হিমছড়ি পাহাড় ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় তথ্য সমূহ

হিমছড়ি পাহাড়

কক্সবাজারে গিয়েছেন, কিন্তু হিমছড়ি পাহাড় এ যাওয়া হয় নি অথবা হিমছড়ি পাহাড় এর নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।

কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে হিমছড়ি অবস্থিত। হিমছড়ির বিভিন্ন আকর্ষণীয় ঝর্ণা, পাহাড় এবং ফটোজেনিক সমুদ্র পর্যটকদের আকর্ষিত রাখে।

শীতল পানির ঝর্ণা, মেরিন ড্রাইভ রোড এবং বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতে দেখতে আসতে হলে হিমছড়ি অবশ্যই ভ্রমণ করতে হবে। সারাবছর ধরে হিমছড়িতে যেতে পারবেন, তবে বর্ষা ঋতুতে ঝর্ণাগুলে পূর্ণতা পায়।

আরও পড়ুনঃ মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ, খরচ ও যাতায়াতসহ সকল তথ্য

যা দেখবেন

হিমছড়ি পাহাড়

হিমছড়ি ইকোপার্কে অনেক বড় ছোট ঝর্ণা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রশান্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সবুজে ঘেরা মেরিন ড্রাইভ রোড এবং পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও, পাহাড়ের পাদদেশে ইকোপার্কের প্রবেশ মুখের বার্মিজ মার্কেট থেকে পছন্দের কেনাকাটা করা সহজ।

হিমছড়ির কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

  • হিমছড়ি ঝর্ণা: এটি হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ। ঝর্ণার নীচে ঠান্ডা পানিতে স্নান করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ।
  • মেরিন ড্রাইভ রোড: এই রাস্তাটি সমুদ্রের ধারে ধারে নির্মিত এবং এখান থেকে সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • ইনানী সমুদ্র সৈকত: এটি হিমছড়ির একটি দীর্ঘ ও চওড়া সমুদ্র সৈকত। এখানে বিভিন্ন ধরণের ওয়াটার স্পোর্টস উপভোগ করা যায়।
  • মারমা গ্রাম: এখানে মারমা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়।

হিমছড়ি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

হিমছড়িতে সারাবছরই ভ্রমণ করা যায়। তবে, বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর) ঝর্ণাগুলি পূর্ণতা পায় এবং তখন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেশি মনোরম হয়ে ওঠে।

কক্সবাজার ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে হিমছড়িতেও অবশ্যই যান। আশা করি, হিমছড়ি আপনাকে মুগ্ধ করবে।

যেভাবে যাবেন

হিমছড়ি যাওয়া হলে প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসতে হবে। কক্সবাজারে পৌঁছার জন্য বিভিন্ন ধরণের এসি এবং নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে, যেখান থেকে ভাড়া প্রতি ব্যক্তি পর্যন্ত ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়াও, ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে কক্সবাজারে যেতে পারবেন। এবার, যদি আপনার বাজেটের সাথে কোনো চিন্তা না থাকে, তবে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য আকাশ পথ বেছে নিতে পারেন।

কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি পাহাড়

কক্সবাজারের যে কোন জায়গা থেকে ইজিবাইক বা অটোরিক্স বা সিএনজি দিয়ে হিমছড়ি ঘুরে আসা যায়। রিজার্ভ করতে চাইলে সিজন অনুযায়ী ভাড়া লাগবে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।

এছাড়াও, কলাতলী মোড় থেকে লোকাল ইজিবাইক বা সিএনজি দিয়ে হিমছড়ি যাওয়া যায়। আপনারা যদি একসাথে কয়েজন হলে খোলা জীপে করেও ঘুরে আসতে পারবেন।

হিমছড়ি পাহাড় ও ইনানী বীচ একই রোডে অবস্থিত। তাই যদি আপনার প্ল্যানে ইনানী বীচ যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে একসাথে দুই জায়গা দেখার জন্যে গাড়ি নেওয়া সুবিধাজনক হবে। রিজার্ভ গাড়ি ঠিক করতে সময়ের মধ্যে দাম নির্ধারণ করুন।

কোথায় কতক্ষণ সময় ব্যয় করবেন এবং কি কি ঘুরে দেখবেন তা আগেই আলোচনা করুন। হিমছড়ি ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য ২০ টাকার টিকেট প্রয়োজন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার গাইডলাইন দেখুন।

যেখানে থাকবেন

কক্সবাজারের খুব কাছে হওয়ায় কক্সবাজার হোটেলে থাকাই সবচেয়ে সুবিধাজনক। ১,৫০,০০০ পর্যটকদের আবাসনের কথা ভেবে কক্সবাজার গড়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ।

এগুলোর মধ্যে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য। 

এসব হোটেলের ফেইসবুক পেইজ কিংবা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন বিস্তারিত। সিজন ভেদে এইসব হোটেলের ভাড়ার তারতম্য হয়। তাই অল্প খরচে থাকতে চাইলে একটু ভিতরের দিকে থাকতে পারেন।

লাবনী বিচের ঐদিকে থাকলে তুলনামূলক কম ভাড়ায় হোটেল ও কটেজ পাওয়া যায়। বিচ থেকে একটু দূরে ও মেইন রোড থেকে ভিতরের দিকের হোটেল ও রিসোর্ট পাবেন কম টাকায়।

যেখানে খাবেন ও যা খাবেন

আনায়াসেই ৩-৪ ঘন্টায় হিমছড়ি পাহাড় থেকে ঘুরে আসা যায় তাই চাইলে হালকা শুকনো খাবার সাথে রাখতে পারেন কিংবা পুনরায় কক্সবাজার ফিরে খেতে পারেন।

কক্সবাজারে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবার থেকে শুরু করে চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, ইতালীয় এবং আরও অনেক কিছু।

জনপ্রিয় খাবার

  • সামুদ্রিক খাবার:  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শহর হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়।  চিংড়ি, রুপচাঁদা, ইলিশ, কাঁকড়া, এবং বিভিন্ন ধরণের মাছ এখানকার জনপ্রিয় খাবার। 
  • মিষ্টি:  কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি পাওয়া যায়।  সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি হলো পেঁয়াজের রসগোল্লা।
  • নাস্তা:  কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের নাস্তার খাবার পাওয়া যায়।  সমুচা, সিঙ্গারা,  ফুচকা,  এবং চটপটি  এখানকার জনপ্রিয় নাস্তার খাবার। 

রেস্তোরাঁ

কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের রেস্তোরাঁ আছে।  বাজেট অনুযায়ী রেস্তোরাঁ  নির্বাচন করা যায়।

কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ-

মধ্যম মানের

  • রোদেলা
  • ঝাউবন
  • ধানসিঁড়ি
  • পৌষি
  • নিরিবিলি

উচ্চমানের

  • পান্থসাগর রেস্তোরাঁ
  • ওয়াটারফ্রন্ট রেস্তোরাঁ
  • সেগাল রেস্তোরাঁ
  • শীমান্ত রেস্তোরাঁ
  • ঝিনুক রেস্তোরাঁ

খাবারের দাম

কক্সবাজারে খাবারের দাম তুলনামূলক কম।  রেস্তোরাঁ এবং খাবারের ধরণ অনুযায়ী দাম পরিবর্তিত হয়।

কিছু টিপস

  • স্থানীয় খাবার চেষ্টা করুন: কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবার চেষ্টা করে দেখুন।
  • দর কষাকষি করুন: স্থানীয় বাজার থেকে খাবার কেনার সময় দর কষাকষি করতে ভুলবেন না।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁ বেছে নিন: খাবার খাওয়ার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁ বেছে নিন।
  • সাবধানে খাবার খান: রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।

আরও পড়ুন-

রামু রাবার বাগান ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় খরচ

মহেশখালী আদিনাথ মন্দির

মন্তব্য করুন