বায়েজিদ বোস্তামী মাজার
মায়ের প্রতি পরম ভক্তি এবং ভালোবাসার দৃষ্টান্ত যদি বলতে হয় তাহলে প্রথমেই আসবে বায়েজিদ বোস্তামীর কথা। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র:) ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফি সাধক । হযরত সৈয়্যদুনা ইমাম জাফর সাদিক (রা:) এর মুরিদ ছিলেন তিনি।
বায়েজিদ বোস্তামী আরিফ বান্দাগণের সুলতান হিসেবে খ্যাত। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৮০৪ খ্রিস্টাব্দে (১২৮ হিজরী) পারস্যের বোস্তাম শহরে এবং মৃত্যু হয় ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে। তাকে দাফন করা হয় বোস্তাম শহরে অর্থাৎ তার প্রকৃত মাজার শরীফ অবস্থিত ইরানের বোস্তাম শহরে।
কিন্তু বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় তার একটি আস্তানা শরীফ আছে, যা বায়েজিদ বোস্তামী মাজার নামেই প্রসিদ্ধ। বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজারের নাম হলেও তার চট্টগ্রামে আগমন সম্পর্কে ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। মাজারটিতে ধর্মপ্রাণ মানুষসহ দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকার মধ্যে রয়েছে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার।
আরও পড়ুনঃ লালবাগ কেল্লা (পুরান ঢাকার) ভ্রমন
বায়েজিদ বোস্তামীর জীবনী
বিখ্যাত ইরানি সুফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামীর জন্ম হয় ইরানের বোস্তাম শহরে ৮০৪ খ্রিস্টাব্দে। বোস্তামী অর্থ যিনি বোস্তাম শহরের বাসিন্দা। তিনি আবু ইয়াজিদ বিস্তামি, তায়ফুর আবু ইয়াজিদ আল-বোস্তামী এবং সুলতান-উল-আরেফিন নামেও পরিচিত ছিলেন। বায়েজিদের দাদা ছিলেন একজন পার্সী ধর্মাবলম্বী। পরবর্তীতে তার দাদা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
তার দাদার ছিল তিন ছেলে – আদম, তায়ফুর এবং আলী। তিন ছেলের প্রত্যেকেই কঠোর তপস্বী ছিলেন। বায়েজিদ এর বাবা ছিলেন তায়ফুর। বায়েজিদ বোস্তামীর শৈশব সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। তবে শোনা যায় তিনি বেশিরভাগ সময় নিজ গৃহ এবং মসজিদে কাটিয়েছেন।
লোকজনদের তিনি নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ করতেন সুফিবাদের আলোচনা করার জন্য। তিনি ইসলাম ধর্মের কঠোর তপস্যা করতেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার নিজের অনুভূতিগুলো খোলাখুলি প্রকাশ করতেন তিনি। বায়েজিদ বোস্তামী তার সময়ে বেশ বিতর্কিতও হয়েছিলেন। তাকে একজন অন্যতম প্রভাবশালী অলৌকিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বায়েজিদ বোস্তামীর একটি বিখ্যাত উক্তি : “আমি একবার স্বপ্নে দেখলাম, আল্লাহকে আমি জিজ্ঞেস করছি – তাঁকে পাওয়ার পথ কি ? তিনি বললেন – নিজেকে ত্যাগ কর, দেখবে পৌঁছে গিয়েছো। ” প্রখ্যাত এই সুফী সাধক মৃত্যুবরণ করেন ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইরানের বোস্তাম শহরে।
বায়েজিদ বোস্তামীর মায়ের প্রতি ভালোবাসা
সুলতান-উল-আরেফিন নামে খ্যাত বিখ্যাত সুফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামী তার মাকে প্রচণ্ড পরিমাণ ভালোবাসতেন । তার সম্পর্কে প্রচলিত একটি কাহিনী রয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামীর মা একদিন অসুস্থ ছিলেন। এক রাতে তার মা পানি পান করার জন্য তাকে পানি আনতে বলেন। ঘরে পানি না পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামী অন্ধকার রাতে নদী থেকে পানি নিয়ে আসেন।
পানি নিয়ে আসার পর দেখেন তার মা ঘুমিয়ে গেছে। মাকে জাগালে মায়ের ঘুম ভেঙে যাবে এই ভেবে তিনি সারারাত দাঁড়িয়ে থাকলেন পানি হাতে নিয়ে। মা’র যখন সকালে ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখলেন তার ছেলে বায়েজিদ পানি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মা খুব অবাক হয়ে গেলেন এবং ছেলের প্রতি প্রচণ্ড খুশি হলেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মা তখন ছেলের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করেন।
আল্লাহ তায়ালা তার মায়ের দোয়া কবুল করলেন। এরপর তিনি পৃথিবী খ্যাত ওলি বায়েজিদ বোস্তামী নামে পরিচিত হন। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আশায় তিনি দুনিয়ার সকল আনন্দ-ফুর্তি থেকে দূরে রাখতেন নিজেকে।
মাজার – ইতিহাস
চট্টগ্রাম জেলার সেনানিবাস এর কাছে নাসিরাবাদে একটি ছোট পাহাড়ের ওপর অবস্থিত বায়েজিদ বোস্তামী মাজার। ১৮৩১ সালে এই মাজারটি আবিষ্কার করা হয়। বায়েজিদ বোস্তামীর নামানুসারে এই মাজারটির নামকরণ করা হলেও তার এই অঞ্চলে আগমনের কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ধারনা মতে, মুসলমান ফকির এবং আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার সময় আবাস স্থাপন করেছিলেন সচরাচর জঙ্গলবেষ্টিত পাহাড়ের চূড়ায়। তারা মন্দির এবং বিহারের অনুকরণে বায়েজিদ বোস্তামী এবং আব্দুল কাদের জিলানী (র:) এর নামে সমাধিক্ষেত্র, মাজার শরীফ নির্মাণ করতেন। সর্বজন স্বীকৃত তথ্য হচ্ছে বায়েজিদ বোস্তামী চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন নাই। বায়েজিদ বোস্তামী মাজার হচ্ছে একটি ‘জওয়াব’ বা অনুকৃতি।
বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও লোকজনের ভাষ্যমতে, তিনি চট্টগ্রামে এসেছিলেন। সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে আরবরা তাদের বানিজ্য জাহাজ নিয়ে আসতো আট শতকের দিকে। অর্থাৎ এটা অসম্ভব নয় যে, নয় শতকের দিকে সুফি সাধকগণ এ স্থানে এসেছিলেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, চট্টগ্রামে অবস্থানের পর বায়েজিদ বোস্তামীর প্রস্থানকালে তার ভক্তকূল তাকে অনুরোধ করে থেকে যাওয়ার জন্য।
ভক্তকূলের এত ভক্তি এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তার কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন। তিনি রক্ত পড়ার স্থানটিতে তার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান তার ভক্তদের।
উপরে উল্লেখিত জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীতে চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতা উল্লেখ করা হয় । কবিতায় বর্ণিত আছে শাহ সুলতান নামে একজন মনীষির নাম। ইতিহাসের পন্ডিতগণ বিশ্বাস করেন, কবিতায় উল্লেখিত শাহ সুলতান হচ্ছে সুলতান-উল-আরেফিন এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
তারা বিশ্বাস করেন শাহ সুলতান এবং বায়েজিদ বোস্তামী একই মানুষ। এটি শুধুই অনুমান মাত্র তবে, বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে ভ্রমণ সম্পর্কে কোন প্রামাণিক দলিল নেই। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে অবস্থিত বায়েজিদ বোস্তামী মাজার একটি অনুকৃতি মাত্র। কারণ বায়েজিদ বোস্তামী মৃত্যুবরণ করেন ইরানের বোস্তাম শহরে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাভার, ঢাকা
বায়েজিদ বোস্তামী মাজার – বর্ণনা
১৮৩১ সালে সর্বপ্রথম পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার আবিষ্কার করা হয়েছিল। সেই সমাধিটি আঙ্গিনার ঠিক মধ্য বরাবর অবস্থিত। সমাধিস্থলটি পরবর্তীতে আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।মাজারটি যে পাহাড়ে অবস্থিত সেই পাহাড়ের পাদদেশে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মুঘল রীতির আয়তাকার একটি মসজিদ রয়েছে।
মসজিদটির চার কোনায় চারটি সংযুক্ত অষ্টভুজ আকৃতির বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলোর শীর্ষভাগ ছত্রী তারা ঢাকা এবং উত্থিত বন্ধনী নকশা দ্বারা অলংকৃত করা। বুরুজসমূহের ভীত ফুলদানি আকৃতির। এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় এটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মাণ করা হয়।
এই মাজারের সামনে সমতল ভূমিতে একটি বিশাল আকারের দীঘি আছে। দরগাহ কমপ্লেক্সটি গঠিত সমাধিক্ষেত্র, মসজিদ এবং দিঘী নিয়ে। দিঘীটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কালো নরম শেলযুক্ত বোস্তামী কাছিম এবং গজার মাছ। আঞ্চলিকভাবে এদেরকে মাজারি এবং গজারি নামে আখ্যায়িত করা হয়। কথিত আছে, মাজার প্রতিষ্ঠার সময় এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপিষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিল।
এই অঞ্চলে বায়েজিদ বোস্তামী ভ্রমণ কালে এসব দুষ্ট জিন এবং পাপিষ্ঠ আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন। আজীবন পুকুরে কাছিমগুলোকে বসবাসের জন্য দন্ডাদেশ প্রদান করেন। ধারণা করা হয়, বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন সেই দীঘিতে দেড়শ থেকে সাড়ে তিনশ কাছিমের আবাস রয়েছে।
দর্শনার্থীরা সেখানে গিয়ে কচ্ছপকে খাবার খাওয়ায়। অনেকের ধারণা কচ্ছপ তাদের দেওয়া খাবার খেলে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে। অনেকে আবার মনোবাসনা পূরণ করার জন্য সেই দীঘির পানি পান করে থাকেন। যদিও এসব বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
বায়েজিদ বোস্তামী মাজার প্রাঙ্গণের পাশে গাছগুলোতে অনেকে লাল সুতা বাঁধেন মনোবাসনা পূরণ করার জন্য। সেখানে গেলে লক্ষ্য করবেন গাছের ডাল সম্পূর্ণ লাল রঙের হয়ে আছে। অনেকে আবার মোমবাতি জ্বালান। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী এ সকল কাজ শিরক। তাই এ সকল কাছ থেকে বিরত থাকবেন।
বোস্তামী কাছিম
বায়েজিদ বোস্তামী মাজার সুবিশাল পুকুরে আছে প্রায় ১৫০ থেকে ৩৫০ টি কাছিম । জগদ্বিখ্যাত এই কচ্ছপ গুলো জীববৈচিত্রের অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়। সর্বপ্রথম ১৮৭৫ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন ভারতের জাদুঘরে রক্ষিত দুইটি নমুনা থেকে বোস্তামীর কচ্ছপের প্রজাতিটির সন্ধান পেয়েছিলেন। রক্ষিত নমুনা দুইটি ছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার এর পুকুর থেকে সংগৃহীত।
১৯৩১ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী ম্যালকম স্মিথ তার “ফনা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া” গ্রন্থে লেখেন, ভারতবর্ষে “নিলসোনিয়া নিগরিকেন টার্টেল” বা বোস্তামী কাছিম একমাত্র পাওয়া যায় বায়েজিদ বোস্তামির মাজারে। ২০০৭ সালে এই কচ্ছপের ওপর ডকুমেন্টারি তৈরি করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল।
তবে এখন বায়েজিদ বোস্তামীর বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপগুলো বিলুপ্তপ্রায়। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ কর্তৃক বোস্তামীর কচ্ছপকে চরমভাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
প্রাণিবিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল বোস্তামী কাছিম উপমহাদেশ অঞ্চলের প্রাণী নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, বোস্তামী কাছিম বাংলাদেশ অঞ্চলের নিজস্ব প্রাণী। প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের গবেষণা অনুযায়ী, বোস্তামী কাছিম এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে বিচরণ করতো।
প্রজননের সময় বায়েজিদ বোস্তামী মাজার এর মূল পাহাড়ের পিছনে কচ্ছপদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। মার্চ মাসের প্রথম থেকে মে মাস পর্যন্ত এই কচ্ছপগুলোর ডিম পাড়ার মৌসুম। বাচ্চা ফোটে ডিম দেওয়ার ৮০ থেকে ৯০ দিন পরে। বোস্তামী কাছিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের আকার অনেক বড় হয় এবং ওজনও বেশি। শত শত বছর বেঁচে থাকার অপূর্ব ক্ষমতা রয়েছে এদের।
বর্তমানে এই প্রজাতির কচ্ছপ এতটাই দুর্লভ যে শুধু বায়েজিদ বোস্তামী মাজার সংলগ্ন দীঘিতেই টিকে আছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও আর এই কচ্ছপ দেখা যায় না। বৈজ্ঞানিকভাবে এই প্রজাতির কচ্ছপগুলোকে কালো নরম খোলের কচ্ছপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম : Aspideretes nigricans । মাজারের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারা কচ্ছপগুলোর প্রতিপালন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ পালকি চর সমুদ্র সৈকত
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের যে কোন স্থান থেকে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার যেতে পারবেন বাস, ট্যাক্সি বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে চট্টগ্রামে যাওয়া যায়।
বাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম
রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে টি আর ট্রাভেলস, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ, এস আলম, মর্ডান লাইন ইত্যাদি পরিবহন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি এবং নন-এসি উভয়প্রকার বাস পেয়ে যাবেন । বাস ভাড়া শ্রেণীভেদে ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম
ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নীশিথা, মহানগর প্রভাতী / গোধূলি, চট্টগ্রাম মেইলে যেতে পারেন। শ্রেণীভেদে ট্রেন ভাড়া লাগবে ২৬৫ থেকে ৮০০ টাকা।
বিমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম
আকাশ পথে সরাসরি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিমানে যেতে পারবেন আপনি। ঢাকা-চট্টগ্রামগামী বিমান :
- বাংলাদেশ বিমান (০২-৯৫৬০১৫১-১০)
- জিএমজি এয়ারলাইন্স (০২-৮৯২২২৪৮)
- ইউনাইটেড এয়ার (০২-৮৯৫৭৬৪০)
- রিজেন্ট এয়ার (০২-৮৯৫৩০০৩)
কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল। কয়েকটি বাজেট হোটেলের নাম এবং ঠিকানা নিচে দেওয়া হল :
১. হোটেল প্যারামাউন্ট (স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম) : নতুন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত । হোটেলের রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নন-এসি সিঙ্গেল ৮০০ টাকা, নন-এসি ডাবল ১৩০০ টাকা এবং এসি সিঙ্গেল ১৪০০ টাকা ও এসি ডাবল ১৮০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
২. হোটেল এশিয়ান এসআর (স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম) : অনেক সুন্দর ছিমছাম পরিচ্ছন্ন একটি হোটেল। ভাড়া নন-এসি : ১০০০ টাকা এবং এসি ১৭২৫ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
৩. হোটেল সাফিনা (এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম) : পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল এটি । এই হোটেলের ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আপনার একদমই আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে শুরু (এসি ১৩০০ টাকা)। বুকিং এর জন্য : ০৩১-০৬১৪০০৪
৪. হোটেল নাবা ইন (রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম) : যাদের বাজেট বেশি তারা এই হোটেলে থাকতে পারেন । নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় যারা থাকতে চান তাদের জন্য এই হোটেলটি ভালো হবে । ভাড়া : ২৫০০/৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০১৭৫৫-৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক (৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম) : আগ্রাবাদে থাক তে চাইলে এই হোটেলটি ভালো হবে। ভাড়া ২৩০০/৩৪০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭
শেষকথা
সুফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামীকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার। যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর প্রকৃত মাজার অবস্থিত ইরানের বোস্তাম শহরে। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে বায়েজিদ বোস্তামীর আসল কবর চট্টগ্রামেই অবস্থিত। তারা এই বিশ্বাস থেকে তার কবরে জিয়ারত করতে যান। সেখানকার দীঘির কচ্ছপ বা কাছিমগুলোকে নিয়ে রয়েছে অনেক রকম জনশ্রুতি।
রোগ থেকে মুক্তি অথবা ইচ্ছা পূরণ করার জন্য অনেকেই অনেক রকম কাণ্ডকারখানা করে থাকেন সেখানে গিয়ে। যেমন – মোমবাতি জ্বালানো, গাছের গায়ে লাল সুতা বাঁধা, কচ্ছপকে খাওয়ানো, দীঘির পানি পান করা ইত্যাদি। এসবের কোন ভিত্তি নেই। মনে রাখবেন মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য একমাত্র সৃষ্টির কর্তার কাছেই চাইতে হবে। এসব ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন।
বায়েজিদ বোস্তামী মাজার সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s
১. বায়েজিদ বোস্তামী মাজার কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : চট্টগ্রাম সেনানিবাস এর কাছে নাসিরাবাদ নামক জায়গার একটি ছোট পাহাড়ের উপরে বায়েজিদ বোস্তামী মাজার অবস্থিত।
২. বায়েজিদ বোস্তামী কে ছিলেন?
উত্তর : বায়েজিদ বোস্তামী ছিলেন ইরানের একজন বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ইসলাম ধর্মের কঠিন তাপস্যা করতেন।
৩. বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের দীঘিতে কচ্ছপের সংখ্যা কয়টি?
উত্তর : বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের দীঘিতে কচ্ছপের সংখ্যা আনুমানিক দেড়শ থেকে সাড়ে তিনশত হবে।
৪. বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের দীঘির কচ্ছপগুলোর দায়িত্বে কে আছে?
উত্তর : কচ্ছপগুলোর দায়িত্বে আছে মাজারের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকজন।
৫. বোস্তামী কাছিমের বয়স কত?
উত্তর : বোস্তামী কাছিমের গড় বয়স প্রায় ১০০ বছরের চেয়েও বেশি।
আরও পড়ুন-
কুমিরা ঘাট, চট্রগ্রাম
শোলাকিয়া ঈদগাহ কিশোরগঞ্জ