শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান

শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান

শরীয়তপুর (shariatpur) হচ্ছে বাংলাদেশের একটি জেলা, যেটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা গঠিত হয়েছে ইতিহাস সমৃদ্ধ রংপুরের দক্ষিণ অঞ্চলে।

মোদের গর্ব মোদের আশা…. বাংলা ভাষা বিখ্যাত কবি অতুল প্রসাদ সেন ঔপন্যাসিক আবু ইসহাক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা পুলিন বিহারী দাসের জন্মস্থান বর্তমানে শরিয়তপুর জেলায়। বাংলাদেশের সকল জেলার মধ্যে অন্যতম একটি জেলা হচ্ছে শরীয়তপুর জেলা।

শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম,বুড়িরহাট মুন্সিবাড়ি ও মসজিদ,রুদ্রকর মঠ, মহিষারের দিঘী ও মনসা বাড়ি বেশ জনপ্রিয় জায়গা। এই জায়গা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরও পড়ুনঃ লালবাগ কেল্লা (পুরান ঢাকার) ভ্রমন

Table of Contents

১.শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান – মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম

২০১১ সালে প্রায় ৫০ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয় বৃহত্তম ফরিদপুরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম। শরীয়তপুরে (shariatpur) নড়িয়া থানা থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে কলকাতা গ্রামের মনোরম পরিবেশে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম নির্মিত হয়েছে। একটি সামাজিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এখানেও আধুনিক বিনোদনের সকল ব্যবস্থা রয়েছে।

শিশুদের জন্য রয়েছে সুপার-চুয়ার, স্পিডবোট, শিশুরাইড, ওয়াটার হুইল, মিনি গ্রাউন্ড সহ আরো মজার মজার সব রাইড। এছাড়াও রয়েছে দুটি খেলার মাঠ এবং একটি বিশালাকার পুকুর। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ।

মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম এর সবচেয়ে আকর্ষণ বিশাল আকৃতির তিনটি খাঁচা যেখানে রয়েছে সুন্দরবনের বৃষ্টি হরিণ সঙ্গে হরিন শাবক। হরিণ ছাড়াও রয়েছে অজগর সাপ, কুমির, বানর, ময়ূর, ভাল্লুক, পাখি আরো অন্যান্য প্রজাতি। দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত তাকে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম।

কিভাবে যাবেন

সড়কপথে

ডাকার সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি গ্লোরি পরিবহনে উঠে নড়িয়া। সেখান থেকে রিক্সা, অটো রিক্সা বা অন্যান্য যেকোন যানবাহনে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডমে আসা যায়। এছাড়া ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে মাওয়া হয়ে যেতে পারেন নড়িয়ায়।

নৌ-পথে

ঢাকার সদরঘাট থেকে নিরাপদ যাত্রীক সুরেশ্বর নামক লঞ্চ যুগের নড়িয়া লঞ্চঘাটে যাওয়া যায়। সেখান থেকে রিক্সা কিংবা অটো রিক্সায় বা পায়ে হেঁটে ও সহজে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডমে চলে যাওয়া যায়।

২.শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান – ধানুকার মনসা বাড়ি

৬ শত বছরের প্রাচীন এ বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে নানান আলোকিত ও কিংবদন্তী লোক কথা। এ জেলার প্রাচীন ব্যক্তিগণ এ বাড়িকে ময়ূর বদ্ধের বাড়ি নামে চিনে থাকেন। সুলতানি ও মোগল আমলের নির্মাণ শৈলীতে নির্মিত এ বাড়িতে পাঁচটি ইমারত আছে।

তৎকালীন সময়ে এখানে পূজা দেয়ার জন্য ভারতবর্ষের বহু লোকের আগমন ঘটতো বলে বাড়িটি ধানুকার মনসা বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এক সময় এ বাড়ির পাশে ছিল মহিলা মনসা মন্দির ও শিব মন্দির।

কিংবদন্তি থেকে জানা যায় ভারতের কৌনজ থেকে তৎকালীন সময়ে ধনাঢ্য ভট্টাচার্য পরিবার অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তারা শিক্ষা, ধর্ম পরায়ণতা, অর্থবিত্ত সমৃদ্ধ ছিল বলে জানা যায়। এটাও জানা যায় যে তাদের পূর্ব পুরুষরা ছিল ময়ূর ভট্ট।

মনসা বাড়িতে রয়েছে পিতলের মূর্তি। যে মূর্তিটি তৎকালীন সময় তিন আশা নদীতে মাছ ধরার সময় জালে মূর্তিটি পেয়ে জেলে আলোকিকভাবে এ মন্দিরে রেখে যান। এখনো মন্দিরে এই মূর্তিটি দেখা যায়। 

কিভাবে যাবেন

যেকোনো জায়গা থেকে সিএনজি বা অন্যান্য যানবাহন দ্বারা সহজেই শরীয়তপুরে (shariatpur) যাওয়া যায়। শরীয়তপুরের ৮ নং ওয়ার্ডের ধানুকায় নকায় মনসা বাড়িটি অবস্থিত।

৩.মহিষারের দিগম্বরের দীঘি

শরীয়তপুরের খুবই বিখ্যাত একটি জায়গা হচ্ছে মহিষারের দিগম্বর দীঘি। ৬০০ বছরের পুরনো শরীয়তপুর (shariatpur) জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় মহিষারের দিগম্বরী দিঘী অবস্থিত।

মোগল আমলের স্বাধীন ১২ ভুঁইয়ার একজন বিক্রমপুর পরগনার জমিদার রাজা চাঁদ রায় দিগম্বরীর সন্ন্যাসীর অনুরোধে ১০ একর জমির উপর এই দীঘি খনন করেন। মহিষারের দিগম্বরের দিকে ইতিহাসের অমর সাক্ষী ও এর আশে পাশের এলাকাকে ঘিরে শরীয়তপুরের মহিষার হচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা।

স্থানীয়রা জানান যুগ যুগ ধরে এখানে সপ্তাহের দুদিন শনি ও মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হয়। এছাড়া প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ পূজা মেলা হয়। দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী এ মেলায় সমবেত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্ট (গাজীপুর)

কিভাবে যাবেন

যেকোনো জায়গা থেকে আপনি যেকোন যানবাহনে মহিষারের দিগম্বর সন্ন্যাসী বাড়ি ও দিগম্বরের দীঘি যেতে পারে। বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান ও বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। মহিষারের দীঘিটি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

৪.রুদ্রকর মঠ

দেড়শ বছরের পুরনো এই মতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রুদ্রকর মঠ।

এখনকার হিন্দুগণ দেশ বিভাগের পূর্বে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এখানকার মঠ সারা বাংলাদেশে অনেক বিখ্যাত। প্রতিবছরই এখানে সাড়ম্বরে পূজা ও কীর্তন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রতিবছর পূজার সময় এই মূর্তি দেখার জন্য অনেক মানুষ বহু জায়গা থেকে এসে থাকে।

কিভাবে যাবেন

শরীয়তপুর (shariatpur) সদর থেকে খুব সহজেই ইঞ্জিন চালিত অটোতে বা রিক্সায় রুদ্রকর এই মঠে যাওয়া যায়। দেড়শত বছরের পুরনো এই মটটি সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত।

৫.বুড়ির হাট মসজিদ

শরীয়তপুর (shariatpur) জেলার বেতরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এই বুড়িরহাট মসজিদটি। শরীয়তপুরের খুবই বিখ্যাত এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার নিদর্শন হচ্ছে এই মসজিদটি। শরিয়তপুর জেলার প্রধান আকর্ষণ এই বুড়িরহাট মসজিদ। শরীয়তপুর বেগরগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বাজারে এই মসজিদের অবস্থান।

আনুমানিক বলা যায় প্রায় ১০০ বছর আগের তৈরি মসজিদে ইসলামিক স্থাপত্য কলার এক অপূর্ব নিদর্শন। মাঝির ঘাট থেকে বাসের সদর হয়ে এই বুড়িরহাট মসজিদে আসা যায়।

কিভাবে যাবেন

শরীয়তপুর সদর থেকে বাসে অথবা অটুট করে বুড়িহাট মসজিদে যাওয়া যায়। শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার বুড়িরহাট মসজিদ খুবই বিখ্যাত এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার নিদর্শন।

আরও পড়ুনঃ পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি

৬.সুরেশ্বর দরবার শরীফ

শরীয়তপুরের খুবই বিখ্যাত একটি স্থান হল সুরেশ্বর দরবার শরীফ। শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর এটি অন্যতম একটি স্থান।

এই দরবার শরীফটি ইতিহাসে অতি সমৃদ্ধশালী। বর্তমানে সুরেশ্বর দরবার শরীফটি পদ্মা নদীর পাশে অবস্থিত। পূর্ববর্তী কাগজপত্রে এই অঞ্চল বিক্রমপুর ও খলিলাবাদ পরগণা নামে অতি পরিচিত। ইতিহাসে সুরেশ্বর নামেও এটি পরিচিত।

কিভাবে যাবেন

সড়ক পথ

ঢাকা- মাওয়া -শরীয়তপুর হয়ে সুরেশ্বর এবং বরিশাল ফরিদপুর হতে শরীয়তপুর হয়ে সড়কপথে সুরেশ্বর আসা যায়।

নদী পথ

ঢাকার সদরঘাট এবং নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে সরাসরি সুরেশ্বর লঞ্চে হয়ে যাতায়াতের সুব্যবস্থা আছে।

কোথায় থাকবেন 

শরীয়তপুর (shariatpur) জেলার মধ্যে খুব ভালো মানের হোটেল আবাসন ব্যবস্থা এখনো সেরকমভাবে গড়ে উঠেনি। তবে শরীয়তপুর জেলা সদরে কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন হোটেল নূর, চন্দ্র দাস রেস্ট হাউস, হোটেল শের আলী এবং এ রকমই আরো কয়েকটি হোটেল। 

কোথায় খাবেন

শরীয়তপুর জেলা শহরে খাবারের জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের চাইনিজ এবং ভালো মানের বাংলা খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। আপনার সাধ্য অনুযায়ী বা বাজেট মতো পেয়ে যাবেন খাবার যেকোনো হোটেলেই। শরীয়তপুর শহরের মধ্যে কিছু  রেস্টুরেন্ট হচ্ছে, হোটেল জনতা, উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, চিকন্দি ফুড পার্ক, চিলেকোঠা ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। 

শেষকথা

ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো। কর্ম ব্যস্ততার মধ্য থেকে কিছুটা সময় ছুটি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন  শরীয়তপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে। ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাস জানতে, অবশ্যই আপনাকে সেই স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শান্তিপ্রিয় জায়গা, খুবই সৌন্দর্যে ভরপুর শরীয়তপুরের প্রতিটা দর্শনীয় স্থান। 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন শরীয়তপুরের দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন, আমরা সর্বক্ষণ আপনার উত্তর দিতে প্রস্তুত।

শরীয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ’s

১. শরীয়তপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? 

উত্তর :- শরীয়তপুর জেলা চিত্তাকর্ষক স্থান, কোদালপুর দরবার শরীফ এবং সুরেশ্বর দরবার শরীফের জন্য খুবই বিখ্যাত। 

২. শরীয়তপুর জেলার আয়তন কত? 

উত্তর :- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১১ মিটার এবং এর মোট আয়তন ২৪.৯২ বর্গকিলোমিটার। 

৩. শরীয়তপুর বাংলাদেশের কোন বিভাগে অবস্থিত? 

উত্তর :- শরীয়তপুর বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। 

৪. ঢাকা টু শরীয়তপুর বাস ভাড়া কত?

উত্তর :- শরীয়তপুর থেকে ঢাকা বাস ভাড়া নিচ্ছে (নন এসি) ২৫০ টাকা এবং বিআরটিসি এসি বাস ঢাকা থেকে শরীয়তপুর জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে  ৩০০ টাকা।

আরও পড়ুন-

সাইরু হিল রিসোর্ট, বান্দরবান

নীলগিরি বান্দরবান

মন্তব্য করুন