মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান

মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান

ভ্রমণ এবং স্থান পরিবর্তন মনে নতুন উদ্যম যোগায়। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকা থেকে খুব কাছেই মানিকগঞ্জ (Manikganj) জেলায়। ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ জেলার দূরত্ব ৫৪.৯ কিলোমিটার। আজকে আলোচনা করব মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

লোক সংগীত এবং হাজারী গুড়ের দেশ মানিকগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। মানিকগঞ্জকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ মানিকগঞ্জ (Manikganj) পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।

ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর মানিকগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাকে মুগ্ধ করবে। আপনি যদি ইতিহাস এবং প্রকৃতি পছন্দ করেন তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসুন মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সমূহতে। 

মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থানসমূহ 

মানিকগঞ্জে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • বেতিলা জমিদার বাড়ি 
  • তেওতা জমিদার বাড়ি 
  • তেওতা জমিদার বাড়ির দোল মঞ্চ 
  • ধানকোড়া জমিদার বাড়ি 
  • বালিয়াটি প্রাসাদ 
  • প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র 
  • নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট 
  • শহীদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর 
  • ফলসাটিয়া খামারবাড়ি 
  • স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট 
  • ক্ষণিকা 

বেতিলা জমিদার বাড়ি 

মানিকগঞ্জ (Manikganj) সদর উপজেলার বেতিলায় ঐতিহাসিক স্থাপনা বেতিলা জমিদার বাড়ি ( Betila Zamindar Bari) অবস্থিত। বেতিলা খাল একসময় প্রবল খরস্রোতা ছিলো। এই খাল দিয়ে সহজেই যাওয়া যেত ধলেশ্বরী এবং কালীগঙ্গা নদীতে। যার ফলে তৎকালীন সময়ের বড় বড় বণিকেরা বেতিলা খালকে ব্যবহার করতেন নিরাপদ পথ হিসেবে।

অত্র অঞ্চলের অন্যতম বণিক সত্য বাবুর বসত বাড়িটিই বেতিলা জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বেতিলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে কলকাতার বণিক জ্যোতি বাবু বেতিলা জমিদার বাড়ির পূর্বপুরুষ ছিলেন।

তিনি এই জমিদাড় বাড়ি তৈরি করেছিলেন পাটের ব্যবসার সুবিধার জন্য। বর্তমানে এটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে রয়েছে পাশাপাশি দুটি বিল্ডিং। সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকলেও এই বাড়ির অবস্থা খুব শোচনীয়। এর স্থাপনা যথেষ্ট মজবুত হলেও অযত্ন, অনাদর আর অবহেলার ছাপ লক্ষ করবেন। 

মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে বেতিলা জমিদাড় বাড়ি অন্যতম। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেতিলা বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য রয়েছে বাস, বাইক এবং বেবি টেক্সি । বেতিলা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো বাইকে চড়ে বেতিলা বাজারের কাছে অবস্থিত বেতিলা জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন। 

তেওতা জমিদার বাড়ি 

মানিকগঞ্জ (Manikganj)  জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত তেওতা জমিদার বাড়ি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং তার প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমিলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। কাজী নজরুল ইসলাম এবং প্রমিলা দেবীর প্রেমের স্মৃতির সাক্ষী এই তেওতা জমিদার বাড়ির (Teota Zamindar Bari) পাশেই ছিল প্রমিলা দেবীর পিতার বাড়ি। প্রমিলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভাতুষ্পুত্র বীরেন সেন এর সাথে কবির সখ্যতার কারণে তাদের বাড়িতে অবাধে যাতায়াত করতে পারতেন। 

লোকমুখে প্রচলিত আছে, তেওতা জমিদার বাড়ির বয়স প্রায় ৩০০ বছর। ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে পাচুসেন নামের এক দরিদ্র কৃষক তামাকের ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ অর্জন করেছিল। তিনি দিনাজপুরের জয়গঞ্জে জমিদারি কিনে পঞ্চানন সেন নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ওই সময় তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ৫৫ কক্ষ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এই  বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। 

তেওতা জমিদাড় বাড়ির প্রধান ভবনের উত্তরের ভবনগুলোকে হেমশংকর এস্টেট এবং দক্ষিণের ভবনগুলোকে জয়সংকর এস্টেট নিয়েছিল। প্রত্যেকটি এস্টেটের সামনে নাট মন্দির অবস্থিত। এর পূর্ব দিকের লালদীঘির বাড়িটা জমিদারদের অন্দরমহল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। দীঘিতে দুটি শান বাঁধানো ঘাট এবং দক্ষিণ পাশে একটি চোরাকুঠুরি বা অন্ধকুপ আছে।

১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এর উত্তর দিকের ভবনের সামনে ৭৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারতলা নবরত্ন মঠ বা নবরত্ন মন্দির । জমিদার বাড়িটি প্রায় ৭.৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট থেকে রিকশায় (২০ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া ) এবং অটোতে (১০ টাকা ভাড়া) করে যেতে পারবেন তেওতা জমিদার বাড়িতে। আপনি যদি উথলী বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে চান তাহলে বাসে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভাড়া মাত্র ৫ টাকা।

আরও পড়ুনঃ রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট 

নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট অবস্থিত মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা গ্রামে। ধলেশ্বরী নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট একদম কোলাহল মুক্ত শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ। সবুজে ঘেরা এই পিকনিক স্পটে রয়েছে প্রায় তিন হাজার পাখি, বিভিন্ন রকম পাখির আবাস। আরো দেখতে পাবেন বানর, উট, হরিণ, ইমু পাখি এবং ময়ূর। শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক আছে। 

মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান নাহার গার্ডেনে পিকনিক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য টাইটানিক ভিলা, পালকি কটেজ, বুকেন ভিলা, ভি আই পি বাংলা, ফোয়ারা কটেজ, গার্ডেন কটেজ এবং পার্ক কটেজ নামের সাতটি আলাদা পিকনিক স্পট রয়েছে। পিকনিক করার জন্য আগত অতিথিদের সংখ্যা ও সিজনের ভিত্তিতে ৫০০০ থেকে ৩০,০০০ পর্যন্ত টাকা খরচ হয়। 

পিকনিক করা ছাড়াও বিনোদনের জন্য যে কেউ টিকেট কেটে প্রবেশ করতে পারবেন নাহার গার্ডেনে। টিকেট মূল্য ৫০ টাকা মাত্র। এখানে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য নামাজ এবং ক্যান্টিনের সুব্যবস্থা। এখানে গাড়ি পার্কিং করার জন্য আলাদা অর্থ দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসের পার্কিং চার্জ ৫০ টাকা এবং বাসের পার্কিং চার্জ ৯০ টাকা করে। 

পিকনিক স্পটের খরচ 

১. বুকেন ভিলা : ধারণক্ষমতা ২৫০ থেকে ৩০০ জন। শুক্র, শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনের ভাড়া ৩০,০০০ টাকা। কার্য দিবসের ভাড়া ১৫০০০ টাকা। 

. টাইটানিক ভিলা : ধারণক্ষমতা ২৫০ থেকে ৩০০ জন। শুক্র, শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনের ভাড়া ৩০,০০০ টাকা। কার্য দিবসের ভাড়া ১৫০০০ টাকা। 

৩. ভিআইপি বাংলা : ধারণক্ষমতা ৬০ থেকে ৮০ জন। শুক্র, শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনের ভাড়া ১৫,০০০ টাকা। কার্য দিবসের ভাড়া ৮০০০ টাকা। 

৪. পালকি কটেজ : ধারণক্ষমতা ১৫০ থেকে ২০০ জন। শুক্র, শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনের ভাড়া ২০,০০০ টাকা। কার্য দিবসের ভাড়া ১০,০০০ টাকা।

৫. ফোয়ারা কটেজ : ধারণক্ষমতা ৬০ থেকে ৮০ জন। শুক্র, শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনের ভাড়া ১০,০০০ টাকা। কার্য দিবসের ভাড়া ৫০০০ টাকা।

পিকনিক স্পট বুকিং 

১. ৫০% বুকিং মানি অগ্রিম দিতে হবে। 

২. বুকিং এর চেয়ে বেশি লোকের জন্য জন প্রতি ১৫০ টাকা করে দিতে হবে। পিকনিকের তারিখ হতে ৮ দিন আগে চাইলেও বুকিংকৃত নির্দিষ্ট দিন ছাড়া কোন তারিখ পরিবর্তন বা বাতিল গ্রহণযোগ্য হবে না। 

৩. পিকনিকের তারিখ হতে ১৬ দিন পূর্বে পিকনিক স্পট খালি থাকা সাপেক্ষে পিকনিকের তারিখ পরিবর্তন করতে পারবেন। 

৪. পিকনিকের তারিখ থেকে ৩০ দিন পূর্বে যেকোনো পিকনিকের তারিখ পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারবেন। 

যোগাযোগ 

  •  01732-477734
  •  01750-195105
  •  01750-195100

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি 

মানিকগঞ্জ (Manikganj) জেলা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া থানার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliati Palace)। সাতটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে গৌরবের সাক্ষী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই জমিদার বাড়ি। গোবিন্দ রাম সাহা বালিয়াটি জমিদার পরিবারের গোড়াপত্তন করেছিলেন।

এই জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকারের মধ্যে কিশোরিলাল রায় চৌধুরী, রায় বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী তৎকালীন শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য অনেক পরিচিত ছিলেন। মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করা হচ্ছে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি “বালিয়াটি প্যালেস” নামেও পরিচিত। উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মান হওয়া ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদ চত্বরটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। সমস্ত জমিদার চত্বর উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং এই জমিদার বাড়ির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে সুপ্রশস্ত সবুজে ঢাকা আঙ্গিনা চোখে পড়বে। আঙিনার পরেই রয়েছে পাশাপাশি চারটি বহুতল ভবন।

ভবনগুলোর পিছনে রয়েছে চারটি পুকুর এবং জমিদার অন্দরমহল। ২০০ টি কক্ষ সংখ্যা বিশিষ্ট প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষই সুনিপুণ কারুকার্যমন্ডিত। 

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের সময়

  • গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত  দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
  • শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। 
  • শুক্রবার বাদে বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে  দুপুর ১ টা থেকে ১ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত  সাময়িক বিরতিতে জমিদার বাড়ি বন্ধ থাকে। 
  • প্রতি শুক্রবার দুপুর ১২ঃ৩০ মিনিট থেকে ২ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত নামাজের জন্য সাময়িক বন্ধ থাকে। 
  • প্রতি রবিবার পূর্ণদিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস ছাড়াও সকল সরকারি ছুটির দিন দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকে। 

প্রবেশ মূল্য – বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা প্রদান করতে হয়। বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা প্রবেশ মূল্য। 

ধানকোড়া জমিদার বাড়ি 

মানিকগঞ্জ (Manikganj) জেলার সাটুরিয়া থানার ধানকোড়া গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক ধানকোড়া জমিদার বাড়ি। মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে ধানকোড়া জমিদার বাড়ি ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই জমিদার বাড়িটি উনিশ শতকের স্থাপত্য কৌশলের অন্যতম নিদর্শন। এর প্রবেশ পথে সিংহের ভাস্কর্য খচিত একটি প্রবেশদ্বার আছে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির ভবনের একাংশ বাংলাদেশ সরকারের ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ভারতের দিল্লি থেকে বর্তমান সাটুরিয়া উপজেলায় এই জমিদার বংশধরেরা এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরী ছিলেন জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। জমিদারি প্রথা বিলপ্তির পূর্ব পর্যন্ত একে একে জমিদার বংশধররা এই জমিদারির দায়িত্ব পালন করতেন। গিরিশ গোবিন্দ রায় চৌধুরী ছিলেন জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরীর ছেলে।

জমিদার বাড়ির পাশেই জমিদাররা একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদার হেমচন্দ্র তার বাবা গিরি গোবিন্দের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মোট ২৪ টি কাছারি ছিল এই জমিদার বংশের আওতায়। বর্তমান ময়মনসিংহ জেলার জগন্নাথপুর এবং খালিয়াজুড়ি নামক এলাকাতেও তাদের জমিদারি ছিল। দেশ বিভাগের সময় জমিদারি প্রথা যখন বিলুপ্ত হয় তখন এই জমিদার বাড়ির বংশধররা ভারতে চলে যান ১৯৫২ সালে। 

ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি 

মানিকগঞ্জ (Manikganj) জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রসিদ্ধ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। ঝিটকায় দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গড়ে তোলেন আনন্দ মোহন পোদ্দারের দুই ছেলে যোগেশ্বর মোহন পোদ্দার এবং রায়চরণ মোহন পোদ্দার) উনিশ শতকের শুরুর দিকে। বর্তমানে মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পায় এটি। 

ঝিটকা এবং আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক আকারে ধনে, পেঁয়াজ এবং রসুনের চাষ হতো সেই সময়। ঝিটকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদী দিয়ে এসব মসলা সহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করতেন। যোগেশ্বর মোহন পোদ্দার এবং রায়চরণ মোহন পোদ্দার ধনের ব্যবসা শুরু করেন। নৌকায় করে ভারতের কলকাতায় বিক্রি করতেন তাদের মসলা। সেই সময় তারা দুই ভাই প্রচুর অর্থ সম্পত্তি উপার্জন করেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় ঝিকুটিয়া মৌজায় ৭ একর জমি ক্রয় করেন। ইছামতি নদীর পাশে ২.৭৫ একর জমির উপর নির্মাণ করেছিলেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। বাড়ির পূর্ব পাশে যোগেশ্বর পোদ্দার এবং পশ্চিম পাশে রায়চরণ পোদ্দার ও তাদের সন্তানরা বাস করতেন। দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে দুইটি এবং উত্তর পাশে দুইটি বিশাল পুকুর রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পূর্ব পাশে কৃষিজমি। 

মত্ত মঠ 

মানিকগঞ্জ (Manikganj) জেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনা মত্ত মঠ (Matta moth)। কথিত আছে, প্রায় আড়াইশত বছর আগে পটল গ্রামে হেমসেন নামক এক অত্যাচারী জমিদার তার পিতার শেষকৃত্য স্থানে এই মঠ নির্মাণ করেছিলেন। নিটল দিঘির পাড়ে ১৫ শতাংশ জমির ওপর ২০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই মঠ নির্মাণ করা হয়।

এর নির্মাণের জন্য ইরাক থেকে কারিগর আনা হয়েছিল। আমেরিকার একদল পর্যটক ১৯৬৫ সালের দিকে এর সংস্কারের আগ্রহ প্রকাশ করলে স্থানীয় প্রভাবশালী হিন্দুদের বাধার কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। 

শেষকথা 

আশা করছি ওপরের আলোচনা থেকে মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা পেয়েছেন। শস্য-শ্যামল সবুজ প্রান্তর, সারি সারি বৃক্ষরাজি সবমিলিয়ে যেন নৈসর্গিক দৃশ্য মানিকগঞ্জে। গাজিখালী, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত মানিকগঞ্জে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় খুব সহজেই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন মানিকগঞ্জে। একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনাতেই ঘুরে আসুন মানিকগঞ্জে।

মানিকগঞ্জ সদর থেকে বাস, সিএনজি বা অটোতে করে চলে যেতে পারবেন এর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহে। সোমপুরা মহাবিহারে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ, হযরত শাহ মখদুম শাহের মাজার, হযরত শাহ জালালের সমাধিসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান সমৃদ্ধ মানিকগঞ্জ। পর্যটন শিল্প গুলো আমাদের দেশের গৌরব এবং ঐতিহ্য বহন করে। এগুলোকে সংরক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্ব। 

মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s

১. মানিকগঞ্জ জেলার অবস্থান কোথায়? 

উত্তর : বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি জেলা মানিকগঞ্জ, যা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত। এর উত্তরে অবস্থিত গাজীপুর জেলা, পূর্বে মুন্সিগঞ্জ, পশ্চিমে নরসিংদী এবং দক্ষিণে ফরিদপুর জেলার অবস্থান। মানিকগঞ্জ জেলার আয়তন ১,৩৮৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি। 

২. মানিকগঞ্জ কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত? 

উত্তর : মানিকগঞ্জ হাজারি গুড়ের জন্য বিখ্যাত। বৃটেনের রানী এলিজাবেথ এই গুড় খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। 

৩. ঘিওর মিষ্টি কি? 

উত্তর : ঘিওর মিষ্টি এক ধরনের বাঙালি মিষ্টি। মানিকগঞ্জের ঘিওর এলাকায় তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। ঘিওর সুইটমিট তার নরম টেক্সচার এবং অতুলনীয় স্বাদের জন্য পরিচিত। 

 

আরও পড়ুন- 

কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সকল তথ্য

মন্তব্য করুন