ইলিশের টানে মাওয়া ফেরিঘাট ভ্রমন

মাওয়া ফেরিঘাট

আমাদের মধ্যে এমন অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন। যারা কক্সবাজার ভ্রমন এর থেকেও নদী ভ্রমন করতে ভালোবাসেন। তাদের জন্য ভ্রমন করার উপযুক্ত একটি স্থান হলো, মাওয়া ফেরিঘাট করা। যেখানে আপনি অপরুপ সৌন্দর্যের নদী ভ্রমনের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবেন।

আর বর্তমান সময়ে আপনার মতো এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা মূলত ইলিশ মাছের স্বাদ নেয়ার জন্য ছুটে আসে বাংলাদেশের মাওয়া ফেরিঘাট। তবে মাওয়া ফেরীতে ঘাটে শুধু ইলিশ পাওয়া যায়, এমন নয়। বরং সুস্বাদু মাছ ইলিশ এর পাশাপাশি এখানে আপন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পারবেন।

আর আজকে আমি আপনাকে এই মাওয়া ফেরী ঘাট এর যাবতীয় বিষয় গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাই আর দেরী না করে চলুন হারিয়ে যাই মুন্সিগন্জের মাওয়া ফেরী ঘাটের অপরুপ সৌন্দর্যে।

আরও পড়ুনঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাভার, ঢাকা

কিভাবে মাওয়া ফেরিঘাট যাবেন

আপনি যদি বর্তমানে ঢাকার আশেপাশে অবস্থান করেন। তাহলে আপনি মাত্র একদিনেই ভ্রমন করতে পারবেন। তবে আপনি যদি ঢাকার অদুরে অবস্থান করেন। তাহলে আপনার মাওয়া ফেরিঘাট করতে ঠিক কতদিন লাগবে, সেটি আপনার স্থানের দুরত্বের উপর নির্ভর করবে। তবে মাত্র একদিনের ভ্রমন এর জন্য মাওয়া ফেরী ঘাট হলো উপযুক্ত একটি জায়গা।

আর আপনি যদি স্বল্প সময়ের ট্যুরে মাওয়া ফেরী ঘাট যেতে চান। তাহলে সবার আগে আপনাকে গুলিস্তান এবং যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ট থেকে বাসে উঠতে হবে। আর উক্ত স্থান থেকে বাসযোগে যাওয়ার জন্য আপনার মাত্র ৭০/৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে গন্তব্য পৌঁছাতে পারবেন।

তবে মাওয়া ফেরী ঘাটে আসতে গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ি আসতেই হবে, বিষয়টা এমন নয়। বরং আপনি চাইলে ঢাকার অন্যান্য স্থান থেকে এই ঘাটে আসতে পারবেন। যেমন, শাহবাগ, ফার্মগেট সহ মিরপুর-১০ থেকেও এই জনপ্রিয় মাওয়া ফেরিঘাট আসতে পারবেন।

আপনি বিআরটিসি অথবা ইলিশ নামক পরিবহন এর বাস এর সাহায্য ফেরী ঘাটে আসতে পারবেন। আপনি যদি মিরপুর-১০, শাহবাগ কিংবা ফার্মগেট থেকে মাওয়া ফেরী ঘাট আসতে চান। তাহলে আপনি সরাসরি স্বাধীন পরিবহন এর বাস গুলোতে আসার চেষ্টা করবেন। তবে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের বাস পরিবহন আছে।

মাওয়া ফেরিঘাট ইলিশ মাছ খাওয়ার উপায়

যেহুতু আপনি মাওয়া ফেরী ঘাট যেতে চান। সেহুতু আপনি কখনই ইলিশ খাওয়া মিস করবেন না। তো এখানে গিয়ে আপনি কোন পদ্ধতি তে ইলিশ মাছ খাবেন। এবার আমি আপনাকে সেই পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিবো। যেমনঃ

  • প্রথমত আপনি টাটকা ইলিশ মাছ কিনে নিবেন। আর আপনি চাইলে সেখানে থাকা বাজার কিংবা নির্দিষ্ট কিছু দোকান থেকেও আপনার পছন্দের ইলিশ কিনে নিতে পারবেন।
  • এবার আপনাকে আপনার পছন্দের হোটেল সিলেক্ট করতে হবে। কেননা, আপনার কিনে নেওয়া ইলিশ মাছ সেই হোটেল গুলো থেকে ভেজে নিতে হবে।
  • তারপর আপনার পছন্দের হোটেলে সেই ইলিশ মাছ দিবেন, যে মাছটি আপনি কিনে এনেছেন।
  • হোটেলে মাছ দেওয়ার পর, তারা আপনার মাছটি কেটে দিবে এবং আপনার চাহিদামতো রান্না কিংবা ভেজে দিবে।
  • মাছ ভাজার প্রয়োজনীয় উপকরন গুলো আপনি হোটেল থেকেও কিনতে পারবেন। অথবা আপনি বাইরে থেকেও কিনে দিতে পারবেন। যেমন, তেল, লবন, হলুদ ইত্যাদি।
  • ইলিশ মাছ ভাজার পাশাপাশি আপনি তাদেরকে ইলিশ এর লেজ ভর্তা করতে বলবেন।
  • সবশেষে আপনি সেই হোটেলে বসে খাওয়া করতে পারবেন।

যদিওবা মাওয়া ঘাটে ইলিশ খাওয়ার প্রক্রিয়া খুব সহজ। তবে প্রথমবার যাওয়ার কারণে যেন আপনার কোনো সমস্যা না হয়। সে কারণে উপরে ইলিশ খাওয়ার পদ্ধতি গুলো দেখিয়ে দেওয়া হলো।

মাওয়া ফেরিঘাট কোন হোটেলে খাবেন

যেকোনো স্থানে ভ্রমন করার পাশাপাশি আমাদের সবার খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয়। সেই সময় আমাদের মাথায় প্রশ্ন আসে যে, এখানে ভালো খাবার হোটেল কোথায় পাওয়া যাবে। আর আপনি যখন ইলিশ এর রাজ্য মাওয়া ফেরী ঘাটে ভ্রমন করবেন। তখন আপনি উক্ত স্থানেই অনেক খাবার হোটেল দেখতে পারবেন। তবে আপনি যে কোনো হোটেলে খান না কেন, যখন আপন খাবেন। তার পূর্বে অবশ্যই আপনি আপনার নিজ দায়িত্বে সবকিছু যাচাই বাচাই করে নিবেন।

আরও পড়ুনঃ মানিকগঞ্জ দর্শনীয় স্থান

তবে কোনো কারণে যদি আপনার উক্ত স্থানে থাকা খাবার হোটেল গুলো পছন্দ না হয়। তাহলে চিন্তা করার দরকার নেই। কেননা, এখানে আপনি নিজের পছন্দ করা টাটকা ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে। সেই মাছটি ভেজে তারপর খেতে পারবেন।

কিন্তুু এতকিছুর পরও যদি আপনার মাওয়া ঘাটে খাওয়া করার ইচ্ছা না হয়। তাহলে আপনার জন্য রয়েছে আরো একটি বিকল্প উপায়। সেজন্য আপনাকে কষ্ট করে মাওয়া ফেরী ঘাট থেকে একটু দুরে যেতে হবে। আর সেই স্থান টি হলো, পদ্মার অপর প্রান্তে থাকা কাওড়াকান্দি নামক ঘাট। যেখানে আপনি আপনার মনের মতো হোটেল থেকে খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।

মাওয়া ফেরী ঘাট ভ্রমন

মাওয়া ভ্রমন এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

যেহুতু আপনি মাওয়া ফেরী ঘাটে ভ্রমন করতে চান। সেহুতু অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এবার আমি আপনাকে সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিবো। আপনি উক্ত স্থানে ভ্রমনের পূর্বে অবশ্যই এই বিষয় গুলোর দিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখবেন। যেমনঃ

  • এখানে ভ্রমন করার জন্য অবশ্যই বিকেলের সময়কে সিলেক্ট করবেন।
  • যদি প্রখর রোদযুক্ত দিনের বেলায় আসেন। তাহলে আপনি মাওয়া ঘাটের আসল মজা নিতে পারবেন না।
  • মনে রাখবেন, এখানে রাতে আসলে সবার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
  • এছাড়াও এই স্থানে একা আসার চাইতে, আপনার সাথে কাউকে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।
  • যখন ইলিশ মাছ কিনবেন, তখন দরদাম ভালোভাবে করবেন। তারপর আপনি আপনার পছন্দের ইলিশ মাছ কিনে নিবেন।
  • অথবা আপনি চাইলে মাওয়া ঘাট থেকে সরাসরি টাটকা ইলিশ মাছ কিনে। তারপর সেই মাছ ভেজে খেতে পারবেন।
  • মনে রাখবেন, এখানে ইলিশ মাছের লেজ এর ভর্তা অনেক সুস্বাদু। তাই এখানে গেলে লেজ ভর্তা খাওয়ার কথা ভুলবেন না।

আপনি যদি ভ্রমন স্থান হিসেবে মাওয়া ফেরী ঘাটে যেতে চান। তাহলে আপনাকে কোন কোন বিষয় গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যেগুলো আপনার জেনে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক, গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের মাওয়া ফেরিঘাট সংক্রান্ত বিষয় গুলোকে তুলে ধরেছি। আপনারা যারার ভ্রমন করার উদ্দেশ্যে মাওয়া ফেরী ঘাট যেতে চান। তাদের জন্য এই লেখাটি অনেক হেল্পফুল হবে। আর আপনি যদি এই ধরনের হেল্পফুল তথ্য পেতে চান। তাহলে আমাদের সাথে থাকবেন। আর ধন্যবাদ, এতক্ষন থেকে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১) গুলিস্তান থেকে মাওয়া ভাড়া কত?

উত্তরঃ বর্তমান সময়ে আপনি মাত্র ৭০/৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে গুলিস্তান থেকে মাওয়া ফেরী ঘাট যেতে পারবেন। 

২) ঢাকা থেকে মাওয়ার দুরুত্ব কত কিলোমিটার?

উত্তরঃ আমাদের রাজধানী ঢাকা থেকে মাওয়া এর দুরুত্ব মাত্র ৫৭ কিলোমিটার। 

৩) যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া কত কিলোমিটার?

উত্তরঃ যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দুরত্ব।

আরও পড়ুন-

তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বাড়ি

মন্তব্য করুন