গুলিয়াখালী সী বিচ
গুলিয়াখালী সী বিচ হলো চট্টগ্রামের বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। ২০১৪ সালের আগে এই সী বিচ (guliakhali) সম্পর্কে কেউই জানতোনা। পরবর্তীতে চুয়েটের কিছু শিক্ষার্থীরা এই স্থানটি আবিষ্কার করে। সেই সময় শিক্ষার্থীরা এই স্থানটিতে প্রথমবারের মতো পৌঁছায় এবং বেশ কিছু ফুটেজ ধারণ করে তা ইউটিউব ও ফেইসবুকে আপলোড করে।
ঠিক তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই এই স্থানটিতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। এই সী বিচের অবস্থান মূলত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায়। যা গড়ে উঠেছে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। পাশাপাশি নদীর মোহনার কারণে এই সী বিচটিকে বেশ আকর্ষণীয় লাগে।
এই বনটি মূলত একটি কেউড়া বন। তবে মজার ব্যাপার হলো এই বনটি একেবারে সমুদ্রের মাঝ বরাবর অনেক দুর চলে গিয়েছে। এছাড়াও এই বিচের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিকটি হলো এর সম্পুর্ন অংশই ছোট ছোট সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ থাকে। যা দেখতে বেশ দুর থেকেই সবুজ গালিচার মতো দেখায়। আবার এই সবুজ রং এর গালিচার ভিতরে বেশকিছু চিকন নালা চলে গিয়েছে। য়াজকে আমরা গুলিয়াখালী সী বিচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আরও পড়ুনঃ পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি
গুলিয়াখালী সী বিচ পরিচিতি
অন্যান্য সী বিচের তুলনায় গুলিয়াখালী সী বিচ সম্পুর্ন আলাদা। যেখানে অন্যান্য সী বিচ হয় ধূসর রং এর সেখানে এই সী বিচ সবুজ রং এ পরিপূর্ণ থাকে। যেহেতু বন এবং সমুদ্রের মিশ্রণে এই স্থানটি সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু এর পরিবেশ সবসময়ই স্নিগ্ধ থাকে।
এই সী বিচের পশ্চিম দিকে রয়েছে জলরাশীর নৈসর্গিক খেলা। অন্যদিকে এর পূর্বে রয়েছে নয়নাভিরাম পাহাড়। পাশাপাশি কেউড়া গাছ এই সী বিচের (guliakhali) সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যারা এই সী বিচ উপভোগ করতে যায় তারা এর ৫ কিলোমিটারের ভিতরে আরো বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র উপভোগ করার সুযোগ পায়।
গুলিয়াখালী সী বিচকে (guliakhali) অনেকেই আবার মুরাদপুর সৈকতও বলে থাকে। বর্তমানে এই সী বিচটি এবং এর সাথে সংযুক্ত বনটিও বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় রয়েছে। এই বিশেষ ধরণের সৈকতটিকে উপভোগ করতে হলে আপনাকে জোয়ারের সময়টিকে বেছে নিতে হবে। কারণ এই সময় এতে থাকা ছোট ছোট নালা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে নিজেকে অপূর্ব সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলে।
আপনি যদি নিরিবিলি পরিবেশে এই সৈকত উপভোগ করতে চান সেক্ষেত্রে এতে থাকা বোট ভাড়া করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সর্বমোট ২০০০ টাকা বাজেট করতে হবে। আবার আপনি চাইলে এখানে ক্যাম্পেইনিংও করতে পারেন। এক্ষেত্রে সাথে করে তাবু নিয়ে যেতে হবে।
গুলিয়াখালী সী বিচে যাওয়ার উপায়
গুলিয়াখালী সী বিচে যেতে হলে শুরুতে আপনাকে চট্টগ্রামে যেতে হবে। ঢাকাসহ বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যেতে হলে নিচের তথ্যের সাহায্য নিতে পারেন।
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডের দূরত্ব ২১৭ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে সড়কপথে সময় লাগবে ৪ ঘন্টার বেশি। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডে যেতে হলে পূর্বের দিন রাতেই বাসে উঠতে হবে। সাধারণত সায়েদাবাদ, ফকিরাপুর, মহাখালি বাসস্ট্যান্ড হতে শ্যামলি, এস আর, সৌদিয়া, হানিফ, এনা নামের বাসগুলি নিয়মিত ঢাকা টু সীতাকুণ্ড যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
এক্ষেত্রে বাজেটে ৪১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত রাখতে হবে। আর যদি খুব কম খরচে ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ডে যেতে চান সেক্ষেত্রে মেইল ট্রেনের সাহায্য নিতে হবে। মেইল ট্রেনে জনপ্রিয় খরচ পড়বে ১২০ টাকার মতো।
অনেক সময় এই ট্রেন জার্নিতে ২৬৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকাও লাগতে পারে। ট্রেনের ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন, নিয়মিত রাত ৯.২০ এর মধ্যে মহানগর এক্সপ্রেস এবং রাত ১১.৩০ এর ট্রেন তুর্না এক্সপ্রেস নামক ট্রেন ঢাকা টু চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড
আপনি যদি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়া বাসের মধ্যে বিআরটিসি, সিল্কলাইন, বাগদাদ এক্সপ্রেস, দেশ ট্রাভেলস বা ইত্যাদি বাসের সাহায্য নেন সেক্ষেত্রে তারা আপনাকে সরাসরি সীতাকুণ্ড উপজেলা সদরে পৌঁছে দিয়ে আসবে। কারণ ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মাঝামাঝিতে এই উপজেলার অবস্থান এবং এই রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত।
অন্যদিকে যারা ঢাকা থেকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী এবং মহানগর গোধূলী ট্রেন ব্যবহার করবেন তারাও সরাসরি ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডে পৌঁছে যেতে পারবেন। আর যারা চট্টগ্রাম থেকেই সরাসরি সীতাকুণ্ডে যাবেন তারা উত্তরা, চয়েস, স্টারলাইন, শাহী, জোনাকী, নোয়াখালী পরিবহন বাসে উঠে পড়তে পারেন।
এসব বাসে যাদের বেটে-বলে মিলবে না তারা ব্যবহার করতে পারেন রেসেলাহ, গ্রাম বাংলা, সোনার বাংলা, ত্রিশা পরিবহন নামক বাসগুলি৷ আর চট্টগ্রাম টু সীতাকুণ্ড রেলপথে বিভিন্ন মেইল ট্রেনের ব্যবস্থাও নিয়মিত থাকে।
সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী
সবশেষে সরাসরি সীতাকুণ্ড বাজারে থেকে থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে গুলিয়াখালী সী বিচে। যারা পথ চিনবেন না বলে মনে হচ্ছে তারা সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া করে নিতে পারেন। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার ভেতরেই আপনি সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সী বিচে পৌঁছে যেতে পারবেন।
গুলিয়াখালী সী বিচ ভ্রমণে কোথায় থাকবেন
যেহেতু এটি একটি নতুন আবিষ্কৃত পর্যটন কেন্দ্র সেহেতু এটি নিয়ে খুব একটা কাজ করা হয় নি। ফলে এখনো পর্যন্ত এখানে কোনো থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবুও যদি রাত কটানোর প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে আপনাকে সীতাকুণ্ড বাজারে অবস্থিত বিভিন্ন হোটেলের সাহায্য নিতে হবে।
এইসব হোটেলে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া ওঠতে পারে। বলে রাখা ভালো সীতাকুণ্ড বাজারে বেশ জনপ্রিয় ২ টি থাকার হোটেল রয়েছে। এগুলো হলো সৌদিয়া হোটেল এবং সাইমুন হোটেল। সাইমুন হোটেলের চাইতে সৌদিয়া হোটেলের ভাড়া তুলনামুলকভাবে বেশি হলেও সৌদিয়া হোটেলের সার্ভিস বরাবরই ভালো। ঝামেলা এড়াতে এসব হোটেলের সিট আগে থেকেই বুকিং করে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ শোলাকিয়া ঈদগাহ কিশোরগঞ্জ
কোথায় খাবেন
গুলিয়াখালী সী বিচ (guliakhali) নামের এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে রাত্রিযাপনের সমস্যার পাশাপাশি খাবার দাবার গ্রহনণরও একটা সমস্যা থেকেই যায়। কারণ এর আশেপাশে ভালোমানের কোনো খাবার হোটেলের ব্যবস্থা নেই। বিচের মাঝে যেই ছোট খাবার দোকানটি রয়েছে সেটিতেও অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণের খাবার পাওয়া যায় না।
এক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি সীতাকুণ্ড বাজার থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিতে হবে। যারা বিভিন্ন জেলা থেকে এই গুলিয়াখালী সী বিচ উপভোগ করতে আসবেন তারা সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় খাবার হিসেবে অবশ্যই তালের পিঠা এবং শুটকি ভর্তা ট্রাই করতে ভুলবেন না।
গুলিয়াখালী সী বিচ ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা
গুলিয়াখালী সী বিচ ভ্রমণে নিচের টিপসগুলো ফলো করতে ভুলবেন না:
- ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে দিনের পুরো অংশটি উপভোগ করতে রাতের ট্রেন বা বাসেই উঠে পড়ুন
- গুলিয়াখালী সী বিচে যাওয়ার আগেই সীতাকুণ্ড বাজারে অল্প বেশি নাস্তার পর্ব সেরে নিন
- সম্পূর্ন ভ্রমণে পানি, শুকনো খাবার এবং খাবার স্যালাইন নিতে ভুলবেন না
- অতিরিক্ত দামের কারণে গুলিয়াখালী সী বিচে থাকা ছোট খাবার দোকানটিকে সবসময় ইগনোর করুন
- সমুদ্রে চরে বেড়াতে বোট ভাড়া করার পূর্বে বোট ভাড়া নিয়ে আলোচনা করে নিন। রিজার্ভ সিএনজি ব্যবহার না করে লোকাল সিস্টেমে যাতায়াত করার চেষ্টা করুন
- গুলিয়াখালী সী বিচে কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন
- উক্ত বিচ ভ্রমণে জোয়ারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন
- জোয়ার ভাটার সময় মেনে নিজেকে নিরাপদে রাখুন
- যারা সাঁতার জানেন না তারা সমুদ্রের পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন
- যেকোনো প্রয়োজনে টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন
শেষ কথা
মনে রাখবেন গুলিয়াখালী সী বিচ (guliakhali) সরকারের মালিকানায় থাকলেও এখনো এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। সুতরাং নিরিবিলি পরিবেশে এই ভ্রমণকালীন সময়টুকুতে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা থাকার জন্য হোটেল বুক করবেন, তারা অবশ্যই হোটেল ভাড়া নিয় দরদাম করে নেবেন।
চাইলে সীতাকুণ্ডের পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো থাকার হোটলে ওঠে পড়তে পারেন। বলে রাখা ভালো, সীতাকুণ্ড থেকে ৪০ কি মি পথ পেরোলেই চট্টগ্রাম শহরের ভালো ভালো হোটেলের সার্ভিস নিতে পারবেন।
গুলিয়াখালী সী বিচ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s
১. গুলিয়াখালী সী বিচ কোথায়?
গুলিয়াখালী সী বিচের অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায়।
২. গুলিয়াখালী সী বিচে যাওয়ার উপায় কি?
গুলিয়াখালী সী বিচে যেতে হলে বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে শুরুতে সীতাকুণ্ড উপজেলায় পৌছে সীতাকুণ্ড বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩০ টাকায় অটোর সাহায্যে গুলিয়াখালী যেতে হবে।
৩. গুলিয়াখালী কোথায়?
গুলিয়াখালী চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত।
৪. গুলিয়াখালী সী বিচের অপর নাম কি?
গুলিয়াখালী সী বিচের অপর নাম হলো মুরাদপুর বিচ অথবা মুরাদপুর সৈকত।
আরও পড়ুন-
মাদারীপুরের দর্শনীয় স্থান
সাইরু হিল রিসোর্ট, বান্দরবান