ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আমরা অসংখ্য্য লোক ইন্ডিয়ায় চিকিৎসার জন্য যাই। কিন্ত আমরা অনেকেই জানিনা ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের নিয়ম ও ইন্ডিয়ান ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি কাগজ-পত্র প্রয়োজন।
যার কারনে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ভিসার আবেদন বাতিল হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কাগজ-পত্র সম্পর্কিত অনেক ঝামেলায় পড়ে যাই। আবার ভিসা পেলেও ইন্ডিয়াতে প্রবেশের পর কিছু কিছু কাগজ-পত্র না থাকার কারনে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
যদি আমরা ইন্ডিয়ান চিকিৎসা ভিসার আবেদন করতে চাই তাহলে আগে থেকেই এই বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার, যাতে করে আমাদের আবেদন করতে গিয়ে বা ইন্ডিয়ান হাইকমিশন অফিসে গিয়ে সমস্যায় পড়তে না হয়।
আজ আমরা জানবো ইন্ডিয়ান ভ্রমন বা চিকিৎসা ভিসার আবেদনের জন্য কি? কি?কাগজ-পত্র প্রয়োজন, আবেদন প্রক্রিয়া এবং ইন্ডিয়ান ভিসা ফি সম্পর্কে সকল কিছু। চলুন তাহলে দেরি না করে বিস্তারিত সকল কিছু জেনে নেয়া যাক ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের নিয়মাবলী।
ইন্ডিয়ান ভিসা
এটি মুলত ভিসা ব্যাবস্থা যার মাধ্যমে আপনি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই ভিসার মেয়াদে তিনবার ভারতে যাওয়া যাবে। রোগীর প্রয়োজনে ভিসা রিনিউ করা যেতে পারে।
মেডিকেল ভিসা পাবার জন্য অবশ্যই আপনাকে ভারতীয় ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট লেটার থাকতে হবে। বাংলাদেশেও ডাক্তারের কাগজপত্র থাকতে হবে।
ভিসা কিভাবে করতে হয়
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের নিয়ম মুলত আপনি কোন দেশের নাগরিক সে দেশের উপর নির্ভর করে। এই আবেদনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র, আবেদন প্রক্রিয়া দেশ ভেদে কিছুটা আলাদা হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ার চিকিৎসা ভিসার আবেদনের জন্য নিম্নক্ত কাগজ-পত্র প্রয়োজনঃ-
- ইন্ডিয়ান চিকিৎসা ভিসা আবেদনের প্রিন্ট কপি।
- মেডিকেলের সকল কাগজ-পত্রের মূল কপি যেমন: প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি। মূল কপিগুলো অবশ্যই সাথে রাখতে হবে ও ফটোকপি আবেদন ফরমের সাথে জামা দিনে হবে।
- এনআইডি অথবা জন্মনিবন্ধন যে কোন একটি। অর্থাৎ আপনার পাসপোর্ট যদি এনআইডি দিয়ে করা থাকে তাহলে এনআইডি আর যদি জন্মনিবন্ধন দিয়ে করা থাকে তাহলে জন্মনিবন্ধন।
- সর্বশেষ ইউটিলিটি বিল মানে, কারেন্ট বিল অথবা গ্যাস বিল অথবা টেলিফোন বিল যে কোন একটির ফটোকটি। আপনি যদি কোর ভাড়া বাসায় থাকেন তবে সেই বাসার উক্ত যে কোনো একটি বিলের ফটোকপি।
- ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ৬ মাসের, সর্বনিম্ন ২০০০০/- (বিশ হাজার টাকা থাকতে হবে) অথবা ২০০ ডলার এর এনডোর্সমেন্ট। তবে কাগজ-পত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এনডোর্সমেন্ট এক মাসের মধ্যে হওয়া উচিৎ।
- ইন্ডিয়ার কোন পরিচিত হসপিটাল থেকে ইনভাইটেশন লেটার। ইনভাইটেশন লেটারে যেনো অবশ্যই ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট ডেট থাকে।
- আপনি চাকুরীজীবী হয়ে থাকেন তাহলে পেশাগত পরিচয় পত্র। অন্যান্য ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে পরিচয়পত্র।
- পাসপোর্টের ফটোকপি। পাসপোর্টের মেয়াদ অবশ্যই ৬ মাস থাকতে হবে। আর যদি পাসপোর্টে হারিয়ে গিয়ে তাকে তাহলে জিডি এবং নোটারীর ফটোকপি।
- ২/২ সাইজ ২ কপি ছবি, ছবির ব্যাগ্রাউন্ড যেনো অবশ্যই সাদা হয়। ছবিতে যেনো কান অবশ্যই দেখা যায়। মাথায় ক্যাপ বা মুখে হিজাব দিয়ে ছবি তুলবেন না।
এছাড়াও বিভিন্ন জরুরী সময়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সার্টিফিকেট জমা দিতে হয় যেমন: কোভিটের সময় কোভিট টেস্ট সার্টিফিকেট দিতে হয়েছিলো। এটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
ভিসা করতে কি কি লাগে
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের নিয়ম এ যে বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে আমাদের সর্ব প্রথম উপরোক্ত কাগজ পত্রগুলো ব্যবস্থা করতে হবে তার পর আমরা চাইলে ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদন নিজেরাই করতে পারি।
অথবা প্রতিটি ইন্ডিয়ান হাইকমিশন অফিসের আশেপাশে কিছু কিছু এজেন্ট অফিস থাকে আমরা চাইলে সেখান থেকেও আবেদন করতে পারে। তবে এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করলে আবেদনের সময় ভূল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে কারন তারা প্রায় সবাই এই কাজে দক্ষ।
এছাড়াও ইন্ডিয়ান ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে যাতায়াতের জন্য ট্রেন বা প্লেনের টিকেট, হোটের বুকিং ইত্যাদি বিষয়ে তারা সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। তবে এর জন্য তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ সার্ভিস চার্জ হিসাবে নিয়ে থাকে। তবে আমরা চাইলে এইসকল কাজ নিজেরাও করতে পারি।
ইন্ডিয়ান ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়া
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের জন্য আপনি কোন হাঁসপাতালে আপনার রোগীর জন্য কোন ডাক্তার এর কাছে চিকিৎসা নিতে চান সেগুলা জানা থাকলে নিজেই অনলাইনে এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন। সেজন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেকশনে যান। তারপর যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন কনটাক্ট ফর্ম বা ইমেইলে আপনার তথ্য দিয়ে, রোগের বর্ণনা ও আনুমানিক ভ্রমণের তারিখ জানিয়ে মেইল করুন।
তারপরে তারা আপনাকে মেইল দিয়ে তারা রোগীর প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট আর পাসপোর্ট এর তথ্য চাইবে। সেগুলো মেইলে দিলে তারা ১-৩ দিনের মাঝে ভিসা ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দিবে। এছাড়া কিছু হাসপাতালে সরাসরি এপয়েন্টমেন্ট নেয়া যায়।
ভারতীয় ভিসা ফি
বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ান চিকিৎসা ভিসার জন্য কোন ফি দিতে হয় না তবে ভিসা প্রসেসিং ফি হিসাবে ৮০০ টাকা ইন্ডিয়ান হাইকমিশন বরাবর দিতে হয়। ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য বাংলাদেশিদের কোন ফি লাগে না। তবে আইভ্যাক মানে ভিসা আবেদন কেন্দ্র আবেদন প্রসেস করতে এই ফি নেয়।
এছাড়া আপনি নিজে সব না বুঝলে কম্পিউটার দোকান বা এজেন্সি থেকে আবেদন করা, ইন্ডিয়ান ডাক্তারের এপয়েনমেন্ট নেয়া, ছবি তোলা, প্রিন্ট দেয়া এসব কাজেও এজেন্সি বা কম্পিউটার দোকানে কিছু খরচ হবে।
ভিসার আবেদন কোথায় জমা দিতে হবে
সকল কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে গিয়ে জমা দিতে হবে। যেহেতু এখন বাংলাদেশে ই-টোকেন প্রচলিত নেই, তাই সরকারি ছুটির দিন ছাড়া যে কোন দিনে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ভিসার আবেদন জমা দেয়া যাই। বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদনের কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও খুলনা।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা পেতে কত সময় লাগে
আবেদন জমা দেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভিসা হাতে পাওয়া যাই। তবে জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন জমা নেয়ার দিনেই ভিসা পাওয়া যাই। ভিসা আবেদনের কেন্দ্রগুলোতে টোকেনের ব্যাবস্থা আছে। এই টোকেনের মাধ্যমে ভিসা ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হয়।
ভিসা সংক্রান্ত কিছু সতর্কতা
আম্বাসসির মধ্যে কোন ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। আবেদন করার সময় শুধু দরকারি কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে। ভারতে ভ্রমণ কর বাবদ ৫০০ টাকা দিতে হয়। সোনালি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ সাথে থাকলে ভারতে প্রবেশের সময় কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
পরিশেষে
দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে হাজারো শঙ্কা কাজ করে। তাই ভারতীয় ভিসা আবেদনের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। চিকিৎসা ব্যাবস্থা উন্নত করার কারনে বহিরাগত রোগীরা ভারতে আসতে আগ্রহী।
ভারত সরকার স্বাস্থ্যসেবায় নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। আগামীতে জনস্বাস্থ্য খাতে ভারত সরকারের বিনিয়োগ ভারতে চিকিৎসা খাতকে সুদুর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আশা করি ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। ইন্ডিয়ান ভিসা করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর; বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ান ভিসা জন্য ভিসা প্রসেসিং ফি হিসাবে ৮০০ টাকা ইন্ডিয়ান হাইকমিশন (Indian High Commission) বরাবর দিতে হয়।
২। ইন্ডিয়ান ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
উত্তরঃ কাগজপত্র ঠিক থাকলে সাধারণত এক সপ্তাহেই পাসপোর্ট ফেরত পাবেন।
৩। ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি?
উত্তরঃ 6 মাসের বৈধতা এবং 2 ফাঁকা পৃষ্ঠাগুলির সাথে পাসপোর্ট,সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ফটোগ্রাফ,পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসা আবেদন ফর্ম প্রিন্ট আউট, আবাসিক ঠিকানা প্রুফ, দেশীয় চিকিৎসা নথি চিকিত্সার জন্য একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্র সুপারিশ।