কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড, খরচ ও দরকারি সকল তথ্য

কক্সবাজার ভ্রমণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ড সমুদ্র সৈকত, যা ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ। সমুদ্র সৈকতটি নরম, সাদা বালি এবং পরিষ্কার নীল জলের জন্য পরিচিত। এটি একটি জনপ্রিয় সাঁতার, সূর্যস্নান এবং জেট স্কিইংয়ের গন্তব্য। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি পরিদর্শন করে। সমুদ্র সৈকতটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটক উভয়ের কাছেই জনপ্রিয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি সুন্দর এবং মনোরম স্থান। এটি একটি দুর্দান্ত ছুটির গন্তব্য এবং পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একটি দিন কাটানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

আরও পড়ুনঃ সোনাদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজার ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়

কক্সবাজার ভ্রমণ

কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নির্ভর করে আপনার পছন্দের আবহাওয়া এবং ভিড়ের উপর।

অক্টোবর থেকে মার্চ

এই সময়টাতে আবহাওয়া মনোরম থাকে, দিনগুলি রৌদ্রোজ্জ্বল এবং রাতগুলি শীতল থাকে।

সমুদ্র থাকে এবং সাঁতার কাটার জন্য উপযুক্ত।

এটি পর্যটন মৌসুম, তাই হোটেল এবং রিসর্টগুলি পূর্ণ থাকে।

দামগুলিও বেশি থাকে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শীতকালে

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর

এই সময়টাতে আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র থাকে।

বৃষ্টিপাত বেশি হয়, বিশেষ করে জুলাই এবং আগস্ট মাসে।

সমুদ্র উত্তাল থাকে এবং সাঁতার কাটার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

এটি অফ-সিজন, তাই হোটেল এবং রিসর্টগুলিতে কম ভিড় থাকে।

দামগুলিও কম থাকে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বর্ষাকালে

কক্সবাজার ভ্রমণ এর জন্য কিছু টিপস

  • আপনি যদি ভিড় এড়াতে চান তবে অফ-সিজনে ভ্রমণ করুন।
  • আপনি যদি বাজেটে ভ্রমণ করেন তবে অফ-সিজনে ভ্রমণ করুন।
  • আপনি যদি সাঁতার কাটতে চান তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ভ্রমণ করুন।
  • আপনি যদি মনোরম আবহাওয়া উপভোগ করতে চান তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ভ্রমণ করুন।
  • আপনি যদি বৃষ্টি এড়াতে চান তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করবেন না।
  • আপনি যদি উত্তাল সমুদ্র উপভোগ করেন তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করুন।

কিছু আকর্ষণীয় স্থান

  • ইনানী সমুদ্র সৈকত
  • মহেশখালী দ্বীপ
  • সেন্টমার্টিন দ্বীপ
  • হিমছড়ি জলপ্রপাত
  • টেকনাফ মৎস্যজীবী গ্রাম

কক্সবাজার একটি সুন্দর এবং মনোরম স্থান। এটি একটি দুর্দান্ত ছুটির গন্তব্য এবং পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একটি দিন কাটানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

যাতায়াত

ঢাকা থেকে কক্সবাজার

সড়কপথে
  • ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে।
  • বাস কোম্পানিগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস. আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
  • শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ১,১০০ টাকা থেকে ২,৭০০ টাকা পর্যন্ত।
  • বাস যাত্রা ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সময় নেয়।
রেলপথে
  • ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।
  • ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ এবং ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করে।
  • ট্রেন ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।
  • ট্রেনের টিকিট মূল্য ৫০০ টাকা থেকে ১,৭২৫ টাকা পর্যন্ত।
  • ট্রেন যাত্রা ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় নেয়।
আকাশপথে
  • ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ফ্লাইট সার্ভিস রয়েছে।
  • বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে।
  • ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৪,৫৯৯ থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • ফ্লাইট যাত্রা এক ঘন্টা সময় নেয়।

কোন উপায়ে যাবেন

  • যদি আপনার বাজেট কম থাকে এবং সময় বেশি থাকে তবে বাসে যাওয়া একটি ভালো বিকল্প।
  • যদি আপনার বাজেট বেশি থাকে এবং সময় কম থাকে তবে বিমানে যাওয়া সবচেয়ে দ্রুততম উপায়।
  • যদি আপনি ট্রেন ভ্রমণ উপভোগ করেন এবং আপনার সময় বেশি থাকে তবে ট্রেনে যাওয়া একটি ভালো বিকল্প।

কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ার আগে

১। আপনার থাকার ব্যবস্থা আগে থেকে বুক করে রাখুন, বিশেষ করে যদি আপনি ছুটির মৌসুমে যাচ্ছেন।

২। আবহাওয়ার পূর্বাভাস চেক করুন এবং সেই অনুযায়ী পোশাক প্যাক করুন।

৩। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন সানস্ক্রিন, টুপি, সাঁতারের পোশাক, ক্যামেরা ইত্যাদি সাথে নিয়ে যান।

কোথায় থাকবেন

কক্সবাজারে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরণের হোটেল, রিসোর্ট, মোটেল এবং গেস্ট হাউস রয়েছে। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে পারেন।

হোটেলের ধরণ

বাজেট হোটেল: ৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকা

মাঝারি হোটেল: ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা

বিলাসবহুল হোটেল: ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা

কিছু জনপ্রিয় হোটেল

বাজেট হোটেল সমূহ: উর্মি গেস্ট হাউস, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি।

মাঝারি হোটেল: হোটেল সী ক্রাউন, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি।

বিলাসবহুল হোটেল: মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ ইত্যাদি।

কিছু টিপস

  • অফ-সিজনে গেলে হোটেলের ভাড়া কম থাকে।
  • আপনি যদি সমুদ্রের কাছে থাকতে চান তবে বিচ ভিউ হোটেল বুক করতে পারেন।
  • আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী হোটেল বুক করার জন্য অনলাইন হোটেল বুকিং ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি যদি পরিবার নিয়ে যান তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে পারেন।

কোথায় খাবেন

কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেতে পারেন।

কিছু মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্ট

  • রোদেলা
  • ঝাউবন
  • ধানসিঁড়ি
  • পৌষি
  • নিরিবিলি

কিছু খাবারের দাম

  • ভাত: ২০-৪০ টাকা
  • মিক্সড ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০ টাকা (৮-১০ আইটেম)
  • লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০ টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা)
  • কোরাল/ভেটকি: ১৫০ টাকা (প্রতি পিচ)
  • গরু: ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন)
  • রুপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২জন খাওয়ার মত)
  • ডাল: ৩০-৬০ টাকা

কক্সবাজার ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস

সতর্কতা

  • যেকোন সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিন।
  • হটলাইন: +০৮৮০১৭ ৬৯৬৯ ০৭৪০
  • কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ এর জন্য অফসিজনে বেড়াতে যান।
  • যেকোন কিছু কেনা ও কোথায় যাতায়াতের পূর্বে ভাড়ার ক্ষেত্রে ঠিকমত দরদাম করে নিবেন।
  • কোন রেস্টুরেন্টে কিছু খাবার আগে দাম জিজ্ঞেস করুন।
  • হোটেল ঠিক করার আগে অব্যশই হোটেল সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিবেন।
  • জোয়ার-ভাটার সময় মেনে সাগরে নামুন।

টিপস

  • সাঁতার না জানলে একা সমুদ্রে নামবেন না।
  • সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
  • সূর্যের তীব্র আলো থেকে ত্বক ও চোখকে রক্ষা করুন।
  • পরিবেশের ক্ষতি করবেন না।
  • স্থানীয়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।

আরও কিছু টিপস

  • আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন সানস্ক্রিন, টুপি, সাঁতারের পোশাক, ক্যামেরা ইত্যাদি সাথে নিয়ে যান।
  • আপনার ভ্রমণ বীমা করিয়ে যান।
  • আপনার পরিবার ও বন্ধুদের আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন।
  • স্থানীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে জেনে নিন।
  • কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করুন এবং আপনার ভ্রমণ আনন্দময় করে তুলুন।

আপনার ভ্রমণ শুভ হোক!

আরও পড়ুন-

কুতুবদিয়া দ্বীপ

হিমছড়ি ঝর্ণা

মন্তব্য করুন