বাইক্কা বিল ভ্রমণ গাইড, খরচ ও তথ্যসমূহ

বাইক্কা বিল

বাইক্কা বিল শ্রীমঙ্গলের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রতিষ্ঠিত। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছের বৈচিত্র্যিক বিশ্বাস জড়িত রয়েছে, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও সমৃদ্ধ করে। অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলের রক্ষা ও বাণিজ্যিক বিকাশের জন্য গৃহীত উদ্যোগগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াচ টাওয়ার বিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ সরবরাহ করে, এবং প্রতি বছর পাখিশুমারির আয়োজন প্রাকৃতিক জীবনের সংরক্ষণে অগ্রগতির অন্যতম উপায়। এই উপযুক্ত প্রয়াসের ফলে বাইক্কা বিল প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে একটি প্রশস্ত প্রাকৃতিক অবলম্বন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে একটি উদাহরণ স্থাপন করে।

আরও পড়ুনঃ- লেমন গার্ডেন রিসোর্ট ভ্রমণ তথ্য ও বিভিন্ন খরচ

বাইক্কা বিলের আকর্ষণ

বাইক্কা বিল baikka beel
বাইক্কা বিল
  • বিশাল জলরাশি: বর্ষাকালে পানিতে ভরে ওঠে বিলের বিশাল জলরাশি।
  • জলজ উদ্ভিদ: হিজল, কলমি, নয়নকারা, পানা, শাপলা, নীল পদ্ম, সিংড়া ও মাখনার মতো নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদে ভরে ওঠে বিল।
  • বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগৎ: ৮০ প্রজাতির মাছ, ১৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ এবং প্রায় ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল।
  • পাখির অভয়ারণ্য: শীতকালে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় জমায়।
  • দ্বিতল অবজারভেশন টাওয়ার: দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নির্মিত এই টাওয়ার থেকে ঘন সবুজ বন ও পুরো বিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
  • বনভোজন ও নৌকা ভ্রমণ: বাইক্কা বিলে বনভোজন ও নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে আপনার কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে: ট্রেন এবং বাস।

ট্রেন

  • ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন।
  • ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা।
  • শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২৪০ থেকে ৮২৮ টাকা।
  • ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেন

বাস

  • হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন।
  • বাসে যেতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
  • এসি/নন-এসি এসব বাসে যেতে ভাড়া লাগবে ৫৭০ থেকে ৭০০ টাকা।
  • ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল বাস

শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে

শ্রীমঙ্গল পৌঁছে ইজিবাইক, অটো রিকশা কিংবা মাইক্রো ভাড়া করে সহজে বাইক্কা বিল ঘুরে আসতে পারবেন।

যেখানে থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনি বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে সাশ্রয়ী মূল্যের গেস্ট হাউস পর্যন্ত যেকোনো কিছু খুঁজে পেতে পারেন।

কয়েকটি জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্ট

  • গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গল্ফ: এটি একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট যেখানে একটি গল্ফ কোর্স, স্পা, বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ এবং একটি সুইমিং পুল রয়েছে।
  • হাবিব বনানী রিসোর্ট: এটি একটি মধ্য-শ্রেণীর রিসোর্ট যেখানে একটি রেস্তোরাঁ, একটি সুইমিং পুল এবং একটি শিশুদের খেলার মাঠ রয়েছে।
  • শ্রীমঙ্গল ইন: এটি একটি সাশ্রয়ী মূল্যের হোটেল যেখানে একটি রেস্তোরাঁ এবং ওয়াইফাই রয়েছে।
  • কুটুম বাড়ী: এটি একটি পারিবারিক রিসোর্ট যেখানে একটি বাগান, বারবিকিউ সুবিধা এবং একটি শিশুদের খেলার মাঠ রয়েছে।
  • বাইক্কা বিল ইকো রিসোর্ট: এটি একটি পরিবেশবান্ধব রিসোর্ট যেখানে বাইক্কা বিলের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।

আপনার হোটেল বা রিসোর্ট বুক করার সময়, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করুন

  • আপনার বাজেট: হোটেলের দামগুলি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই আপনার বাজেট নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার অবস্থান: আপনি কি শহরের কেন্দ্রস্থলে থাকতে চান নাকি আরও শান্ত এলাকায়?
  • সুযোগ-সুবিধা: আপনি কি একটি সুইমিং পুল, স্পা বা রেস্তোরাঁ সহ একটি হোটেল চান?
  • পর্যালোচনা: অন্যান্য অতিথিরা কী বলেছে তা দেখতে হোটেলের পর্যালোচনা পড়ুন।

কোথায় খাবেন

শ্রীমঙ্গল শহরে বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ আছে যেখানে আপনি সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারেন।

  • গ্র্যান্ড তাজ: এটি একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ যেখানে বাংলাদেশী ও আন্তর্জাতিক খাবার পরিবেশন করা হয়।
  • হাবিব হোটেল: এটি একটি ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ যেখানে স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
  • কুটুম বাড়ী: এটি একটি পারিবারিক রেস্তোরাঁ যেখানে বাড়ির মতো রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়।
  • শ্রীমঙ্গল ইন: এটি একটি হোটেল রেস্তোরাঁ যেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবার পরিবেশন করা হয়।

বাইক্কা বিলে

  • বাইক্কা বিলের ভেতরে খাবারের ব্যবস্থা তেমন নেই।
  • তাই আপনার সাথে শুকনো খাবার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত খাবার

  • সাত রঙের চা: শ্রীমঙ্গলের সাত রঙের চা বিখ্যাত।
  • রেড স্পেশাল চা, গ্রিন টি, লেবু চা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের চা এখানে পাওয়া যায়।

দর্শনীয় স্থান

মৌলভীবাজার জেলা তার সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থানের জন্য বিখ্যাত।

  • চা-বাগান: মৌলভীবাজার জেলা চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। শ্রীমঙ্গল, জুড়ী, কমলগঞ্জ এবং বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত 92 টি চা-বাগান রয়েছে।
  • মাধবকুন্ড জলপ্রপাত: এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত।
  • হামহাম জলপ্রপাত: এটি একটি সুন্দর জলপ্রপাত যা ঘন সবুজ বনের মধ্যে অবস্থিত।
  • পরিকুন্ড জলপ্রপাত: এটি একটি ছোট কিন্তু মনোরম জলপ্রপাত যা একটি পাথুরে পাহাড়ের নিচে অবস্থিত।
  • হাইল হাওর: এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি পাখি দেখার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
  • বাইক্কা বিল: এটি একটি মনোরম বিল যা বিভিন্ন ধরণের জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল।
  • মাধবপুর লেক: এটি একটি কৃত্রিম লেক যা নৌকা ভ্রমণ এবং পিকনিকের জন্য জনপ্রিয়।

ঐতিহাসিক স্থান

  • পৃথিমপাশা রাজবাড়ি: এটি একটি প্রাচীন রাজবাড়ি যা একসময় মৌলভীবাজার জেলার শাসকদের বাসস্থান ছিল।
  • জাফলং বাজার: এটি একটি ঐতিহাসিক বাজার যা মসলা ও অন্যান্য পণ্যের জন্য বিখ্যাত।

অন্যান্য আকর্ষণ

  • লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: এটি একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যেখানে বিভিন্ন ধরণের প্রাণী বাস করে।
  • শ্রীমঙ্গল শহর: এটি একটি মনোরম শহর যেখানে অনেকগুলি দোকান, রেস্তোরাঁ এবং হোটেল রয়েছে।
  • হাজারছড়ি জেলা: এটি একটি পার্বত্য জেলা যা তার মনোরম দৃশ্য এবং উপজাতি সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।

এই তালিকা মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানগুলির একটি সংক্ষিপ্তসার। আপনার আগ্রহের উপর নির্ভর করে, আপনি আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থান আবিষ্কার করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ-

মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণ গাইড, খরচ ও সকল তথ্য

মন্তব্য করুন