ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকেশ্বরী মন্দির (Dhakeshwari Temple) এর আরো একটি নাম রয়েছে। সেটি হল, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। বিশেষ এই মন্দিরের অবস্থান হল আমাদের বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। আর এটি হল হিন্দুদের জন্য অনেক পবিত্র এবং প্রাচীন একটি মন্দির।
তবে এই মন্দিরটির নাম ঢাকেশ্বরী হওয়ার পেছনে বিশেষ একটি অর্থ রয়েছে। আর সেই অর্থটি হলো, ঢাকার ঈশ্বরী অথবা ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী।
আবার অনেকের মতামত অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে আমাদের রাজধানী ঢাকা নামকরণের পেছনে এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ অনেকে মনে করেন যে, ঢাকা নামকরণ ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই করা হয়েছিল। তবে কথিত আছে, এই মন্দিরটি বল্লাল সেন নির্মাণ করেছিলেন। আর উক্ত মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল ১২শ শতাব্দীতে।
আরও পড়ুনঃ কুসুম্বা মসজিদ , নওগাঁ
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস
যদিওবা আমরা অনেকেই মনে করি যে, ঢাকেশ্বরী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন বল্লাল সেন। এবং এই মন্দির টি সর্বশেষ নির্মাণ কার্য শেষ করা হয়েছিল ১২শ শতাব্দীতে। কিন্তু অনেকেই এই বিষয়টিতে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কেননা এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে অনেক মতবাদ।
আর দ্বিমত পোষণ করার কারণ হলো, বল্লাল সেনের রাজত্ব কালে নির্মাণ শৈলীর স্থাপত্যের সাথে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্যের কোন ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এর কারণ হলো উক্ত সময়ে স্থাপত্যের মধ্যে চুন এবং বালির ব্যবহার ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে আপনি যদি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য দেখেন। তাহলে আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন যে, এই মন্দিরটির আগাগোড়া সম্পূর্ণ চুন ও বালি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এটা জোর দিয়েই দাবি করা হয় যে, আমাদের ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রথম মন্দির হল ঢাকেশ্বরী মন্দির। আর সে কারণে অনেকেই মনে করেন, বর্তমান সময়ে আমাদের রাজধানী ঢাকার নামকরণ এই মন্দিরের নামেই করা হয়েছে।
এছাড়াও আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরার পাশাপাশি আপনার হাতে যদি আরও কিছু সময় থাকে, তাহলে আপনি চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের আহসান মুঞ্জিল , পুরার ঢাকার লালবাগ কেল্লা সহ ঘুরে দেখে আস্তে পারেন আশা করি ভালো লাগবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দির কোথায় অবস্থিত
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা আসলে ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করতে চান। তো আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে জেনে নিতে হবে যে ঢাকেশ্বরী মন্দির কোথায় অবস্থিত। আর আমরা সকলেই জানি, ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকার মধ্যে অবস্থিত।
কেননা আমাদের বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোর দক্ষিণ পাশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ হলের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গেলে আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির দেখতে পারবেন। তবে আপনি কিভাবে এই ঢাকেশ্বরী মন্দির আসতে পারবেন। সে সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো।
ঢাকেশ্বরী মন্দির কিভাবে যাবো
“ঢাকেশ্বরী মন্দির” হল বাংলাদেশের জাতীয় একটি মন্দির। আর সে কারণে আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা মূলত ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করতে চায়। তো আপনি যদি ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করতে চান। তাহলে আপনি খুব সহজেই এই মন্দিরে যেতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে ঢাকায় আসার পর গুলিস্তান থেকে অথবা আপনি চাইলে ঢাকা শাহবাগ থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির যেতে পারবেন।
আর যখন আপনি ঢাকা গুলিস্তান অথবা শাহবাগ থেকে আসবেন। তখন আপনি উক্ত স্থান গুলো থেকে রিকশায় অথবা সিএনজিতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে উক্ত মন্দিরে আসতে পারবেন। আর রিকশায় অথবা সিএনজি থেকে আসতে আপনার খুব বেশি ভাড়া দেওয়া প্রয়োজন পড়বে না। সে ক্ষেত্রে আপনার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ করার প্রয়োজন পড়বে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূর্তি আসল নাকি নকল
আমি শুরুতেই আপনাদের একটা কথা বলেছিলাম। সেটি হল ঢাকেশ্বরী মন্দির নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে। আর সেই ভিন্ন মতামতের উপর ভিত্তি করে আমরা অনেকেই জানতে চাই যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূর্তি আসল নাকি নকল। তো এবার আমি আপনাকে সেই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
দেখুন, এই ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে। এবং যে ব্যক্তি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই ব্যক্তির নাম হল বল্লাল সেন। তবে ইতিহাস মতে বল্লাল সেন যে বিগ্রহটি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটি ভারত বিভক্ত হওয়ার সময় চুরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভিন্ন তথ্য জানা যায়।
কেননা পরবর্তী সময়ে জানা যায়, যখন ভারত বিভক্ত হয়েছিল। তখন যদি হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়, তাহলে মন্দিরের মধ্যে থাকা মূর্তিগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে একটা শংকা থাকবে। আর সে কারণে 1948 সালে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে গোপন ভাবে এই মূর্তি ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
যে ব্যক্তিরা এই মূর্তি ভারতে নিয়ে গিয়েছিল তাদের নাম হলো, রাজেন্দ্র কিশোর তিওয়ারী এবং হরিহর চক্রবর্তী।
আর এই ইতিহাস মতে আমরা বর্তমান সময়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে যে মূর্তি দেখি সেটি কখনোই আসল মূর্তি নয়। বরং আসল মূর্তির সমন্বয় করে নতুন মূর্তি তৈরি করার পর সেটি আমরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ এটি হলো এক ধরনের নকল মূর্তি। কেননা ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে থাকা আসল মূর্তি এখন ভারতের মধ্যে অবস্থান করে আছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রাচীন স্থাপত্য এবং দর্শনীয় দিক
আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন কেননা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ঢাকেশ্বরী মন্দির দর্শন করার জন্য আসেন। এর কারণ হলো ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য। এছাড়াও ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় দিক। আর এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে সে গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুকুর
আপনি যদি ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে যেতে চান। তাহলে আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুকুরটি। কেননা ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আসল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পেছনে এই পুকুরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উক্ত পুকুরটির চারপাশ বাধাই করা আছে এবং এই পুকুরের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। আর হিন্দু ধর্মের অনুসারী মানুষেরা মনে করেন, এই পুকুরে স্নান করলে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বাগান
ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করার সময় আপনি আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করতে পারবেন। সেটি হল, এই মন্দিরের মধ্যে রয়েছে বিশেষ একটি বাগান। আপনি সেই বাগানের মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। কেননা এই বাগানের মধ্যে থাকা ফুল গাছ গুলো কে বিশেষভাবে যত্ন করা হয়। যার ফলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সৌন্দর্য আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মেলাঙ্গন
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের যে ফাঁকা প্রাঙ্গণ রয়েছে, সেটিকেই বলা হয়ে থাকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মেলাঙ্গন। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকারের উৎসব বা পুজোর সময় এই ফাঁকা অংশটিকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরো হিন্দু ধর্মের যে সকল ধর্মীয় উৎসব রয়েছে, সেই উৎসব গুলো তে এখানে মেলা বসে। তবে উক্ত স্থানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্টল বা দোকান দেয়া অবৈধ।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের লাইব্রেরী
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে আপনি একটি লাইব্রেরী দেখতে পারবেন। যেখানে হিন্দু ধর্মের প্রায় 500 এর বেশি বই রয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে থাকা লাইব্রেরি টি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। আর আপনি যদি এই লাইব্রেরী ব্যবহার করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। তারপর আপনি সেটি ব্যবহার করতে পারবেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা ঢাকেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করতে চান। তারা আসলেই কিভাবে এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যেতে পারবেন। এবং এই মন্দিরে যাওয়ার পর আপনি কোন কোন দর্শনীয় দিক গুলো দেখতে পারবেন। সে সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
আশা করি, আজকের লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক ভালো লাগবে। সেই সাথে আপনি যদি এই ধরনের ভালো লাগার মত বিষয় গুলো বিনামূল্যে জানতে চান। তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আপনাদের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
Q:ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কিসের মুর্তি আছে?
A: আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে মনে করেন যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে কালীর মূর্তি রয়েছে। তো যারা এমনটা ভাবেন তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এর কারণ হলো ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গা মূর্তি রয়েছে, আর এটি হলো একটি দুর্গা মন্দির।
Q: ঢাকেশ্বরী মন্দির কে নিয়ন্ত্রণ করেন?
A: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মধ্যে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দির নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশ কিছু নিয়ন্ত্রক যুক্ত আছেন। যেমন, বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও সার্বজনীন পূজা কমিটির স্থানীয় সংসদ সদস্য। এছাড়াও পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এই মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
Q: ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে কিনা?
A: না, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মধ্যে আপনি কোন ধরনের পার্কিং ব্যবস্থা লক্ষ্য করতে পারবেন না। তবে মন্দিরের প্রধান ফটকের সামনে এটি ফাঁকা স্থানে রয়েছে। আপনি চাইলে সেই স্থানকে আপনার গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
Q: ঢাকেশ্বরী মন্দিরে উপাসনা করার সময় জুতা রাখার ব্যবস্থা আছে কি?
A: উপাসনা করার সময় আপনাকে জুতা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, এখানে আপনার জুতা রাখার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। এবং আপনি সেখানে জুতা রেখে নিশ্চিন্তে উপাসনা করার জন্য যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন-
মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান
নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ভ্রমন