সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ সম্পর্কিত সকল তথ্য

সিলেটের দর্শনীয় স্থান

ঘুরতে যেতে কে না চাই, ব্যাস্ত জীবন রেখে সবারই একটু মন চায় ছুটি পেতে, একটু খানি রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য বেড়াতে যেতে।

স্বল্প খরচে যদি দেশে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা যায়, তবে কেমন হয় বিষয় টা! হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহর সিলেটের দর্শনীয় স্থান  নিয়ে।

যেখানে আপনি চাইলে স্বল্প খরছে আপনার পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে খুব সহজেই যেতে পারবেন। আর কোথায় কোথায় যাবেন, কিভাবে যাবেন, কত খরচ পড়বে সেসব জানাব। সিলেট (Sylhet) হলো অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ।

সিলেট জেলাটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই প্রাচীন জনপদটি বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি।

আরও পড়ুনঃ

জাফলং

প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত হলো সিলেটের জাফলং (Jaflong)। সিলেট জেলার সিলেটের দর্শনীয় স্থান মধ্যে পর্যটকদের কাছে জাফলং বেশি পছন্দের।

এই জাফলং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের যেন এক পসরা সাজিয়ে রেখেছে। এত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তার।

জাফলং এর সৌন্দর্যের মধ্যে আছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা ও আরও অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

এর বিশেষ দিক হল এটি একেক ঋতুতে একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, আর এটিই পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই তার দিকে আগ্রহী করে রাখে।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান sylhet tourist spot

জাফলং যেভাবে যাবেন

প্রকৃতির কন্যা জাফলং এর কাছে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে আপনার নিজ জেলা থেকে বাস অথবা ট্রেন যোগে চলে যেতে হবে সিলেট শহরে।

আপনি চাইলে প্লেনে করেও সিলেটে যেতে পারেন, এরপর  সিলেট থেকে বাস অথবা ট্রেনে যেভাবেই যান প্রথমে সিএনজি রিজার্ভ করে চলে যাবেন সোবাহানি হাঁট বাস স্ট্যান্ডে।

আর এতে রিজার্ভ ভাড়া নিবে ১০০-১২০ টাকা। আর ১ সিএনজিতে মোটামোটি ৫ জন বসতে পারবেন। আর সোবাহানি হাট বাস স্ট্যান্ডে আসার পর দেখবেন এখানে জাফলং এর বাস পাওয়া যায়।

আর ভাড়া নেয় জন প্রতি ৮০ টাকা করে। এখন আপনি যদি বাসে করে না যেতে চান তবে সিএনজি রিজার্ভ করেও জাফলং যেতে পারবেন।

আর যদি সারা দিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করেন তবে ভাড়া নিবে ১৪০০-২০০০ টাকা। আর এখানে ১ সিএনজিতে ৫ জন বসতে পারবেন। চাইলে সারা দিনের জন্য মাইক্রো রিজার্ভ নিতে পারেন।

এতে খরচ পড়বে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এখানে সারাদিনের জন্য লেগুনা রিজার্ভ নিবে ২০০০ থেকে ২৫০০টাকা। আর ১ টি লেগুনায় ১২ জন বসতে পারবেন।

রাতারগুল

রাতারগুল হলো বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত।

এই রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। রাতারগুলকে ‘সিলেটের সুন্দরবন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এর সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রাতারগুল এই জলাবনটি বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। আর ঠিক তখনই জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে এখানে ভিড় জমায়।

অনেক পর্যটকরা রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষা সময় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি,

আবার সেই সময় কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া আপনি যদি পাখি প্রেমি হোন তবে শীতকালে রাতারগুল আপনার জন্য সেরা জায়গা।

কারন এখানে শীতকালে জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। আপনি যদি রাতারগুল ratargul যেতে চান তবে সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর অর্থাৎ বর্ষার শেষের দিকে আপনি সেখানে যেতে পারেন। কারন এইটাই রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল যেভাবে যাবেন

যেহেতু রাতারগুল সিলেটে অবস্থিত। তাই আপনাকে সর্ব প্রথম আপনার নিজ জেলা শহর থেকে সিলেট শহরে যেতে হবে।

এজন্য আপনি আপনার জেলার কাছে বাস স্টেশন অথবা রেল পথেও চাইলে সিলেট যেতে পারেন। এরপর দুইটি উপায়ে আপনি চাইলে সিলেট থেকে রাতারগুল যেতে পারেন।

প্রথম উপায় হলো সিলেট থেকে জাফলং হয়ে তামাবিল যে রোড আছে সেই রোড ধরে সারীঘাট হয়ে সরাসরি গোয়াইনঘাট পৌঁছানো।

এরপর গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসার জন্য আপনাকে একটি ট্রলার ভাড়া করতে হবে, যার ভাড়া হবে ৯০০–১৫০০ এর মধ্যে (আসা-যাওয়া বাবদ)।

আর এতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। এরপর আপনাকে বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে ,আর এতে একজনের ঘণ্টাপ্রতি লাগবে ২০০-৩০০ টাকা।

দ্বিতীয় উপায় হলো সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সোজা একটি সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছানো। আর এতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০০ টাকা।

আর ওসমানী এয়ারপোর্ট থেকে শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে সেই গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসার জন্য একটি ট্রলার ভাড়া করতে হবে।

আর এখানে ভাড়া হবে ৮০০ -১৫০০ টাকার মধ্যে (আসা-যাওয়া বাবদ) আর এতে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। এরপর আগের মতই বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে, আর এতে একজন মাঝি ঘণ্টাপ্রতি নেবে ২০০-৩০০ টাকা।

বিছনা কান্দি

সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল বিছনাকান্দি। এটি ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত।

বিছনাকান্দি এলাকা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে থাকা লাল পতাকাগুলোর সারি জানান দেয় যে ওপাশেই আছে ভারত। এখান থেকে চাইলেই আপনি ভারতে না গিয়ে খুব সহজেই ভারতীয় জলপ্রপাত গুলো দেখতে পারবেন।

এখনে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোত ধারাগুলো যেন সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ।

আর এই মনোরম পরিবেশটি হতে পারে ভ্রমণ পিপাসীদের জন্য এক আকর্ষনীয় স্থান। কি নেই এখানে পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ সব নিয়েই যেন বিছানাকান্দি।

আপনি যদি শহরের জঞ্জাল ও কোলাহলের ভিড় ছেড়ে এক টুকরো শান্তি পেতে চান তবে বিছনাকান্দিই সেরা। কার এখানে আসার পর  আপনার যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হবে তা হল প্রশান্তি।

আপনি যদি বিছানাকান্দিতে যেতে চান তবে শীতকালে যাবেন না। কারন শীতকাল এখানে আসার জন্য একেবারেই উপযুক্ত সময় নয়।

বিছনাকান্দী যেভাবে যাবেন

বিছনাকান্দী (bichanakandi) গ্রামটি সিলেট শহর হতে ৬০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।

আপনি সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের যে মহাসড়কটি আছে সেটি ধরে সালুটিকর বাজারের ডান দিকে গাড়ী নিয়ে গোয়াইনঘাট লিঙ্ক রোডে হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিছানাকান্দি।

তাছাড়া আরেকটি উপায়ে সেখানে যেতে পারবেন। বিছনাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে একটি সিএনজি নিতে পারেন।

এতে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা লাগবে। এরপর লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় আপনাকে যেতে হবে।

আর সারাদিনের জন্য যদি সিএনজি রিজার্ভ নেন তাহলে সাধারণত ভাড়া পরবে ১০০০-১৫০০ টাকার মত। এরপর হাদারপার এসে এখানে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দির মেইন পয়েন্টে খুব সহজেই যেতে পারবেন।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল হল এই ভোলাগঞ্জ। এটি সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

প্রকৃতি মায়ায় মোড়ানো যেন এই ভোলাগঞ্জ। মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো যেন ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আর সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা হয়েছে আর অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের মুল রূপের উৎস।

এখানে গেলে আপনি উপভোগ করতে পারবেন অসম্ভব সুন্দর সবুজে ঘেরা পাহাড়, অনুভব করবেন মেঘের হাতছানি আর দেখবেন বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর। এই পাথরগুলো ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য কে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জ

যেভাবে ভোলাগঞ্জ যাবেন

ভোলাগঞ্জ যেতে হলে আপনাকে সিএনজি অথবা বাসে করে যেতে হবে। সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজি এবং মজুমদারী এলাকা থেকে ভোলাগঞ্জ (Bholaganj) যাবার জন্য বিআরটিসি লোকাল ও টুরিস্ট বাস পাওয়া যায়। এখানে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত প্রতি ২০ মিনিট পর পর এসব বাস চলাচল করে।

আর এসব বাসে জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়ায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সাদাপাথর এলাকায় যেতে পারবেন। আর যদি লোকাল সিএনজিতে যান তবে জনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় ভোলাগঞ্জ যেতে পারবেন। আর এখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিলে যাওয়া আসার ভাড়াসহ লাগবে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

লোভাছড়া

সিলেট শহরের কানাইঘাট উপজেলার একেবারে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকা জুড়ে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বালুভরা বেশ কিছু স্বচ্ছ পানির নদী।

আর এর মধ্যে অন্যতম হলো এই লোভাছড়া নদী। সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এই জায়গায়টা এতই সুন্দর যে এখানকার সবুজ পাহাড় আর লোভা নদীর অসাধারণ স্বচ্ছ পানি একবার দেখলে আপনার সেখানে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে।

আর এখানকার আরেকটি আকর্ষণ হলো লোভাছড়া চা-বাগানের বহু পুরোনো ঝুলন্ত সেতুর সঙ্গে এখানকার খাসিয়া গ্রাম।

এখানে গেলে আপনি আরও দেখবেন দেশের উত্তর-পূর্ব সীমন্তে কানাইঘাট উপজেলায় ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া চা বাগান এবং নানা রকম দর্শনীয় স্থান।

যেভাবে লোভাছড়া যাবেন

মুলত সিলেট থেকে তিনটি সড়ক পথে কানাইঘাট সদরে পৌছানোর সুযোগ আছে। প্রথমত বাস অথবা সিএনজি-অটোরিক্সায় করে সরাসরি দরবস্ত-চতুল হয়ে কানাইঘাট সদরে যাওয়া যায়।

অন্যদিকে আবার গোলাপগঞ্জ-চারখাই-শাহবাগ হয়ে জকিগঞ্জ সড়কপথ দিয়েও কানাইঘাট পৌছানো যাবে।

আবার গাজী বুরহান উদ্দিন সড়ক দিয়েও সিলেট-গাছবাড়ী সড়ক হয়ে কানাইঘাট সদরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং সিলেট শহর থেকে কানাইঘাট সদরে বাস ভাড়া হলো সর্বোচ্চ ৬০ টাকা এবং সিএনজি-অটোরিকশায় ভাড়া হলো সর্বোচ্চ ১শ’ টাকা।

আর কেউ যদি রিজার্ভ সিএনজি নেয় তবে ভাড়া পরবে  ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা হবে। তিন পথেই সিএনজি যোগেই  যাওয়া যাবে এই কানাইঘাটে।

আর কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে লোভাছড়ার দূরত্ব হলো  মাত্র ৯ কিলোমিটার। কিন্তু এখামে সমস্যা হলো লোভাছড়ায় যাতায়াতের রাস্তাটির অর্ধেকের চেয়ে বেশি কাঁচা হওয়ায় খুবই কষ্ট করে সেখানে পৌঁছাতে হয়।

আর সে জন্য নদী পথে লোভাছড়ায় যাওয়াই সহজ রাস্তা। সাধারণত লোভাছড়া ঘুরতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৩ থেকে ৪ঘন্টা।

সংগ্রামপুঞ্জি/মায়াবী ঝর্ণা

সাম্প্রতিককালে সিলেট শহরে ঘুরে দেখার মত আরো বেশ কিছু নতুন দর্শনীয় স্থান উন্মোচিত হয়েছে। তেমনই একটি হলো সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা বা মায়াবী ঝর্ণা।

জাফলং এর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত এই ঝর্ণাটি। এটি মুলত ভারতের সীমান্তে পড়েছে। এরকম কয়েক ধাপবিশিষ্ট এমন ঝর্না খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।

এখানে গেলে আপনি ঝর্ণার খানিকটা দূর থেকেই এর মেঘালয়ের পাহাড় বেয়ে বয়ে যাওয়ার গর্জন শুনতে পারবেন। আর ঠিক সামনে যেতেই আপনার চোখে পড়বে গাছ, পাথর আর পানির অপূর্ব মেলবন্ধন যা আপনার নজর ও হৃদয় দুই কেড়ে নেবে।

আর এখানে পাহাড়ের গা-বেয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় নেমে এসেছে দুগ্ধ সাদা পানির স্রোত। পানি নামার ধরনটাও বেশ চমৎকার ও অন্যন্য।

কখনো সবুজ ঝোপের ভিতর দিয়ে, আবার কখনো বা নগ্ন পাথরের বুক চিরে নেমে আসে এই স্রোতের পানি। এখানে এই ঝর্ণার জল এসে জমা হয়ে ছোট্ট পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে, আবার এই পুকুরের তিন দিকেই রয়েছে বড় বড় পাথর।

আর চাইলে এই ছোট পুকুরের সেই শীতল জলে ডুবে থাকতে পারেন অথবা করতে পারেন চূড়ায় ওঠার অ্যাডভেঞ্চার। সুংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার তৃতীয় ধাপ থেকে বেশ কিছু পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। আর এর কিছু অংশ চলে যায় বাম দিকের সুড়ঙ্গে।

যেভাবে যাবেন

যেহেতু জাফলং এর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের দূরত্বে এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। তাই সেখানে যেতে হলে আপনাকে আগে জাফলং আসতে হবে।

এরপর জাফলং জিরো পয়েন্ট (Jaflong zero point) থেকে মায়া দিয়ে নদী পার হয়ে ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে যেতে হবে। বর্ষার মৌসুমে নৌকা দিয়ে এই ঝর্ণার বেশ কাছা কাছি যাওয়া যায়।

এখানে নৌকায় নদী পাড় হতে শীতকালে জনপ্রতি খরচ হবে ১০-২০ টাকা। আর বর্ষায় ঝর্ণার কাছাকাছি যেতে জনপ্রতি নৌকা ভাড়া লাগবে ৩০-৫০ টাকা।

 শাহজালাল মাজার

সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি হলো এই হযরত শাহজালালের মাজার। যা মুলত সিলেট সদরের অন্তর্গত।

এটি সিলেট শহর থেকে ঠিক মধ্যস্থলে এবং জিরো পয়েন্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এই এলাকাটিকে দরগা এলাকা এবং প্রবেশ পথটিকে দরগা গেইট বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এখানে ছুটে আসে অনেকটা ধর্মের টানে।

এটি বেশ জনপ্রিয় একটি মাজার (Shrine)। এখানে গেলে আপনি দেখবেন বিশাল মাজার শরীফ; এর চারপাশে আছে বেশ সুন্দর পুকুর। আর সেখানকার আরেকটি আকর্ষণ গজার মাছ। আর এ মাজারে যে জিনিসটা আপনার নজর কাড়বে তা হলো মাজার চত্বরে উড়ে বেড়ানো হাজারো জালালী কবুতর।

হযরত শাহজালাল মাজারে গেলে আপনি দেখবেন শাহজালারের আমলের রান্নার বিশালাকার ডেকচি, তার কবরস্থান ও মাজার সংলগ্ন সুন্দর মাদ্রাসা।

হযরত শাহজালালের মাজার

যেভাবে যাবেন

এখানে আসতে হলে আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, এজন্য আপনাকে সড়ক পথে প্রথমে সিলেট যেতে হবে; অতঃপর সেখান থেকে আপনাকে মাজারে যেতে হবে। সিলেট আসার পর রিক্সা, সিএনজি বা অটো রিক্সায় অতি সহজেই মাজারে আসা যায়।

সিলেটে থাকবেন কোথায়

সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোতে ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সিলেট শহরে থাকতে হবে। এজন্য আপনাকে সিলেট শহরের স্থানীয় হোটেল গুলোতে উঠতে হবে।

আর সিলেট শহরে পর্যটকদের জন্য অনেক হোটেল আছে। আর উক্ত স্থান গুলোতে আপনি চাইলে দিনে দিনে গিয়েই আবার দিনে দিনেই সিলেট শহরে চলে আসতে পারবেন। নিচে সিলেটের কয়েকটি হোটেলের নাম ও নাম্বার দেওয়া হলো:-

  • হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (স্থান-বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): মোবাইল নাম্বার -০১৭৩১৫৩৩৭৩৩, +৮৮০৮২১২৮৩৩৪০৪
  • হোটেল নির্ভানা ইন (স্থাম -রামের দিঘির পাড়, মির্জা জাঙ্গাল, সিলেট): মোবাইল নাম্বার- +৮৮০৮২১২৮৩০৫৭৬, ০১৭৩০০৮৩৭৯০, ০১৯১১৭২০২১৩, ০১৭১১৩৩৬৭৬১
  • হোটেল স্টার প্যাসিফিক (স্থান ইস্ট দরগাহ গেইট): মোবাইল নাম্বার- ০১৭১৩৬৭৪০০৯, ০১৯৩৭৭৭৬৬৩৩, ০৮২১-২৮৩৩০৯১
  • হোটেল অনুরাগ (স্থান -ধোপা দীঘি নর্থ):মোবাইল নাম্বার- ৭১৫৭১৭, ৭১৪৪৮৯, ০১৭১২০৯৩০৩৯
  • হোটেল সুপ্রীম, স্থান জাফলং রোড, মিরাবাজার, সিলেট-৩১০০, মোবাইল নাম্বার – ০১৭১১১৯৭০১২, ফোন: ৮৮-০৮২১-৭২০৭৫১, ৮১৩১৬৯, ৮১৩১৭২, ৮১৩১৭৩, ৮১৩১৬৮
  • হোটেল সানফ্লাওয়ার (স্থান বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): মেবাইল/ফোন নাম্বার :৮৮-০৮২১-৭১৩৯১৪
  • হোটেল এশিয়া (স্থান -বন্দরবাজার): মোবাইল :০১৯২২৫৯৫৮৪১, ০১৯২২৫৯৫৮৪০
  • সুরমা ভ্যালি গেস্ট হাউস (স্থান -জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে): ফোন :০১৭১৬০৯৫৮৩৬
  • হোটেল সিলেট ইন (স্থান -মিরবক্সটুলা): ফোন: ৮৮-০৮২১-৮১১৯৪৫ ১০-হোটেল আল-আরব: স্থান- হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট, ফোন: ০৮২১-৭২৪০৫৯, ০১৭২১৮১২৬৬২ ১১. হোটেল উর্মি: হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট, ফোন নাম্বার : ০৮২১-৭১৪৫৬৩, ০১৭৩৩১৫৩৮০৫

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনাদের কাছে আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। এই আর্টিকেলে আমি সিলেটের যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলোতে ভ্রমণ নিয়ে যাবতীয় তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

আশা করি আপনাদের কাজে আসবে। তাহলে আর দেরি কেন, আজই আপনার পরিবার ও বন্ধু স্বজন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন আর ঘুরে আসুন চায়ের দেশ সিলেটে।

নিজের মনকে একটু আনন্দ দিতে ঘুরার কোন বিকল্প নেই। আর সিলেটের উক্ত দর্শনীয় স্থান গুলো এতটাই সুন্দর যে যা আপনার মন কেড়ে নিবেই। উপভোগ করুন প্রকৃতির রুপের যত সুন্দর খেলা। প্রশান্ত হয়ে যাক আপনার হৃদয় ও প্রাণ।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। ঢাকা থেকে সিলেটের বাস ভাড়া কত?

উত্তরঃ- বাসে করে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মতো। ঢাকা থেকে সিলেট বাস ভাড়া নন এসি ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া হলো ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেট গামী এসি, নন-এসি বাসের মধ্যে রয়েছে এনা, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেস ছাড়াও আরও বেশ কিছু পরিবহন সার্ভিস।

২। সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব কত?

উত্তরঃ- সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব হলো প্রায় ৬০ কিলোমিটার। সিলেট শহর থেকে সরাসরি জাফলং যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘন্টার । এক্ষেত্রে সিলেট থেকে সরাসরি বাস, সিএনজি, কিংবা মাইক্রোবাসে করেও জাফলং যাওয়া যাবে।

৩। সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত?

উত্তরঃ- সিলেট চায়ের জন্য বিখ্যাত। এখানকার চা বাগানে উৎপন্ন হওয়া চা পাতা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। যা আমাদের দেশকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন-

মন্তব্য করুন