা বাদে বাকি তলা (ফ্লোরগুলো) পণ্যের ক্যাটাগরি ভিত্তিক বিন্যাস করা হয়েছে এখানে। এর প্রতিটি ফ্লোরকে “দক্ষিণ-পশ্চিম”, “উত্তর-পশ্চিম”, “দক্ষিণ-পূর্ব”, এবং “উত্তর-পূর্ব” অংশে ভাগ করা হয়েছে।
- প্রতিটি ভাগে পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির পণ্য এবং সেবা।
- কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত যমুনা ফিউচার পার্ক। প্রায় ৫০০টিরও বেশি খুচরা এবং পাইকারি দোকান আছে এখানে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র এখানে রয়েছে।
- শুধু কেনাকাটাই নয়, চিত্তবিনোদন করারও রয়েছে অনেক মাধ্যম। যমুনা ফিউচার পার্কের ষষ্ঠ তলার পুরোটাই গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদন জোন হিসেব। ষষ্ঠ তলায় পাবেন ফুডকোর্ট, প্লেয়ারস জোন, রেস্টুরেন্টস, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ইত্যাদি।
- বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর এর মত বেশ কিছু গ্যালারি এবং প্রদর্শনী দেখতে পাবেন এখানে গেলে।
- এখানে রয়েছে একটি মোবাইল মার্কেট। প্রায় সব ব্র্যান্ডের মোবাইলই পাবেন এখানে।
- অনেক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এবং ফুডকোর্ট আছে যমুনা ফিউচার পার্কে। সব ধরনের খাবারই এখানে খেতে পারবেন।
ব্লকবাস্টার সিনেমাস
যমুনা ফিউচার পার্কের ষষ্ঠ তলায় গেলে পাবেন সিনেমা হল। এখানে আছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ৭টি সিনেমা হলের সমন্বয়ে “ব্লকবাস্টার সিনেমাস” (Blockbuster Cinemas)। থ্রিডি সিনেমার আয়োজন, ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, বিলাসবহুল এবং চিত্তাকর্ষক কফি লাউঞ্জ, ভিআইপি লাউঞ্জ।
এছাড়াও অতিথিদের জন্য আরামদায়ক বসার জায়গা, সাতটি হলের রয়েছে সাত ধরনের আকর্ষণীয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন, মনোমুগ্ধকর লবি ডিজাইনসহ রয়েছে অভিনব সব আয়োজন। যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে রয়েছে অনলাইন টিকেটের ব্যবস্থা।
সিনেমার টিকিট কেনার নিয়ম
- টিকেট কাটার জন্য সর্বপ্রথম
https://www.jamunafuturepark.com/ লিংকে প্রবেশ করতে হবে। এরপর একটু নিচের দিকে Buy Ticket অপশনে ক্লিক করে টিকিট কাটতে পারবেন।
- মুভি এবং সিটের ওপর নির্ভর করে টিকেট মূল্য ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা।
- Buy Ticket অপশনে ক্লিক করলে একটি নতুন পেজ ওপেন হবে। এরপর যে মুভিটি দেখতে চান সেটি সনাক্ত (Select) করতে হবে।
- মুভি সিলেকশনের পর একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। একবার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করলে, সেই অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে প্রত্যেকবার মুভির টিকিট কাটতে পারবেন।
- কোন ক্যাটাগরির সিটে বসে মুভি দেখবেন তাও সিলেক্ট করতে হবে রেজিস্ট্রেশন করার পর।
- মুভি এবং মুভি দেখার তারিখ দেওয়া হয়ে গেলে সুবিধামত সময় সিলেক্ট করুন। শেষের ধাপ হলো, কয়টা টিকিট কাটবেন তা সিলেক্ট করে দিন।
- ডাচ বাংলা ব্যাংক, বিকাশ অথবা নগদসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কিংবা কার্ড ব্যবহার করেও পেমেন্ট করতে পারবেন।
- পেমেন্ট করা হয়ে গেলে টিকিটটা প্রিন্ট করে নিতে হবে। নয়তোবা স্ক্রিনশট দিয়ে রাখতে হবে। টিকিট দেখিয়ে হলে প্রবেশ করতে হয়।
যমুনা ফিউচার পার্ক – সময়সূচী
যমুনা ফিউচার পার্কের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। বন্ধের দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই শপিং মল। তবে পবিত্র রমজান মাসে সময়ের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
> রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
> দ্বিতীয় সপ্তাহে সকাল ১১ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ফুডকোর্ট রাত ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
> তৃতীয় সপ্তাহে সকাল ১১ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এবং
> শেষ সপ্তাহ (চাঁদরাত) পর্যন্ত এই শপিংমল এবং ফুডকোর্ট মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে নির্ভর করে কাস্টমার থাকা সাপেক্ষে।
যমুনা ফিউচার পার্ক – কিভাবে যাবেন
গাবতলী হতে
গাবতলী থেকে সরাসরি রাজধানী অথবা অছিম বাসে যেতে পারবেন যমুনা ফিউচার পার্ক।
মিরপুর হতে
মিরপুর থেকে বেশ কয়েকটি বাস যমুনা ফিউচার পার্কে যায়। মিরপুর থেকে এয়ারপোর্টগামী যে কোন বাসে করে কুড়িল বিশ্বরোড নামবেন। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রিকশা করে ১০ মিনিটেই যেতে পারবেন যমুনা ফিউচার পার্কে।
এয়ারপোর্ট / উত্তরা হতে
এয়ারপোর্ট বা উত্তরা এরিয়া থেকে সরাসরি তুরাগ, ভিক্টর ক্লাসিক সহ বাড্ডা, রামপুরাগামী সকল বাসে উঠলেই যমুনা ফিউচার পার্কের গেটের সামনে একদম নামিয়ে দিবে।
ফার্মগেট হতে
ফার্মগেট থেকে প্রথমে বাসে করে মহাখালী, গুলশান হয়ে বাড্ডা নামতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি বাসে করে যেতে পারবেন যমুনা ফিউচার পার্ক।
মালিবাগ / মৌচাক হতে
রমজান অথবা তরঙ্গ প্লাস বাসে উঠে নামতে হবে রামপুরা ব্রিজ। এরপর সেখান থেকে যেকোনো বাস অথবা রিক্সায় চলে যাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক।
গুলিস্তান হতে
গুলিস্তান হতে যমুনা ফিউচার পার্কে যাওয়ার জন্য রয়েছে কিছু বাস। ভিক্টর ক্লাসিক, বলাকা এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সিএনজি বা মোটরসাইকেলে করেও যেতে পারবেন।
এছাড়াও ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে আপনি সিএনজি বা কার রিজার্ভ করে যেতে পারবেন যমুনা ফিউচার পার্কে।
শেষকথা
কেনাকাটা করতে আমরা সবাই পছন্দ করি। সে কেনাকাটা করার স্থানটি যদি অনেক স্পেশাল হয় তাহলেতো কথাই নেই। যমুনা ফিউচার পার্ক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং আভিজাত্য সম্পন্ন শপিং মল। শুধু কেনাকাটা করার জন্য নয়, এখানে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। আউটডোর রাইড, ইনডোর রাইড, প্লে জন, ফুডকোর্ট, সিনেমা হল, গাড়ি পার্কিং আরো কত কি।
পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে যাওয়ার মত একটি জায়গা হল যমুনা ফিউচার পার্ক। শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও এটি সবচেয়ে বড় শপিং মল। এখানে গেলে পাবেন বিশাল একটি মোবাইলের মার্কেট। নামিদামি প্রায় সব ব্র্যান্ডের মোবাইলই এখানে রয়েছে।
এছাড়া দেশি-বিদেশি প্রায় সকল ব্র্যান্ডের সব রকম প্রোডাক্টই পাবেন এখানে। কেনাকাটা এবং চিত্তবিনোদনের জন্য পরিবার পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যেতেই পারেন যমুনা ফিউচার পার্কে। আশা করছি খুব ভালো একটি সময় কাটাতে পারবেন।
যমুনা ফিউচার পার্ক সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s
১. যমুনা ফিউচার পার্ক কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : যমুনা ফিউচার পার্ক রাজধানী ঢাকার বারিধারাতে অবস্থিত। এর ঠিকানা : ক-২৪৪, প্রগতি সরণি, কুড়িল, বারিধারা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২. যমুনা ফিউচার পার্ক কত স্কয়ার ফিট?
উত্তর : যমুনা ফিউচার পার্ক ৪,১০০,০০০ স্কয়ার ফিট।
৩. যমুনা ফিউচার পার্ক কবে বন্ধ থাকে?
উত্তর : যমুনা ফিউচার পার্ক বুধবারে বন্ধ থাকে।
৪. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল কোনটি?
উত্তর : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক।
৫. যমুনা ফিউচার পার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক কে?
উত্তর : যমুনা ফিউচার পার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক “যমুনা গ্রুপ”।