সীতাকুণ্ড
প্রকৃতি হলো সরলতায় পূর্ণ এক যৌগিক আশ্রয়। তাইতো প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে বারবার খুঁজে পেতে মন চায়। আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিব তেমনি এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সম্পর্কে।
হ্যাঁ, জানাবো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড (Sitakunda) সম্পর্কে। ২৭.৯৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন এবং প্রায় ৪৫,১৪৭ জন জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত উপজেলা। চট্টগ্রাম নগর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সীতাকুণ্ড (sitakunda) অবস্থিত। সুউচ্চ পাহাড়, সুবিশাল সমুদ্র, মেঘ, ঝর্ণা,ঝিরি আরও কত কি।
তাই প্রকৃতির টানে ভ্রমনপিপাসুরা ছুটে চলে যায় সীতাকুণ্ড। ক্যাম্পিং কিংবা ট্রেকিং করে ঝর্ণায় গা ভিজানো সবকিছুর অনুভুতিই নিতে পারবেন এখানে। এর আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তাই ভ্রমনকারীদের কয়েকদিনের পরিকল্পনা থাকলে ভালো হয়। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, প্রাচীন সভ্যতার অনেক নিদর্শন পাবেন এখানে।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা রিসোর্ট (লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ)
সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড এর কিছু দর্শনীয় স্থানের নাম উল্লেখ করা হলো-
- চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং মন্দির
- গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
- সহস্রধারা ঝর্ণা
- সুপ্তধারা ঝর্ণা
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- হাম্মাদিয়ার মসজিদ
- বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
- উপকূলীয় বনাঞ্চল
- বার আউলিয়া দরগাহ শরীফ (সোনাইছড়ি)
- বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক
- ব্যাসকুন্ড
- ঝরঝরি ট্রেইল
- মেলখুম ট্রেইল
- কমলদহ ট্রেইল
- কুমিরা ঘাট
চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং মন্দির
সীতাকুণ্ডের (sitakunda) জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়। হিন্দু ধর্ম মতে, তাদের সতী দেবীর দক্ষিণ হস্ত পতিত হয়েছিল চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (Chandranath Hill)। পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে সীতার কুন্ড, রাম-লক্ষণ এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান।
হিমালয়ের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে এই পাহাড় । পাহাড়টি পৌরসভা থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা সাড়ে তিন কিলোমিটার (১১৫২ ফুট)। পাহাড়ের একদম উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির (Chandranath Temple)।
এছাড়াও পাহাড়ের নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত রয়েছে ছোট-বড় অনেক ধর্মীয় স্থাপনা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল – ব্যাস কুন্ডু পুকুর, শংকর মঠ, শয়ম্ভুথাথ বাড়ি ইত্যাদি। এখানে প্রত্যেক বছর একটি মেলা হয়, মেলাতে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হয়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গায়ে আরো চোখে পড়বে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান এবং জুমক্ষেত। পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়া করলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড (sitakunda) বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি “মুরাদপুর বিচ” নামেও পরিচিত। একদিকে রয়েছে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি এবং অপরদিকে রয়েছে কেওড়া বন। এই বিচে গেলে অনুভব করবেন ম্যানগ্রোভ বন এবং সোয়াম্প বনের মতো পরিবেশ।
গুলিয়াখালী বিচের অন্যতম সৌন্দর্য হলো সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা আঁকাবাঁকা নালা। পর্যটকরা চাইলে জেলেদের নৌকায় ঘুরতে পারেন সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তবে বোটে ওঠার আগে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে সরকার ইতিমধ্যে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড (sitakunda) বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৯৯৬ একর (৮০৮ হেক্টর ) জমির ওপর এই অভয়ারণ্যটি গঠিত হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেন ১০০০ একর জমির উপর এবং ইকোপার্ক ৯৯৬ একর জমির ওপর অবস্থিত।
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্ক সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। প্রধান ফটকের একটু পরেই রয়েছে জাতীয় কবির স্মৃতিস্তম্ভ। পাহাড়ি ট্রেইল পেরুবার সময় দেখা মিলবে “সুপ্তধারা” এবং “সহস্রধারা” নামক ঝর্ণার।
এছাড়াও রয়েছে পিকনিক স্পট, ওয়াচ টাওয়ার, হিম চত্তর। এখানে গেলে দূরের সমুদ্র দেখা যাবে। পাহাড়ে বসেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই”।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো পার্কে আরও রয়েছে দুর্লভ কালো গোলাপ সহ পাহাড়ি নানা প্রজাতির ফুলের সমাহার। উল্লেখযোগ্য কিছু ফুল – প্রায় ৩৫ রকম গোলাপ, কামিনী, জবা, নাইট কুইন, পদ্ম, স্থলপদ্ম, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, নাগবল্লি, রঙ্গন, কাঠ মালতী, গন্ধরাজ, রাধাচূড়া, অলকানন্দা, ফনিকা ইত্যাদি।
আরও দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং বণ্যপ্রাণীর। বণ্যপ্রাণীর মধ্যে বানর, হনুমান, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, ভালুক, সজারু, শূকর, বনরুই ও বনমোরগ উল্লেখযোগ্য। দাঁড়াশ, গোখরা, লাউ ডগা, কালন্তি সহ নানা প্রজাতির সাপ এবং জলজ প্রাণী রয়েছে এই পার্কে।
ঝরঝরি ট্রেইল
সীতাকুণ্ডের মিরসরাই ঝর্ণার জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশের ঝর্ণার স্বর্গ হলো সীতাকুন্ডের মিরসরাই রেঞ্জ। এই রেঞ্জে দশটির মতো ট্রেইল রয়েছে। আরো রয়েছে অপরূপ ঝর্ণা, ঝিরিপথ, ক্যাসকেড। যারা অ্যাডভেঞ্চার করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ঝরঝরি ট্রেইল অন্যতম দর্শনীয় জায়গা হতে পারে। এই ট্রেইলটি “ঝর্ণা মূর্তি” নামেও পরিচিত স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে।
ট্রেইলে পৌঁছাতে হলে আপনাকে পাহাড়ে ঘেরা শান্ত শীতল ঝিরিপথ ধরে দেড় দুই ঘন্টা যেতে হবে। আরো রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্যাসেকেড এবং ঝর্ণা, যা দেখতে হলে ঝরঝরি ঝর্ণার ( Jhorjhori Waterfall) পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হবে। সিড়ির মতো ধাপে ধাপে খাঁজ কাটা একটি ক্যাসকেড রয়েছে, যেটি স্বর্গের সিঁড়ি নামে পরিচিত।
তবে এখানে যেতে হলে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জোঁক এবং পাথুরে পিচ্ছিলতা তো রয়েছেই। মহিলা এবং শিশুদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মিরসরাই, সীতাকুণ্ড (sitakunda) গেলে অবশ্যই ঝরঝরি ট্রেইল দেখতে কিন্তু ভুলবেন না।
আরও পড়ুনঃ সুনামগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ট্যুর প্ল্যান
কুমিরা ঘাট
কুমিরা সীতাকুণ্ড উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম। চট্টগ্রাম থেকে সন্দীপ যাওয়া আসা করার জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘাটের নাম কুমিরাঘাট ( Kumira ghat) বা কুমিরা-সন্দীপ ফেরিঘাট। এটি ঘাটঘর ব্রীজ ও কুমিরা ব্রীজ নামেও পরিচিত। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য তৈরি হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি জেটি। এই জেটি ব্রীজটির একদম পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছালে মনে হবে যেন সমুদ্রের মধ্যেই আছেন। দেখতে পাবেন বিশাল বিশাল জাহাজের সারি।
আরো দেখতে পাবেন, মাছ ধরে জেলেদের সন্ধ্যায় ঘাটে ফেরা, যাত্রীদের যাওয়া আসা। এছাড়াও জেলেপল্লী ও শিপইয়ার্ড কর্মীদের ব্যস্ততা। এ বিশাল বিশাল জাহাজ কাছে থেকে দেখতে এবং সমুদ্রের আরও গভীরে যেতে হলে বোট ভাড়া করতে পারেন। বোটের ভাড়া জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। কুমিরা ঘাট থেকে স্পিডবোট ভাড়া করে সন্দীপ চ্যানেল পার হয়ে ৩০ মিনিটেই সন্দীপ যেতে পারবেন। স্পিডবোট ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
বাঁশবাড়িয়া সি বিচ
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Bashbaria sea beach) সীতাকুণ্ডের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার খোলামেলা পরিবেশে দেখা পাবেন ঝাউ গাছের সারি, সবুজ ঘাসের চর, পিকনিক স্পট। সমুদ্র সৈকতটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল সূর্যাস্ত। সূর্যাস্ত দেখতে হলে দুপুরের পর চলে যাবেন বাঁশবাড়িয়া সি বিচে। এখানে আছে একটি লোহার ব্রিজ, আপনি সমুদ্রের উপরে হাঁটার অনুভূতি নিতে পারবেন। আরো অনুভব করবেন জোয়ারের স্রোতের আওয়াজ। এছাড়া স্পিডবোটে চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
কমলদহ ট্রেইল
সীতাকুণ্ড (sitakunda) মিরসরাই রেঞ্জের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ট্রেইল হলো কমলদহ ট্রেইল। বড় দারোগা হাট থেকে সামান্য এগুলোই ঢাকার রোডে কিছু দূর হাটলেই রাস্তার ডানে ইট ভাটার পাশে রয়েছে একটি মাটির রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে বিশ মিনিটের মত হেঁটে গেলে একটি ঝিরিপথের দেখা পাবেন। এখান থেকেই কমলদহ ট্রেইলের শুরু। ঝিরিপথ দিয়ে আগানোর সময় দেখা পাবেন ছোট মাঝারি রকম অসংখ্য ঝরনা।
উল্লেখযোগ্য হলো কমলদহ ঝর্ণা। সর্বশেষ ঝরনাটির নাম ছুড়িকাটা ঝর্ণা। শুকনা মৌসুমে পানি খুব কম থাকে। তাই কোমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় হল বর্ষাকাল। বর্ষাকালে কমলদহ ট্রেইলে যাওয়ার ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন। এখানে যেতে হলে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করতে হবে।
মেলখুম ট্রেইল
আপনি কি ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন? তাহলে যেতে পারেন মেলখুম ট্রেইলে (Melkhum)। মেলখুম ট্রেইল সীতাকুণ্ড মিরসরাই রেঞ্জের একটি অফ-ট্রেইল। সীতাকুণ্ডের (sitakunda) সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ট্রেইল এটি। এই ট্রেইলে কোন পাথর দেখতে পাবেন না, তবে এইখানকার স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের আলো যেন ঝলমল করে। স্বচ্ছ পানিতে দেখা মিলবে ঝিরির ছোট মাছ, এছাড়া আরো দেখতে পাবেন প্রজাপতির ঝাঁক, রংবেরঙের ঘাসফড়িং।
যারা আগে কখনো ট্র্যাকিং করেননি, তারা মেলখুম ট্রেইলে যেতে পারেন ট্র্যাকিং করার জন্য। আপনার ট্রাকিংয়ের প্রাথমিক প্র্যাকটিস হতে পারে মেলখুমের এই ঝিরিপথ। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। গ্রুপ করে গেলে ভালো হয়। ভারী ব্যাগ নিবেন না, লাইফ জ্যাকেট এবং ট্রাকিং স্যান্ডেল নিতে হবে। সাঁতার না জানলে খুমে না নামাই ভালো।
সীতাকুণ্ড কীভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা-সীতাকুণ্ড : রাজধানী ঢাকার মহাখালী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল যেকোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন বাসে যেতে পারবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রুটের নন-এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদিয়া, হানিফ, শ্যামলী, এনা, এস আর, ইউনিক, ঈগল প্রভৃতি পরিবহন। নন-এসি বাসের ভাড়া ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা করে। এসি বাসের মধ্যে রয়েছে সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, সোহাগ, টি আর। এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা।
ট্রেনে ঢাকা-সীতাকুণ্ড : ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুন্ডে যাওয়ার জন্য রয়েছে দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল“। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এই ট্রেনটি রাত ১০:৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে এবং পৌঁছায় পরের দিন সকাল সাড়ে ৬:৩০ থেকে ৭ টার মধ্যে। ট্রেন ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুন্ডে থামে ট্রেনগুলো।
চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড : সিএনজি বা অটোরিকশা রিজার্ভ করে চট্টগ্রাম শহর থেকে যেতে হলে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বাসে যেতে চাইলে চট্টগ্রাম নগরীর একে খান মোড়, অলংকার মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। সেখান থেকে মিনিবাসের ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং বড় বাসের ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। বাসে হেল্পারকে বলে রাখতে হবে, সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সামনে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। মিনিবাসের ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং বড় বাসের ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ডে রয়েছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। কাঁচা বাজার এবং থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের কয়েকটি হোটেল আছে। এদের মধ্যে হোটেল সায়মন, সৌদিয়া, নিউ সৌদিয়া, হোটেল কম্পোট জোন , জলসা উল্লেখযোগ্য। নন-এসি রুম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া এবং এসি রুম ডাবল বেড ১০০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা ভাড়া।
তবে, ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে হবে। চট্টগ্রামে রয়েছে বিভিন্ন মানের বেশ কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। কয়েকটি বাজেট হোটেলের নাম ঠিকানা নিম্নে দেওয়া হল।
- হোটেল প্যারামাউন্ট (স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম): বাজেট হোটেলের মধ্যে সবচেয়ে সেরা হোটেল এটি। নতুন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত হোটেল প্যারামাউন্ট। এর লোকেশন সুন্দর, প্রশস্ত করিডর এবং রুমগুলো অনেক ভালো। নন-এসি সিঙ্গেল রুম ভাড়া ৮০০ টাকা, ডাবল রুম ভাড়া ১৩০০ টাকা। এসি রুম ১৪০০ টাকা এবং ১৮০০ টাকা। (বুকিং : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪)
- হোটেল এশিয়ান এসআর ( স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম): ছিমছাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং অনেক সুন্দর একটি হোটেল । নন-এসি রুম ভাড়া ১০০০ টাকা। এসি রুম ভাড়া ১৭২৫ টাকা। ( বুকিং : ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫)
- হোটেল সাফিনা (এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম): মাঝারি মানের এই হোটেলটি আপনাকে দিবে একটি পারিবারিক পরিবেশ। এর ছাদের ওপর রয়েছে সুন্দর একটি রেস্টুরেন্ট। এর ভাড়া ৭০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
সীতাকুণ্ডে (sitakunda) খাবার হোটেল গুলোর মধ্যে আল আমীন হোটেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট, আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। তবে আরো ভালো মানের খাবারের জন্য চট্টগ্রাম শহরে যেতে হবে। চট্টগ্রামে বেশ কিছু ভাল মানের খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চট্টগ্রামের সেরা কয়েকটি রেস্টুরেন্টের তালিকা দেওয়া হলো –
- বেভারলি আইল্যান্ড
- সেভেন ডেজ
- বীর চট্টলা
- হাক্কা চাটগাঁ
- মেজ্জাইন্না বাড়ি
- কুটুমবাড়ি
- তাজিংডং
- জামান হোটেল
শেষকথা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড (sitakunda) প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সবকিছু দেখতে হলে একদিনে সম্ভব নয়। তাইতো কয়েক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হবে। গ্রুপ করে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। যেকোনো পরিবহনে ওঠার সময় অবশ্যই দামাদামি করবেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে গেলে ডান পথ দিয়ে উঠে বাম পথ দিয়ে নামবেন। জোয়ার ভাটার সময় খোঁজ নিয়ে বিচে যাবেন।
এছাড়াও সাবধানতার জন্য লাইফ জ্যাকেট, ট্রাকিং স্যান্ডেল সাথে নিবেন। পাহাড়ে ওঠার সময় সাপোর্ট হিসেবে লাঠি নিয়ে উঠতে পারেন। নিরাপদে ভ্রমণ করার জন্য টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন। সাঁতার না জানলে বেশি দূরে যাবেন না। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে যাবেন। সবশেষে বলতেই হয়, প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য সীতাকুন্ডে আপনাকে স্বাগতম।
সীতাকুন্ড সম্পর্কে আরো কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s
১. বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অবস্থিত।
২. সীতাকুণ্ডে স্বচ্ছ পানির ট্রেইল কোনটি?
উত্তর : মেলখুম ট্রেইল হলো স্বচ্ছ পানির ট্রেইল।
৩. সীতাকুন্ড কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: সীতাকুণ্ড বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি শহর ও পৌর এলাকা।
৪. চন্দ্রনাথ পাহাড় কিভাবে যাবো?
উত্তর : ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী বাসে সরাসরি সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়।
৫. বাংলাদেশের কোথায় গরম পানির ঝর্ণা রয়েছে?
উত্তর : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে রয়েছে গরম পানির ঝর্ণা।
৬. ঢাকা টু সীতাকুন্ড এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া কত?
উত্তর : নন-এসি বাসের ভাড়া ৪২০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা।
আরও পড়ুন –
মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল
নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্ট (গাজীপুর)