শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলার শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালকসহ অন্যান্য পেশাজীবী শ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। শুধু তাদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হোননি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
বরং হত্যার পাশাপাশি তাদের দেহ বিকৃত করে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। আর এই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান – এক বীর মুক্তিযোদ্ধা
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সঠিক অবস্থান হলো রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর থানা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই স্মৃতিসৌধটি রায়েরবাজারে স্থাপন করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপনের ইতিহাস
শুরুতে অর্থ্যাৎ ১৯৯১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার স্থানে এই স্মৃতিসৌধটি তৈরির অনুমোদন দেয়। অনুমোদনের পর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নকশা কেমন হবে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এই প্রতিযোগিতা গৃহায়ন ও গনপূর্ত বিভাগের মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। সকল নকশা থেকে কতৃপক্ষের চোখে স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি মোঃ জামী আল সাফীর নকশা বেশ ভালো লাগে।
ফলস্বরূপ ৩ বছর সময় নিয়ে এই নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয় আজকের এই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপানার অবকাঠামো
শুরুতে যেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছিলো সেই স্থানটি ছিলো একটি ইটের ভাটা। আয়তনের দিক দিয়ে রায়েরবাজারের এই ইটভাটা ছিলো ১৭.৬৮মি পুরু, ০.৯১মি উচু এবং ১১৫.৮২মি লম্বা। দেয়ালের মাঝে রয়েছে ৬.১০মি বাই ৬.১০মি বর্গাকার জানালা।
ভাটার চারিদিকে বাঁকা যে প্রাচীরটি আছে সেই প্রাচীরের পাশে পানির মাঝখানে একটি কালো গ্রানাইট স্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। এই স্তম্ভটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যা শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ হওয়ার বিষয়টিকে প্রতিনিধিত্ব করে। শোকের বিষাদ তুলে ধরে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে লাল ইটের সাহায্যে। আর এই লাল ইট প্রতিনিধিত্ব করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শরীর থেকে সেদিন বেরোনো তাজা রক্তকে। সর্বোপরি এই স্থাপনাটিকে তৈরি করা হয়েছে মোট ৩.৫১ একর এলাকাটি নিয়ে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্দেশ্য
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ১৪ ডিসেম্বর এই স্থানটিতে বাংলার ২০০ জন বিশেষ ব্যাক্তিকে হত্যা করা হয়। এসব ব্যাক্তিদের মাঝে প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখক।
তাছাড়া ১৪ ই ডিসেম্বরের বহু সময় বা দিন পরে একই স্থানে চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানকেও হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তারিখে তিনি বিহারিদের হাতে গুম-খুন হোন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের সময়
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ কখনোই রাতে পরিদর্শন করা যায় না। তবে আপনি যদি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে ঘুরে আসতে চান সেক্ষেত্রে সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫ টার মধ্যেই যেকোনো একটি সময় বেছে নিতে হবে। তাছাড়া আপনি ফ্রিতেই এই স্মৃতিসৌধ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে এক্সট্রা কোনো টিকিট কাটার প্রয়োজন পড়বে না।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়ার উপায়
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়ার সহজ উপায় হলো মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা নেওয়া। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে আপনাকে যেতে হবে মিরপুর ফার্মগেটে। সেখান থেকে মোহাম্মদপুরে নেমে একটি রিকশা নিতে পারেন। ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুর আসার জন্যে আপনি বেশকিছু বাস কিংবা টেম্পু পাবেন।
ব্যাস! খুব সহজেই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছে যেতে পারবেন। তবে হ্যাঁ! রিকশায় উঠার আগে ভাড়া নিয়ে কথাবার্তা সেরে নিবেন। কারণ অনেক সময় এখানকার রিকশাওয়ালা প্যাসেঞ্জার নামিয়ে দেওয়ার পরে বাড়তি ভাড়া দাবি করে। এছাড়াও যেকোনো চালককে রায়েরবাজার বদ্ধভূমি বললেই তারা আপনাকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
ইতি কথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ কতৃপক্ষ যেহেতু ফ্রি পরিদর্শনের সুযোগ দিচ্ছে সেহেতু প্রত্যেকের উচিত সময় নিয়ে ঐতিহাসিক এই স্মৃতিসৌধ থেকে ঘুরে আসা। আর হ্যাঁ! যারা এই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে ঘুরে আসবেন ভাবছেন তারা এই সৌধের ভেতরকার জানালাটি উপভোগ করতে ভুলবেন না।
এই জানালার সাহায্যে দেখতে পারা পেছনের বড় আকাশের দৃশ্য আপনাকে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এর স্থপতি কে?
উত্তরঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এর স্থপতি হলেন মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি
২. রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় অবস্থিত
৩. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের টিকিট ফি কত?
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভ্রমণে কোনো টিকিট ফি নেই
৪. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের সময় কখন?
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের সময় সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত
৫. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর কবে স্থাপন করা হয়?
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৯১ সালে।
আরও পড়ুন-
কুতুবদিয়া দ্বীপ
বাহাদুর শাহ পার্ক