গ্রীনল্যান্ড পার্ক চুনারুঘাট
গ্রীনল্যান্ড পার্ক, চুনারুঘাট প্রকৃতির কোলে এক অপূর্ব নিবাস। চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ জেলার একটি মনোরম উপজেলা, যা তার সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত। এই উপজেলার অন্যতম আকর্ষণ হল ‘গ্রীনল্যান্ড পার্ক’, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপূর্ব সৌন্দর্য্য।
গ্রীনল্যান্ড পার্ক চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাও ইউনিয়নের রানীগাও গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পার্কটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে সংযুক্ত।
চুনারুঘাট এর আকর্ষণ
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: গ্রীনল্যান্ড পার্ক সবুজের সমারোহে ভরা। পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, বনানী – প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যই এখানে যেন একত্রিত। পাহাড়ের ঘেষে বয়ে যাওয়া ধনু নদী পার্কের সৌন্দর্য্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
- বিনোদন: পার্কে বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, এবং রোলার কোস্টার সহ বিভিন্ন ধরণের বিনোদন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আনন্দে সময় কাটানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
- ঐতিহাসিক গুরুত্ব: গ্রীনল্যান্ড পার্কের কাছেই অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রানীগাঁও রাজবাড়ি’। এই রাজবাড়ি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।
- স্থানীয় সংস্কৃতি: গ্রীনল্যান্ড পার্ক স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিতি লাভের জন্য একটি উত্তম স্থান। পার্কের আশেপাশে বিভিন্ন গ্রাম রয়েছে যেখানে আপনি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
চুনারু ঘাটের দর্শনীয় স্থান সমূহ
চুনারু ঘাট হলো হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত। চুনারুঘাটের কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হল:
- রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে একটি। অভয়ারণ্যটি বিভিন্ন ধরণের প্রাণী এবং পাখির আবাসস্থল, যার মধ্যে রয়েছে হাতি, বাঘ, গণ্ডা এবং আরও অনেক কিছু।
- সিপাহিসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিনের মাজার: এটি একজন মুসলিম সুফি সাধুর সমাধি। মাজারটি একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান।
- ধনু নদী: এটি চুনারুঘাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটি নৌকা ভ্রমণ এবং মাছ ধরার জন্য জনপ্রিয়।
- চুনারুঘাট বাজার: এটি চুনারুঘাটের একটি ব্যস্ত বাজার। বাজারে স্থানীয় খাবার, পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি হয়।
এগুলি ছাড়াও চুনারুঘাটে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান বা স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করেন তবে চুনারুঘাট আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত গন্তব্য।
যাতায়াত
ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী, কমলাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী যেকোনো বাসে চেপে শায়েস্তাগঞ্জ বাজার নেমে যেতে হবে। ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ বাস ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। বাসে করে যেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস অথবা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যেতে হবে। ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ ট্রেন ভাড়া ২৩০-৫০০ টাকা (শ্রেণীভেদে)। ট্রেনে করে যেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা।
শায়েস্তাগঞ্জ থেকে
শায়েস্তাগঞ্জ বাজার থেকে চুনারুঘাট যাওয়ার জন্য সিএনজি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। সময় লাগে ৩০-৪৫ মিনিট।
চুনারুঘাট থেকে
চুনারুঘাট থেকে গ্রীনল্যান্ড পার্ক যেতে রিক্সা, অটোরিকশা ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়া ৫০-১০০ টাকা। সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট।
সিলেট থেকে
- সিলেটের কোথাও থেকেই সিলেট-হবিগঞ্জ রোড ধরে বাসে করে শায়েস্তাগঞ্জ যেতে হবে।
- সিলেট থেকে শায়েস্তাগঞ্জ বাস ভাড়া 200-300 টাকা।
- বাসে করে যেতে সময় লাগে 2-3 ঘন্টা।
হবিগঞ্জ থেকে
হবিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি চুনারুঘাট বাজার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ৫০-১০০ টাকা। বাসে করে যেতে সময় লাগে 1-2 ঘন্টা।
কিছু টিপস
- ছুটির দিনে যানজট বেশি থাকে। তাই ছুটির দিন বাদে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
- যাত্রা শুরু করার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে রাখুন।
- স্থানীয়দের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন।
- পরিবেশের যত্ন নিন।
কোথায় থাকবেন
হবিগঞ্জ শহরে
- হোটেল জামিল: এটি একটি সাধারণ মানের হোটেল যেখানে রাত কাটানোর ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে শুরু।
- হোটেল সোনারতরী: আরেকটি সাধারণ মানের হোটেল, এখানে রাতের ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
- হোটেল আমাদ: এটি একটি জনপ্রিয় হোটেল যেখানে রাতের ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে শুরু।
- অন্যান্য আবাসিক হোটেল: হবিগঞ্জ শহরে আরও অনেক সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যেখানে রাতের ভাড়া ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- বাহুবল উপজেলায়: দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট:এটি একটি ৫ তারকা মানের রিসোর্ট যেখানে রাতের ভাড়া ৭,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে হবিগঞ্জে থাকার জন্য আরও অনেক বিকল্প রয়েছে।
কোথায় খাবেন
গ্রীনল্যান্ড পার্ক, চুনারুঘাটে খাওয়ার জন্য অনেক ভালো জায়গা আছে। আপনার পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী, আপনি রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান, এবং স্ট্রিট ফুড স্টলগুলির মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন।
কিছু জনপ্রিয় বিকল্প
- গ্রীনল্যান্ড রেস্তোরাঁ: এটি পার্কের ভেতরে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁ যেখানে বাংলাদেশী এবং আন্তর্জাতিক খাবার পরিবেশন করা হয়।
- চুনারুঘাট বাজার: বাজারে বিভিন্ন ধরণের খাবারের দোকান রয়েছে যেখানে আপনি স্থানীয় খাবার সহ সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার পেতে পারেন।
- স্ট্রিট ফুড: পার্কের বাইরে অনেক স্ট্রিট ফুড স্টল রয়েছে যেখানে আপনি চাটপাটি, ফাস্ট ফুড এবং অন্যান্য স্ন্যাকস পেতে পারেন।
কিছু টিপস
- যদি আপনি রেস্তোরাঁয় খেতে চান, তাহলে আগে থেকে টেবিল বুক করে রাখুন, বিশেষ করে যদি আপনি ছুটির দিনে যান।
- স্থানীয় খাবার চেষ্টা করতে ভুলবেন না।
- দর কষাকষি করতে ভুলবেন না, বিশেষ করে যদি আপনি স্ট্রিট ফুড স্টল থেকে খাবার কেনেন।
- পরিবেশের যত্ন নিন এবং আপনার আবর্জনা ফেলে যাবেন না।
আরও পড়ুনঃ-
কক্সবাজার হোটেল তালিকা ও বুকিং সম্পর্কিত তথ্য