হাকালুকি হাওর ভ্রমণ গাইড, খরচ ও সকল তথ্য সমূহ

হাকালুকি হাওর

হাকালুকি হাওরের দৃশ্যটি অত্যন্ত মজার ও আকর্ষণীয়! এটি মুলত একটি জলাভূমি, যা মাছের উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এটির পার্শ্বগত নদী এবং বিলগুলি একটি অপূর্ণিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তৈরি করে, যা অনেকেই অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে করেন।

হাকালুকি হাওর কেবল একটি মাঝারি আকারের জলাভূমি নয়, বরং বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওর প্রায় ৮০ টিরও বেশি প্রজাতির মাছ, ৫০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি, এবং বিভিন্ন স্তন্যপায়ী, উভয়চর এবং প্রাণীর আবাসস্থল।

এটি একটি রামসার স্থান এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। হাওরের আশেপাশে বসবাসরত মানুষের একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে যা হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলের সাথে জড়িত। স্থানীয়রা নৌকা বাইচ, মাছ ধরা এবং কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছ ধরা এখানে একটি প্রধান শিল্প এবং হাওর পর্যটনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ- মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণ গাইড, খরচ ও সকল তথ্য

হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময়

হাকালুকি হাওর hakaluki haor
হাকালুকি হাওর

হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময় সেরা সময়। শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী):এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং পাখি দেখার জন্য এটি একটি চমৎকার সময়।

হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এই সময় হাওরে আসে, যার মধ্যে রয়েছে রাজহাঁস, বক, শালিক, চিল, এবং আরও অনেক কিছু। বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর):এই সময় হাওর পানিতে ভরে থাকে এবং প্রকৃতি তার সবচেয়ে সবুজ রূপে দেখা যায়। তবে, বর্ষাকালে যাতায়াত কিছুটা কঠিন হতে পারে।

যেভাবে যাবেন

রুট প্ল্যান-১

ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওর এ যেতে হলে, আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া যেতে হবে। ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী যেকোনো বাসে চলে আসতে পারেন কুলাউড়াতে।

জনপ্রিয় পরিবহন সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী ও এনা পরিবহন। এসি বাসের ভাড়া সাধারণত ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। কুলাউড়া থেকে অটোরিক্সা বা রিক্সা ভাড়া করে সরাসরি হাওরে যেতে পারেন।

অটোরিক্সার ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং রিকশার ভাড়া ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওর ভ্রমণের মোট খরচ নির্ভর করে আপনি কোন যাতায়াত মাধ্যম ব্যবহার করছেন তার উপর। বাসে করে গেলে খরচ হবে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা, ট্রেনে করে গেলে খরচ হবে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা।

রুট প্ল্যান-২

আপনি কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেল স্টেশান হতে উপবন এক্সপ্রেসে চড়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মাইজগাঁও ষ্টেশনে নামবেন, যা সিলেটের আগের স্টেশন। সেখান থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পথ হেঁটে বা অটোরিকশা দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আসতে পারেন।

ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আল মুমিন রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নৌকাঘাটে যেতে পারবেন। সেখান থেকে দরদাম করে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে হাকালুকি হাওড়ে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।

দিনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে এই আনন্দময় ভ্রমণ করতে পারবেন। এটি একটি সুন্দর পরিকল্পনা এবং আপনার ভ্রমণটি উপভোগ্য হবে বলে আশা করছি!

যেখানে থাকবেন 

হাকালুকি হাওর এ বিল ইজারাদারদের কুটিরগুলোতে বিল মালিকের অনুমতি নিয়ে ২ – ৪ জনের একটি দল সহজেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন। এই অভিজ্ঞতা হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে রাত কাটানোর একটি বিশেষ সুযোগ দেবে।

আপনার উল্লিখিত মত জোছনা রাতে তাঁবু ফেলে ক্যাম্পিং করার মুহুর্তগুলো অসাধারণ হতে পারে। এটি একটি বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে এবং আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে।

পাশাপাশি, পার্শবর্তী উপজেলা শহর বড়লেখায়ও রাত্রিযাপন করার সুযোগ আছে। তবে নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক থাকার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও, হাওরে ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং সরঞ্জাম সঙ্গে রাখা উচিত যাতে আপনার ভ্রমণ নিরাপদ এবং সুখকর হয়।

যেখানে খাবেন

হাকালুকি হাওরে খাবার স্থানীয় স্বাদের অভিজ্ঞতা। হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময় খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয় খাবারের স্বাদ গ্রহণ ছাড়া ভ্রমণ অসম্পূর্ণ।

নৌকার মাঝির সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় বাজার করে দিতে পারেন। মাঝিরা তাজা মাছ, সবজি ও অন্যান্য খাবার সংগ্রহ করে আপনাদের জন্য রান্না করে খাওয়াবেন। এতে করে স্থানীয় খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন ও ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

নৌকায় উঠার সময় বিস্কুট, চা, পাউরুটি, খাবার পানি ইত্যাদি হালকা খাবার সাথে রাখুন। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এসব খাবার আপনাকে শক্তি দেবে। যদি সুযোগ হয়, হাওরের কর্মজীবী মানুষদের সাথে ভাত আর মাছের ঝোল ভাগ করে খেতে পারেন।

এতে করে স্থানীয় সংস্কৃতি ও খাবার সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। হাওরে বেশ অল্পমূল্যে গরুর দুধ ও মহিষের দুধ পাওয়া যায়। তাজা দুধ দিয়ে তৈরি চা ও দই স্থানীয়দের কাছ থেকে কিনতে পারেন। মৌসুমী ফল যেমন জাম্বুরা, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি হাওরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

সাথে যা নিবেন

হাকালুকি হাওরে ক্যাম্পিং করার জন্য উপযুক্ত সরঞ্জামের একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলো:

  • তাবু: ভাল মানের তাবু যা বৃষ্টিতে এবং শীতকালে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
  • রেইন কোট: বৃষ্টির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য রেইন কোট অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
  • বড় ব্যাকপ্যাক: সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং খাবার বহন করার জন্য একটি বড় ব্যাকপ্যাক।
  • জ্যাকেট: শীতের সময়ে গরম রাখার জন্য ভাল মানের জ্যাকেট।
  • কাদা-পানিতে চলন উপযোগী জুতা: হাওরের কাদা-পানিতে চলাচলের জন্য টেকসই এবং জলরোধী জুতা।
  • গামছা: নৌকায় ও ক্যাম্পিংয়ের জন্য ব্যবহারের জন্য গামছা।
  • বাইনোকুলার: হাওরের প্রকৃতি এবং পাখি দেখার জন্য বাইনোকুলার।
  • ক্যামেরা: ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা।
  • প্রয়োজনীয় ব্যাটারি এবং পাওয়ার ব্যাংক: ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি এবং পাওয়ার ব্যাংক।
  • শুকনো খাবার: হালকা খাবার এবং শুকনো খাবার যেমন: বিস্কুট, নুডলস, ফল, ইত্যাদি।
  • টর্চ: অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য টর্চ।
  • প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম: বেঁচে থাকার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার কিট এবং ওষুধ।

উল্লিখিত সরঞ্জামগুলো আপনার ভ্রমণকে আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তুলবে। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে আপনার ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতা উপভোগ্য হবে।

আরও পড়ুনঃ-

মিঠামইন অষ্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড ও যাতায়াত খরচসমূহ

মন্তব্য করুন