চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান

চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান 

দেশের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ এক জনপদ হলো চাঁদপুর (Chandpur)। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর জলধারায় বিধৌত এই জেলার রয়েছে প্রচুর নামযশ। বিশেষ করে এই এলাকা পরিচিতি পেয়েছে রুপালি ইলিশের জন্য। এই কারনে চাঁদপুরকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক দিক দিয়েও চাঁদপুর জনপদের আলাদা সুনাম রয়েছে। এই জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন ও দর্শনীয় স্থান। তাই আজকে আমরা জানব, চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। 

নানা রুপে রুপায়িত “রুপসী চাঁদপুর” আপনার ভ্রমণপিপাসু হৃদয়ের সকল খোরাক মিটিয়ে দিবে। পাশাপাশি এখানকার স্থানীয় কালচার এবং খাদ্য আপনার মন জুড়িয়ে দিবে। তাই সামনের ছুটিতে যদি চাঁদপুর (Chandpur) ঘুরে আসার চিন্তাভাবনা করে ফেলেন তবে অবশ্যই এই জনপদের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো সম্বন্ধে আগেই জেনে রাখা জরুরি।

আরও পড়ুনঃ মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর

Table of Contents

চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ

নদীবিধৌত রূপসী জনপদ চাঁদপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এমন কিছু স্পট রয়েছে যেগুলো একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত। সেই সকল দর্শনীয় স্থানগুলো হলো:

  • লোহাগড়া মঠ
  • রূপসা জমিদার বাড়ি
  • হযরত শাহরাস্তির মাজার
  • হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ 
  • অঙ্গিকার ভাস্কর্য 
  • চাঁদপুর মৎস্য জাদুঘর 
  • চাঁদপুর বড় স্টেশন 
  • পর্তুগীজ দুর্গ
  • সাহাপুর রাজবাড়ি 
  • শিশু পার্ক 
  • গজড়া জমিদার বাড়ি 
  • কড়ৈতলি জমিদার বাড়ি 

লোহাগড়া মঠ

লোহাগড়া মঠ হলো চাঁদপুরের অন্যতম প্রাচীন এক দর্শনীয় স্থান। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা চন্দ্রা বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিম দিকে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোহাগড়া গ্রামে এই প্রাচীন মঠ অবস্থিত। মঠটি নির্মাণ কালে ঐ গ্রামে জমিদারদের রাজত্ব ছিল।

সেইসময় প্রতাপশালী দুই জমিদার ছিল লোহা ও গহড়। যারা সম্পর্কে ছিল আপন দুই ভাই। এই দুই ভাইয়ের নামানুসারেই গ্রামের নাম রাখা হয় লোহাগড়া। লোককথা অনুযায়ী ঐ দুই জমিদার এতটাই বিত্তশালী ছিল যে তারা যখন যা খুশী তাই করত। তারই ধারাবাহিকতায় তারা তাদের বাড়ির পাশে সুউচ্চ মঠ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই।

শোনা যায় মোট পাঁচটি মঠ নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে শুধুমাত্র তিনটি মঠ অবশিষ্ট রয়েছে। লোহাগড়ায় গেলেই পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকা ছোট্ট, মাঝারি ও বড় আকারের মঠ তিনটি সর্বপ্রথম চোখে পড়বে। এছাড়াও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া জমিদার বাড়িও আপনার নজর কাড়বে।

রূপসা জমিদার বাড়ি 

রূপসা জমিদার বাড়িটিও চাঁদপুরের (Chandpur) ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রূপসা গ্রামের বাজার এলাকায় এই বিখ্যাত জমিদার বাড়িটি দাড়িয়ে রয়েছে। লোককথা অনুযায়ী আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে আহম্মদ রাজা এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।

পরবর্তী তার পুত্র মোহাম্মদ গাজী এই বাড়ির উত্তরাধিকার লাভ করেন। উনিশ শতকের দিকে মোহাম্মদ গাজির পুত্র আহমেদ গাজী জমিদার বাড়ির অধিকার পান। আহমেদ গাজী ছিলেন প্রজাদের প্রতি সদয় ও উদার মনের একজন রাজা। জনগণের কল্যাণে প্রচুর সম্পত্তি তিনি ওয়াকফ (দান) করে দেন।

জমিদার বাড়ির আশেপাশে থাকা মসজিদ, স্কুল ও পুকুর তার ওয়াকফ এর অংশ। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে রূপসা জমিদার বাড়ি চাঁদপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় উপরের সারিতে রয়েছে।

হযরত শাহরাস্তির মাজার

চাঁদপুর (Chandpur) জেলার শাহরাস্তি উপজেলায় এই মাজারটি অবস্থিত। শাহরাস্তি বাজারের পশ্চিম দিকে শ্রীপুর গ্রামে এই মাজার তৈরি করা হয়। এই মাজারটি তৈরি করা হয়েছিল ইরাক থেকে আসা ধর্মপ্রচারক হযরত রাস্তি শাহ (রঃ) এর নামে। সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ এর আমলে তিনি এই এলাকায় ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্য আগমন করেন এবং শ্রীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

১৩৮৮ সালে হযরত রাস্তি শাহ (রঃ) পরলোক গমন করলে শ্রীপুরের জনগন তার নামে মাজার স্থাপন করেন। তার মৃত্যুর তিন বছর পর সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির নির্দেশে হযরত রাস্তি শাহ (রঃ) এর নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। হযরত রাস্তি শাহ  (রঃ) নামানুসারেই এই উপজেলার নামকরণ করা হয় “শাহরাস্তি” উপজেলা।

পাশাপাশি তার মাজার ঘেঁষে বিশাল বড় একটি দিঘি রয়েছে যা দেখতে প্রচুর মানুষ ভীড় করে। লোকমুখে শোনা যায় হযরত রাস্তি শাহ (রঃ) এর নির্দেশেই বাকি জ্বিন জাতি এই বিশাল দিঘি খনন করেছিল।

হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ 

ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় দিক বিবেচনায় “হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ” চাঁদপুরের (Chandpur) অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চাঁদপুরের পাশাপাশির উপমহাদেশের অন্যতম বড় মসজিদটি হাজী আহমাদ আলী (রহঃ)। হাজী আহমাদ আলী (রহঃ) ছিলেন হাজী মনিরুদ্দিনের প্রপৌত্র যার নামে এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল “হাজীগঞ্জ”।

যদিও হাজী আহমাদ আলী (রহঃ) এর নির্মাণকৃত মসজিদটি ছিল খড়নির্মিত একচালা ভবন। পরবর্তীতে মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রঃ) পাকা মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করেন। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরে ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ১০ অগ্রহায়ণে মসজিদটিতে সর্বপ্রথম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। যে নামাজে শরিক হয়েছিল বাংলার দুই অবিসংবাদিত নেতা এ.কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

২৮,৪০৫ বর্গফুট জায়গার ওপর সগৌরবে দাড়িয়ে থাকা মসজিদটির অতিকায় বিশাল মিনারটির উচ্চতা ১৮৮ ফুট। বর্তমানে আহমাদ আলী পাটোয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চাঁদপুরের অন্যতম তাৎপর্যময় এই মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অনেক মানুষই আসে।

আরও পড়ুনঃ মাওয়া রিসোর্ট (লৌহজং, কান্দিপাড়া ) মুন্সিগঞ্জ

অঙ্গিকার ভাস্কর্য 

চাঁদপুর (Chandpur) শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশের লেকে এই ভাস্কর্যটি অবস্থিত। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের সকল শহীদ সন্তানদের স্মরণে “অঙ্গিকার” ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এই ভাস্কর্যের স্থপতি ছিলেন প্রফেসর আবদুল্লাহ খালেদ।

ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ভাস্কর্যটির উচ্চতা হলো ১৫ ফুট। মূলত এই ভাস্কর্যটি হলো আমাদের দৃঢ়তা ও স্বাধীনতার প্রতিক। প্রতিবছর জাতীয় দিবসগুলোতে “অঙ্গিকার” ভাস্কর্যের পাদদেশে শহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

দিনের বেলায় এই ভাস্কর্যের চারপাশে খুব একটা লোকসমাগম চোখে না পড়লেও সন্ধ্যা ও রাতের দিকে এখানে দর্শনার্থীদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। 

চাঁদপুর মৎস্য জাদুঘর 

চাঁদপুর (Chandpur) শহরের ওয়্যারলেস বাজার এলাকার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষ সাজানো কক্ষে এই জাদুঘরটি অবস্থিত। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাজের অংশ হিসেবে তৈরি করা এই জাদুঘরটি চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় রয়েছে। পদ্মা ও মেঘনা নদীবেষ্টিত চাঁদপুর মৎস্য গবেষণার জন্য পুরোপুরি আদর্শ স্থান। সেই সুবাদে ১৯৮৪ সালে এখানে এই মৎস্য জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়।

এই জাদুঘরটিতে বর্তমানে প্রায় তিনশো প্রজাতির মাছ সংরক্ষিত আছে। মূলত সাগর ও নদী থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ গবেষণার পর এই জাদুঘরটিতে সংরক্ষণ করা হয়। কেমিক্যাল জারে সংরক্ষণ করা মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: সামুদ্রিক হাঙর, বামশ মাছ, মহাশোল মাছ, রাণি মাছ, তারা বাইম মাছ, জইয়া মাছ, চিতল মাছ, গারুয়া মাছ ইত্যাদি মাছ।

এছাড়াও জাদুঘরটিতে বিভিন্ন প্রজাতির ঝিনুক এবং কচ্ছপও সংরক্ষণ করা হয়। সেইসাথে একাধিক প্রজাতির ইলিশ এই সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থীরা এই জাদুঘর ভ্রমণ করতে আসেন। 

চাঁদপুর বড় স্টেশন 

চাঁদপুর (Chandpur) ভ্রমণে গিয়েছেন তবে চাঁদপুর বড় স্টেশন পরিদর্শন করেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই স্টেশনটি যেন চাঁদপুরের জাতীয় টুরিস্ট স্পটে পরিণত হয়েছে। তিন নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় জায়গাটিকে মোলহেড নামেও ডাকা হয়। নদীর পাড়ের অপরুপ দৃশ্য যে-করো হৃদয় জুড়িয়ে দিবে। পাশাপাশি এখানের সূর্যাস্তের দৃশ্যও চোখে লেগে থাকার মতো।

এখানে থাকা অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা, ট্রলার অথবা স্পীডবোর্ডে আপনি নদী ভ্রমণও করতে পারবেন। তাছাড়া মোলহেডের পাশেই তৈরি করা হয়েছে “রক্তধারা” নামক ভাস্কর্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঢাকা এই বড় স্টেশন সকল বয়স ও শ্রেণিপেশার দর্শনার্থীরা তাদের মনের খোরাক মেটাতে আসে। রেল মন্ত্রণালয়ের অধিনে এই মোলহেডে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বড় স্টেশন মোলহেড স্থানটিকে “বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র” নামে নামকরণ করার ঘোষণা দিয়েছে।

পর্তুগীজ দুর্গ

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে এই দুর্গটি অবস্থিত। পঞ্চাদশ শতকের সময় ফরিদগঞ্জ উপজেলাটি সাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় পর্তুগীজ বণিকরা তাদের ব্যবসার জন্য এই এলাকাটিকে বেছে নিয়েছিল। পর্তুগীজরা এই এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন।

যেহেতু পর্তুগীজরা এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিল তাই এলাকার মানুষ এই দুর্গটিকে পর্তুগীজ দুর্গ নামে নামকরণ করে। তবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এই দুর্গটি নির্মাণ করার কথা বললেও বাস্তবে এই দুর্গটি নির্মাণের পিছনে পর্তুগীজদের অন্য এক উদ্দেশ্য ছিল। মুলত জলদস্যুতার কাজ সহজ করার জন্যই তারা এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিল।

দুর্গটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন পর্তুগীজ সেনাপতি অ্যান্টিনিও ডি সিলভা মেনজিস। প্রায় দুইশত একর জমির ওপর নির্মাণ করা এই বিশাল দুর্গটিতে সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষণের জন্য একটি টাওয়ারও নির্মাণ করা হয়েছিল। সেইসাথে এখানে হাতিশাল এবং গোপন সুড়ঙ্গপথও তৈরি করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে অযত্ন, অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে দুর্গটি নিজের অন্তিম সময় গুনছে। ইতিহাসপ্রমী দর্শনার্থীরা এই প্রাচীন দুর্গটি ভ্রমণ করতে আসেন।

সাহাপুর রাজবাড়ি 

চাঁদপুর (Chandpur) বেড়াতে গেলে অবশ্যই “সাহাপুর রাজবাড়ি” নিজের ভ্রমন লিস্টের উপরের দিকে নোট করে রাখবেন। প্রায় ছয়শত বছর পুরনো এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সাহাপুর গ্রামে অবস্থিত। ইতিহাস অনুযায়ী, আনুমানিক পনের শতকের সময় রাজা শিবানন্দ খাঁ এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।

তৎকালীন সময়ে স্থানীয়দের কাছে এই রাজবাড়িটি চৌধুরী বাড়ি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। রাজবাড়ির অভ্যন্তরে পানশালা, সুড়ঙ্গপথ ও বিশ্রামক্ষ রয়েছে। লোককথা অনুযায়ী রাজা তার বিরোধীদের এই সুড়ঙ্গপথেই নাকি ফেলে দিত। এছাড়াও বাড়িটিতে রয়েছে পাহারা চৌকি, মন্দির,  শানবাঁধানো পুকুর, নাট্যমন্দির ইত্যাদি।

রাজবাড়ির ভবনটিও ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। যদিও এই রাজবাড়ির বংশধরদের অনুমতি প্রদান সাপেক্ষে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। 

শিশু পার্ক 

যারা পরিবার নিয়ে চাঁদপুরে ভ্রমণে যাবেন বিশেষ করে যাদের ছোট শিশু রয়েছে তাদের ঘোরাঘুরির জন্য অন্যতম হলো চাঁদপুরের ফাইভ স্টার শিশু পার্ক। আকর্ষণীয় এই শিশুপার্কটি চাঁদপুরের সদর উপজেলায় অবস্থিত। চাঁদপুর (Chandpur) জেলা কারাগারের দক্ষিণে শাহতলী সড়কের একটু সামনেই শিশুপার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কটির বিভিন্ন ছোট ছোট এলাকাজুড়ে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু।

এছাড়া শিশুপার্কটিতে রয়েছে ছোট বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন রাইড, দোলনা, সুইমিং পুল এবং আরো অনেক কিছু। সেইসাথে এই পার্কের জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন পশুপাখির স্থিরচিত্র বসানো আছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা এই শিশুপার্কে সময় কাটাতে আসে। তাই যারা পরিবারের সহিত চাঁদপুর ঘুরতে আসতে চান তাদের জন্য একটি যথোপযুক্ত স্পট হতে পারে এই ফাইভ স্টার শিশু পার্ক। 

গজড়া জমিদার বাড়ি 

চাঁদপুর (Chandpur) জেলার মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের টর্কি এওয়াজ গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। প্রায় ২২০ বছর পূর্বে জমিদার অক্ষয় চন্দ্র সরকারের হাত ধরে গজরার এই জমিদার বাড়ির সূচনা হয়। অক্ষয় চন্দ্র সরকারের পরে যথাক্রমে সুরেন্দ্র সরকার, পূর্ব রায়েদিয়া গ্রামের সলিমুদ্দিন সরকার ও গঙ্গাই সরকার এই জমিদার বাড়িতে রাজত্ব করেছেন।

তবে বর্তমানে এই জমিদার বাড়ি খুবই শোচনীয় অবস্থায় পতিত হয়েছে। প্রথমবার দেখলে মনেই হবে না যে, একখানে এককালে এক সুউচ্চ জমিদার বাড়ি ছিল। জমিদার বাড়ির পাশেই একটি বড় দিঘি রয়েছে যা এখন মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। সেইসাথে জমিদার বাড়ির আরেক পাশে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

কড়ৈতলি জমিদার বাড়ি 

চাঁদপুর (Chandpur) জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলি গ্রামের এই কুখ্যাত জমিদার বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে এলাকার ইতিহাস বহন করে চলেছে। জমিদার বাড়িটি সম্পর্কে জানা যায়, ১৯২০ সালে জমিদার হরিশ চন্দ্র বসু এই বাড়িটি নিলাম হতে কিনে নিয়ে এখানে জমিদারির গোড়াপত্তন করেন।

জমিদার হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির। এলাকার প্রজাদের তিনি নানাভাবে শোষণ করতেন। শোনা যায়, তারা এতটাই অত্যাচারী ছিল যে তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে এবং মাথায় ছাতা নিয়ে হাঁটাও নিষেধ ছিল। যদিও ১৯৫১ সালে ঐ বংসের শেষ জমিদার গোবিন্দ বসুর হাত ধরে ঐ এলাকার জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে।

জমিদার বাড়িটিতে ৩টি ভবনের পাশাপাশি রয়েছে দূর্গা মন্দির, কাছারি ঘর, শাঁন বাঁধানো পুকুর ইত্যাদি। এছাড়া জমিদার বাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো ভিতরে থাকা সুড়ঙ্গ পথ। এলাকার লোকজনদের ভাষ্যমতে এই সুড়ঙ্গপথে নাকি জমিদারদের গোপন গুপ্তধন লুকায়িত আছে। তাছাড়া জমিদার বাড়ি ঠিক পাশেই রয়েছে “বাবুর দিঘি” নামের বিশাল এক দিঘি।

আরও পড়ুনঃ বজরা শাহী মসজিদ নোয়াখালী

চাঁদপুর কিভাবে যাবেন

বাসে ঢাকা-চাঁদপুর

বাসে চড়ে ঢাকা হতে চাঁদপুরে যেতে আনুমানিক সাড়ে তিন ঘন্টার মতো সময় লাগতে পারে। ঢাকার বাসস্ট্যান্ডে চাঁদপুর রুটের চারটি বাস চলাচল করে। চাঁদপুর রুটে চলাচলকারি বাসগুলো হলো: তিশা, পদ্মা, আল-আরাফাহ ও সৌদিয়া। প্রত্যেকটি বাস কোম্পানিরই এসি এবং নন এসি বাস এই রুটে চলাচল করে। নন এসি বাসের ক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হয় আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এসি বাসের ক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হয় আনুমানিক ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। 

লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর

যারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে চাঁদপুর যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য বাস অপেক্ষা লঞ্চে যাওয়াটাই ভালো হবে। ঢাকার সদরঘাট হতে প্রতিদিন চাঁদপুরগামী লঞ্চ ছাড়ে। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদিয়া, এমভি সোনারতরী, এমভি তুতুল, এমভি রফরফ, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি মেঘনা রাণী ইত্যাদি।

প্রতিদিন সকাল ৬টা অথবা ৬.৩০ হতে চাঁদপুরগামী লঞ্চ চলাচল আরম্ভ হয়। যদি সাধারণ কামড়ায় ভ্রমণ করেন ভাড়া হবে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। যদি কেবিনে ভ্রমণ করতে চান তাহলে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। 

বাসে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকাল বাস এবং রিজার্ভ বাস চলাচল করে। লোকাল বাসে চড়ে চাঁদপুর যেতে চাইলে চট্টগ্রামের অলংকার মোড় অথবা এ.কে খান মোড়ে চলে আসতে হবে। সেখানে চাঁদপুরগামী বিভিন্ন লোকাল বাস পাওয়া যায়।

লোকাল বাসগুলোতে প্রতি সিটের ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মতো। এছাড়া সৌদিয়া, শ্যামলি, হানিফ, এস আলম বাস সার্ভিসের মতো রিজার্ভ বাস সার্ভিসগুলোর মাধ্যমেও আপনি চাঁদপুর যেতে পারবেন। প্রতি সিটের জন্য ভাড়া পড়তে পারে ৩৩০ থেকে ৪০০ টাকা। আর যদি এসি বাস হয় তাহলে ভাড়া তার দিগুণ হতে পারে। 

ট্রেনে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী দুটি ট্রেনের নাম হলো মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস। ট্রেন দুটোর ভাড়ার তালিকা যথাক্রমে : সাধারণ কামড়া (৫০ টাকা), স্নিগ্ধা ( ৩৭৪ টাকা), এসি কামড়া ( ৪৪৯ টাকা), এসি বার্থ কামড়া ( ৬৭৩) টাকা। সাগরিকা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। মেঘনা এক্সপ্রেস বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। 

চাঁদপুরে কোথায় থাকবেন

চাঁদপুরে ভ্রমণের সময় কোথায় থাকবেন তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। চাঁদপুরে থাকার জন্য অনেকগুলো উচ্চমানের অথবা নিম্নমানের হোটেল রয়েছে। আপনাদের সুবিধার্থে হোটেলগুলোর তথ্য ও সম্ভাব্য মূল্যতালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

হোটেল সকিনা:  এই হোটেলে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি অনায়াসে রুম পেয়ে যাবেন।

ভাই ভাই হোটেল:  ভাই ভাই হোটেলেও ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যায়।

হোটেল গ্র্যান্ড হিলশা: চাঁদপুরের অন্যতম নামকরা এক হোটেল হলো হোটেল গ্র্যান্ড হিলশা। কবি কাজি নজরুল ইসলাম রোডের সদর হাসপাতালের সামনে এই হোটেলের অবস্থান। এই হোটেলে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকার রুম পাওয়া যায়। 

গাজী আবাসিক হোটেল: হোটেলটিতে ৪০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যায়। 

এছাড়াও হোটেল প্রিন্স, রেডিসন হোটেল, হোটেল অতিথি, হোটেল সুগন্ধা, ফাইভ স্টার আবাসিক হোটেলসহ আরো নানা সুপরিচিত হোটেল রয়েছে। অবশ্যই রুম নেওয়ার আগে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে দামাদামি করে নিবেন।

শেষকথা

ইলিশের দেশ খ্যাত চাঁদপুরের ঘুরতে গেলে অবশ্যই সেখানকার ইলিশ ট্রাই করতে ভুলবেন না। বিভিন্ন জাতের ইলিশ চেখে দেখবেন অবশ্যই। যদি শীতকালে চাঁদপুর যান তবে অবশ্যই ভালোমানের গরম কাপড় নিয়ে নিবেন। কারণ নদী এলাকআঃ হওয়ায় এখানে শীতের প্রকোপ বেশিই থাকে। 

যদি লঞ্চযোগে চাঁদপুর ভ্রমণে বের হন তবে অবশ্যই লঞ্চ ছাড়ার আধ ঘন্টা আগে ঘাটে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করেবন। লঞ্চে উঠেই সবার আগে লাইফ জ্যাকেট চেয়ে নিবেন। পাশাপাশি শিশুদের নিজের কাছে আগলে রাখবেন। সেইসাথে ঐতিহাসিক নিদর্শনসমুহ ভ্রমণের সময় খেয়াল রাখবেন আপনার বা আপনার পরিবারের কারো দ্বারা যেন কোনো অবকাঠামোর ক্ষতি না হয়। কারণ এই অবকাঠামোগুলোই আমাদের ইতিহাস বহন করে চলেছে।

চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১/ চাঁদপুর জেলার আয়তন কত?

উত্তর: চাঁদপুর জেলার আয়তন হলো প্রায় ১৭০৪ বর্গকিলোমিটার। 

২/ ঢাকা-চাঁদপুর রেলযোগাযোগ রয়েছে? 

উত্তর: না, ঢাকা-চাঁদপুর রেলযোগাযোগ নেই।

৩/ চাঁদপুর কোন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ?

উত্তর: চাঁদপুর জেলাটি চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। 

৪/ চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? 

উত্তর: চাঁদপুর ইলিশ মাছ ও তিন নদীর মোহনার জন্য বিখ্যাত। 

আরও পড়ুন-

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী

রাজবাড়ী জেলার দর্শনীয় স্থান

মন্তব্য করুন