সন্দ্বীপ ভ্রমণ
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের উপকূলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত (sandwip upazila) একটি দ্বীপ। বাংলাদেশের প্রাচীন দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি প্রাচীন দ্বীপ। চট্টগ্রাম জেলার রহমতপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই দ্বীপটির মনোরম দৃশ্যের কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে।
সন্দ্বীপ সৈকতের মনোরম পরিবেশ এবং সৈকতের ঠিক পাশেই ম্যানগ্রোভ বন সবাইকে আকর্ষণ করে। সন্দ্বীপ ভ্রমণ মূলত তাদের জন্য যারা সমুদ্রকে কাছে থেকে দেখতে চান, এবং এছাড়াও ম্যানগ্রোভ বনের কিচিরমিচির এবং প্রকৃতির অপরূপ প্রকৃতিক ডাক শুনতে চান।
এটি ক্যাম্পিং এর টেন্ট পিচের জন্য আদর্শ স্থান। সমুদ্র সৈকতটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। স্থানীয় মানুষের কাছে সৈকতটি স্টিমারঘাট নামেও পরিচিত (sandwip upazila)।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (গাজীপুর)
সন্দ্বীপ ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
আপনি সারা বছর সন্দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারেন কারণ সমুদ্র সৈকত সবসময়ই সুন্দর। তবে সবচেয়ে উওম সময় হল শীতকাল। এ সময় আপনি চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। কারন সমুদ্র শীতকালে শান্ত থাকে। গ্রীষ্মকালে সৈকতের পাশে বেশ গরম হওয়ায় এবং বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল হওয়ার কারনে বেশিরভাগ ভ্রমনকারিরা শীতকালেই সন্দ্বীপ সমুদ্র সৈকত ভ্রমন করতে যায়।
এ ছাড়াও আপনার হাতে যদি সময় থেকে তাহলে সন্দ্বীপ ভ্রমনের পাশাপাশি আপনি চাইলে চট্টগ্রাম জেলার আরও ১০ টি দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করতে আসতে পারেন। আশা করি, অনেক ভালো লাগবে। এবং মনটাও ফুরফুরে হয়ে যাবে।
সন্দ্বীপ ভ্রমণ কী দেখবেন
- দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি: সন্দ্বীপ সৈকতের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল- এটি। সন্দ্বীপেরগুপ্ত ঘাটের উপর নির্মিত, যেটির দুপাশে ল্যাম্পপোস্টের সৌন্দর্য, পাখির কিচিরমিচির এবং সমুদ্রের গর্জন, সমুদ্রের শীতলতায় আপনি মুগ্ধ হবেন। সমুদ্র আপনাকে একটি ভিন্ন প্রশান্তি এনে দেবে যা আপনার জীবনের স্মৃতি হয়ে। এছাড়া এর পাশের ম্যানগ্রোভের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- সবুজ চর: এই চরটি সন্দ্বীপ এর দীঘি পাড়ায় অবস্থিত। চারপাশের সবুজ দৃশ্য এখানে যে কারোর মনকে মুগ্ধ করবে যেন প্রকৃতি তার নিজস্ব কায়দায় সাজিয়েছে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ ঘাসে ঢাকা পথ। চড়ে রয়েছে অসংখ্য বক, চিল বালিহাঁস, ঘুঘু ইত্যাদি। এছাড়াও পাখিদের মধুর ডাকে আপনার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
- সমুদ্র সৈকত: সন্দ্বীপের রহমতপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রয়েছে এই সৈকতটি। অনেকের কাছেই এটি স্টিমার ঘাট নামেও পরিচিত। সন্ধ্যাবেলায় সৈকতটি রক্তবর্ণ আভা দেয়। এত সুন্দর মন জুড়ানো একটি দৃশ্য আপনি কেবল এই সমুদ্র সৈকতে গেলেই দেখতে পাবেন। ভ্রমণকারীদের প্রিয় একটি স্থান এই সৈকতটি। অনেকে এখানে ক্যাম্প করেও থাকে।
সন্দ্বীপ সমুদ্র সৈকত কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমান পথে চট্টগ্রাম হয়ে (sandwip upazila) সন্দ্বীপ সহজেই যাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে সদরঘাট হয়ে নদীপথে সন্দ্বীপে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হবে। কারণ সন্দীপের পশ্চিমে বেশ কিছুদিন আগে চর উঠছে, সেক্ষেত্রে সন্দীপ পৌঁছাতে আপনার অনেক সময় লাগবে।
ঢাকা টু চট্টগ্রাম
ঢাকার বিভিন্ন কাউন্টার হতে চট্টগ্রামে যাবার বাস পাওয়া যায়। যেমন- হানিফ, এনা, শ্যামলী, রায়েদা, গ্রিনলাইন ইত্যাদি। এসকল বাসে করে আপনি ৮-৯ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রামে পৌছে যাবেন। সেক্ষেত্রে এসি বাস হলে জনপ্রতি ভাড়া গুনতে হবে ১৫০০-১৭০০ টাকা। নন এসি বাসের ভাড়া ৭০০-৯০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনাকে চট্টগ্রামের কুমিরা স্টিমার ঘাট নামতে হবে।
ট্রেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে যেতে চাইলে অনেক ট্রেন পাওয়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল পর্যন্ত। সুবর্ণ এক্সপ্রেস, বাংলা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ও বেতার বাংলা এক্সপ্রেসের মতো বিভিন্ন ধরনের ট্রেন রয়েছে। যার প্রতি জন ভাড়া ৪৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত।
বিমান
ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যায়, সেক্ষেত্রে আপনাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেতে ২৫০০ থেকে ৩০০০টাকা ভাড়া দিতে হবে। চট্টগ্রাম হতে বিভিন্ন সিএনজির মাধ্যমে। কুমিরা যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ২০০-২৫০টাকা ভাড়া লাগবে।
কুমিরা ঘাট হতে সন্দ্বীপ
কুমিরা ঘাটে অনেক ধরনের স্পিড বোর্ড রয়েছে, সেক্ষেত্রে স্পীড বোর্ডের সাহায্যে খুব দ্রুত সন্দ্বীপে পৌঁছানো যায়। দ্রুত কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনি দ্বীপের কাছে পৌঁছাবেন । এই ক্ষেত্রে, আপনাকে ভাড়ার জন্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দিতে হবে, এবং আপনার সময় বাঁচবে। আপনার যদি একাধিক সঙ্গী থাকে, আপনি একসাথে একটি পুরো স্পিডবোট ভাড়া করতে পারেন, তাহলে ভাড়া কম হবে।
এছাড়া সন্দ্বীপে যাওয়ার একটিমাত্র চ্যানেল। ওই চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের ছোট নৌকা থাকলেও স্পিডবোটে যাওয়াই ভালো। কারন উঠা নামা সমস্যার পাশাপাশি অনেক যাত্রীও মালামালের সমস্যাতো আছেই। সেক্ষেত্রে ভাড়াও কম হবে এবং আশেপাশের পরিবেশ খুব ভালোভাবে উপভোগ করার আনন্দ পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুনঃ সুন্দরবন ভ্রমণ : ইতিহাস, যাওয়ার উপায়, ভ্রমণ খরচ ও দর্শনীয় স্থান
সন্দ্বীপে কোথায় থাকবেন
সন্দীপে বেড়াতে গেলে সবাই ক্যাম্পিং করে থাকে। তবে পরিবার নিয়ে গেলে সন্দীপের হোটেল ও রিসোর্টে থাকতে পারেন।
হোটেল রয়েল ইননঃ সন্দীপ বিচের পাশে অবস্থিত সন্দীপ টাওয়ারের ৪র্থ তলায় এই হোটেলটি। এই হোটেলের কক্ষগুলো ভালো মানের এবং এই হোটেলে খাবারের ব্যবস্থাও আছে। যার প্রতি রাতের ভাড়া ২০০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে। ছুটির সময় এখানে প্রচুর ভীড় হওয়ায় আগে বুকিং দেওয়া ভালো।
হোটেল গ্রিন ভিঊঃ এনাম নাহারে অবস্থিত এই হোটেলটি সবার কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই হোটেলের রুমগুলো ভালো মানের এবং খাবার পাওয়া যায়। ছুটির দিনে হোটেলে যেহেতু খুব ভিড় থাকে, তাই আগে থেকে বাংলো বুক করে রাখা ভালো।
জামান গেস্ট হাউজঃ এটি মূলত একটি রিসর্ট। পরিবারের সাথে থাকার সেরা রিসোর্ট গুলির মধ্যে একটি। রিসোর্টটিতে অনেক খোলা জায়গা রয়েছে। এবং একটি পুলও রয়েছে তাই আপনি পুলের পাশে বসে সৈকতের পরিবেশ উপভোগ করার পরে রাতে চা খেতে পারেন।
আর যারা সন্দ্বীপে ক্যাম্পিং করতে যেতে চান তারা সরাসরি সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্স সোজা যেতে পারেন। একবার দ্বীপের পশ্চিম পাশে রহমতপুর ব্রিজে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি জায়গা নির্বাচন করে। খোলা আকাশের নিচে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে পারেন।
সন্দ্বীপে গিয়ে কী খাবেন
সন্দ্বীপের স্থানীয় হোটেলগুলোতে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এখানে বিশেষ কোনো খাবার না থাকলেও আছে চাইনিজ, কোরিয়ান ও শিশুদের খাবার। এছাড়াও সন্দ্বীপে বেড়াতে গেলে হোটেলেই ফুড কর্ণার ব্যবস্থা থাকায় বাইরে না খাওয়াই ভালো।
শেষ কথা
চরের কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে স্থানীয় গাইড নিয়ে যান। এমন জায়গায় ক্যাম্প করুন যেখানে স্থানীয় লোকেরা সহজেই আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে। যাতে আপনি বিপদের ক্ষেত্রে সহজেই সাহায্য পেতে পারেন। ভালো ব্যবহার করবেন স্থানীয়দের সাথে। কোনো বিপদ দেখলে ৯৯৯ কল করুন।
প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি সন্দ্বীপ ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। কারণ সমুদ্র সৈকত ভ্রমন করার আগে এই সকল বিষয়ে আপনার জানা খুবি জরুরি। জাতে করে আপনার কোন প্রকার প্রবলেম বা বিপদ আপদ না হয়। তাই সন্দ্বীপ সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে জানতে সম্পুর্ন পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আরও পড়ুন-
নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্ট (গাজীপুর)
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক কুমিল্লা