মহেশখালী আদিনাথ মন্দির
মহেশখালী আদিনাথ মন্দির এর ইতিহাস, তাৎপর্য এবং আকর্ষণ।
অবস্থান: কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায়।
ধর্মীয় গুরুত্ব: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান।
নামকরণ: হিন্দু দেবতা মহাদেবের অন্য নাম আদিনাথ ও মহেশ। মহেশ নাম থেকেই মহেশখালি নামের উৎপত্তি।
উচ্চতা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।
আরও পড়ুনঃ- কক্সবাজার হোটেল ভাড়া ও হোটেলের তালিকা সমুহ
মহেশখালী আদিনাথ মন্দির এর বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ও মসজিদ রয়েছে।
অনেকে এটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১০/১৫ দিন ব্যাপী মেলা বসে।
হাজার হাজার দর্শনার্থী এই মেলায় সমাগম হয়।
আকর্ষণ
- মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য।
- মৈনাক পাহাড়ের চূড়া থেকে সমুদ্রের অপূর্ব সৌন্দর্য।
- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপত্য।
- অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক।
যাতায়াত
কক্সবাজার থেকে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির যেতে দুটি প্রধান উপায় রয়েছে:
১. স্পিডবোট
কাস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি: কক্সবাজারের যেকোনো জায়গা থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে কাস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি যেতে পারবেন।
ভাড়া: জনপ্রতি ৮০ টাকা
সময়: ২০-২৫ মিনিট
সুবিধা: দ্রুত, রোমাঞ্চকর
অসুবিধা: তুলনামূলকভাবে বেশি ভাড়া, ঝাঁকুনি
২. ইঞ্জিন নৌকা
কাস্তুরী ঘাট: কাস্তুরী ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা করেও মহেশখালী যেতে পারবেন।
ভাড়া:
ছোট নৌকা (৪-৫ জন): ৮০০-১০০০ টাকা
বড় নৌকা (১০-১২ জন): ১২০০-১৫০০ টাকা
সময়: ৪৫-৫০ মিনিট
সুবিধা: কম ভাড়া, ঝাঁকুনি কম
অসুবিধা: ধীর, স্পিডবোটের তুলনায় কম রোমাঞ্চকর
কিছু টিপস
সময়: ভ্রমণের জন্য ভালো সময় হচ্ছে শীতকাল (অক্টোবর-মার্চ)।
পোশাক: হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন।
সূর্য থেকে সুরক্ষা: সানস্ক্রিন, টুপি, রোদ চশমা ব্যবহার করুন।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র: পানি, জলখাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখুন।
পরিবেশ: পরিবেশের প্রতি যত্নবান হোন।
কোথায় খাবেন
মহেশখালি কেবলমাত্র তার মনোরম সৈকত এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটির সুস্বাদু খাবারের জন্যও পরিচিত। ইদানিং, মহেশখালিতে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে যা বিভিন্ন ধরণের খাবার পরিবেশন করে।
কিছু জনপ্রিয় খাবার
সী ফুড: মহেশখালি তার তাজা সামুদ্রিক খাবারের জন্য বিখ্যাত। চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার, রুপচাঁদা, ইলিশ, ভেটকি, কই, এবং আরও অনেক কিছু সহ বিভিন্ন ধরণের মাছ পাওয়া যায়।
স্থানীয় খাবার: মহেশখালির নিজস্ব কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে যা অবশ্যই চেষ্টা করে দেখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মুরগির তেহারি, গরুর তেহারি, কাচ্চি বিরিয়ানি, খাসির তেহারি, সবজি মাছ, পোলাও, ইলিশ ভাপা, ইলিশ মাছের তেহারি, রুপচাঁদা ভাপা, চিংড়ি মাছের তরকারি, কাঁকড়া ভাপা, লবস্টার ভাপা, ইত্যাদি।
মিষ্টি: মহেশখালির মিষ্টিও বেশ জনপ্রিয়। রসগোল্লা, সন্দেশ, ছানার পায়েস, রসমালাই, ইত্যাদি মিষ্টি মহেশখালিতে সহজেই পাওয়া যায়।
কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ
সী ফুড রেস্তোরাঁ:
- সমুদ্র রেস্তোরাঁ
- সাগর রেস্তোরাঁ
- নীল সমুদ্র রেস্তোরাঁ
স্থানীয় খাবারের রেস্তোরাঁ
- মহেশখালী হোটেল
- নূর হোটেল
- আল-হাবিব হোটেল
মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
- মহেশখালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
- নূর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
- আল-হাবিব মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
খাওয়ার আগে
খাবারের দাম ভালো করে যাচাই করে নিবেন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার খান।
অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করলে অভিযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।
কোথায় থাকবেন
মহেশখালি, তার মনোরম সৈকত এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত, দিন দিন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, এখানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠেনি। ফলে, মহেশখালিতে রাত্রিযাপন তেমন নিরাপদ নয়।
কিছু কারণ
পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থার অভাব: মহেশখালিতে পর্যটকদের জন্য আবাসনের সংখ্যা খুবই কম।
নিরাপত্তা ঝুঁকি: রাতের বেলায় মহেশখালিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে।
পরিবহন ব্যবস্থার অভাব: রাতের বেলায় মহেশখালি থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা খুবই সীমিত।
সুতরাং, রাতে কক্সবাজার কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে ফিরে যাওয়াই উত্তম।
আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
মহেশখালী শুধুমাত্র তার মনোরম সমুদ্র সৈকতের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটিতে আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যা আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারে।
মহেশখালীর আরও কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে:
বৌদ্ধ বিহার: মহেশখালীতে বেশ কিছু বৌদ্ধ বিহার রয়েছে যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
রাখাইন পাড়া: মহেশখালীতে একটি বড় রাখাইন সম্প্রদায়ের বাসস্থান রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে জানতে রাখাইন পাড়া ঘুরে দেখতে পারেন।
স্বর্ণমন্দির: মহেশখালীর স্বর্ণমন্দির একটি সুন্দর ও ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির।
ঝাউবন ও চরপাড়া বীচ: মহেশখালীর ঝাউবন ও চরপাড়া বীচ তার মনোরম পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
পান বাগান ও লবণের মাঠ: মহেশখালীতে পান বাগান ও লবণের মাঠ ঘুরে দেখতে পারেন।
এছাড়া এই পাহাড়ি দ্বীপের চারপাশ ঘুরে দেখতে খারাপ লাগবেনা আপনার।
আরও পড়ুনঃ-
মালদ্বীপ ভিসা ও যাবতীয় খরচ সম্পর্কিত তথ্য
মালদ্বীপ ভ্রমণ ও ভিসা সহ যাবতীয় সকল তথ্য