মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর

মধুটিলা ইকোপার্ক

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের (Mymensingh)  শেরপুর (Sherpur) জেলায় প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ মধুটিলা ইকোপার্কটি অবস্থিত রয়েছে। উচু নিচু টিলা ও পাহাড় ভ্রমণ পিপাসুদের মন সহজেই কেড়ে নিবে এই শান্তির নীড় মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark)। শেরপুর থেকে মধুটিলা ইকোপার্ক এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নালিতাবাড়ী উপজেলাধীন এবং ময়মনসিংহ বনবিভাগ (Mymensingh Forest Division) নিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি পরিবেশ ও পাহাড়ি বনভূমি নিয়ে বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পূর্ণভাবে সরকারি অর্থায়নে মধুটিলা ইকোপার্কটি নির্মিত হয়েছে। 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, মধুটিলা ইকোপার্কে (modhutila eco park) দেখার মতে কি কি রয়েছে, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, সুবিধা অসুবিধা সহ মধুটিলা ইকো পার্কের নানা তথ্য।

মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark) সম্বন্ধে সব ধরনের তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। প্রতিবছরের শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনের জন্য শিক্ষার্থী বা অন্যান্য পেশার লোকদের ভীড় লেগে যায়। আমাদের রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ সম্পর্কিত আর্টিকেলটিও পড়তে পারেন। 

তার সঙ্গে ছোট বড় পাহাড়ি টিলার উপর শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠীর (ethnic group) নানা সম্প্রদায়ের লোকদের জীবন জীবিকা ও তাদের সংস্কৃতি (culture) যেন পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ করে তুলেছে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। ভাগ্য ভালো হলে মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark) এর টাওয়ার থেকেই দেখা মিলতে পারে বনোহাতির দলের।

আরও পড়ুনঃ নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা – চট্টগ্রাম

মধুটিলা ইকোপার্কে কি আছে  

মধুটিলা ইকোপার্ক এ যা সব কিছু বিরাজমান রয়েছে তার সবই উপভোগ্যকর (Enjoyable )। ২০ একর জায়গা জুড়ে বনভূমিতে (Forest land) রয়েছে উপকারী ঔষধি প্রজাতির বনায়ন, বাসগৃহ, রেস্ট হাউজ, বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য, স্টার ব্রিজ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, অত্যাধুনিক বসার স্থান, লেকের মধ্যে ব্যবহার করার জন্য ৫টি দেশীয় নৌকা ও ৩টি প্যাডেল বোট।

পাহাড়ের উঁচু টিলায় নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, যার উপরে উঠে উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতির সবুজ শ্যামলে ঘেরা নিস্তব্ধ নিরবতা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ,এ  যেন এক নিথর বাতায়ন। 

তাছাড়াও মজার একটি উপভোগ্যকর দৃশ্য হচ্ছে, এই টাওয়ারের উপর থেকে দেখতে পারবেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুড়া পাহাড়। এরকম একটি কোলাহলমুক্ত (Noise free) শান্ত পরিবেশে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য বিলিয়ে দিন, উপভোগ করুন অনাবিল আনন্দের সাথে সুন্দর একটি প্রকৃতি।

পাহাড় প্রিয় ভ্রমন পিয়াসু মানুষদের জন্য মধুটিলা ইকোপার্কটি (madhutila eco park) ছোট-বড় পাহাড়ের পর পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অন্যতম এক অভিজ্ঞতার (experience) সৃষ্টি করবে। হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভীড় লেগেই থাকে মধুটিলা ইকোপার্কে

বর্তমানে মধুটিলা ইকোপার্ক (sherpur park) পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। মধুটিলা ইকোপার্কের প্রধান ফটক পেরিয়ে গেলেই চোখে ভেসে উঠবে বিশাল আকৃতির বন্যপ্রাণী হাতির ভাস্কর্য। সৌন্দর্যের রানী পাহাড়ি ঝর্ণাধারার পানি এসে মিলিত হচ্ছে লেকের পানিতে। আবার লেকের পানির উপরে নির্মিত রয়েছে স্টার ব্রিজ (Star Bridge)। কালভার্টের ডান দিকে রয়েছে হালকা চা, কফি সহ নাস্তার স্টেশনারির দোকান।

কিছু জায়গা হাঁটার পরপরই বাস্তব আকৃতির মত দেখতে বিভিন্ন বণ্যপ্রাণীর ভাস্কর্য। চারিপাশে উঁচু নিচু পাহাড় সাথে ঝর্ণাধারা, এ যেন এক কল্পনার ইকোপার্ক। পাহাড়ের প্রবেশপথেই আপনাকে স্বাগত জানাবে ধূসর রঙ্গের বিশাল আকৃতির পাথরের তৈরি দুটি হাতির ভাস্কর্য। 

কিভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সরাসরি আপনি মধুটিলা ইকোপার্ক (madhutila eco park) পৌঁছে যেতে পারবেন, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস অথবা বাস রিজার্ভ নিয়ে। তাছাড়াও মহাখালী বাস পরিবহন থেকে আনন্দ, তুরাগ, ড্রিমল্যান্ড এর মাধ্যমেও বিভিন্ন সার্ভিসের বাসে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন ময়মনসিংহের শেরপুরে। এই বাসগুলোর ভাড়া পড়বে প্রায় ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।

তবে এই ধরনের বাসগুলো যাত্রাপথে অনেক স্টপেজে থামে, যার কারনে পৌঁছাতে একটু সময় লাগে এবং বিরক্তিকর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। তাই আপনি চাইলে ড্রিমল্যান্ড (Dreamland) স্পেশাল বাসে যাত্রা করতে পারেন শেরপুরের উদ্দেশ্যে। ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল বাসের এসি/নন এসির ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা।

পরে শেরপুর (Sherpur) থেকে পিকঅ্যাপ ভ্যানে অথবা সিএনজিতে করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন মধুটিলা ইকোপার্কে। শেরপুরের শাপলা চত্বর থেকে নন্নী বাজারের সিএনজি ভাড়া পড়বে জনপ্রতি প্রায় ৬০-৭০ টাকা। আবার নন্নী বাজার হতে মধুটিলা ইকোপার্ক (sherpur park) এ যাওয়ার ভাড়া পড়বে জনপ্রতি প্রায় ১৫ টাকা। 

মধুটিলা ইকোপার্ক modhutila eco park
মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর

ভ্রমণ খরচ

মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark) বর্তমানে এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করার পরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফি নির্ধারিত করা আছে। ওয়াচ টাওয়ারে উঠার জন্য টিকিটের মূল্য জনপ্রতি পড়বে ১০ টাকা করে। এবং বিভিন্ন রাইডের টিকেট মূল্য পড়বে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

মধুটিলা ইকোপার্কে পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে মহুয়া রেস্টহাউজ (Rest house) তবে এই রেস্টহাউজটি শুধুমাত্র দিনের বেলা ব্যবহারের জন্য। এখানে রাত্রি যাপন করা যাবে না, আর রাত্রিযাপন করতে চাইলেও শেরপুর ডিসি অফিস (DC office) থেকে অনুমতি নিতে হবে। 

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের প্রতিটা আনাছে কানাচে রয়েছে, তেমনি একটি সৌন্দর্যের প্রতীক লীলাভূমি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark)। মধুটিলা ইকোপার্কটি মূলত একটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। এখান থেকে ভারতের মেঘালয়ের প্রাণী, ঝর্ণা, পাহাড়, গাছপালা, ঘড়বাড়ী অনেক কিছুই অবলোকন করা যায়।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর, ঢাকা

কোথায় থাকবেন 

ঢাকা থেকে দিনের মধ্যেই শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক (sherpur modhutila) ভ্রমন করে ঘুরে আসা সম্ভব। তারপরেও মধুটিলা ইকোপার্কটি ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য ১,২ দিন থেকে যাবেন। থাকার জন্য মোটামুটি ভালো মানের ব্যবস্থা পেতে হলে শেরপুর জেলায় আসতে হবে। শেরপুর জেলার সাধারণ মানের কিছু গেস্ট হাউস রয়েছে যেগুলোর ভাড়া আসবে ১৫০-৫০০ টাকার মধ্যেই।

বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেলও রয়েছে যেমন, বর্ণালী গেস্ট হাউস, সম্পদ, কাকলী, ভবানী প্লাজা সহ আরো কিছু হোটেল, এই হোটেলগুলোর ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যেই। এবং আরো বেশকিছু সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, এটিআই, পল্লী বিদ্যুৎ এর পৃথক পৃথক রেস্ট হাউজও রয়েছে। হোটেল সম্পদ এর যোগাযোগের নাম্বার ০১৭১২৪২-২১৪৫, কাকলী গেস্ট হাউজ – ০১৯১৪৮৫-৪৪৫০, হোটেল আরাফাত গেস্ট হাউজ – ০৯৩১৬১২১৭।

কোথায় খাবেন

উন্নত মানের খাবার বা মোটামুটি ভালো মানের খাবার পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে শেরপুরে আসতে হবে। শেরপুর শহরের নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন ধরনের হোটেল রয়েছে, আপনার চাহিদা অনুযায়ী খাবার পেয়ে যাবেন হোটেলগুলোতে। 

তাছাড়া মধুটিলা ইকোপার্কের স্পট এলাকার দোকানগুলোতে পাবেন নাস্তার মোটামুটি খাবার, যেমন চা, কফি, মিনারেল ওয়াটার, বাচ্চাদের চিপস, চকলেট এগুলোই। তাই ভারী কোনো খাবারের উদ্দেশ্যে আপনাকে শেরপুরে যেতে হবে অথবা স্পটে খাওয়ার জন্য রান্না করা খাবার সাথে নিয়ে আসতে পারেন। 

শেষকথা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা মধুটিলা ইকোপার্ক। যার মধ্যে রয়েছে অতুলনীয় সৌন্দর্যের রানী ঝর্নাধারা। প্রকৃতির সবুজ সমারোহ নিয়ে যেন অনন্য এক রূপ প্রকাশ করছে শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark) যা চিত্র বিনোদনের এক নিস্তব্ধ আকর্ষণীয় জায়গা। বনায়নে রয়েছে অতুলনীয় অসংখ্য ঔষধি গাছ এবং রকমারি বন্যপ্রাণী।

প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে জীববৈচিত্র্য (Biodiversity), বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্যের (Wildlife sculpture) সাথে মিতালী হয়ে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে পারেন বিভিন্ন স্টাইলের ছবি। সামনের দিনগুলোতে কোন এক একাকিত্বের সময় অতীতের এই ছবিগুলো দেখে স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্ত গুলোর কথা মনে পড়বে। 

নতুনত্বের খুঁজে উপভোগ করতে পারেন শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক। মধুটিলা ইকোপার্ক নিয়ে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। যেকোনো কিছুতেই তাড়াহুড়ো না করে সতর্কতার সহিত চলাফেরা করবেন, একটু সতর্কতাই পারে জীবনে অনেক বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে। মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Ecopark) সম্বন্ধে কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।  

মধুটিলা ইকোপার্ক নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. মধুটিলা ইকোপার্ক কোথায় অবস্থিত 

উত্তর : ময়মনসিংহে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। 

২. মধুটিলা ইকোপার্কে ভ্রমণ খরচ কত? 

উত্তর: মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য আগে ২০ টাকা ছিল এখন বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ভিতরে প্রবেশের পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফি নির্ধারিত করা আছে। 

৩। শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত ?

উত্তরঃ স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলার ১ জন বীর বীরবিক্রম, ২ জন বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন। এরা হলেন, শহীদ শাহ মোতাসীম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম, কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি বীর প্রতীক ও ডাঃ মাহমুদুর রহমান বীর প্রতীক। 

৪। বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক কোথায় স্থাপিত হয়েছে?

উত্তরঃ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক, সীতাকুণ্ড’ নামক ইকোপার্কটি চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। এটি ১৯৯৯ সালে চন্দ্রনাথ রিজার্ভ ফরেস্টে স্থাপন করা হয়।

আরও পড়ুন- 

কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সকল তথ্য

মন্তব্য করুন