ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল – চিকিৎসার খুঁটিনাটি

ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ু। এই রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই, যা পূর্বে মাদ্রাজ নামে পরিচিত ছিল। চেন্নাই থেকে ১৩৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জেলাশহর ভেলোর। ভেলোরে রয়েছে ভারতের বিখ্যাত হাসপাতাল ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (CMC Hospital)।

এটা ছাড়াও রয়েছে হাসপাতাল নারায়নী (Hospital Narayani), চেন্নাই এ্যাপোলো (Chennai Apollo) ও রামচন্দ্র হাসপাতাল (Ramchandra Hospital)। তবে সিএমসি হাসপাতালের সেবাও মান একেবারে বিশ্বমানের উন্নত কিন্তু চিকিৎসা খরচ তুলনামূলক অন্যান্য উন্নত মানের হাসপাতাল থেকে অনেকাংশ কম।

এটি খ্রিষ্টান মিশনারী পরিচালিত একটি ভালো সেবা সহ ভালো মানের হাসপাতাল (Hospital)। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (cmc vellore hospital) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভারতের ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বাংলাদেশের একটি ভালো মানের প্রাইভেট হাসপাতালে একটি জটিল অপারেশনের (operation) জন্য যে পরিমাণ খরচ হয় প্রায় সেই একই খরচে ভেলোরে চিকিৎসা, থাকা খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট সবই হয়ে যাবে। 

প্রতি বছর প্রচুর বাঙালি চিকিৎসার জন্য ভীড় জমান  সিএমসি হাসপাতালে। উন্নত টেকনোলজি (Technolog),  যন্ত্রপাতি, অত্যাধুনিক প্যাথলজিক  সিস্টেম এর কারণেই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রচুর রোগী ভালো চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (cmc vellore hospital)। তাই যারা ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাবেন ভাবছেন তারা অবশ্যই যাওয়ার আগে সিএমসি হাসপাতাল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (গাজীপুর)

রেজিস্ট্রেশন ও এ্যাপয়েন্টমেন্ট 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে (cmc vellore appointment) চিকিৎসা শুরুতেই সকল বিদেশী ও তার এটেনডেন্টকে আইআর অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এবং তার আগে নতুন রোগীদেরকে প্রি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রি রেজিস্ট্রেশন (pre registration) করতে পারেন।

অথবা আইআর অফিসের পাশ থেকে কম্পিউটার যেকোনো দোকান থেকে প্রি রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবেন, এর খরচ আসবে ৫০ রুপি। শুধুমাত্র রোগীদের ক্ষেত্রেই প্রি রেজিস্ট্রেশন এর প্রয়োজন হয় সাথে থাকা লোকদের লাগবে না।

ভেলোরে গিয়ে প্রথমে যে সমস্যায় পড়বেন সেটা হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা সিএমসি হাসপাতাল বা হোটেল গুলোতে আপনি ইংলিশ অথবা হিন্দিতে কথা বলে চালিয়ে নিতে পারবেন।

অনলাইন এ্যাপয়েন্টমেন্ট (online appointment) 

যেকোনো ডিপার্টমেন্টের প্রাইভেট এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সেজন্য চিকিৎসার জন্য ভেলোড়ে যাওয়ার ৩ মাস আগে থেকে অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া উচিত। অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার রোগের জন্য কোন ডিপার্টমেন্টে চিকিৎসা করাতে হবে।

সেই রোগের চিকিৎসার স্পেশালিস্ট চিকিৎসককে অনলাইনে বেছে নিতে হবে। অবশ্যই অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হলে ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ্যাপয়েন্টমেন্ট (cmc online appointment) নিতে হবে।

অফলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট (offline appointment) 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (cmc vellore hospital) এর মেইন গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকার সময় দেখতে পাবেন, ‘Silver Gate for New Appointment’ এটা বড় আকারে লেখা রয়েছে। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার সমস্যাটা জানাবেন, আপনার সমস্যা শুনে সেই অনুযায়ী সেখানকার লোকরা আপনাকে নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টে এ্যাপয়েন্টমেন্ট (cmc hospital appointment) দিয়ে দিবে। এ ক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশি লাগবে প্রায় ৩ দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রাইভেট এ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবেন। 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে কিভাবে যাবেন 

ঢাকা হতে সরাসরি চেন্নাই যেতে পারবেন বিমানে, বিমানে যেতে ভাড়া পড়বে জন প্রতি ১৫,০০০ থেকে ১৮,০০০। এবং ভারতের কলকাতা থেকে ভেলোরের দূরত্ব পড়বে প্রায় ১৭১২ কি.মি। ট্রেনে করেও যাতায়াত করতে পারবেন, ট্রেনে করে গেলে আপনাকে কাটপাডি জংশনে নামতে হবে। হাওড়া থেকে কাটপাডি যাওয়ার অনায়াসে অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন। এতে সময় লাগবে প্রায় ২৫-২৯ ঘন্টার মতো।

কাটপাডি থেকে অনেক গাড়ী পেয়ে যাবেন ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (Vellore CMC Hospital) যাওয়ার জন্য। চেন্নাই থেকে ভেলোর (cmc vellore) ট্রেন যাত্রায় খুব ভালো সুবিধা পাওয়া যায় না অনেক বেশি ভিড় থাকে। তাই বাস বা ট্যাক্সি ক্যাবে যাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুনঃ খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান 

কোথায় থাকবেন 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের (cmc vellore) আশেপাশেই রয়েছে অসংখ্য লজ, হোটেল। লজ গুলোতে পাবেন ভালো সুবিধা, রান্নার সুবিধা এবং রুম ভাড়াটাও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আবার কিছু কিছু লজে অনেকটা ভ্যাপসা গন্ধসহ আলো বাতাসের অভাব থাকে। তাই দেখেশুনে ভালো লজ বুক করতে হয়। লজ ছাড়াও হোটেলে রুম ভাড়া নিতে পারেন তবে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশি।

ডাবল বা ত্রিপল বেডের রুম ভাড়া পড়বে ১৫০-২০০ থেকে ১,৫০০-২,০০০ টাকা অব্দি/এর ভিতরে। CMC (cmc vellore) থেকে যত দূরে রুম ভাড়া নিবেন, তত ভাড়াটা কম আসবে। তবে ভাড়া একটু বেশি হলেও হাসপাতালের কাছাকাছি থাকাটাই ভালো হবে। 

কোথায় খাবেন

যেহেতু ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (cmc vellore) এ অসংখ্য বাঙালি চিকিৎসা করাতে যান এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরাতো আছেনই। প্রচুর বাঙালি ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান বলে সেখানে বাঙালি খাবারের অভাব নেই। অসংখ্য বাঙালি খাবার হোটেল রয়েছে। সেখানে আপনি ৪০-৬০ টাকা/মিল হিসাবে ভাত পেয়ে যাবেন। তাছাড়া বাঙালি খাবারের পাশাপাশি সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারও উপভোগ করতে পারবেন। 

তাছাড়া আপনি যে হোটেলে থাকবেন, সেখানে রান্না করেও খেতে পারবেন। সেখানে প্রতিটা হোটেলে রান্না করার ব্যবস্থা রয়েছে। এবং রাস্তার মোড়েই পেয়ে যাবেন রান্না করার জন্য মাছ, মাংস, শাকসবজি সব কিছু। ভেলোরে ফ্রেশফুড গুলো অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। তবে রান্না না করতে পারলেও চিন্তা নেই এখানে আশেপাশের সব হোটেল গুলোতে বাঙালিয়ান খাবার সহজেই পাওয়া যায়। 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে (cmc vellore hospital) খুবই উন্নত ধরনের চিকিৎসা হয়, তবে সময় একটু বেশি লাগে। এবং আপনি যদি আগে থেকে অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রাখেন এতে করে আপনার অনেক সময় বেঁচে যাবে কারণ অফলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করাতে সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় লেগে যায়। ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। 

১. ক্রেডিট কার্ডে বেশি পরিমাণ টাকা ভরে রাখবেন, কারণ ক্যাশ টাকা সাথে বা হোটেলে রাখার থেকে কার্ডে রাখা বেশি ভালো। 

২. রোগীর প্রেসক্রিপশন এর সব ঔষধ হাসপাতাল থেকে কিনে সাথে নিয়ে আসুন, বাইরে সকল ঔষধ নাও পেতে পারেন আর বাংলাদেশে তো অবশ্যই পাবেন না। 

৩. কলকাতা থেকে বাংলাদেশী টাকা / ডলার ভাঙ্গিয়ে আনুন, কারণ এখানেই ভালো রেট পাবেন। 

৪. অবশ্য টুরিস্ট ভিসা নিয়ে মেডিকেল করাতে যাবেন না। মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসা করাতে যাবেন, টুরিস্ট ভিসা নিয়ে গেলে কোন ধরনের সার্জারি করবে না। 

৫. অফলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর আশায় বসে থাকবেন না, অফলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে গেলে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যাবে। তাই অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিয়ে যাবেন। 

ভেলোরে সিএমসি হাসপাতাল বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল অল্প টাকায় সর্বোচ্চ সেবা পাবেন এখানে।

শেষকথা

মান ও সেবার দিক থেকে ভারতের ভেলোর শহরের সিএমসি হাসপাতাল (cmc vellore hospital) বিশ্বস্ত একটি হাসপাতাল। আধুনিক টেকনোলজি, যন্ত্রপাতির সাথে মানসম্মত এবং আর্থিক দিক থেকেও অনেকটা সাশ্রয়ই একটি হাসপাতাল।

ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে (cmc vellore hospital) প্রায় ২৫ ভাগ রোগীই হচ্ছেন বাংলাদেশের রোগী। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল (Vellore CMC Hospital) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আশা করি কিছুটা হলেও আপনি উপকৃত হবেন। 

ভেলোরের ভাষার ক্ষেত্রে হিন্দি কিংবা ইংলিশ জানলেই হবে। তবে কলকাতাতে আপনি বাংলা ভাষা ও ব্যবহার করতে পারবেন। তামিলরা কিন্তু হিন্দিতে কথা বলতে খুব একটা পছন্দ করে না তাই তাদের সাথে ইংলিশে কথা বলাটাই ভালো। 

ভেলোর সিএমসি হাসপাতাল সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর /  FAQ’s

১. সিএমসি হাসপাতালে কিভাবে সিরিয়াল দিব? 

উত্তর:- CMC Hospital এর official website: https://www.cmch-vellore.edu/। এই website থেকে appointment বুক করতে হবে।

২. ভেলোর হাসপাতাল কোথায়? 

উত্তর:-  ভেলোর হাসপাতাল চেন্নাই এর জেলা শহর ভেলোর এ অবস্থিত। 

৩. সিএমসি (cmc vellore) হাসপাতালের খরচ কেমন?

উত্তর:- উন্নত ও ভালো মানের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই সিএমসি হাসপাতাল পারফেক্ট। বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর খরচের তুলনায় অনেক কম খরচ হয় সিএমসি হাসপাতালে। বিভিন্ন রোগ অনুযায়ী খরচের পরিমাণ কিন্তু তুলনামূলকভাবে তা খুবই কম।

আরও পড়ুন – 

মাওয়া রিসোর্ট (লৌহজং, কান্দিপাড়া ) মুন্সিগঞ্জ

মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল

মন্তব্য করুন