জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University)। যেটি সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭০ সালে। কিন্তুু উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হয়েছিলো ১৯৭২ সালে। ঢাকার অল্প কিছু দুরে প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর জুড়ে এই বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় এর অবস্থান।
এটি বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুপরিচিত। এছাড়াও জীব বৈচিত্রে অন্যোন্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে আছে প্রজাপতি গার্ডেন। এখানে বিভিন্ন জাতের ফুলের বাগানে ঘুরে প্রায় ১০০ প্রজাতির প্রজাপতি সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এদের সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার সুযোগ আছে।
আর তাই আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা এই জনপ্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University) সম্পর্কে (about jahangirnagar university) বিস্তারিত জানবো। তো আর দেরি না করে চলুন, সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ কুমিরা ঘাট, চট্রগ্রাম
এক নজরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা সকলেই জানি যে, বাংলাদেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে মোট ০৪ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। তবে এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন বিষয় (jahangirnagar university all unit details) আছে। সেই বিষয় গুলো হলোঃ(ju unit details)-
- গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক ইনস্টিটিউট,
- কলা ও মানবিক,
- সমাজ বিজ্ঞান,
- জীববিজ্ঞান,
- ব্যাবসায় শিক্ষা,
- পদার্থ বিজ্ঞান,
আর আপনার জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে সর্বপ্রথম নারী উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয় এর দায়িত্বে ছিলেন। সেই নারী উপাচার্য এর নাম হলো, ড: ফারজানা ইসলাম। আর এই জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় এর সংক্ষিপ্ত নাম হলো, জাবি (ju ac bd)।
এ ছাড়াও আপনি সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র আসে পাশে আরও যা যা ভ্রমন করতে পারবেন যেমনঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ, নন্দন পার্ক, এই দুটি স্থানী যাকিনা সাভারের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত। এবং আরও আসে ফ্যান্টাসি কিংডম, এটি সাভার আশুলিয়া তে অবস্থিত। আপনি চাইলে এই সকল স্থান ও ভ্রমন করতে পারেন আশা করি, অনেক ভালো লাগবে। এবং তার সাথে ও অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন
আমাদের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দূরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার দুরে, সাভার উপজেলায় এই অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় এর অবস্থান। আপনি যদি ঢাকার গুলিস্তান, ফার্মগেইট, কল্যাণপুর কিংবা গাবতলী থেকে আসতে চান। তাহলে আপনাকে সরাসরি নবীনগরের যেকোনো একটি বাসে ওঠে আসতে হবে।
আর যখন আপনি নবীনগর এর দিকে আসবেন। তখন আপনি রাস্তায় পাশেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University) এর মেইন গেট লক্ষ্য করতে পারবেন। তো আপনি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখতে চান। তাহলে কিন্তুু আপনাকে অবশ্যই রিকশা ভাড়া করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস
উপরের আলোচনা তে আমি আপনাকে বলেছি যে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭০ সালে। এবং উক্ত সময়ে এটি ছিলো আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তুু শুরুর দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম ”জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়” থাকলেও। ১৯৭৩ সালে সেই নাম পরিবর্তন করে “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়” করা হয়েছিলো। আর এই জাহাঙ্গীরনগর এই নামটি মূলত মুঘল আমলে ঢাকা শহরের নামকরন অনুযায়ী দেওয়া হয়েছিলো।
আর অবাক করার মতো বিষয় হলো, যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তখন প্রথম ব্যাচে মাত্র ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মোট চার (০৪) টি বিভাগ (ju admission) চালু করা হয়েছিলো। আর সেই বিভাগ (ju subject list) এর নাম গুলো হলোঃ-
- পরিসংখ্যান,
- গনিত,
- ভূগোল,
- অর্থনীতি,
এই অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম উপাচার্য এর নাম হলো, মফিজ উদ্দিন। কিন্তুু তার দায়িত্ব সমাপ্তির পর আরো অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্যর দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে একটা বিষয় না বললেই নয়। সেটি হলো, যখন আমাদের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছিলো। তখন কিন্তুু এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরাও সেই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো। কিন্তুু যখন দীর্ঘ ০৯ মাস যুদ্ধ করে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তারপর থেকে এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি ভাবে চালু হয়েছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখার মতো আর্কষনীয় কিছু
হুমম, অবশ্যই। আপনি যদি সবুজ শ্যামল এর বৈচিত্র্যময় পরিবেশ দেখতে চান। তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar University) হবে আপনার জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। এছাড়াও আপনি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে কিছুটা সময় ঘুরবেন। তখন আপনি অসংখ্য জলাশয় লক্ষ্য করতে পারবেন। সেই সাথে সবুজে ঘেরা এই স্থানে অসংখ্য পাখি দেখা যায়। কেননা, এই স্থানটি হলো পাখিদের জন্য একটি অভয়ারণ্য স্থান।
এগুলো ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ঠিক উত্তর দিকে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। তার পাশেই রয়েছে সাভার সেনানিবাস এলাকা। আর আপনি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় এর দক্ষিন পাশে ঘুরতে যাবেন। তখন আপনি আমাদের বাংলাদেশ এর লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র দেখতে পারবেন। সেইসাথে পূর্ব পাশে রয়েছে একটি ডেইরি ফার্ম।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কি কি আছে
আপনি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তাহলে সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যর পাশাপাশি আরো অনেক কিছু দেখতে পারবেন। যেগুলো আপনার কাছে অবশ্যই ভালো লাগবে। যেমনঃ
০১- শহীদ মিনার: আপনি যদি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর কলা ভবনের সামনে যান। তাহলে আপনি প্রায় ৫২ ফুট ব্যাস ও প্রায় ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি শহীদ মিনার দেখতে পারবেন। যেটি মূলত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে।
০২- সংশপ্তক ভাস্কর্য: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর যে গ্রন্থাগার আছে। যখন আপনি এই গ্রন্থাগার এর সামনে যাবেন। তখন আপনি মুক্তিযুদ্ধের স্বারক হিসেবে একটি ভাস্কর্য দেখতে পারবেন। যেটির এক পা ও হাত হারিয়ে যাওয়ার পরও বিজয়ের হাতিয়ার উঁচু করে ধরে দাড়িয়ে আছেন।
০৩- অমর একুশ ভাস্কর্য: যদি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে যান। তাহলে আপনি ভাষা আন্দোলনের ভাস্কর্য দেখতে পারবেন। যেখানে একজন পিতা ও মাতা তার সন্তানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরে রেখেছে।
০৪- কবির সরণি: নেতা হাবিবুর রহমান যিনি সাম্পদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। তার স্মরণে একটি সরণি নির্মান করা হয়েছে।
০৫- মুন্নী সরণি: আপনি যখন আল বেরনী হলের সামনে আসবেন। তখন দেখতে পারবেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগরে শিক্ষার্থী মুন্নী সরণি।
তবে এগুলো ছাড়াও আপনি আরো স্বপ্না সরণি, জুবায়ের সরণি দেখতে পারবেন। আর যখন আপনি এগুলো দেখবেন। তখন আপনিও ভেবে অবাক হবেন যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কত কিছু থাকতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণ, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উৎসব
এতক্ষন ধরে আমরা জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জেনেছি। তো এগুলো ছাড়াও আপনি যদি শীতকালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। তাহলে আপনি নতুন একটি উৎসব দেখতে পারবেন। আর সেই উৎসব এর নাম হলো, হিম উৎসব।
যে উৎসব এর মাধ্যমে আমাদের দেশের লোকজ শিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। আর উক্ত উৎসবে উপস্থিত থাকলে আপনি বিভিন্ন কিছু দেখতে পারবেন। যেমনঃ-
- সাপের খেলা,
- লাঠি খেলা,
- পটের গান,
- গাজীর গান,
- মনিপুরী নৃত্য,
- পুতুল নাচ,
- আদিবাসি নাচ,
- পালাগান ইত্যাদি।
তো যদি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমন করার উদ্দেশ্যে আসেন। তাহলে অবশ্যই শীতকালের সময়টা মিস করবেন না। কেননা, এই জনপ্রিয় হিম উৎসব শুধুমাত্র শীতকালেই আয়োজন করা হয়।
আমাদের শেষ কথা
আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। যেমন, আজকে আমি আপনাকে বাংলাদেশের অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে দিয়েছি। যে তথ্য গুলো আমাদের সবার জেনে রাখা উচিত।
তো আপনি যদি এই ধরনের তথ্য গুলো বিনামূল্যে জানতে চান। তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট এর মধ্যে ভিজিট করার চেষ্টা করবেন। আর ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আপনাদের করা কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রশ্নঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আসন সংখ্যা কত?
উত্তরঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৩ ইনস্টিটিউট মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা থাকছে ১ হাজার ৮৪৪ টি।
প্রশ্নঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবজেক্ট কি কি?
উত্তরঃ বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ টি অনুষদের অধীনে ৩৫ টি বিভাগ রয়েছে।
প্রশ্নঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সমূহ কি?
উত্তরঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সমূহ ৪ টি -A, B, C, D।
প্রশ্নঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিট সংখ্যা কত?
উত্তরঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪ টি বিভাগ ও ৩ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যা ১৯৫০ টি।
আরও পড়ুন-
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : সমুদ্র কন্যা, পটুয়াখালী
পুরান ঢাকার আহসান মুঞ্জিল