মহেশখালী দ্বীপ
মহেশখালী দ্বীপ একটি অদ্ভুত দ্বীপ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমৃদ্ধি ও ঐতিহাসিক অবস্থানের মিলন পাওয়া যায়। এই দ্বীপে যাওয়া যেতে হলে মনে রাখতে হবে কক্সবাজার থেকে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা সময় প্রয়োজন।
এখানে আপনি বিভিন্ন প্রকারের সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে মহান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। বিভিন্ন সাধারণ উৎসব, অথবা বিশেষ অনুষ্ঠানে এই দ্বীপে যাওয়া সাধ্য।
আপনি এখানে বিশেষভাবে দীর্ঘ সময় ব্যাপী ভ্রমণ করতে পারেন এবং এক ধরনের প্রাকৃতিক শান্তি অনুভব করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ রামু রাবার বাগান ভ্রমণ গাইড ও যাবতীয় খরচ
যা কিছু দেখবেন
মহেশখালী দ্বীপ ঐতিহ্য, সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ, তার ঐতিহাসিক নিদর্শন, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
দর্শনীয় স্থান
- আদিনাথ মন্দির: মৈনাক পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরটি মহেশখালীর অন্যতম আকর্ষণ।
- রাখাইন পাড়া: রাখাইন বৌদ্ধদের বসবাস এই পাড়া মহেশখালীর সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের প্রতীক।
- স্বর্ণ মন্দির: মহেশখালীর আরেকটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির হল স্বর্ণ মন্দির।
- ঝাউবাগান: ঝাউ গাছের ঘন বনানীতে ঢাকা এই সুন্দর বাগানটি পিকনিকের জন্য আদর্শ।
- চরপাড়া সমুদ্র সৈকত: মহেশখালীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, চরপাড়া তার সাদা বালি এবং নীল জলের জন্য বিখ্যাত।
- পান গাছের বাগান: মহেশখালীর পানের সুনাম দেশব্যাপী। এখানে আপনি পান গাছের বাগান ঘুরে দেখতে পারেন এবং তাজা পানের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।
- লবণের মাঠ: মহেশখালী লবণ উৎপাদনের জন্যও বিখ্যাত। এখানে আপনি লবণের মাঠ ঘুরে দেখতে পারেন এবং লবণ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।
অন্যান্য আকর্ষণ
- আদিনাথ মেলা: প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে মহেশখালীতে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এবং পর্যটক সমাগম হয়।
- বৌদ্ধ বিহার: মহেশখালীতে বেশ কিছু বৌদ্ধ বিহার রয়েছে যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
- জলাবন: মহেশখালীতে বেশ কিছু জলাবন রয়েছে যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বাস করে।
- পশুপাখি: মহেশখালীতে বিভিন্ন প্রজাতির স্থানীয় ও বিদেশী পাখি দেখা যায়।
মহেশখালী দ্বীপ – যেভাবে যাবেন
মহেশখালি যাবার জন্য দুটি পথ রয়েছে। একটি হলো ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়া এবং অপরটি হলো চট্টগ্রাম থেকে রাস্তা পাশে চকরিয়া হতে বদরখালি এবং পরে মহেশখালি।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বাস, ট্রেন, ও বিমান উভয়ই সুবিধাজনক। যেখান থেকে আপনি পছন্দ করেন তা নির্ধারণ করতে পারেন।
সবার মধ্যে এই মাধ্যমগুলোর সমুদ্রপথে ভাড়া আছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। বাসে গামী অনেক কোম্পানির অপশন রয়েছে, যেমন: সৗদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ, গ্রিন লাইন, হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ, এস.আলম, সেন্টমার্টিন হুন্দাই ইত্যাদি।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনে ভাড়া ৪,৫৯৯ থেকে ১২,০০০ টাকা। কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশান থেকে ট্রেন নেওয়া যায়।
বাসে চলে এসে কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালি যেতে হলে স্থানীয় জেটি বা ট্রলার বা স্পীড বোট ভাড়া করতে হবে। চকরিয়া থেকে বদরখালি হওয়ার পর আপনি “মহেশখালি জেটি” বা ট্রলারে চলে যেতে পারেন।
যেখানে থাকবেন
মহেশখালি থেকে ফিরে আসা খুবই সহজ এবং দূরত্বও অল্প। মহেশখালিতে কোন বিশেষ বাস্তুসহজোগ নেই, তাই যদি রাত্রি কক্সবাজারে বাসাতে না থাকতে চান, তবে ফিরে আসুন কক্সবাজারে।
অফসিজনে বুকিং না করেও হোটেলে রুম পাওয়া সম্ভব, কিন্তু ডিসেম্বর ১৫ থেকে জানুয়ারি ১৫ তারিখ পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং করা উত্তম। এই সময়ে অগ্রিম বুকিং ছাড়া কক্সবাজার যেতে অপ্রয়োজনীয়।
সাধারণত হোটেল/রিসোর্টের দাম তিন রকমে বিভক্ত হয়ে থাকে: ৬০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা, ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা, এবং ৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। বিভিন্ন হোটেলে/রিসোর্টে বিভিন্ন দাম প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের অধিকাংশ হোটেল/রিসোর্টের বিবরণ এবং দাম জানতে আমাদের কক্সবাজার হোটেল/রিসোর্ট গাইডলাইন দেখুন। এছাড়া, সাধারণত অফসিজনে হোটেলের ভাড়া অনেক কম হয়।
যদি সময় থাকে, কক্সবাজারে একটু খোঁজ খবরে হোটেল খুঁজে নিতে পারেন। হোটেল খুঁজার সময়ে রিক্সা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ নেওয়া ভালো হতে পারে, এবং হোটেলের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। যদি আপনি পরিবার সহ
স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে চান, তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। ফ্ল্যাটের প্রতিদিনের ভাড়া ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটা ঠিকানা খুঁজে নেওয়া যায়, তবে তা জানতে আগে খোঁজাখুঁজি করতে হবে।
যেখানে খাবেন
মহেশখালী থেকে সহজেই ফিরে আসা যায় এবং তাই সাময়িক ক্ষুদা নিবারণের জন্য দ্বীপেই হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। আপনি ফিরে আসার সময় কক্সবাজারেও খাওয়া পারেন।
কক্সবাজারে সব ধরণের ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সিজন অনুযায়ী খাবারের দাম বদলে যেতে পারে।
ভাতের দাম প্রায় ২০-৪০ টাকা, মিক্সড ভর্তার দাম ৭৫/১৫০/৩০০ টাকা (৮-১০ আইটেম), লইট্যা ফ্রাই প্রতি প্লেটে ১০০-১২০ টাকা (৬-১০ টুকরা), কোরাল/ভেটকি প্রতি পিচে ১৫০ টাকা, গরু ২ জনের শেয়ারে ১৫০-২০০ টাকা,
রপচাঁদা ফ্রাই/রান্না ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২ জনের মত), ডালের দাম প্রায় ৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও, লাবনী পয়েন্টের সংলগ্ন হান্ডি রেস্তোরাঁ থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী চেখে দেখতে পারেন। আর কেওএফসি ও রয়েছে।
আরও পড়ুন-
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ভ্রমণ গাইড ও তথ্য সমুহ
কক্সবাজার হোটেল ভাড়া ও হোটেলের তালিকা সমুহ