মৈনট ঘাট
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের বেশ জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান হলো এই মৈনট ঘাট। অনেকেই এটিকে পদ্মার চর কিংবা মিনি কক্সবাজার নামেও চিনে থাকে।
দেখতে সমুদ্র সৈকতের মতো হওয়ায় মূলত সাধারণ দর্শনার্থীরা এটিকে মিনি কক্সবাজার নামে সবচেয়ে বেশি চিনে থাকে। তবে আদতে এটি কোনো সমুদ্র সৈকত নয়। এটি মূলত নদীর পার। পদ্মা নদীর তীরে এই দর্শনীয় স্থানটির অবস্থান।
আরও পড়ুনঃ বায়তুল মোকাররম মসজিদ
মৈনট ঘাট ভ্রমণে কি দেখবেন
মৈনট ঘাটের পরিচিতি সম্পর্কে তো জানলেন! এবারে চলুন এই ঘাট ভ্রমণে কি কি উপভোগ করার সুযোগ পাবেন তা এক নজরে দেখে নিই।
ঘাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর পূর্ব পাশে থাকা বিশাল চর আর সামনে থাকা পদ্মা নদী। পুরো সিনটাই আপনাকে কক্সবাজার উপভোগের অনুভুতি দেবে। মনে হবে আপনি কোনো একটি মিনি কক্সবাজারে নিজেকে হারাতে এসেছেন।
এছাড়াও এই মিনি কক্সবাজারের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হলো এতে থাকা বেলাভূমি। যা দেখতে মনে হবে কোনো এক সমুদ্রের পাড়। এই বেলাভূমিতে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা।
যারা ভাবছেন মৈনট ঘাটে ঘুরতে যাবেন তারা অবশ্যই খালি পায়ে এই বেলাভূমিতে হাঁটার বিষয়টিকে কোনোভাবেই মিস করবেন না। পাশাপাশি আপনি যদি সাঁতার জানেন সেক্ষেত্রে নদীতে নামতে পারেন। বিশেষ করে দলবেঁধে নদীতে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা।
তবে এই মজা করতে গিয়ে বা মিনি কক্সবাজার উপভোগ করতে গিয়ে যেনো কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন৷ বিশেষ করে যারা সাঁতার জানেন না তারা মোটেও পানিতে নামবেন না।
কারণ জোয়ারের সময় এই নদীর পানিতে সাঁতার না জানা ব্যাক্তিদের স্রোতের বিপরীতে টিকে থাকাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। ঘাট উপভোগের পাশাপাশি যদি আপনার হাতে সময় থাকে সেক্ষেত্রে নদীর ওপারে জেগে উঠা ফরিদপুরের চর ভদ্রাসনও উপভোগ করে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে ঘাটে থাকা যেকোনো ট্রলারের সাহায্য নিতে পারেন।
মৈনট ঘাটের অবস্থান
মৈনট ঘাটের অবস্থান হলো ঢাকা জেলায়। যেখানে যেতে হলে আপনাকে ঢাকা জেলার দোহা নামক উপজেলাটিতে যেতে হবে। তাছাড়া পদ্মা নদীর অন্যতম খেঁয়াঘাট হিসাবেও মৈনট ঘাটের অবস্থান সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘাটের অবস্থান সম্পর্কে বলার মতো আরো একটি মজার বিষয় হলো স্থানটিকে আগে থেকেই অনেকে খেয়া পারাপারের স্থান হিসাবে চেনে। যার কারণে স্থানটি দর্শনার্থীদের চোখে পড়তে খুব একটা সময় লাগেনি৷
বিশেষ করে এর বেলাভূমিকে প্রথম পলকেই সমুদ্র সৈকত মনে হবার যে বিষয়টি, সেটি কোনোভাবেই ফেলার মতো নয়। সবমিলিয়ে বলা চলে বহুদিন ধরে সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখা এই স্থানটি ধীরে ধীরে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
মৈনট ঘাট ভ্রমণে কিভাবে যাবেন
মৈনট ঘাট ভ্রমণে শুরুতে আপনাকে বাংলাদেশের যেকোনো জেলা হতে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে ট্রেন, বাস, প্ল্যানের সাহায্য নিতে পারেন। সেখান থেকে সরাসরি দোহার উপজেলায়। এই ঘাট ভ্রমণে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় যদি জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো বাস ব্যবহারের কথা।
এক্ষেত্রে ঢাকা গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে পড়তে হবে। আর এই রুটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে এবং তুলনামূলকভাবে ভালো সার্ভিস দেয় যমুনা পরিবহন। আর এই বাসে করে মাত্র ৯০ টাকার বিনিময়ে আপনি সহজেই ঢাকার গুলিস্তান অর্থ্যাৎ গোলাপ শাহের মাজার থেকে ঘাটে পৌঁছে যেতে পারবেন।
এতে করে বারবার গাড়ি পাল্টানোর মতো ঝামেলা যেমন পোহাতে হবে না, ঠিক তেমনই খুব দ্রুত সময়ে অল্প খরচে পৌঁছে যাওয়া যাবে গন্তব্যে। এছাড়াও যাদের দোহারের কোথাও নামার প্রয়োজন আছে তারা সরাসরি মৈনট ঘাটে না এসে যেসব বাস গুলিস্তান থেকে দোহারে আসে সেসব বাসে করেও ঘাটে আসতে পারেন।
এক্ষেত্রে এসব বাস ড্রাইভারকে ঘাটের কথা বললে তারা আপনাকে ঘাটের কাছাকাছি নামিয়ে দেবে। এবং যেখান থেকে নামিয়ে দেবে সেখান থেকে সরাসরি আপনি রিকশা-যোগে এই মিনি কক্সবাজারে পৌঁছে যেতে পারবেন।
সবশেষে ঘাট ভ্রমণে যাওয়ার আরো একটি উপায় শেয়ার করা যেতে পারে। সেটি হলো বাংলাদেশের যেকোনো জেলা টু ঢাকার মুহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, বেড়িবাঁধ টু আটিবাজার, আটিবাজার টু কোনাখোলা, কোনাখোলা টু নবাবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ টু দোহার এবং সবশেষে দোহার টু মৈনট ঘাট।
এই উপায়ে অনেক বেশি ঝটকি ঝামেলা হলেও যারা গ্রুপিং করে ঘুরতে বের হবেন তারা এই উপায়ে ভ্রমণে বেরিয়ে সময়টাকে অনেক বেশি উপভোগ্য করে তুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবাই মিলে মাইক্রোবাস করে যেতে পারলে মন্দ হয় না।
মৈনট ঘাট ভ্রমণে কোথায় থাকবেন
সত্যি বলতে ঘাট ভ্রমণে রাতের থাকবার মতো ভালো কোনো হোটেল আপনি পাবেন না। এক্ষেত্রে আশেপাশের এলাকার ঘরবাড়ির দিকে ফোকাস করতে হবে। আগে থেকেই কল করে কোথায় থাকবেন তা ম্যানেজ করে নিতে হবে।
যদিও ঘাট ভ্রমণে ২/৩/৪ রাত থাকার কোনো প্রয়োজন পড়ে না! কারণ মৈনট ঘাট হলো একটি দিনে এসে দিনেই বেড়িয়ে চলে যাওয়ার মতো স্থান।
মৈনট ঘাট ভ্রমণে কোথায় খাবেন
সাধারণত খুব ভোরে বা দিনের শুরুতে করে বের হতে পারলে মৈনট ঘাট ভ্রমণে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যাবে। আর এটি এমন একটি প্লেস যেখানে ঘুরতে গেলে বা উপভোগ করতে হলে কেবল ১ দিনই যথেষ্ট।
সুতরাং খাবার-দাবারের যে লম্বা ঝটকি-ঝামেলা থাকে, সেটি এখানে খুব একটা পোহাতে হবে না। এক্ষেত্রে এখানকার যে ভাতের হোটেল আছে সেই হোটেলই একমাত্র ভরসা। তবে এই হোটেল আপনাকে আশাহত করবে না।
বিশেষ করে পদ্মার পাড়ে বসে পদ্মার তাজা সুস্বাদু মাছের স্বাদ আপনাকে কখনোই আশাহত করবে না। যারা গ্রুপিং করে যাবেন তারা যদি বড় কোনো ইলিশ মাছ খেতে চান বা বার্বিকিউ করতে চান সেক্ষেত্রে যাওয়ার সাথে সাথেই তা বলে রাখবেন বা বুকিং দিয়ে রাখবেন।
কারণ সবসময় এই ধরণের বড় মাছের ব্যবস্থা হোটেলটিতে থাকে না। তাছাড়া ভাতের পাশাপাশি বিভিন্ন স্ন্যাক আইটেমের জন্য এখানকার মুদি দোকান তো রয়েছেই। আর হ্যাঁ! ঘাটের পাশেই রয়েছে কার্তিকপুরের মিষ্টির দোকান।
এই দোকানের মিষ্টি এতোটাই জনপ্রিয় এবং মজার যে তা বিদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যায় নিয়মিত। সুতরাং এই মিষ্টির টেস্ট উপভোগ করতে ভুলবেন না।
ইতি কথা
যারা এখনো আসল কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেননি তারা আপাতত এই ঘাট খ্যাত মিনি কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। মনে রাখবেন এখানে ভ্রমণের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
কারণ আমরা সবাই জানি পদ্মা নদী স্রোতের দিক দিয়ে কতটা ভয়ংকর! যারা সাঁতার জানেন না বা যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই পানির কাছ থেকে সর্বোচ্চ দূরত্ব বজায় রাখবেন। আর মৈনট ঘাট ভ্রমণের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে কোনো ধরণের প্ল্যানিং করা থেকে বিরত থাকবেন।
কারণ বৃষ্টির সময় এখানকার চর পুরোপুরিভাবে ডুবে যায়। ফলে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ পাওয়া যায় না।
মৈনট ঘাট সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১. মৈনট ঘাট কিভাবে যাবো?
উত্তরঃ ঘাট যেতে ঢাকার গুলিস্তান অর্থ্যাৎ গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে যমুনা পরিবহন বাসে উঠে পারতে পারেন
২. মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুর যেতে কত সময় লাগে?
উত্তরঃ মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুর যেতে ২/২.৫ ঘন্টার মতো সময় লাগতে পারে
৩. মৈনট ঘাট কোথায়?
উত্তরঃ এই ঘাটের অবস্থান হলো ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়
৪. মিনি কক্সবাজার কোনাপাড়ার অপর নাম কি?
উত্তরঃ মিনি কক্সবাজার কোনাপাড়ার অপর নাম হলো ধার্মিক পাড়া।
আরও পড়ুন-
বাহাদুর শাহ পার্ক
বিমান বাহিনী জাদুঘর