তিনবিঘা করিডোর ভ্রমণ গাইড ও বিভিন্ন তথ্যসমূহ

তিনবিঘা করিডোর

তিন বিঘা করিডোর ভারতের মালিকানাধীন একটি জায়গা, যা তিন বিঘা জমির উপর অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেঘালয় জেলার সীমান্তে অবস্থিত। 

বাংলাদেশের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১১ সালে ইজারার মাধ্যমে এই জমি বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। দহগ্রাম এবং আংগরপোতা হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল বা এনক্লেভ। 

এই করিডোরটি প্রায় ১৮.৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবং প্রায় ১৭ হাজার মানুষের বাস করে। এর চারপাশে ভারতীয় জমি রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত। 

১৭৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮৫ মিটার প্রস্থের এই করিডোরটি বাংলাদেশকে দহগ্রামের সাথে যুক্ত রেখেছে। বর্তমানে এই করিডোরটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। দহগ্রামে যাওয়ার সময় এই করিডোর ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে রাস্তা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

তিন বিঘা করিডোরের দর্শনীয় স্থান

তিনবিঘা করিডোর tin bigha corridor
তিনবিঘা করিডোর

১) তিন বিঘা করিডোর স্মৃতিসৌধ

  • তিন বিঘা করিডোরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব স্মরণে রেখে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ।
  • স্মৃতিসৌধটিতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
  • এখানে করিডোরের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে একটি জাদুঘরও রয়েছে।

২) দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ

  • দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার স্থানীয় সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
  • ভবনটি ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন।
  • এখানে করিডোরের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি অফিস রয়েছে।

৩) কামতেশ্বরী মন্দির

  • দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির।
  • দেবী কামতেশ্বরীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
  • মন্দিরটি তার স্থাপত্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।

৪) মধুপুর সত্র

  • দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার একটি ঐতিহ্যবাহী বৈষ্ণব আশ্রম।
  • শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
  • আশ্রমটি তার ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিখ্যাত।

৫) মাধবমোহন মন্দির

  • দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দির।
  • ভগবান বিষ্ণু কে উৎসর্গ করা হয়েছে।
  • মন্দিরটি তার স্থাপত্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।

এছাড়াও

  • দর্শনার্থীরা তিনবিঘা করিডোর এর পাশে বাজারে স্থানীয় হস্তশিল্প ও পণ্য কিনতে পারেন।
  • করিডোরের আশেপাশের এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাঁটাচলা বা সাইকেল চালানোর সুযোগ রয়েছে।
  • দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার স্থানীয় খাবার খেতে ভুলবেন না।

তিনবিঘা করিডোর যেভাবে যাবেন 

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে পাটগ্রাম যেতে পারবেন। বাসগুলো সাধারণত কমলাপুর বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় এবং যাত্রা সময় প্রায় ৮ ঘন্টা। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে পাটগ্রাম যাওয়া সম্ভব নয়। 

তবে, আপনি ট্রেনে করে লালমনিরহাট যেতে পারেন এবং সেখান থেকে বাস বা রিকশায় করে পাটগ্রাম যেতে পারেন। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায়। রংপুর থেকে সরাসরি বাসে করে পাটগ্রাম যেতে পারবেন। বাসগুলো সাধারণত রংপুর বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় এবং যাত্রা সময় প্রায় ৪ ঘন্টা। 

রংপুর থেকে সরাসরি ট্রেনে করে পাটগ্রাম যাওয়া সম্ভব নয়। তবে, আপনি ট্রেনে করে লালমনিরহাট যেতে পারেন এবং সেখান থেকে বাস বা রিকশায় করে পাটগ্রাম যেতে পারেন। 

রংপুর থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায়। লালমনিরহাট থেকে সহজেই বাসে করে পাটগ্রাম যেতে পারবেন। বাসগুলো ঘন ঘন ছেড়ে যায় এবং যাত্রা সময় প্রায় ৩০ মিনিট। লালমনিরহাট থেকে সরাসরি ট্রেনে করে পাটগ্রাম যাওয়া সম্ভব নয়। 

তবে, আপনি ট্রেনে করে দহগ্রাম যেতে পারেন এবং সেখান থেকে রিকশায় করে পাটগ্রাম যেতে পারেন। লালমনিরহাট থেকে দহগ্রামের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায়। পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে তিনবিঘা করিডোর ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি রিকশা, অটোরিক্সা বা মোটরসাইকেলে করে সেখানে যেতে পারবেন। যাত্রা সময় প্রায় ৩০ মিনিট।

যেখানে থাকবেন

তিনবিঘা করিডোর এ থাকার জন্য বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে, আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে।

  • হোটেল তিনবিঘা:এটি তিন বিঘা করিডোরের কাছেই অবস্থিত একটি জনপ্রিয় হোটেল। এটিতে Wi-Fi, এয়ার কন্ডিশনিং এবং একটি রেস্তোরাঁ সহ সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
  • হোটেল পদ্মা: এটি পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত আরেকটি জনপ্রিয় হোটেল।
  • ইকো রিসোর্ট তিনবিঘা: এটি একটি পরিবেশবান্ধব রিসোর্ট যা তিনবিঘা করিডোর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। এটিতে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মনোরম দৃশ্য সহ বারান্দাযুক্ত কুটির রয়েছে।
  • রহিম গেস্ট হাউস: এটি পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি সাশ্রয়ী মূল্যের গেস্ট হাউস। এটিতে বেসিক রুম রয়েছে যাতে শেয়ার করা বাথরুম রয়েছে।
  • করিডোর গেস্ট হাউস: এটি তিনবিঘা করিডোর এর কাছে অবস্থিত আরেকটি সাশ্রয়ী মূল্যের গেস্ট হাউস। এটিতে বেসিক রুম রয়েছে যাতে সংযুক্ত বাথরুম রয়েছে।
  • তিনবিঘা হোমস্টে: এটি তিন বিঘা করিডোরের কাছেই অবস্থিত একটি হোমস্টে। এটি আপনাকে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে জানার একটি দুর্দান্ত সুযোগ দেয়।

আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে কোথায় থাকবেন, তাহলে আপনি সর্বদা পরামর্শের জন্য একজন স্থানীয় ভ্রমণ এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেখানে খাবেন

তিনবিঘা করিডোর এ খাবারের জন্য তেমন কোন হোটেল নেই, কারণ এটি একটি ছোট এলাকা। তবে, আপনি পাটগ্রাম উপজেলা সদরে কিছু ভালো রেস্তোরাঁ পেতে পারেন।

  • আনন্দ রেস্তোরাঁ: পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ। এখানে আপনি বাংলাদেশী খাবারের বিভিন্ন ধরণের খাবার পাবেন।
  • হোটেল ও রেস্তোরাঁ পদ্মা: পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত আরেকটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ। এখানে আপনি বাংলাদেশী এবং ভারতীয় খাবারের বিভিন্ন ধরণের খাবার পাবেন।
  • চাচা’র খাবার: পাটগ্রাম উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি ছোট দোকান যেখানে আপনি সুস্বাদু স্থানীয় খাবার পাবেন।

এছাড়াও আপনি তিনবিঘা করিডোর এর কাছেই কিছু ছোট দোকান পাবেন যেখানে আপনি চা, স্ন্যাকস এবং অন্যান্য হালকা খাবার কিনতে পারবেন। আপনি যদি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেষ্টা করতে চান তবে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না। তারা আপনাকে নিশ্চিতভাবেই সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনঃ-

শিমুল বাগান ভ্রমণ গাইড ও বিভিন্ন খরচ সমূহ

মন্তব্য করুন