রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, কক্সবাজার

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এই পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় বিনোদনের নতুন সংযোজন তৈরি করেছে এই ফিস মিউজিয়াম। বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিস এ্যাকুরিয়াম দেখার সুযোগ। এই এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে রয়েছে সাগর ও মিঠা পানি মিলিয়ে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। 

বিভিন্ন বিরল প্রজাতির মাছ সহ এখানে আরও রয়েছে পিরানহা, শাপলাপাতা, হাঙ্গর, কাছিম, কাঁকড়া, পানপাতা, বোল, সামুদ্রিক শৈল, সাগর কুঁচিয়া, চেওয়া, জেলিফিশ, আউস, পিতম্বরী, পাঙ্গাস সহ আরো বিভিন্ন ধরনের মাছ ও জলজ প্রাণী।

অনেক আকর্ষণীয়ভাবে পর্যটকদের কাছে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সাগরের তলদেশের বৈচিত্রময় পরিবেশ। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগবে এই পুরো এ্যাকুরিয়ামটি ঘুরে দেখতে।

১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেসিডেন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে রয়েছে থ্রি নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, লাইভ ফিস রেস্টুরেন্ট, দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, শিশুদের খেলার জায়গা, মার্কেটিং করার জন্য শপ ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি বার-বি-কিউ করার আয়োজন করা হয়। 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, দর্শনীয় স্থান রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড সহ কক্সবাজারে নানা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তো চলুন প্রথমেই জেনে আসি কক্সবাজারের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ বজরা শাহী মসজিদ নোয়াখালী

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান 

কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকায় ৮০ শতক জমির উপর ৪ তলা ভ্রমণের তৃতীয় তলা জুড়ে রয়েছে এই এ্যাকুরিয়াম। শতাধিক ছোট বড় এ্যাকুরিয়ামে কয়েকশো প্রজাতি সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ্যাকুরিয়ামের সামুদ্রিক মাছের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে নিমিষেই কেটে যায় কয়েক ঘন্টা সময়। কক্সবাজারের অন্যান্য সব দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম একটি স্থান রেডিয়েন্ট ফেস ওয়ার্ল্ড।

আরও পড়ুনঃ নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (Cox’s Bazar sea beach)। দেশি-বিদেশি সব পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ ও মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে এ সমুদ্র সৈকত।

এই সমুদ্র সৈকতটি প্রায় ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শীতকালেই অনেক বেশি ভিড় থাকে। তবে শীতকাল ছাড়া অন্য কোন সময় গেলে একটু সুবিধা পাবেন। হোটেল ভাড়া সহ অন্যান্য সব জিনিসের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম পাওয়া যায়। 

সেন্টমার্টিন 

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টি এই সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণ অবস্থিত। ১২০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের জেলা শহর থেকে ১৭ বর্গ কিলোমিটার এর একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেখানকার স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা ও বলা হয়।

অপরূপ প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন স্থান। সেখানকার সারি সারি নারিকেল গাছ ভ্রমন প্রিয়াসু মানুষদের আকর্ষিত করে। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে  কক্সবাজার জেলার টেকনাফের ট্রলারে অথবা জাহাজে করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন সেন্টমার্টিন। 

মহেশখালী 

কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ মহেশখালী উপজেলা। মহেশখালী (Mahesh khali) কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৫৫৯ সালের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে।

মহেশখালী উপজেলায় আরো সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা নামে ৩টি ছোট ছোট দ্বীপ  রয়েছে। পুরো বাংলাদেশ এই উপজেলার সুনাম রয়েছে শুঁটকি, মাছ, পান, লবণ, চিংড়ি ও মুক্তার উৎপাদনের জন্য। কক্সবাজার শহর থেকে ৪,৫ ঘন্টা সময় নিয়ে মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।

কক্সবাজার শহরের যেকোন জায়গা থেকে মহেশখালী যাবার জেটিতে (৬নং ঘাটে) চলে যাবেন, সেখান থেকে লোকাল ট্রলার বা স্পিড বোটে ৭০-৮০ টাকায় মহেশখালী চলে আসতে পারবেন।

ইনানী সমুদ্র সৈকত 

কক্সবাজার শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে ইনানী সমুদ্র সৈকত (Inani Sea Beach)। সেন্ট মার্টিনের মতো ভাটার সময় ইনানী সমুদ্র সৈকতে প্রবাল পাথরের দেখে মিলে। তবে এখানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো এত উত্তাল ঢেউ থাকে না।

কিন্তু নিরিবিলি শান্ত একটা পরিবেশ পর্যটকদের আরো বেশি বিমোহিত করে। বিকেল বেলায় যেন আকর্ষিত কিছু অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকতে। এছাড়াও আকর্ষণীয় কিছু মুহূর্ত হচ্ছে টেকনাফ গামী মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকতে যাবার সময় সমুদ্র তীরের সাম্পান, হিমছড়ির পাহাড়, ঝাউবন ও নারিকেল গাছের সারি সারি সৌন্দর্য, চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে।

আরও পড়ুনঃ মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান

হিমছড়ি 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করতে যাবেন অথচ কক্সবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করবেন না, সেটা তো অবিশ্বাস্যকর। কারন কক্সবাজারের সব দর্শনীয় স্থানগুলোই যেন অনন্য রূপ নিয়ে গঠিত, কোনটা থেকে শুরু করে কোনটা দেখবেন এরকমই একটা পরিস্থিতি শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের মধ্যে।

কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোল জুড়ে রয়েছে হিমছড়ি। হিমছড়ির ছোট, বড় ঝর্ণা, পাহাড় এবং ফটোগ্রাফিকের জন্য অন্যতম একটি পারফেক্ট জায়গা হিমছড়ি সমুদ্রতট, যা পর্যটকদের সব সময় বিমোহিত করে রাখে। কক্সবাজারে যেকোন জায়গা থেকে সিএনজি / ইজিবাইক / অটো দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন হিমছড়ি। 

সোনাদিয়া দ্বীপ

মহেশখালী উপজেলার মধ্যে ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সোনাদিয়া দ্বীপ (SonaDia Island)। ক্যাম্পিং করার জন্য খুবই ভালো মানের একটি জায়গা। জৈববৈচিত্রের অপরূপ সমন্বয় দেখতে হাজার হাজার পর্যটক দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন কক্সবাজারের এই সৌন্দর্যমন্ডিত দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করতে।

এই দ্বীপের তিন দিকে রয়েছে সমুদ্র সৈকত, জীববৈচিত্রের পরিপূর্ণ জলাবন, ছোট বড় খালের সমন্বয়ে গঠিত প্যারাবন, সাগর লতায় পরিপূর্ণ বালিয়াড়ি এবং বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখি। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যগুলো উপভোগ করতে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে সবসময় সোনাদিয়া দ্বীপে।

কক্সবাজারের মহেশখালি ঘাট থেকে গোরকঘাটা বাজারে যাবেন,ভাড়া পড়বে ২০-২৫ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি করে ২৪ কিলোমিটার দূরে ঘটিডাঙ্গায় যাবেন, ভাড়া পড়বে ১৫০-১৮০ টাকা। এবং ঘটিডাঙ্গা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যেতে হবে সোনাদিয়া দ্বীপে। 

কিভাবে যাবেন 

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে ভ্রমন করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কক্সবাজারে। দেশের যেকোন প্রান্ত অথবা যেকোন জায়গা থেকে প্রথমেই চলে আসুন কক্সবাজারে। কক্সবাজারের আশেপাশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি হাতে সময় নিয়ে চলে যেতে পারেন এই জলজ জগতে। কক্সবাজারের যেকোনো জায়গা থেকেই অটো রিক্সা, সিএনজি, ইজিবাইক দিয়ে যেতে পারবেন ভ্রমনীয় স্থানে। 

কলাতলী বীচের সড়কের মধ্যেই পাবেন এইসব যানবাহন। প্রথমেই যেতে হবে ঝাউতলা, প্রধান সড়ক, কক্সবাজার। যদি ইজিবাইক রিজার্ভ করেন তবে সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৫০-৭০ টাকা। এবং লোকাল ইজিবাইকে ১০-১৫ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন ঝাউতলা।

পৌষি রেস্টুরেন্টের সামনের মোড় থেকে হাতের বাম পাশে অল্প কয়েক কদম গেলেই পেয়ে যাবেন রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড আকর্ষণীয় ভ্রমনীয় স্থান।

প্রবেশ ফী

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের জন্য প্রবেশ ফী নির্ধারিত হয়েছে ৩০০ টাকা। তাছাড়াও রয়েছে বাচ্চাদের জন্য সুলভ মূল্যের টিকেটের ব্যবস্থা। সময়, যেকোন অফার অথবা যেকোনো কারণ অনুযায়ী টিকেট মূল্যের উপর ৫-২০% ডিসকাউন্ট থাকে। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড সকাল ৯টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। 

যোগাযোগ 

কক্সবাজার, প্রধান সড়ক, ২৯ ঝাউতলা। 

যোগাযোগের নাম্বার : ০১৭০১-২৮৯৭১১, ০১৭০১-২৮৯৭১২, ০১৭০১-২৮৯৭১৩।

কোথায় থাকবেন 

কক্সবাজারে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড ভ্রমণে গিয়ে সেখানে থাকার মত প্রায় শতাধিক হোটেল, মোটেল বা কটেজ রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু রিসোর্ট হচ্ছে, সায়মন বিচ রিসোর্ট, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বিচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, উর্মি গেস্ট হাউস, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট, নিটোল রিসোর্ট, ইউনি রিসোর্ট, ইকরা বীচ রিসোর্ট, অভিসার উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও এখানে বিভিন্ন রিসোর্টে আপনি ছাদের উপরেও প্রাকতিক পরিবেশের সাথে বার-বি-কিউ আয়োজন করার সুবিধা রয়েছে। 

কোথায় খাবেন

কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং অন্যতম পর্যটনীয় স্থান রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড ভ্রমণে গিয়ে খাওয়া দাওয়ার জন্য কাউকে বিপাকে পরতে হবে না। কারন কক্সবাজার জেলার মধ্যে যেমন অনেক উন্নত মানের রেস্তোরাঁ বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে তেমনি আবার মোটামুটি বাজেটের ও অনেক ভালো খাবার হোটেল,মোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দমতো জায়গায় আপনার খাবার সেড়ে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজারের রয়েছে উন্নত মানের সহ নানা মানের রেস্টুরেন্ট। প্রায় প্রতিটি হোটেলের মধ্যেই রয়েছে ভালো মানের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। রেডিয়েন্ট ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট। তাছাড়াও এর পাশেই রয়েছে সবার পরিচিত পৌসি ও ঝাউবন রেস্তোরা। 

শেষকথা 

কক্সবাজারের অন্যতম দর্শনীয় স্থান রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর সৌন্দর্য যেন জলের মাছের মধ্যে পরিপূর্ণতা পায়। সমুদ্র তলের প্রাণিজগতের মাছের মেলা চোখের সামনে ঘুরছে, এজন্য কাল্পনিক কোন দৃশ্যের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য ছুটে যাওয়া।

নানা বর্নিল প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক সব প্রাণী যেন এক হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে কোন এক সমুদ্রের তলদেশে। সত্যি এরকম অবিশ্বাস্যকর দৃশ্য চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কক্সবাজারের রেডিয়েন্ট ফিস ওয়াল্ডে। 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর সম্পর্কে এবং কক্সবাজারের আরো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেন।

তাছাড়াও রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। 

আরও পড়ুন –

বায়েজিদ বোস্তামী মাজার – চট্টগ্রাম

নিকলী হাওর, কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন