খৈয়াছড়া ঝর্ণা – চট্টগ্রাম

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় ছুটি নিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন, নিজেকে নতুন উদ্যমে ফিরে পাবার জন্য। প্রকৃতি, পাহাড়, ঝর্ণা সবকিছু মিলিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি আপনার মন জুড়াতে বাধ্য করবেই। পাহাড়, ঝর্ণা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আজকে আলোচনা করবো “ঝর্ণার রাণী” নামে খ্যাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfall) সম্পর্কে। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর একটি এবং অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে পাবেন রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

৯ টি বড় ধাপ এবং অনেকগুলা বিচ্ছিন্ন ধাপ মিলে প্রায় ১২ টি ধাপ পাবেন এই ঝর্ণায়। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ, সোনালী ধান ক্ষেত, সবুজের সমারোহ এবং ঝরনার কলকল শব্দ সব মিলিয়ে প্রাণ জুড়ানো অনুভূতি পাবেন। যারা অ্যাডভেঞ্চার করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora) উত্তম জায়গা।

আরও পড়ুনঃ পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি

Table of Contents

খৈয়াছড়া ঝর্ণার অবস্থান 

চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে দৃষ্টিনন্দন খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfall) অবস্থিত। এই ঝর্ণাটির অবস্থান খৈয়াছড়া ইউনিয়নে হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা।

পাহাড়ের ভেতরের দিকে এই ঝর্ণাটির অবস্থান। তাই সরাসরি কোন যানবাহন ব্যবহার করে এর পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয়। পায়ে হেঁটে অথবা স্থানীয় যানবাহন (যেমন -সিএনজি) ব্যবহার করে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণার (khoiyachora) কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব।

তবে পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামের ভেতর দিয়ে এই ঝর্ণার মূল ধারা পর্যন্ত পৌঁছাতে অন্য কোন যানবাহনের ব্যবস্থা পাবেন না। এই রাস্তাটুকু শুধুমাত্র পায়ে হেঁটেই যেতে হবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার জন্য জন্য। এত কষ্ট করে যাওয়ার পর সব কষ্ট ভুলে যাবেন ঝর্ণার কাছে পৌঁছালে। এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। সব দুঃখ কষ্ট দূর করতে ঝর্ণার পানিতে গা ভেজাতে পারেন।

খৈয়াছড়া ঝর্ণার ইতিহাস

ধারনা মতে, প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে প্রবাহিত হচ্ছে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora)। জনমানবহীন পাহাড়ি এলাকা এবং ঝোপঝাড়ের আধিক্যের কারণে এই ঝর্ণার অবস্থান নির্ণয়ে অনেক সময় লেগেছে। আবার অনেকের মতে, পাহাড়ি ঢলের কারণে ৫০ বছর আগে তৈরি হয়েছে এই ঝর্ণা।

তার পূর্বে ঝর্ণাটির কোন অস্তিত্ব ছিল না। স্থানীয় লোকজন এই ঝর্ণাকে “চতল” নামে ডাকে । ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে কুন্ডের হাট (বড়তাকিয়া) ব্লকের ২৯৩৩.৬১ হেক্টর পাহাড়কে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। যার ফলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা এই জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত হয়।

২০১৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রামগড়-সীতাকুণ্ড-রিজার্ভ ফরেস্টের খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora) কেন্দ্র করে “ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প” গ্রহণ করেছে ।

খৈয়াছড়া ঝর্ণার সৌন্দর্য 

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা অপূর্ব এক ছবি হলো খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora)। মোট ৯টি বড় ঝর্ণার ধাপ এবং অনেকগুলা বিচ্ছিন্ন ধাপ রয়েছে এই ঝর্ণাতে। ঝর্ণাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি। এর প্রথম স্তরের উচ্চতা ৬০ ফুট, দ্বিতীয় স্তরের উচ্চতা ৪০ ফুট, তৃতীয় স্তরের উচ্চতা ১২০ ফুট।

এভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা এর মোট নয়টি স্তর রয়েছে। খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে পৌঁছানোর রাস্তাটা কিন্তু এত সহজ নয়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা, ক্ষেতের আইল, ছরা এবং অন্তত ৪ টি পাহাড় ট্রেকিং করে পার হয়ে ঝর্ণার কাছে পৌঁছানো যাবে। এখানকার প্রকৃতির অবিশ্বাস্য রূপের খেলা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

প্রতিটি ধাপে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে ট্রেকিং করে যেতে হবে। প্রাকৃতিক এই জলপ্রপাতের প্রথম ধাপ পর্যন্ত অনেকে এসে গা ভিজিয়ে আবার ফিরে চলে যান। ঝর্ণাটির প্রথম ধাপের বাম পাশে একটি দেয়ালের মতো খাড়াভাবে উঠে গেছে। পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য এটি বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে হবে।

কখনো কখনো গাছের শিকড়ের সাহায্য নিতে হবে। এমনকি ছোট ছোট গর্তে পা ফেলে উঠতে হবে উপরে। আপনার প্রতিটি মুহূর্তে মনে হবে এই বুঝি পরে গেলেন। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যখন আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকবেন, তখন পথের মাঝে দুই-একটা প্রাকৃতিক পুকুরের দেখা মিলবে।ট্রেকিং করে এভাবে কয়েক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আপনি উপরে উঠে আবার নিচে চলে আসতে পারবেন। 

পাহাড়ের সবুজ রঙ এবং ঝর্ণার পানি মিলেমিশে একাকার হয়েছে প্রকৃতিক এই জলপ্রপাতে। অপার্থিব প্রশান্তিতে মন ভরে উঠবে এই জলপ্রপাতের শীতল পানিতে গা ভেজালে। যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে এখানে জ্যোৎস্না রাতে ক্যাম্পিং করতে পারেন।

গঠনগত দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণাগুলোর একটি খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora)। বর্ষাকালে ঝর্ণায় যাওয়ার পথ আরো দুর্গম হয়ে ওঠে। পাহাড়ে ওঠার রাস্তা প্রচুর কর্দমাক্তো থাকে।

আরও পড়ুনঃ সাইরু হিল রিসোর্ট, বান্দরবান

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপায় 

বিভিন্ন উপায়ে আপনি খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে যেতে পারবেন। বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় (khoiyachora) যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের পূর্বে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে হবে। বাসের হেল্পার বা ড্রাইভারকে বলে রাখলে স্কুলের সামনে এসেই উনারা নামিয়ে দিবে ।

বাসে ঢাকা-খৈয়াছড়া ঝর্ণা

রাজধানী ঢাকার যে কোন স্থান থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে করে যেতে পারবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। নন-এসি বাস ভরা ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা। নন-এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে: 

  • এস আলম সার্ভিস 
  • শ্যামলী পরিবহন 
  • সৌদিয়া পরিবহন 
  • ইউনিক সার্ভিস  
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ 
  • ঈগল পরিবহন 
  • এনা পরিবহন ইত্যাদি 

এসি বাস ভাড়া ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এসি বাস গুলোর মধ্যে রয়েছে :

  • সৌদিয়া পরিবহন 
  • গ্রীন লাইন পরিবহন 
  • টি আর ট্রাভেলস 
  • সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি 

ঢাকা টু চট্টগ্রামগামী আপনার পছন্দমত যে কোন বাসে উঠে মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যাবেন। এছাড়াও ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে স্টার লাইন পরিবহনে ফেনী আসতে পারেন। ভাড়া লাগবে ২৮০ টাকা। এরপর ফেনী থেকে লোকাল বাসে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে পারেন। 

ট্রেনে ঢাকা-খৈয়াছড়া ঝর্ণা

ট্রেনের মাধ্যমে খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে উঠে ফেনী স্টেশনে নেমে যেতে হবে। ট্রেনের ভাড়া লাগবে শ্রেণি ভেদে জনপ্রতি ২৬৫ থেকে ৮০০ টাকা। এরপর ফেনী স্টেশন থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা দিয়ে ফেনী মহিপাল বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ফেনীর মহিপাল বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যাবেন। 

চট্টগ্রাম-খৈয়াছড়া ঝর্ণা

চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার সিটি গেইট থেকে কিছু লোকাল বাস মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে যায়। লোকাল বাসের ভাড়া পরবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। 

সিলেট-খৈয়াছড়া ঝর্ণা

বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে সিলেট থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা (khoiyachora) যেতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে মিরসরাই এর পূর্বে ঠাকুরদিঘী বাজারে নেমে যেতে হবে। ট্রেনে যেতে হলে আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং উদয়ন এক্সপ্রেস অথবা মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেসে ফেনী স্টেশন পর্যন্ত এসে নামতে হবে।

এরপর ফেনী স্টেশন থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা দিয়ে ফেনী মহিপাল বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। ভাড়া লাগবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ফেনীর মহিপাল বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যাবেন। লোকাল বাস ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা। 

বড়তাকিয়া বাজার-খৈয়াছড়া ঝর্ণা 

বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুল এর কাছে এসেছি সিএনজি ভাড়া করে খৈয়াছড়া ঝর্ণার ভিড়ির কাছে যেতে পারবেন। সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা। সিএনজি থেকে নামার পরে আপনার হাঁটার পথ শুরু হবে।

১০ মিনিট হাঁটার পর রেললাইনের দেখা পাবেন, সেখান থেকে আরও ১০ মিনিট হাঁটুন। তাহলে পৌঁছে যাবেন ঝিরির একদম কাছে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্রেকিং রুট এখান থেকেই শুরু হবে। ট্রেকিং করার জন্য সাথে অবশ্যই বাঁশের লাঠি রাখবেন। 

যদি সম্পূর্ণ পথ ট্রেকিং করে যেতে চান সেক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে জিজ্ঞাসা করে নিবেন। স্থানীয় জনগণ আপনাকে সাহায্য করবে খৈয়াছড়া ঝর্ণার সন্ধান দিতে । আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এখান থেকে গাইড নিতে পারেন। ভ্রমণ গাইড আপনাকে সাথে করে নিয়ে যাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণায়।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণ গাইড

  • সোহেল : 01852-483990
  • তারেক : 01832-586767

কোথায় থাকবেন 

খৈয়াছড়া ঝর্ণার কাছে এবং বড়তাকিয়া বাজারে থাকার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনে থাকতে চাইলে সেখানকার চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। থাকার জন্য সীতাকুণ্ডে স্থানীয় কিছু হোটেল রয়েছে। হোটেল গুলোর মধ্যে সৌদিয়া এবং সাইমুন অন্যতম ।

সৌদিয়া এবং সাইমুন হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে । বর্তমানে সীতাকুন্ড পৌরসভায় ডি টি রোডে অবস্থিত হোটেল সৌদিয়াতে বুকিং করার জন্য কল করতে পারেন ০১৯৯১-৭৮৭৯৭৯ এবং ০১৮১৬-৫১৮১১৯ এই নম্বরে।

আপনি যদি আরো ভালো মানের হোটেলে থাকতে চান সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল। বড়তাকিয়া বাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।

আরও পড়ুনঃ নেপাল ভ্রমন | নেপাল ভ্রমণ খরচ ও ভ্রমন গাইড

কোথায় খাবেন 

বেশ কিছু খাবার হোটেল রয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় (khoiyachora) যাওয়ার পথে। হোটেলগুলোতে আপনি মেনু অনুযায়ী খাবারের অর্ডার করে তারপর ঝর্ণাতে যেতে পারবেন। তাহলে ফিরে আসার পর অর্ডার করা খাবার খাবেন। স্থানীয় এই হোটেলগুলোতে অনেক স্বল্পমূল্যেই আপনি খাবার খেতে পারবেন।

তবে অবশ্যই দাম যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন সব স্থানীয় খাবার হোটেল বন্ধ হয়ে যায় বিকেল পাঁচটার পর। খাবার জন্য সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম শহরেও রয়েছে বেশ কিছু ভালো খাবারের হোটেল। সৌদিয়া রেস্তোরাঁ, আপন রেস্তোরাঁ, আল আমিন রেস্টুরেন্ট অনেক জনপ্রিয়। 

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে সর্তকতা 

  • খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পিচ্ছিল। তাই খুব সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। 
  • পানিতে জোঁক থাকতে পারে তাই জোঁক ছাড়ানোর জন্য লবণ বা গুল সঙ্গে রাখুন। 
  • জোঁক থেকে বাঁচার জন্য ঘাস এড়িয়ে চলুন ।
  • বাড়তি খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। 
  • ট্রেকিং এর সুবিধার জন্য বাঁশের লাঠি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। বড়তাকিয়া বাজারে স্থানীয় লোকেরা বাঁশের লাঠি বিক্রি করে। 
  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা ব্যবহার করবেন অথবা পায়ে পড়ার অ্যাঙ্গলেট ব্যবহার করুন। 
  • ঝর্ণার ওপরের ধাপ গুলোতে খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। সেখানে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। নইলে যেকোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। 
  • পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট সাথে রাখুন। কারণ এখানে মোবাইলে নেটওয়ার্ক সবসময় কাজ করে না। 
  • বৃষ্টি হলে অনেক সময় এখানে আটকা পড়ে থাকতে হয়। তাই চেষ্টা করবেন সকাল সকাল যাওয়ার। 
  • ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জেনে যাবেন। রাতে আগুন জালালে সকালে সেগুলার ছাই অবশ্যই পরিস্কার করে আসবেন। 

ভ্রমন খরচ 

আমাদের অনেকেরই ধারণা ভ্রমণ করতে হলেই বুঝি অনেক অনেক টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু আপনি যদি ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, অ্যাডভেঞ্চার করতে পছন্দ করেন চাইলে খুব অল্প খরচেই ঘুরে আসতে পারবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণায় (khoiyachora)। একদিনের খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের একটি আনুমানিক খরচের হিসাব নিচে দেওয়া হল :

  • ঢাকা থেকে বাসে করে বড়তাকিয়া বাজারে যাওয়া এবং আসার ভাড়া : ৪৮০+৪৮০ = ৯৬০ টাকা ( আপনারা চাইলে এসি বাসেও আসতে পারেন) 
  • বড়তাকিয়া বাজার থেকে ঝিরির কাছে যাওয়ার জন্য সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা। 
  • তিন বেলা (সকাল, দুপুর এবং রাত) খাবারের খরচ : ৫০+৭০+১০০ = ২২০ টাকা 

অর্থাৎ গাড়ি ভাড়া এবং খাবার খরচসহ মোটামুটি ১২৮০ টাকা হলেই ঘুরে আসতে পারবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণা থেকে। আপনি যদি ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান সেক্ষেত্রে খরচ কমে গিয়ে ১০০০ টাকার মধ্যেই ঘুরে আসতে পারবেন অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর প্রাকৃতিক এই জলপ্রপাতে। 

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় 

ঝর্ণার সৌন্দর্যের মৌলিক উপাদান হচ্ছে এর জলের প্রবাহ। আপনি যদি ঝর্ণা বা জলপ্রপাতকে তার নিজস্ব রূপের সর্বোচ্চ মাত্রায় দেখতে চান ঢল, প্লাবন এবং বৃষ্টির সময়কে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। আসল সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল।

কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ি রাস্তা অনেক বেশি দুর্গম এবং বিপদজনক হয়। তাই ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। বিপদের কথা মাথায় রেখে ভরা বর্ষা মৌসুমে না গিয়ে বর্ষা শুরুর আগে আগে অথবা বর্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উত্তম সময়। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই অনেক সাবধানতার সাথে অবলম্বন করতে হবে।

তবে সব বাধা পার হয়ে যখন ঝর্ণার কাছে পৌঁছাবেন তখন ঝর্নার সৌন্দর্য আপনাকে সবকিছু ভুলিয়ে দিবে।

শেষকথা 

আমাদের দেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। ভ্রমণপিপাসুরা সব সময় মুখিয়ে থাকে ভ্রমণ করার জন্য।  অ্যাডভেঞ্চার করতে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণা উত্তম স্থান। তবে আপনি যদি দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনের থেকে কিছুটা সময় আরাম-আয়েশের জন্য ছুটি কাটাতে চান তাহলে অবশ্যই পাহাড় বা ঝর্না আপনার জন্য নয়।

পাহাড়ের পথ থাকে অনেক দুর্গম। পাহাড়ের গহীন রাস্তা, পোকামাকড়ের কামড় কিংবা পা মচকে যাওয়া, ক্লান্তিবোধ সবকিছুকে মেনে নিয়ে আপনাকে যেতে হবে ঝর্ণা দেখতে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার (khoiyachora) নৈসর্গিক সৌন্দর্য আপনাকে ফেলে আসা সমস্ত দুর্গম পথের কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। দর্শনীয় স্থানগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।

তাই আশা করি আপনারা সবাই এসব স্থানের যত্ন নিবেন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না এবং এই স্থানগুলোর ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করবেন না।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s 

১. খৈয়াছড়া ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত? 

উত্তর : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে দৃষ্টিনন্দন খৈয়াছড়া ঝর্ণা অবস্থিত। 

২. খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উত্তম সময় কখন? 

উত্তর : বর্ষা শুরুর আগে আগে অথবা বর্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উত্তম সময়। কারণ ভরা বর্ষা মৌসুমে গেলে ঘটে যেতে পারে যে কোন দুর্ঘটনা। 

৩. খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে কেন যাব? 

উত্তর : গঠনগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। এখানে গেলে যেমন এর অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবেন তেমনি অ্যাডভেঞ্চার করতে পারবেন এবং অনুভব করবেন রোমাঞ্চকর অনুভূতি। 

৪. খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যেতে কি ভ্রমণ গাইড প্রয়োজন ? 

উত্তর : খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যেতে সাধারণত ভ্রমণ গাইডের প্রয়োজন নেই। তবে আপনি চাইলে ভ্রমণ গাইড হায়ার (Hire) করতে পারেন।

আরও পড়ুন-

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত : সমুদ্র কন্যা, পটুয়াখালী

শোলাকিয়া ঈদগাহ কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন