নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী

নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ হলো বাংলাদেশের বিশেষ একটি চর। যা দ্বীপ হিসাবে বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নিঝুম দ্বীপের অবস্থান চট্টগ্রামে। এইখানে যেতে হলে আপনাকে চট্টগ্রামের নোয়াখালীর অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলায় যেতে হবে। মূলত এই নিঝুম দ্বীপের উৎপত্তি হয়েছে মেঘনা নদীর মোহনা  থেকে।

এই দ্বীপটি (nijhum dwip) একটি চর হলেও এটি সৃষ্টি হয়েছে সর্বমোট ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন চরের সাহায্যে। এই ৪ টি চরের নাম হলো কামলার চর, ওসমান চর, বাউল্লারচর, মৌলভীর চর। এই চরের আয়তন হলো ১৪০৫০ একর। যা ১৯৪০ সালে সাগরের মাঝখানে জেগে উঠে ছিল।

যদিও ১৯৭০ সালের আগে এই দ্বীপটিকে কেউ চিনতো না! ১৯৭০ সালেই বাংলাদেশ বনবিভাগ এটিকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মজার ব্যাপার হলো নিঝুম দ্বীপের নামকরণ নিয়ে লোকমুখে বিভিন্ন তথ্য প্রচলিত রয়েছে। যেমন কেউ কেউ মনে করেন এই দ্বীপের প্রথম এবং প্রাথমিক নাম ছিল চর ওসমান।

বলা হয়ে থাকে ওসমান নামে একটি ব্যক্তি ছিল। যার কাজ ছিল মহিষ চড়ানো। একদিন তিনি মহিষ চড়াতে চড়াতে মহিষ সাথে নিয়েই এই দ্বীপে ঢুকে পড়েন। আবার এই দ্বীপটিকে আবিষ্কার করা জেলে সম্প্রদায় এর নাম রাখে বল্লার চর। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে স্থানীয়রা এই চরটিকে বল্লার চর নামে অবিহিত করে থাকে। আর বর্তমানে এটিকে সারা বাংলাদেশ  নিঝুম দ্বীপ নামে চেনে।

 আরও পড়ুনঃ মাওয়া রিসোর্ট (লৌহজং, কান্দিপাড়া ) মুন্সিগঞ্জ

নিঝুম দ্বীপ – দর্শনীয় স্থান 

এই দ্বীপটির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পলিমাটির চর। এই চরটিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো এখানকার পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে ট্যুর প্ল্যান করতে হবে শীতকালে। কারণ এই সময়ে দ্বীপটিতে অতিথি পাখিসহ রাঁজহাস, বাটান, গাংচিল, জিরিয়া, চখাচখি, পিয়ং, ভূতিহাঁস, সরালি, লেনজা ইত্যাদি পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

নিঝুম দ্বীপে আরো আছে কেওড়া গাছ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপন করেছে। এখানে ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির বিভিন্ন গাছও রয়েছে।

এছাড়াও জোয়ারের পানিতে বয়ে আসে নানা ধরণের মাছ। আর এই মাছ নিঝুম দ্বীপে বসবাস করা পাখিদের একমাত্র খাবার। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছের জন্য এই দ্বীপটি (nijhum dwip) খুবই বিখ্যাত। এছাড়া শীত অথবা শীত পরবর্তী সময়ে চেঁউয়া মাছের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই মাছ ধরে জেলেরা শুঁটকি তৈরি করে। নিঝুম দ্বীপে প্রায় ২২০০০ হরিণ রয়েছে। এই দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া কোনো ধরনের হিংস্র প্রাণী চোখে পড়েনি।

কিভাবে যাবেন

শুরুতে নিঝুম দ্বীপে যেতে হলে বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে যেতে হবে নোয়াখালীতে। বাসে করে গেলে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকাতেই ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে নোয়াখালী বাসের মধ্যে রয়েছে এশিয়া লাইন, এশিয়া ক্লাসিক, একুশে এক্সপ্রেস, হিমাচল এক্সপ্রেস।

পাশাপাশি চাইলে ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে যাওয়া যায়। যারা ট্রেনে করে যেতে চান তারা ঢাকা থেকে সরাসরি নোয়াখালীর মাইজদিতে পৌঁছে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে উপকুল এক্সপ্রেস ট্রেনের সাহায্য নিতে পারেন। এই ট্রেনটির কার্যক্রম সপ্তাহে একদিন বন্ধ রেখে নিয়মিত পরিচালনা করা হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের যেকোনো দিন বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে এই ট্রেনটি নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২৩০ থেকে ৫৩০ টাকা। বাস এবং ট্রেন ছাড়াও লঞ্চে করে ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাওয়া যায়। বাস বা ট্রেনে করে নোয়াখালী পৌছানোর পর আপনাকে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুরে। সেখান থেকে ৪৫০ বা ৫০০ টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান ঘাটায় যেতে হবে। এভারেজ স্পীডবোট বা ট্রলারে করে মোক্তারিয়া ঘাটে যেতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৯০ থেকে ৫০০ টাকা। সবশেষে ট্রলারে করে নিঝুম দ্বীপে (nijhum dwip) পৌছানো যাবে। 

লঞ্চে করে

লঞ্চে করে যেতে হলে আপনাকে যেকেনো দিন বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটের আগেই ঢাকায় সদরঘাটে অপেক্ষা করতে হবে। আর সিট অনুযায়ী খরচ পড়বে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। এই লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটে থামে।

তমুরদ্দী ঘাট থেকে মোটর সাইকেল করে আপনাকে যেতে হবে মুকতারিয়া ঘাটে। একজনের পিছনে ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। এই ঘাট থেকে আপনাকে সরাসরি যেতে হবে বান্দরটিলা ঘাটে। এই পথে আপনাকে জনপ্রতি খরচ করতে হবে ২২ টাকা। 

এই দ্বীপে (nijhum dwip) কিছু ফিসিং ট্রলার রয়েছে। যা প্রতিদিন সকাল ১০ টায় তমুরুদ্দী ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপে যাত্রা শুরু করে। এইসব ট্রলারে উঠতে হলে আপনাকে জনপ্রতি গুনতে হবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আর রিজাভ করে যেতে চাইলে ৩৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বাজেটে হবে। এছাড়াও আপনি মনপুরা ঘাট থেকে নিতমুরুদ্দী ঘাট হয়ে সহজেই নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি

কোথায় থাকবেন

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে রাত্রিযাপনের জন্য বিশেষ রিসোর্ট রয়েছে। এই রিসোর্টের নাম হলো নিঝুম রিসোর্ট (nijhum dwip)। এইখানে আপনি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকায় বেশ ভালোভাবেই থাকতে পারবেন। পুরো রিসোর্টের সর্বমোট ৯ টি রুম রয়েছে।

কিছু রুমে রয়েছে ডাবল বেডের ব্যবস্থা এবং আর কিছু রুমে রয়েছে ট্রিপল বেডের ব্যবস্থা। দুটো বেড সিস্টেমের ভাড়ার পরিমাণ কিন্তু আলাদা। আপনি যদি আগে থেকেই নিঝুম রিসোর্ট বুক করতে চান সেক্ষেত্রে 01552372269 নাম্বারে কল করতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে পু্রুষ হিসাবে রাত কাটাতে মসজিদ বোর্ডিং ব্যবহার করতে পারেন। 

কোথায় খাবেন

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি না খেলে ভুল করা হবে। সুতরাং আগে থেকেই অর্ডার করে এসব খাবার বা নিজেদের যেকোনো পছন্দের খাবার ট্রাই করতে পারেন। খাবারের দোকান হিসাবে বাজার বেছে নিতে পারেন। এখানে বেশকিছু হোটেল রয়েছে, যেসব হোটেলে সবসময় ভালো খাবার পাওয়া যায়। পাশাপাশি যাদের বারবিকিউ পার্টি করার ইচ্ছা আছে তারা নিঝুম রিসোর্টের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নিতে পারেন। 

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে বিশেষ টিপস 

  • শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছ কিনে নিতে ভুলবেন না 
  • নিঝুম রিসোর্টে না থাকতে চাইলে নামার বাজার মসজিদ কর্তৃপক্ষের মসজিদ বোর্ডিংয়ে থাকতে পারেন 
  • নিঝুম দ্বীপে ভালো মানের সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি ট্রাই করতে ভুলবেন না 
  • সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিতে ভুলবেন না
  • এই দ্বীপে বসবাস করা প্রতিটি মানুষ যেহেতু সহজসরল সেহেতু আপনারও উচিত হবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার

শেষ কথা

মনে রাখবেন, নিঝুম দ্বীপ (nijhum dwip) ভ্রমণে নিজের এবং সাথে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের দিকে সতর্ক থাকা উচিত। যেহেতু এটি তুলনামূলকভাবে কোলাহলহীন স্থান সেহেতু হঠাৎ আক্রমণের মুখোমুখি পড়ার আশংকা কাজ করবে। আর এই স্থানে কিন্তু রবি এবং এয়ারটেল ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না।

রবি এবং এয়ারটেল সিম ব্যবহার করলেও এর থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া সোলার এবং জেনারেটরের কেরামতি ছাড়া এখানে কোনো বৈদ্যুতিক সুবিধা পাওয়া যাবে না। আশা করি সকল দিক মাথায় রেখে এই দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারলে পুরো বিষয়টিই হয়ে উঠবে বেশ উপভোগ্য, সহজ এবং সুন্দর! 

নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. নিঝুম দ্বীপের অপর নাম কি?

নিঝুম দ্বীপের অপর নাম হলো ইছামতীর চর। 

২. নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান কোথায় অবস্থিত?

নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান চট্টগ্রামের নোয়াখালীর হাতিয়ায অবস্থিত। 

৩. নিঝুম দ্বীপ কোন নদীর মোহনায় অবস্থিত? 

নিঝুম দ্বীপ মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত।

৪. নিঝুম দ্বীপের আয়তন কত?

নিঝুম দ্বীপের আয়তন ১৬৩ বর্গকিলোমিটার। 

৫. নিঝুম দ্বীপ কেন বিখ্যাত?

নিঝুম দ্বীপ সেখানকার প্রাণী বিশেষ করে হরিণের জন্যে বেশ বিখ্যাত। 

আরও পড়ুন-

দেবতাখুম বান্দরবান 

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

মন্তব্য করুন