চন্দ্রনাথ পাহাড়
চন্দ্রনাথ পাহাড় হিমালয়ের পূর্বাচলীয় অংশে যা হিমালয় হতে বিচ্ছিন্ন। এই পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ পূর্ব দিক ও দক্ষিণ দিক ঘুরে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হওয়ার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে।
খুব কম খরচে একদিনে ঘুরতে চাইলে চন্দ্রনাথ পাহাড় তাদের জন্য একটি দর্শনীয় জায়গা হবে। কেননা এখানে দেখার জন্য যে দর্শনের স্থান রয়েছে সেগুলি একদিনই কভার করা সম্ভব সাথে খরচ ও হাতের নাগালে।
আপনি যদি ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন সঙ্গে ঝরনা ও পাহাড় এক সঙ্গে দর্শন করতে চান তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে পারেন। আপনার সামর্থ্য যদি হয় মধ্যমানের তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (chandranath pahar) ঘুরতে যেতে পারেন। এটি আপনার চক্ষু প্রশান্তির সাথে সাথে পকেটের অবস্থাও সামলে রাখবে।
আরও পড়ুনঃ টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ি
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান
এটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩১০ মিটার বা ১০২০ ফুট প্রায়। এটি হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত একটি তীর্থস্থান। এর স্থানাংক ২২.৬৩৩৭০৬° উত্তর ও ৯১.৬৮৩৯৯৮° পূর্ব।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ইতিহাস
প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে রাজমালা অনুসারে গৌড়ের বিখ্যাত আদিসুরের বংশধর রাজা বিষম্ভর সমুদ্র পথের মাধ্যমে চন্দ্রনাথে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ধনমানিক্য নামে ত্রিপুরার শাসক চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে শিব মূর্তি সরিয়ে তার রাজ্যে নেওয়ার অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ধারণা করা হয় সীতাকুণ্ডে মানুষ বসবাস শুরু করে প্রাচীন নব্য প্রস্তর যুগে।
এখান থেকে আবিষ্কৃত হওয়া প্রস্তর যুগের বাঙালি জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন হাতিয়ারগুলো সেই স্বাক্ষরই বহন করে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ ও স্বতন্ত্র সপ্তম শতাব্দীর দিকে আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অঞ্চলের শাসনভার এর পরের শতাব্দীতে চলে যাই পাল সম্রাট ধর্মপালের হাতে (৭৭০ থেকে ৮১০ খ্রিস্টাব্দ)।
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সোনারগাঁয়ে সুলতান ছিলেন (১৩৩৮ থেকে ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দ)। যিনি ৪০ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলের অধিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সুর বংশের শের শাহ সুরির নিকটে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াস উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান পরাজিত হলে এই অঞ্চল আরাকান রাজ্যের নিকট চলে যায়।
এই অঞ্চলের শাসনভার আরাকানীদের বংশধররা নিয়ে নেন। এরপর পর্তুগিজরা আরাকানিদের শাসনে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করেন। একই সাথে আরকানি বংশধররা ও পর্তুগিজরা। মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উম্মে খান ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১২৮ বছর পর দখল করে নেন পর্তুগিজ এবং আরাকানিদের রাজত্ব হটিয়ে।
আরও পড়ুনঃ পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বাড়ি
উচ্চতা ও শৃঙ্গ
চন্দ্রনাথ পাহাড় (chandranath pahar) সীতাকুণ্ড শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রায় ৩১০ মিটার উঁচু বা ১০২০ ফুট উঁচু। সাজিঢালার উচ্চতা হল ৮০১ ফুট এবং রাজবাড়ীটিলার উচ্চতা হল ৯০০ ফুট। তবে এই পাহাড়ের উচ্চতা অনেক কম হয়ে এসেছে চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি এসে। বাটালি হিলের উচ্চতা চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে প্রায় ২৮০ ফুট এবং শহর হতে উত্তরে রয়েছে মঙ্গল নোঙ্গরখানা যা ২৯৮ ফুট উঁচু।
চন্দ্রনাথ মন্দিরের রহস্য
চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিশাল একটি পাহাড়। এই পাহাড়টির সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ৩৬৫ মিটার বা ১১৫২ ফুট। এই পাহাড় দেখতে হলে অনেক সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। এর ওপরেই রয়েছে এক শিব মন্দির। যা হিন্দু সম্প্রদায় ও সাধসন্ন্যাসীদের ভক্ত অনুরাগীদের জন্য একটি তীর্থস্থান। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায় এ পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য।
এই পাহাড়টি পৌরাণিক স্মৃতি বিজড়িত যেখানে রয়েছে অসংখ্য মঠ-মন্দির। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে প্রতিবছর শিব চতুর্দশী মেলা হয় ফাল্গুন মাসে। প্রচলিত আছে যে, নেপালের কোনো এক রাজা স্বপ্নের মাধ্যমে আদিষ্ট হয়ে পৃথিবীর পাঁচটি জায়গায় পাঁচটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত শিবমন্দির অন্যতম। ধর্মগ্রন্থ মত অনুসারে, এখানে বসবাস করতেন মহামনি ভার্গব।
রামচন্দ্র যিনি অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র ছিলেন তার বনবাসের সময় এই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (chandranath pahar) এসেছিলেন। মহামনি ভার্গব তাদের আসার কথা জানতে পেরে স্নানের জন্য এখানে তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন।
এরপর এই কুন্ডে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা স্নান করেন। তারপর থেকেই এই স্থানের নামকরণ হয় সীতাকুন্ড নামে। যে স্থানে রাম স্নান করেছিলেন সেই স্থানের নামকরণ হয় রামকুন্ডু। বর্তমানে এই কুন্ডগুলী শুকিয়ে গেছে।
চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাদদেশে রয়েছে ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, উল্টা পাতালকালী মন্দির ও ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রম। আরো রয়েছে গিরিশ ধর্মশালা, মহাশ্মশান ভবানী মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির, কাছারি বাড়ি, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটিসহ আরো অনেক অনেক সনাতনী স্থাপনা।
চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়ার সময় পথে ভৈরব মন্দিরের বাম পাশে এবং ব্যাস কুন্ডের পশ্চিম পাড়ে বিশাল একটি বট বৃক্ষ আছে। এটি অক্ষয় বটও নামে পরিচিত।
চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণ
চন্দ্রনাথ পাহাড় (chandranath pahar) এর চূড়ায় দেখতে পাবেন শিব মন্দির। এর জন্য আপনাকে ২২০০’র বেশি সিঁড়ি পাড়ি দিতে হবে। তবে সিঁড়িতে ওঠার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কোনভাবে যেন পিচ্ছিল বা হোঁচট খেয়ে পড়ে না যান। কেননা সিঁড়িগুলি অনেক সংকীর্ণ ও পিচ্ছিল।
প্রায় ১৫ মিনিট সিঁড়িতে উঠার পর দেখতে পাবেন একটি ছোট ঝর্ণা। এই ঝরনাটির দুই পাশে রয়েছে দুইটি পথ যা একেবারে উঠে গেছে পাহাড়ের চূড়ায়।
তাই বাম পাশের পথ দিয়ে উপরে উঠতে থাকবেন। এই রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে পাহাড়ি পথ এবং সিঁড়িগুলো কিছু ভাঙা রয়েছে। কিন্তু ডান পাশের পথটায় পুরোটাই প্রায় সিঁড়ি পথ যেটি দিয়ে ওঠা অনেক কঠিন।
আবার চলতি পথে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেয়ার জন্য চায়ের দোকান গুলিতে বসতে পারেন এবং চা খেতে খেতে এই মন্দিরের রহস্য ও ইতিহাস শুনতে পারেন। হালকা-পাতলা নাস্তা করার সঙ্গে পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
উল্টো কালীবাড়িতে কিছুক্ষণ
উল্টো কালীবাড়ির পথটি অনেকটা দুর্গম। অনেকেই চন্দ্রনাথ পাহাড় এ মন্দির পর্যন্ত গেলেও এই পথের দিকে কেউ যেতে চায় না। চন্দ্রনাথ মন্দিরের পিছন দিকটি বেশি ভয়াবহ ও দুর্গম পাহাড়ি পথ বয়ে নিচে নামতে হয়। তাই ধীরে ধীরে অতি সাবধানে নিচে নামতে হবে এবং অবশ্যই ট্রেকিং সু ব্যবহার করতে হবে। সঠিক সময় নির্বাচন করে ঘুরতে যেতে হবে। এরপর ৪০ মিনিট হাঁটার পর নিচে নেমে দেখতে পাবেন পাহাড়ি ছড়া।
সেখানে মন চাইলে একটু গোসল করে নিতে পারবেন। এই জায়গা হতে একটু সামনে গেলে দেখতে পাবেন একটি গোল বিশাল আকার পাথর যেটি লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে। যেই পথ দিয়ে উল্টো কালী বাড়ি গিয়েছিলেন আবার সেই পথ হয়েই চন্দ্রনাথ মন্দিরে ফিরে আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে ডান দিকের শ্রীপদ হয়ে নিচে নামতে হবে।
একদম পাহাড়ের পাদদেশে চলে এসে একটি সিএনজি নিবেন এবং সীতাকুন্ড বাজারে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে হোটেলে ভাত খেয়ে নিতে পারেন আর যদি সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন তবে শ্রী গোবিন্দ হোটেলে চাইলেই নিরামিষ খাবার খেতে পারবেন। সবটুকু ঘোরা শেষে আপনি চাইলে নিশ্চিন্তে আপনার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান
প্রয়োজনীয় তথ্য
চন্দ্রনাথ পাহাড় (chandranath pahar) এর উচ্চতা অনেক বেশি নয়। কিন্তু ওঠার রাস্তাটি বেশ দুর্গম ও সরু। তাই তাড়াহুড়া করে কখনোই পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করা যাবে না। এতে যে কোন প্রকার দুর্ঘটনা হতে পারে। অনেকেই দেখা যায় বেশি রোমাঞ্চকর ট্যুর করার জন্য অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে নেন যেটি আপনার জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।
পাহাড়ে ওঠার পথটি নির্দিষ্টভাবে অনুসরণ কর… কখনোই উল্টো পথে উঠতে বা নামতে চেষ্টা করবেন না। এটি আপনার জন্য খারাপ ফলাফল দিতে পারে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের যে প্রান্তে আপনার বাড়ি হোক না কেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (chandranath pahar) যেতে হলে আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ড যেতে হবে। আপনার বাসার আশেপাশে থেকে যদি কুণ্ডে যাবার বাস না থেকে থাকে তবে ঢাকার সরাসরি চট্টগ্রামের বাসে বা ট্রেনে উঠে পড়েন।
ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুণ্ড
ঢাকা থেকে বাস এর মাধ্যমে সরাসরি সীতাকুন্ডে যেতে পারবেন। ফকির আপুর সায়দাবাদ মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে হানিফ , শ্যামলী এস আর এনা সৌদিয়াসহ বিভিন্ন বাস চলাচল করে চট্টগ্রাম রুটে। নন এসি টিকিটে যেতে চাইলে টিকিট খর ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা এবং টিকিট করে বাসে যেতে চাইলে খরচ পড়বে জন প্রতি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুণ্ড
ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুন্ড যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে ফেনীতে। সে ক্ষেত্রে টিকিট খরচ পড়বে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা শোভন চেয়ারে এবং এসিতে খরচ পড়বে ৭০০ টাকা। এক্ষেত্রে রাত ৯:২০ এ মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে সেটিতে অথবা তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন রাত ১১:৩০ এ উঠতে হবে।
এরপর ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ডে ১০ টাকা ভাড়া লাগবে। সেখান থেকে লোকাল বাস হয়ে সীতাকুণ্ডে চলে যেতে পারবেন ভাড়া লাগবে মাত্র ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়াও ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুন্ডে যেতে পারবেন মেইল ট্রেনের মাধ্যমে। মেইল ট্রেনে জনপ্রতী খরচ পড়বে ১২০ টাকা। এই ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন হতে যাত্রা শুরু করবে রাত ১০:৩০ মিনিটে। ভোর হতে হতে সীতাকুন্ডে পৌঁছে যেতে পারবেন। তবে ট্রেনের সিট পাওয়ার জন্য অনেক আগে টিকিট কেটে সিটে বসতে হবে। নইলে পুরো পথ দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হবে।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড আসতে হলে চট্টগ্রাম নগরীর এ কে খান বা অলংকার মোড় হতে লোকাল বাসে আসতে হবে। এখানে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। খুব ভোরেই চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিতে হবে। আর যদি যেতে চান তবে অবশ্যই রিজার্ভ গাড়ি নিবেন। মূলকথা হলো আপনি যে জায়গা থেকেই আসুন না কেন আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ড আসতে হবে। আর বাসে আসলে প্রতিটি চট্টগ্রামগামি বাস সীতাকুণ্ড হয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ডে থাকতে চাইলে এখানে সাইম, সৌদিয়াসহ বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। সৌদিয়াই বুকিং নিতে চাইলে এই নম্বর গুলিতে ফোন দিয়ে বুকড করতে পারেন ০১৯৯১৭৮৭৯৭৯, ০১৮১৬৫১৮১১৯। আর যদি ভাল মানের হোটেলে থাকতে চান তাহলে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে থাকতে হবে। এখানে এক রাত্রির জন্য ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকার মত লাগবে। এছাড়াও জিইসি রোড,নিউমার্কেট, স্টেশন রোড এর পাশে ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে।
সীতাকুণ্ডের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
- সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক
- কমলদহ ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- ঝিরিঝিরি ঝরনা
- গুলিয়াখালি বীচ
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- কুমিরা সন্দীপ ফেরিঘাট
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা
- সুপ্ত ধারা ও সহস্র ধারা নামে দুইটি মায়াবী জলপ্রপাত
একদিনে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ভ্রমণ
ঢাকা থেকে যদি রাত সাড়ে দশটার মেইল ট্রেনে সীতাকুণ্ড যেতে চান তাহলে খরচ হবে জনপ্রিতি ১২০ এবং ফেরার সময় রাত ১১ টায় চাটলা এক্সপ্রেস ট্রেনে জনপ্রতি টাকা লাগবে। অর্থাৎ যাওয়া আসা মিলিয়ে ৩৮৫ টাকা লাগবে। সারাদিনের খাবারটা বেশি হেভি না খেয়ে সকালে পরোটা ও ডাল এবং দুপুরে ডাল, মাছ বা ডিম ও ভর্তা দিয়ে খেলে দুইশো টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
অন্যান্য খাবার ১০০ টাকার মধ্যে খেয়ে নিলে সর্বমোট ৭০০ টাকার মধ্যে একদিনে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (chandranath pahar) গিয়ে ঘুরে আসা সম্ভব। চন্দ্রনাথ পাহাড় সাথে যদি গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত ও খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে চান তবে এই তিন দর্শনীয় স্থান মিলে ১১০০ টাকার মধ্যে একদিনের একটি টুর প্লান রাখতে পারেন। এতে আপনার একসঙ্গে একদিনে ঝর্ণা, পাহাড় এবং সমুদ্র সৈকত সবগুলি দেখা হয়ে যাবে।
সতর্কীকরণ
- অবশ্যই সঙ্গে ফার্স্টএইড বক্স রাখবেন। এছাড়াও কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে রাখবেন।
- পাহাড়ে যাওয়ার পথে সঙ্গে অবশ্যই একটি লাঠি রাখবেন প্রয়োজনে এটি আপনার জীবন রক্ষার্থেও সহায়তা করবে।
- অন্ধকার হওয়ার আগেই চেষ্টা করবেন পাহাড়ি এলাকা থেকে কোন প্রকার ঝামেলা থাকবে না।
- সঙ্গে লবণ রাখতে পারেন কেননা রাস্তায় জোঁক ধরার সম্ভাবনা থাকে।
- যাত্রা পথে অতিরিক্ত পোশাক রাখবেন এবং ট্রেকিং সু ব্যবহার করবেন।
- এছাড়াও অতিরিক্ত টাকা রাখবেন সঙ্গে এটি প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে।
উপসংহার
চন্দ্রনাথ পাহাড় (chandranath pahar) দেখার পাশাপাশি দেখতে পারবেন ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। এখানে রয়েছে সুপ্ত ধারা আর সহস্র ধারা নামে দুইটি জলপ্রপাত। মীরসরাই অংশে রয়েছে হরিণমারা, হাঁটুভাঙ্গা, খইয়াছড়া, বাগবিয়ানি, নাপিত্তাছাড়া ইত্যাদি আরো অনেক ঝরনা এবং জলপ্রপাত। এই পাহাড়ের পূর্ব দিকে থেকে উৎসাহিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা যেগুলি হালদা নদীতে মিলিত হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে বারমাসিয়া,গজারিয়া, হারিয়ালছড়ি, ফটকছড়ি, বোয়ালিয়া অন্যতম। এছাড়াও পশ্চিম দিকে মিঠাছড়া, মহামায়াসহ বেশ কয়েকটি ঝরনা ও ছড়া যেগুলি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মোটকথা এই চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘুরতে এসে আপনি লাভবান হবেন সৌন্দর্য উপভোগে।
চন্দ্রনাথ পাহাড় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s
১. চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কিভাবে যাবো?
উত্তর: যে জায়গা থেকেই চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখতে চান আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ডে আসতে হবে। সীতাকুণ্ড থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।
২. সীতাকুন্ড কি জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: সীতাকুন্ড বাংলাদেশের সবচেয়ে সক্রিয় সিসমিক ফল্ট লাইন সীতাকুন্ড-টেকনাফ ফল্টে অবস্থিত।
৩. চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মোট সিঁড়ির সংখ্যা কতটি?
উত্তর চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মোট সিঁড়ির সংখ্যা ২২০০ এর বেশি।
৪. সীতাকুণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলি কি কি?
উত্তর: সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, কমলদহ ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া বীচ, ঝিরিঝিরি ঝরনা,গুলিয়াখালি বীচ, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, কুমিরা সন্দীপ ফেরিঘাট, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, সুপ্ত ধারা ও সহস্র ধারা দুইটি জলপ্রপাত।
আরও পড়ুন-
শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান
খৈয়াছড়া ঝর্ণা – চট্টগ্রাম