বিমান বাহিনী জাদুঘর

বিমান বাহিনী জাদুঘর

বিমানবাহিনী জাদুঘর আমাদের দেশের একটি গৌরবময় জাদুঘর। এই জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী জাদুঘর (Bangladesh Air Force Museum) এটি।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে এই জাদুঘর ২০১৪ সালে উন্মু্ক্ত করা হয়। আজকে আমরা বিমান বাহিনী জাদুঘর, এর ইতিহাস ও ভ্রমন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

আরও পড়ুনঃ মহেশখালী দ্বীপ, কক্সবাজার

অবস্থান 

এই জাদুঘরের পশ্চিমে রয়েছে রোকেয়া সরণি ও কম্পিউটার সিটি (আইডিবি ভবন) এবং পূর্বে রয়েছে তেঁজগাও বিমান বন্দরের সুবিশাল রানওয়ে ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার। উত্তর দিকে রয়েছে সুদৃশ্য লেক এবং দক্ষিণে সবুজ বৃক্ষসারি ও বনানী। সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে জাদুঘরে যাওয়ার পর।

আগত পর্যটকদের জন্য বিমানবাহিনী জাদুঘরে রয়েছে সুব্যবস্থা। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি, নান্দনিক ফোয়ারা ও থিম পার্ক। তাছাড়াও একটি ফুড কোর্ট, স্যুভেনির শপ নীলাদ্রি সহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন দৃশ্য। কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে মন ভালো করার জন্য বা ভ্রমণের জন্য পারফেক্ট একটি জায়গা বিমানবাহিনী জাদুঘর (Air force Museum)। 

পটভূমি 

১৭ জুন ১৯৮৭ সালে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘরের গোড়া পত্তন হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বেগম রোকেয়া সরণি সংলগ্ন তেঁজগাও বিমান বন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পার্শ্বে মনোরম পরিবেশে আরও সুবিন্যস্ত ও সুগঠিতভাবে পূণর্গঠন করা হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই বিমান জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন এয়ার মার্শাল এনামুল বারী। উদ্বোধন করার পর থেকে এটি জনগণের কাছে উন্মুক্ত।

বিমান বাহিনীর ইতিহাস 

অসংখ্য বিমান এবং হেলিকপ্টার সারি সারি  দাঁড়িয়ে আছে, যেন যাত্রীর অপেক্ষায়। উঠে বসলেই পাখা মেলবে আকাশে, যাবে নিজ গন্তব্যে। বিমানবন্দর বা রানওয়ে ভেবেও ভুল হয়ে যেতে পারে! এটি আসলে একটি জাদুঘর। সারি সারি বিমান সাজিয়েও যে একটি জাদুঘর তৈরি করা যায়, তা স্বচোক্ষে দেখতে হলে চলে যেতে হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। 

জাদুঘরে দর্শনার্থীদের পানাহারের জন্য প্রাঙ্গণের দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ফুড কোর্ট। এখানে আপনি নিজের মন মত প্রায় সকল খাবারই পাবেন। এছাড়া বিমান বাহিনীর বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিয়ে সজ্জিত হয়েছে স্যুভেনির শপ ‘নীলাদ্রি’।

শিশুদের মনোরঞ্জন ও উত্সাহ বৃদ্ধির জন্য শিশু পার্কের পাশাপাশি ফুটপাথের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে জিরাফ, শিম্পাঞ্জি, হরিণ ইত্যাদি নানা রকম পশু-পাখির প্রতিকৃতি। এটার নাম দেয়া হয়েছে ‘চিলড্রেন হেভেন’। 

রয়েছে পানির ফোয়ারাও। জাদুঘরে স্থান পাওয়া বিমানগুলো :হান্টার বিমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় এই বিমানটির অংশগ্রহণ ও অবদানের জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে বিমানটি উপহার হিসাবে দেয়। এন-২৪ বিমান : রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ১৯৭৩ সালে বলাকা নামে সংযোজিত হয়।

বিমানটি সরকারিভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বিমানটি ব্যবহার করে। যুদ্ধে পাকবাহিনী বিমানটিকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। 

বিমান বাহিনী জাদুঘর

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরতে আগারগাঁয়ের আইডিবি ভবনের পূর্ব পাশে তেজগাঁও বিমানবন্দর সংলগ্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর (Biman Bahini Jadughar)। এখানে এসে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক বিমান ও হেলিকপ্টারসহ নানা নিদর্শন কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা।

এবং তারা বিমানবাহিনী সম্পর্কে অনেক ধারণা পান। বিমান বাহিনী সামরিক জাদুঘরটি মূলত বিভিন্ন সময়ের হেলিকপ্টার ও বিমান দিয়েই সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

বলাকা

বলাকা বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান। রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশে আসে ১৯৫৮ সালে।

এয়ার টুওরার

ট্রেইনিংয়ে জন্য এই বিমান ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ডের তৈরি এই বিমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনিতে যোগ হয়। 

পিটি-৬

১৯৮৫ সালে চীনের তৈরি বিমানটি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হয়। 

ফুগাসি এম-১৭০

ফ্রান্সে ১৯৬০ সালে তৈরি করা এই বিমানটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। 

গ্লাইডার

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আকাশ অভিজ্ঞতার জন্য জার্মানির দেওয়া এই বিমানটি বাংলাদেশে আনা হয় ১৯৮২ সালে। 

এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচ ৩/১০০০

কানাডার তৈরি এই বোমারু বিমানটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম সুমদ্র বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে। 

হান্টার বিমান

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে ভূমি শত্রু থেকে রক্ষা করতে এই বিমানটি ব্যবহার করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এই বিমানটি উপহার দেয়। বিমান বাহিনীর সরঞ্জাম প্রদর্শনের পাশাপাশি ফুড কোর্ট ও স্যুভেনির শপ আছে জাদুঘরটিতে।

কোথায় খাবেন

জাদুঘরে দর্শনার্থীদের খাবারের সুবিধা দেয়ার জন্য প্রাঙ্গণের দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ফুড কোর্ট। এছাড়া বিমান বাহিনীর বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিয়ে সজ্জিত হয়েছে স্যুভেনির শপ ‘নীলাদ্রি’।

শিশুদের মনোরঞ্জন ও উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য শিশু পার্কের পাশাপাশি ফুটপাথের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে জিরাফ, শিম্পাঞ্জি, হরিণ ইত্যাদি নানা রকম পশু-পাখির প্রতিকৃতি। এটার নাম দেয়া হয়েছে ‘চিলড্রেন হেভেন’। রয়েছে পানির ফোয়ারাও। এছাড়া পাহাড়ের আদলে তৈরি হচ্ছে ‘থিম পার্ক’।

বিমান বাহিনী জাদুঘরের সময়সূচী 

বিমান বাহিনী জাদুঘর সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। এই নির্দিষ্ট দিনগুলো ছাড়া আপনি অন্য কোন দিন গেলে দর্শন করতে পারবেন না। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। 

বিমান জাদুঘরের টিকেট মূল্য 

এখানে প্রবেশ মূল্য অনেক কম। ৫০ টাকা মূল্যের টিকেট সংগ্রহ করে জাদুঘরে প্রবেশ করা যায়। এছারাও ৩০-১০০ টাকার টিকেটের বিনিময়ে ভেতরের হেলিকাপ্টার বা বিমানে উঠা যায়।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর। জাদুঘরটিতে রয়েছে জাতীয় অহংকার ও স্মৃতি বিজড়িত বিমানসমূহ। ১৯৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে স্বল্প সম্পদ আর জনবল নিয়ে ডিমাপুরে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।

অকুতোভয় কয়েকজন বৈমানিক আর নির্ভীক কিছু বিমান সেনার অদম্য সাহস মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে করেছিল প্রকম্পিত ও বিজয়কে করেছিল ত্বরান্বিত। বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেগম রোকেয়া সরণী সংলগ্ন তেজগাঁও বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিম পাশে মনোরম পরিবেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর।

কিভাবে যাবেন 

আপনি যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই চলে আসতে পারবেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘরে। মতিঝিল কিংবা গুলিস্থান থেকে আসতে চাইলে মিরপুর ১০, মিরপুর ১১ অথবা মিরপুর ১২ গামী যে কোন বাসে আগারগাও বললেই নিয়ে আসবে। আবদুল্লাপুর, ইয়ারপোর্ট  অথবা মহাখালি দিয়ে আসতে চাইলে মিরপুর, শ্যমলী গামী যে কোন বাসে আগারগাও। আর আগারগাও সিগনাল ও আইডিবি ভবনের পূর্বে এ বিমান বাহিনী জাদুঘর।

শেষ কথা 

আমাদের আজকের আর্টিকেল ছিল বিমানবাহিনী জাদুঘর নিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠন এবং তাদের আক্রমণ ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ত্বরান্বিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিমান বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করছে বিমান বাহিনী জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

এতক্ষণ আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর  নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। সম্পুর্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিমান বাহিনী জাদুঘর সম্পর্কিত প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ’s

প্রশ্ন ১: বিমান বাহিনী জাদুঘর কবে বন্ধ থাকে? 

উত্তর :- বিমানবাহিনী জাদুঘরে সোমবার থেকে শনিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং বিশেষ দিন ব্যতীত প্রতি রবিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। বিমান বাহিনী জাদুঘরে প্রবেশ করতে ৫০ টাকা মূল্যের টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

প্রশ্ন ২: জাতীয় বিমান বাহিনী জাদুঘর যেতে কত সময় লাগে? 

উত্তর :- সমস্ত জাদুঘরে দর্শকদের জন্য প্রতিদিন বিনামূল্যে গ্যালারি ট্যুর দেওয়া হয়। ট্যুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট। 

প্রশ্ন ৩: বিমান বাহিনীর কি জাদুঘর আছে? 

উত্তর :- বিমানের প্রদর্শনী হলো ইউএস এয়ার ফোর্সের ন্যাশনাল মিউজিয়ামের হৃদয়ে এবং আত্মা। তবে জাদুঘরটি আরো অনেক আকর্ষণীয় আকর্ষণ সরবরাহ করে। 

প্রশ্ন ৪: বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বিমান বাহিনীর জাদুঘর কোনটি? 

উত্তর :- ইউএস এয়ার ফোর্স এর জাতীয় জাদুঘর টিএম, ডেটন, ওহিওর কাছে অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বিমান চলাচল জাদুঘর যেখানে ১৯ একরেরও বেশি অন্দর প্রদর্শনী স্থানের মধ্যে ৩৬০ টির বেশি মহাকাশযান ও ক্ষেপনাস্ত প্রদর্শন করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন-

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

মহামায়া লেক, চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন